আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুমি যখন আমাকে 'কনফিউজড' বল... আমি 'কনফিডেন্টলি' স্বীকার করি । নিজেকে তুমি যখন 'কনফিডেন্ট' বল... আমি 'কনফিউজড' হয়ে স্বীকার করি..

নিঃশঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর কোনো বড় সম্পদ নেই। এই জিনিসটা মোটামুটিভাবে আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আমাকে অবাক করে আসছে । বিতার্কিক এবং উকিলদের কাজটা আসলে কী ! এদের কাজটা হলো যুক্তি তথ্য পরিসংখ্যনের মাধ্যমে কোন একটা সিদ্ধান্তে আসা বা সিদ্ধান্ত আগে থেকেই জানা আছে সেটাকে জাস্টিফাই করা । ব্যাপারটার মধ্যে কিছু মজা নিহিত আছে ... আমার অন্তত তাই মনে হয় । ধরা যাক, বিতর্কের বিষয় হিসাবে এমন একটা টপিক নেয়া হলো যেটা নিয়ে কোন বিতর্ক নাই ! যেমন : জীবনে উন্নতির জন্য পরিশ্রমের কোন প্রয়োজন নেই ।

এটার পক্ষে কথা বলার জন্যও অবশ্যই একটা দল থাকবে ! তারচেয়ে বড় কথা, এই টপিকের বিপক্ষে যারা বলছে তারা যদি খুব দক্ষ বক্তা না হয় দেখা যাবে তর্কে তারা হেরেই গেল! তাহলে সিদ্ধান্ত কি দাড়ালো ? আমরা কি সিদ্ধান্তে চলে আসবো যে আসলেই পরিশ্রমের দরকার নেই । মজার পরিমান এক কাঠি বাড়ে যখন টপিক একই রেখে, যে দলটি জিতল অর্থাত্‍ পক্ষের দল তাদেরকে এবার টপিকের বিপক্ষে বলতে বলা হয়। দেখা যাবে দক্ষ বক্তা থাকার কারনে দলটি এবারও জিতে গেল! এবার তাহলে আমরা কী সিদ্ধান্তে আসব !! ব্যাপারটা কী আসলেই গোলমেলে না ? নাকি শুধু আমার কাছেই গোলমেলে লাগে এবার ধরা যাক , আমি আমার চেয়ে দুর্বল কোন মানুষের জমি বা বাড়ি জোরপূর্বক দখল করে নিলাম । এরপর ব্যাপারটা আদালত পর্যন্ত গড়াল । এবং দক্ষ ও ঝানু কোন আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার কারনে সে যুক্তি তর্কে আইনের ফাক গলে মামলার রায় আমার পক্ষে নিয়ে আসলো ।

ব্যাপারটা আসলে কি দাড়াল শেষ পর্যন্ত আমি জানি আমি অপরাধী কিন্তু প্রমান করা যাচ্ছে না যুক্তির অভাবে ! ব্যাপারটা কি যথেষ্ট চমকপ্রদ না? এরপর অনেকে কোন ঘটনায় নিজের সম্পৃকততা বর্ননা করতে গিয়ে যুক্তি দেখায় বা অন্যভাবে বললে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে । এই জিনিসটা নিয়েও আমার মনে সীমাহীন জিজ্ঞাসা । নিজের মত করে কিছু ভাবনা যুক্তি উপস্থাপন করলেই কি 'দোষ' এড়ানো যায় ? আবার এইযে 'দোষ' শব্দটা লিখলাম এটার সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যই বা কী? আমরা দোষ বলব কোনটাকে আর দোষ বলবোনা কোনটাকে ? সেক্ষেত্রে একটা রেফারেন্স দরকার হয় । ধরলাম রেফারেন্সটা হলো সামাজিক রীতিনীতি বা ঐতিহ্য । কিন্তু এই সামাজিক রীতিনীতি বা ট্র্যাডিশন গুলোর সবগুলো কি খুব যুক্তিযুক্ত! যদি হতোই তাহলে সারা দেশে বা বিশ্বে এই প্রচলিত রীতিগুলোর একটা সার্বজনীন রূপ তৈরী হতো ।

