আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

♣ছোটগল: স্বপ্ন বাসর♣

আমার ব্লগ আমি আমার ডায়েরীর মতো করে ব্যবহার করি। এখানে আমি একটা গল্প অথবা কবিতা লিখতে পারি, অথবা আজকে কিসের তরকারী দিয়ে ভাত খেলাম, সেইটাও লিখতে পারি। । বড় বোনের শখ করে কেনা মোটা-সোটা বড় ফুলের টবটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেললাম। আরও কিছু ভাঙতে মন চাচ্ছে।

হাতের কাছে টিভি ছাড়া ভাঙার মত আর কিছুই পেলাম না। মা চোখ বড়বড় করে, মুখ কটমট করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কিছু তোয়াক্কা না করে ধবধবে সাদা শার্টটা গায়ে দিলাম। টাউজারটা চেঞ্জ করে অভির দেয়া জিন্সটা পরলাম। বন্ধু অভি গত সপ্তাহে সাদা শার্ট আর প্যান্টটা গিফট করেছে তার বিবাহের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে।

বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে যদিও উপহার দেয়ার কথা আমার, তবে অভিই আমাকে উল্টো উপহার দিয়েছে। কেন দিয়েছে সেটা জানিনা, জানার চেষ্টাও করিনি। আমি মা-কে একপাশে ঠেলে একটা ভেংচি কেটে সিঁড়ি দিয়ে টুকটুক করে বাসার নিচে নেমে আসলাম। একটু আগে বৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা-ঘাট কেমন স্যাঁতস্যাঁতে,কাদা-কাদা অবস্থা।

ইশ! মানিব্যাগটা আনতে ভুলে গেছি। আমরা বিল্ডিঙের দো-তলায় থাকি। তাই মাকে নিচের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডাকলেই শুনে। -মা! ওমা! মানিব্যাগটা দাও তো! আমি জানি মানিব্যাগে এক টাকাও নেই। তবে খালি মানিব্যাগ দেখে মা কচকচে পাঁচশত টাকার একটা নোট ঢুকিয়ে দেবে, তা আমার জানা আছে।

মা বকবক করতে করতে মানিব্যাগটা নিচে ছুঁড়ে মারলো। আমি মার বকবকানির তোয়াক্কা না করে সোজা বড় রাস্তার দিকে হাটা দিলাম। কয়েক ঘন্টা পর সূর্য মাথার ওপরে উঠে যাবে। এখনও নাস্তা না করাতে পেটের নারিভুরি হজম হওয়ার উপক্রম। মা-যে সকাল বেলা কি নাস্তা বানায়।

দেখলেই মেজাজটা চটে যায়। একশবার বলেছি, সকালের নাস্তার সাথে আমার একটা ডিম চাই। সে শুধু রুটি-ভাজি দিয়ে বলে, “নওয়াবজাদা বিয়া কইরা বউরে দিয়া কাম করাইও। আদর কইরা ডিম মুখে তুইল্যা খাওয়ায়ে দিবে। ” এমনিতেই নাস্তার আইটেম দেখে মেজাজ গরম,তার ওপর আবার এইরকম একটা উস্কানিমূলক কথা।

দিলাম টবটা আছাড় মেরে। বড় রাস্তার পাশের দোকান থেকে একটা কলা কিনলাম। কলাটা খেয়ে কোনরকম পেটের নারিভুরিকে হজম হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাচালাম। আহ!!! ধপ্পাশ করে একটা আওয়াজ হয়ে আমি পড়ে গেলাম রাস্তার পাশের হাটু সমান কাদাতে। আমার পিঠের ওপর আমার মতই আরও কিছু একটা পড়লো।

ঘটনার আকস্মিকতায় আমি অজ্ঞান হয়েও হলাম না। মেয়েটা আমার সাথে কাদাতে লেপ্টে গেছে। কান্না লুকানোর চেষ্টা করছে। আর রাগে ঠোট জোড়া কাপছে। মেয়েটাকে আকাশি রঙের শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে।

আমার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে। তবে মেয়েটার হাটুর দিক থেকে নিচের পুরোটাতে কাদা লেগে গেছে। আমার ওপর পড়াতে ওপরের দিকটাতে কাদা লাগেনি। তবে আমার সামনের দিকটা দেখে এখন আর বোঝার উপায় নেই যে, আমি একটা ধবধবে সাদা শার্ট পড়েছি। মেয়েটাকে কিছু একটা বলা দরকার।

