আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হবে দূর্নীতি এবং হয়েছে দূর্নীতির চক্রে বাংলাদেশ...

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি খুবই হৈ চৈ করে আবুল ধরার উৎসব চলছে বাংলাদেশে। আবুলরা পদ্মা সেতুর কনসালটেন্ট থেকে অর্থ নেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিলো বলে একটা ডাইরীর একটা পাতার উপর ভিত্তি করে মামলা মোকদ্দমা হয়ে গেলো। সেখানে কেন আবুলদের রাখা হলো না - সেই দু:খে দিনরাতের ঘুম হারাম করে ফেলেছে অনেকেই। সবচেয়ে আফশোস হলো জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের - বিশেষ করে যারা আওয়ামী ফোবিয়ার কারনে জামাত-বিএনপির সমর্থক। বাংলাদেশে যারা প্রজেক্টে কাজ করেন তারা জানেন প্রজেক্ট শুরু হলেই কর্তাদের জন্যে বিদেশ সফর আর গাড়ী কেনা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই ধরে নেওয়া হয়।

কয়েকদিন আগে দেখলাম একটা ইমারত নির্মানের জ্ঞানার্জনের জন্যে সিডিএর একদল উচ্চপদের কর্তা বিদেশ ভ্রমন করেছেন। মিটার কেনার জন্যে টেন্ডার আহ্বানের আগেই একদল কর্তা আমেরিকা বেড়িয়ে গেলেন গত বছর। এইটা যে অনৈতিক তা বোধ হয় বাংলাদেশের কর্তারা জানতেন না। এবার জানবেন - কারন দূর্নীতিকে নতুন ভাবে সংজ্ঞায়িত করার জন্যে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে শিক্ষাদানের জন্যে সুপার স্পেশালিষ্ট পাঠিয়ে ছিলো। যাই হোক - এইটা বাংলাদেশের জন্যে একটা শুভ অগ্রগতি যে দূর্নীতির সম্ভাবনার জন্যেও শাস্তির মতো উদাহরন তৈরী হচ্ছে।

এই ঘটনার সাথে নানান ধরনের ডালপালা তৈরী করে অনলাইনে একদল উৎসাহী জামাত/বিএনপির সমর্থক নানান গুজব ছড়াচ্ছে - যার সাথে সত্যের কোন সম্পর্ক নেই। এরা এইটা করছে কারন এদের নেতা এবঙ ভাবী নেতার পাহাড় পরিমান দূর্নীতিকে আড়াল করে একটু স্বস্থি পেতে চায় এই অন্ধ সমর্থক গোষ্ঠী। আসুন দেখি সাবেক প্রধানমন্ত্রী আর তার দুই পুত্রের কিছু কর্মকান্ড। ১) খালেদা জিয়া - খালেদা জিয়ার সরকারের কাছ থেকে ১ টাকায় পাওয়া বাড়ীর বিলাসী জীবন সম্পর্কে আর কিছু বলার দরকার মনে করছি না। তবে উনার কালো টাকা সাদা করার ঘটনাটা নিম্চয়ই আমরা ভুলে যাবো না।

যে দেশের প্রধান মন্ত্রীকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে অবৈধ আয়কে বৈধ করতে হয় তার সততা নিয়ে প্রশ্ন না করাই ভাল। তবে যে বিষয়টা আমাদের অবাক কবে তা হলো খালেদা জিয়ার দেশের মানুষের সাথে প্রতারনা - দেশের বাইরে আমাদের প্রভু নাই এই জিগির শুনেছি বহুবার - কিন্তু আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েব সাইটের তথ্য তা বলে না - উনি নিজেকে এবং ছেলেদের দূর্নীতির মামলা থেকে বাঁচানোর জন্যে আমেরিকান হস্তক্ষেপ আশা করে লবিষ্ট নিয়োগ করেছিলেন - সেই অর্থ কোথা থেকে এসেছিলো - তা একজন সাধারন নাগরিকের জানার অধিকার আছে নিশ্চয়। কিভাবে পাবেন এই ডকুমেন্ট - ওয়েব সাইটের লিংকটি হলোÑ htp://www.senate.gov/legislative/Public-Disclosure/LDA-reports.htm লিংকটি ওপেন হলে Select Search the Lobbying Database (LD-1, LD-2) সিলেক্ট করে ক্লিক করুন। তারপর Clients-Gi wb P client country সিলেক্ট করে Submit ক্লিক করুন। সেখানে দেখতে পাবেন মাত্র দু’জন বাংলাদেশি রাজনীতিক এপর্যন্ত আমেরিকায় লবিয়িং ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করেছেন।

