আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গঃ বাঙালির জাতীয় সমস্যা, চুলকানির অয়েন্টমেন্ট এবং সাভারের ঘটনা...

আবীর শাকরান মাহমুদ বাঙ্গালি জাতির সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জানেন? *তারা পাছার চুলকানিতে কার্যকর অয়েন্টমেন্ট না কিনে নিজের বুদ্ধিতে জ্বরের ওষুধ খাবে। *ধরেন কোন দৈব বাণীর ডাকে সাড়া দিয়ে তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। এখন চিকিৎসক যদি তাদের সাত দিনের কনসাল্ট করে, তারা তিন দিন পর্যন্ত ইউস করবে। এরপর থেকে শুরু হবে তাদের ভিন্ন ধরণের চুলকানি। এ চুলকানি মানসিক।

এই মানসিকতায় তারা ঐ অয়েন্টমেন্ট প্রয়োজনে ফেলে রাখতে রাখতে পচাইয়া এক্সপায়ার্ড ডেট ওভার করে ফেলবে। কিন্তু তবুও চিকিৎসকের পরামর্শমত ফুল কোর্স ওষুধ শেষ করবে না। এতে কিন্তু খুব বেশি যে লাভ হয় তা নয়। চুলকানির প্রাবল্য হয়ত একটু কমে। কিন্তু প্যাথোজেনিক জীবাণু সুপ্তাবস্থায় থেকে যায় ওখানে।

ফলে, আবার মাস বা বছর পেরুতেই দৌড়াইয়া যান চিকিৎসকের কাছে। আর সাথে একগোছা গালি। “কি চুলের ওষুধ দিসেন কাজ হয়নাই...হেন তেন...” কেন এ কথা বললাম? আসেন যাই তর্জমা এবং তফসিরে... কিছুদিন পূর্বেই সাভারে হয়ে গেল বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম আগ্রাসী মানবসৃষ্ট ডিসেস্টার। এই ঘটনা নিয়ে কিন্তু জল ঘোলাঘোলি-কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি কম হয়নি। প্রথম দিন থেকেই আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (‘মাননীয়’ কথাটা সম্মানসূচক নাকি সারকাজম নিজ দায়িত্বে বুঝে নিয়েন) দুরুম করে একটা কথা বলে, ডাইভার্ট করে ফেললেন পুরা জাতিকে।

অতঃপর শফি সাহেবের হেলিকপ্টারে ভ্রমণ সহ হিফাযতে ইসলামের ৫ তারিখের আশু কর্মসূচি নিয়া জাতি ব্যাপক উদ্বিগ্ন ও উদ্বেলিত। অলরেডি ডাইভার্টেড। বাহ!! মানছি, এত উঁচু পর্যায়ের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর কোনভাবেই উচিত হয়নি, এ ধরণের ভংচং কথা বলা। কিন্তু, উনি পদত্যাগ করলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? উহু...মনে হয়না। ওটা হবে পাছার চুলকানিতে জ্বরের ওষুধ খাওয়ার মত।

নতুন আগত মন্ত্রীর জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা-মালায় গলাগলি-তেল ঢালাঢালি করতে করতে আল্টিমেটলি কি হবে? চাপা পড়ে যাবে সাভারের ঘটনা। সাথে পার পেয়ে যাবে আসল হোতারা। [তবুও ভাগ্য ভাল, যে, রানা সাহেব বাউন্ডারি লাইন থেকে কট বিহাইন্ড (!) হয়েছেন। তার উপর রানা প্লাজার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিকসহ প্রকৌশলী কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। নাইলে, মখা সাহেব বুঝতেন ঠেলার নাম দাদাজি।