আমি বললাম, “এই মেয়ে! তুমি কি করলা এইটা? এইটা একটা কাজের কাজ করলা?” মেয়েটা কাচুমাচু করে বললো, “আম সরররি ভাইয়া! আসলে কে যেন একটা কলার ছিলকা এখানে ফেলে রেখেছিলো। আমি আসলে ওইটা দেখিনি। ” আমি মনেমনে নিজের ভুলটা বুঝতে পারলাম। মাথা এতটাই গরম যে, কলা খেয়ে বাকিটা কোথায় ফেলেছিলাম সেটাও মনে নেই। যাইহোক, মেয়েটার সাথে সেদিনই আমার প্রথম পরিচয়।

সেদিন রাতে খালি মেয়েটার কথা মনে পড়ছিল আমার। আমার সাথে লেপ্টে যাওয়া, আমাকে শক্ত করে ধরে রাখা, চোখ টিপটিপ করে তাকানো আর কাচুমাচু করে লজ্জায় লাল হয়ে কথা বলা। মেয়েটার গোলাপী টুকটুকে দুইটা গাল আর লজ্জা-রাগে কাঁপতে থাকা ঠোটের কথা। আচ্ছা যদি এমন হতো, মেয়েটা যখন আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে নরম কাদার মাঝে, তখন একটা দুষ্টু হাসি হেসে ওর ওই নিষ্পাপ কোমল গালে একটা চুমু দিয়ে বললাম, “ভালোবাসি তোমায়। ” তাহলে কেমন হতো? এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলাম।

ঘুমের মাঝে সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখলাম। দেখলাম, মেয়েটা এক বছর আগে বিয়ে করা বন্ধু অভির আদরের শ্যালিকা। বন্ধু অভির সাহায্যে মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আজকে আমাদের বিয়ে। বাসর ঘরে ধুকে দেখলাম মেয়েটা সেই লজ্জা লজ্জা মুখ করে খাটের ওপর বসে আছে।

আমার মনে হচ্ছে, ঘরের লাইটটা আজ অফ করে দিলেও ঘরে আলো ঠিকই থাকবে। মেয়েটার শরীর থেকে যেন আলো ঠিকরে বেরুচ্ছে। আমি এগিয়ে গিয়ে ওর হাতটা ধরলাম। এর ফাকে ও একবার আমার দিকে তাকিয়েছে। কেমন লজ্জা-লজ্জা লাল মুখ।

আমি ওকে বললাম, “তুমি কি জানো? আজকে পূর্ণিমা। ” ও বললো, “ও আচ্ছা! আমি জানতাম না। ” আমি বললাম, “চল আমাদের বাসর রাতটা আজকে পূর্ণিমার আলোর সাথে খেলা করে কাটাই। ” ও চোখ জ্বলজ্বল করে বললো, “আমার চাদের আলো খুব ভালো লাগে। অনেক ভালো লাগে।

” আমি ওর হাত ধরে টেনে ছাদে নিয়ে গেলাম। আমি ছাদের রেলিংএ হেলান দিয়ে বসে থাকি। ও আমার বুকে মাথা রেখে আধশোয়া হয়ে থাকে। আমি ওর হাত জোড়া শক্ত করে চেপে ধরে রাখি। ও বললো, “দেখেছো চাঁদটা কত সুন্দর?” আমি বললাম, “হুম!” আমি চাঁদকে বললাম, “এই চাঁদ! তুই কি জানিস? আমি আজকে পৃথিবীর সবচাইতে খুশী ব্যক্তি।

আজকে আমি প্রাণ খুলে হাসবো,গাইবো। আজকে আমি অনেক খুশী। ” আমি আবার ওর দিকে তাকালাম। চাদের আলোতে মেয়েটার মুখ অন্যরকর অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। আমি আনন্দে কেঁদে ফেলি।

ওকে শক্ত করে বুকে চেপে ধরে রাখি। চাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখি, আমাদের ভালোবাসা দেখে চাঁদ লজ্জা পেয়ে মেঘের আড়ালে লুকিয়েছে।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৩ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.