তারা তাদের কত টাকা করে দিয়েছেন এর পরিমাণও উল্লেখ আছে। একজন হলো জামায়াতে ইসলামির যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতারকৃত মীর কাশেম আলী যিনি ২০১১ সালে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার দিয়েছেন Cassidy and Associates-কে। যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্ত ও বিতর্কিত করতে এই ফার্মের কাছে অবৈধ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে তিনি ডলার পাঠিয়েছিলেন বলে বাংলাদেশের কাগজে এর আগে খবর বের হয়েছিল। আরেকজন রাজনীতিক হলেন খালেদা জিয়া যিনি Pillsbury Winthrop Shaw Pitman যিনি ফার্মের সঙ্গে ২০০৭ সালের জুলাই মাসের ১৬ তারিখে চুক্তি করেন এবং আগস্টের ১৪ তারিখে ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার পরিশোধ করেন। এরপর ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ একই ফার্মকে ২০ হাজার ডলার দেন।

লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে যে আমেরিকান লবিষ্ট নিয়োগ করে নিজেকে শাস্তি থেকে রক্ষা করে - তার জন্যে বিশ্বের সবাইকে দূর্নীতিবাজ হিসাবে দেখা খুবই স্বাভাবিক নয় কি! ২) তারেক রহমান - দেশ না থেকেই যিনি নেতা - দেশের ভাবী প্রধান মন্ত্রী হিসাবে দেখতে চায় অনেকেই - উনার হওয়া ভবনের চেরাগের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার খুব একটা দরকার নেই মনে করি। শুধুমাত্র আজকের আমাদের সময়ের একটা প্রতিবেদনের অংশ বিশেষ উল্লেখ করাই যথেষ্ঠ মনে করছি। বিশেষ করে আমরা যারা প্রবাসে জীবন যাপন করি তাদের জন্যে আয় ব্যয়ের একটা পরিষ্কার চিত্র থাকে - সেখানে একজন মানুষ দৃশ্যত কোন আয় না করেই বিদেশে বিলাসবহুল জীবন যাপন করে - তার অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার অধিকার নিশ্চয় প্রতিটি নাগরিকের আছে। দেখা যাক আমাদের সময় কি বলে - বর্তমানে তারেক রহমান থাকেন সারের কিংসটনে। এ এলাকার লোকাল অথরিটির তথ্য অনুযায়ী ৩-৪ বেডরুমের এক বাসার মাসিক ভাড়া ১২শ থেকে শুরু করে ৫ হাজার পাউন্ড।

সি ব্র্যান্ডের বাসার জন্য কাউন্সিল ট্যাক্স ১৪৭৪ পাউন্ড ৬৭ পেন্স। বিদ্যুৎ গ্যাসসহ ইউটিলিটি বিল ন্যূনতম ১৫০ পাউন্ড। তার পরিবারের ট্রান্সপোর্টেশন খরচ ন্যূনতম ১শ পাউন্ড। এছাড়া লন্ড্রি, পোশাক-আশাক, পত্রপত্রিকা এবং মোবাইল ও টেলিফোনসহ আরও প্রায় ৭-৮শ পাউন্ড খরচ হয়ই। সব মিলিয়ে ৪ হাজার পাউন্ডের নিচে তার মতো লাইফ স্টাইল চালানো সম্ভব হওয়ার কথা নয়।

বিশেষত এ এলাকায় আরও রাঘব বোয়ালরা থাকেন। এ এলাকায় থেকে গেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। এখনও পাকিস্তানের সাবেক সেনা শাসক পারভেজ মোশাররফ বসবাস করছেন কিংসটনে। বিস্তারিত দেখুন এখানে - একটা ভাংগা সুটকেস আর ছেড়া গেঞ্জির ভেলকি দেখিয়ে তারেক বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন। তার অর্থের উৎস জানার অধিকার অবশ্যই জনগনের আছে।

