আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আতঙ্কের আবহেই ঢাকায় জাতীয়তাবাদের উচ্ছ্বাস। (দাদাদের আনন্দবাজারে বাংলাদেশের খবর)

নিজেকে চেন। চোরাগোপ্তা খুন, অগ্নিসংযোগ, হিংসাত্মক হরতাল, সন্ত্রাসের আশঙ্কা। বাংলাদেশের এই সার্বিক থমথমে আবহে দাঁড়িয়ে নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা সরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও আবেগকেই আবার ফিরে দেখার কৌশল নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে এখানে পা দেওয়ার পর দেখা যাচ্ছে একই শহরের দুই মুখ। এক দিকে হিংসা, অন্য দিকে বিজয় দিবসের মোড়কে জাতীয়তাবাদের উৎসব।

রাজপথে অসংখ্য পোস্টার-ফেস্টুনে বন্দুক হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাদা-কালো ছবি। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অসংখ্য অতিথি সামলাতে হিমশিম ইমিগ্রেশন কমীর্র্রা। অন্য দিকে শহরের নিরাপত্তা একবারেই যুদ্ধকালীন। বিভিন্ন দিক থেকে আসছে জামাতে ইসলামির কর্মীদের ‘জ্বালাও পোড়াও’ আন্দোলনের খবর। বেশ কিছু দিন বিরতির পর ফের ফিরে এসেছে হিংসাত্মক হরতালের রাজনীতি।

গত কালই বুড়িগঙ্গা থেকে মেঘনা পর্যন্ত যে বর্ণাঢ্য জাহাজটি ভাসল, তা বিজয় দিবসের স্মৃতিজাগানিয়া। মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা এ বার এক জাতীয় উৎসবের চেহারায়। ওই জাহাজে ভাসলেন ঋত্বিক ঘটক, মান্না দে, বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের পরবর্তী প্রজন্ম। সঙ্গে ৭১-এর যুদ্ধে সামিল হওয়া ভারতের অবসরপ্রাপ্ত মেজর-লেফটেন্যান্টরা। আজ বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে ৬৩ জন ‘বন্ধুর’ হাতে খেতাব তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তাঁর কথায়, “নতুন প্রজন্ম, যাঁরা এই যুদ্ধ সম্পর্কে জানেন না, বা যারা ভুলে গিয়েছেন, তাঁদের নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়াসেই বিজয় উদযাপন। ” ভারতীয় দূতাবাসের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানাচ্ছেন, “চারিদিকে সাজো সাজো রব। একাত্তরকে যেন পুননির্মাণ করে তুলে ধরা হচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের কাছে। ” এক সপ্তাহ ধরে রেডিওতে সময় তারিখ মিলিয়ে চলছে মুক্তিযুদ্ধের ধারাবিবরণী। দেখানো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তোলা শর্ট ফিল্ম।

বিএনপি-সহ আঠোরো দলের বিরোধী জোটের ঐক্যের ছবিটা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। গত ১৫ দিন ধরে একটার পর একটা সরকার-বিরোধী কর্মসূচি, হরতাল সফল হচ্ছে। অন্য দিকে জামাতে ইসলামির জঙ্গিপনা ক্রমশ চড়া হচ্ছে। সরকারি হিসাব বলছে গত এক সপ্তাহে প্রায় দেড়শোটি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে বাংলাদেশে। গ্যারাজে গিয়েও আগুন লাগানো হয়েছে পুলিশের গাড়িতে।

জখম পুলিশের সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। নওগাঁ জেলা এবং রাজশাহীতে সরাসরি পুলিশকে আক্রমণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই হামলা বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করছে সরকার। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে জামাতের মোট ভোট রয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। অন্য ইসলামি দলগুলিকে ধরলে তা সামান্য বাড়বে।

কিন্তু ভোট শতাংশ বা সংসদে আসন খুব বেশি না হলেও (জামাতের মোট আসন ১৭টি) তাদের প্রভাব বাংলাদেশে যথেষ্ট বাড়ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। অনেকের মতে, ইসলামি দলগুলি সংসদীয় নির্বাচনে আসন জেতার তুলনায় বেশি মনোযোগী হয়েছে বাংলাদেশের সমাজকে ইসলামিকরণ করার দিকে। সেই সূত্র ধরেই জামাতের ভারত-বিরোধী স্বরটিও সমর্থন পাচ্ছে। শেখ হাসিনার কাছে যা নিঃসন্দেহে চাপেরই কারণ। নভেম্বরে ভারত থেকে ফেরার পর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার দিল্লি-বিরোধিতা কমেছে সে দিকেও নজর রেখেছেন জামাত নেতৃবৃন্দ।

কিন্তু হাসিনার বিরুদ্ধে বিএনপি-কে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করাটাই তাঁদের লক্ষ্য। তাই বিএনপি-কে আবার পুরনো জায়গায় নিয়ে আসার একটা চেষ্টা থেকেই যাচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় ঘোষণার কথা ছিল চলতি সপ্তাহে। খালেদার সময়ে জামাতের কয়েক জন নেতা-মন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে, এমনটা ভাবা গিয়েছিল। বিএনপি নেতা আব্দুল আলিম, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীরও একই পরিণতি হতে পারে মনে করা হচ্ছিল।

কিন্তু বিজয়ের এই মাসেই শাস্তি ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে উস্কে দেওয়া যে আওয়ামি লিগের ‘ডিসেম্বর পরিকল্পনা’, তা বুঝতে পেরে হিংসাত্মক অবরোধে নেমেছে জামাত ও বিএনপি। ফলস্বরূপ শাস্তি ঘোষণা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে হাসিনা সরকার। সব মিলিয়ে উৎসব ও আতঙ্ক দু’টিরই সহাবস্থান এখন বাংলাদেশে। অগ্নি রায় • ঢাকা ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।