] সাভারের উদ্ধারকাজে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল ঈর্ষনীয়ভাবে প্রশংসনীয়। কিন্তু এ অংশগ্রহণের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি। এখন শুরু হল, আসল কাজ। যারা অকালে হারিয়ে গেছে, তাদের প্রতি আমাদের ঋণ শোধ করার অঙ্গীকার। অকাজে সময় নষ্ট না করে আসল কারণগুলো প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রশ্ন হল, এখন কি সত্যিই চুলকানির অয়েন্টমেন্টের খোঁজ নেয়া হচ্ছে? যদি তাই হয়, তবে বিবেচনার বিষয় হল, * দোষী ব্যক্তিদের গোড়া থেকে উৎপাটন করে কি আসলেই শাস্তি হবে? নাকি তারাও এদেশের হুজুগে ঘটনার স্রোতে বিলীন হয়ে যাবে? এখন সেই গোড়া কি সরকারের উঁচুমহলের কেউ, নাকি কারখানার মালিকপক্ষ- সেটা বিচার্য বিষয়। * সাভারের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদের পুনর্বাসনের জন্য দীর্ঘসূত্রিতা কি অব্যাহত থাকবে? নাকি সত্যিই কোন সম্ভাবনা আছে? * ভবিষ্যতে এধরণের বড় দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সরকারের প্রকল্প কি? অবকাঠামোগত-কৌশলগত দৈন্যদশা তো অলরেডি প্রুভড। এসব নিয়ে কি কোন চিন্তা-ভাবনা আছে? * রাজউক সহ সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে যারা টাকা খেয়ে এসন ইল্লিগাল স্ট্রাকচারের অনুমতি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কি কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে? * যেসব ভবন ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলো নিয়ে পদক্ষেপ কি? * আর last but not the least যে বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে, সেটি হল, সাভারের মর্মান্তিক এ ঘটনাটি কি ফেসবুক-ব্লগের আরেকটা ছিন্ন হুজুগে কাহিনী হিসেবেই থাকবে? নাকি এটা নিয়ে ক্রমাগত লেখালেখি-আলোচনা চলবে? বুঝলাম, এক কথা নিয়ে চর্বিত চর্বণ কারই ভাল্লাগে না। মানলাম। অস্বীকার করি না।

কিন্তু কথায় আছে না, “out of sight, out of mind.”? গত কয়েক বছরের ইতিহাস থেকে বুঝলাম, যখনি একটা ইস্যু নিয়ে লেখা-লেখি বন্ধ হয়ে যায়, তখনি বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। এই একটি কারণেই সরকারও আর আমলে নেয়না বিষয়টিকে। হয়ত ভাবে, পাবলিক কিসুদিন ফালাফালি করুক। ঝামেলা মিটে গেলে হাওয়া করে দেয়া যাবে। এটা আপনিও বুঝেন,আমিও বুঝি।

শুধু আমি-আপনি কেন? সবাই বুঝতেছে। এমনকি সাভারের দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক কর্মীও এটা বুঝেন। আজ bdnews.com এ পড়লাম, “সরকার আহতদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দিলেও সেই আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না রংপুরের পারভীন আক্তার। দেয়াল চাপায় হাঁটুর নিচে ভেঙে যাওয়া এই পোশাককর্মী বলেন, “সব ঠাণ্ডা হয়ে গেলে কেউ আর আমাদের কথা মনে রাখবে না। ”... ... এবং সত্যি, এটাই তো ঘটছে।

সাগর-রুনি হত্যাকান্ড, নিমতলি অগ্নিকান্ড, ইলিয়াস আলী গুম হওয়া, স্মার্ট-তাজরিন ফ্যাক্টরি কিংবা বহদ্দারহাটের ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রে এটাই হয়েছে। এজন্য আবেদন, কোনভাবেই যাতে এই সাভারের ঘটনাটি হারিয়ে না যায়। এর জন্য আলোচনা-লেখা-ব্লগিং চালিয়ে যেতে হবে যতদিন না দোষীদের শাস্তি কার্যকর হয় এবং এ ধরণের দুর্ঘটনা এড়ানো ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য সরকার যতদিন ফুল প্রিপেয়ার্ড না হয়। এতদিন ছিল শোকের দিন। কান্নার দিন।

আস্তে আস্তে চোখের পানি মুছে ফেলতে হবে। এখন থেকে শুরু হবে প্রত্যয়ের দিন। পরিকল্পনার দিন। প্রতিকারের দিন। দুষ্টের দমনের দিন।

ওষুধের কোর্সের মাত্র ২দিন গেছে। আরো ৫ দিন বাকি আছে। এখন আপনি ফুল কোর্স খাবেন, না চুলকানি রেখেই দিবেন- এটা আপনার কাছে আমার প্রশ্ন... ফুল কোর্স ওষুধ খাবেন না? না খান। চুলকানির জীবাণু সুপ্তাবস্থায় রেখে দিবেন? আচ্ছা, দেন... আমার কথা শুনবেন কেন? আমি এক কাঙ্গাল। কাঙ্গালের কথা বাসি হলে ফলে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।