৩) আরাফাত রহমান কোকো - ১৯৯২ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অষ্টমশ্রেনী পাশ কোকো অর্থ সংগ্রহের দিকে মনোযোগী হয়। কোকো লঞ্চ সিরিজ ( ১ থেকে ৮) চলা শুরু করে ৯৫ এর আগেই। তারপর ২য় মেয়াদের ক্ষমতায় আসার পর কোকোর ব্যবসায়িক পার্টনার হওয়ার প্রতিযোগীতায় অনেক বিএনপির নেতাকে লালায়িত দেখা যায়। নাজিমউদ্দিন আলম আর মোসাদ্দেক আলি ফালু এই ক্ষেত্রে বিজয়ী হয়। অবশ্য সাবেক মন্ত্রী কর্নেল আকবরের ছেলের সাথেই শেষ দিকে সকল অপকর্মগুলো করেছে কোকো।

মায়ের অন্ধ স্নেহের সুযোগে সকল বড় বড় কাজের বাখরা নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করে একজন আন্তর্জাতিক মানে "চোর" হিসাবে জাতি সংঘের এন্টি মানি লন্ডারিং তালিকায় দশ জনের মধ্যে নাম লিখিয়েছে। তার কর্মকান্ড আমেরিকান জাস্টিজ ডিপার্টমেন্টের ওয়েব সাইটে জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। দেখুন তার কিছু কর্ম - (বিশ্বব্যাংকের The Stolen Asset Recovery Initiative (StAR)) d) Bangladesh: From 2001 through 2006, Siemens Bangladesh caused corrupt payments of at least $5,319,839 to be made through purported business consultants to various Bangladeshi officials in exchange for favorable treatment during the bidding process on a mobile telephone project. At least one payment to each of these purported consultants was paid from a U.S. bank account." Arafat Rahman (also known as Koko Rahman) Case Control Number: 140 সূত্র এবার সরাসরি দেখি আমেরিকান এফবিআই ওয়েব সাইটের কি বলে - - Department of Justice Seeks to Recover Approximately $3 Million in Illegal Proceeds from Foreign Bribe Payments The forfeiture action was filed Jan. 8, 2009 , in U.S. District Court in the District of Columbia against funds located in Singapore held by multiple account holders. The forfeiture complaint relates primarily to alleged bribes paid to Arafat "Koko" Rahman, the son of the former prime minister of Bangladesh , in connection with public works projects awarded by the government of Bangladesh to Siemens AG and China Harbor Engineering Company. According to the forfeiture complaint, the majority of funds in Koko’s account are traceable to bribes allegedly received in connection with the China Harbor project, which was a project to build a new mooring containment terminal at the port in Chittagong , Bangladesh . সুত্র উপসংহার - দেখে শুনে মনে হচ্ছে বিএনপির রাজনীতি করতে হলে একজনকে অবশ্যই এই সত্য অস্বীকার করতে হবে যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার দুই পুত্র এবং তার পরিবারপরিজন আকন্ঠ দূর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিলো। তারা সেই দূর্নীতি করা অর্থের বিনিময়ে এখন বিলাসী জীবন যাপন করলেও সমর্থক আর নেতাদের বিরোধী পক্ষে দূর্নীতি নিয়ে গলদঘর্ম হতে হবে। বাংলাদেশ একটা দূর্নীতিপ্রবন দেশ - দেশে সর্বনিম্ন ক্ষমতার অধিকারী ( যেমন ঢাকা মেডিকেলে পিয়ন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের আমলা, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী সবাই দূর্নীতির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত।

এখন আমরা দেখছি সেই ধারা উল্টো কিছু স্রোত বাইছে। অনেক দূর্নীতিবাজ ধরা পড়ছে। গত সপ্তাহে দেখলাম টেলিটকের এক কর্মকর্তা ধরা পড়েছে দূর্নীতির দায়ে। এই অবস্থায় সবার উচিত আগে নিজের ঘর পরিষ্কার করা। নিজেদের দূর্নীতির জন্যে অনুতপ্ত হওয়া এবং দূর্নীতিবাজদের বর্জন করা।

সেই অবস্থায় যখন দেখি বিশ্বচোর তারেকের বিরাট রঙ্গীন ছবি টাংগিয়ে তা সমানে একদল লোক নির্বোধের মতো অন্যের দূর্নীতি নিয়ে রসাত্বক আলোচনা করে - তখন ভয় হয় - আবারো বুঝি দেশ পিছনে দিকে যায়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।