সেটা তো হয় নি । বরং এক এলাকার রীতি অন্য এলাকার জন্য কুরুচিপূর্ন একটি দোষ হিসাবে পরিগনিত হতে পারে । তারমানে সামাজিক রীতিনীতিকে একতরফা রেফারেন্স ধরে তেমন লাভ নেই । ধর্মকে রেফারেন্স ধরা যেতে পারে । সেক্ষেত্রে বলা যায় ধর্ম জিনিসটা আমরা কতজন পরিষ্কারভাবে জানি? আমরা কি তর্ক বিতর্কের মাধ্যমে ধর্ম শিখেছি? বা সেটার প্রচলন কী আমাদের দেশে বা সমাজে আছে? আমরা বেশীর ভাগই জানি, ধর্ম মানে হলো বিশ্বাস ।

আমরা বেশ তৃপ্তির সাথেই ধর্মকে মেনে নেই । তবে দেশে নাস্তিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । ধর্মের বিরোধীতাপূর্ন লেখালেখি এখন মোটামুটি শর্টকাটে জনপ্রিয়তা পাওয়ার একটা ভালো উপায় বলেই মনে হয় । তবে একথা আমি স্বীকার করব ধর্মের ফাক ফোকর আছে । অথবা আমি ধর্ম কম জানি তাই এরকমটা মনে হয় ।

আমাদের দেশের যে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট তাতে নামে আমরা একটা মুসলিম রাষ্ট্র তবে কর্মকান্ড কোরআন সুন্নাহ তে বর্নিত আচরনের সাথে কতটা সঙ্গতিপূর্ন সেটা বুঝতে ধর্ম খুব বেশী জানতে হয় না । এবং এটা স্বীকার করতেও আমার কোনই আপত্তি নাই যে কোরান সুন্নাহ এর নিয়মকানুন গুলোর পূর্ন প্রতিফলন ঘটানো একপ্রকারের অবাস্তব কল্পনা । কারনটা বুঝার জন্য এতটুকু বুঝলেই হয় ... ইসলাম নাকি গনতন্ত্র সাপোর্ট করে না , আমরা বেশীরভাগই আচরন,কথা পোশাকে পূর্ন ইসলামি না , ছবি আকা বা তোলা ইসলাম সাপোর্ট করে কিনা আমি স্পষ্ট জানিনা, গান বাজনাও নিষেধ । তারমানে ধর্মকে অবলম্বন করে ঠিক না ভুল এই সিদ্ধান্তে আসতে চাইলে কনফিউশনের সুযোগ থাকছেই । যা মনে হচ্ছে সেই 'দোষ' বা গুন শব্দটার সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য বা সীমারেখা নির্ধারনে মোরালিটি (ভাই মোলারিটি বলি নাই কিন্তু!) বা নৈতিকতার ব্যাপারটা বেশ শক্তিশালী ।

সোজা কথায় দেখে শুনে বুঝে নিজের বিবেচনায় যেটাকে দোষ মনে হয় সেটাকে দোষ বলা যেতে পারে । কিন্তু তাতেই কি সমস্যা মিটে যায় ? মিটে কিনা দেখি ... প্রশ্ন ১ : আমরা জানি, ইদানিংকালে ছোট পিচ্চিগুলার স্কুলে ভর্তি করার উপায় হিসাবে লটারি সিস্টেম চালু হইসে। ফলে আগে এই পোলাপানগুলা যেই যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব নিয়ে ভর্তিকোচিং বা লেখাপড়া টা করত সেটা থেকে মুক্তি পাচ্ছে । অভিভাবকদের হয়রানি কমছে । এখন প্রশ্ন হলো, আপনার কি মনে হয়? এই পদ্ধতি কি শিশুগুলোর জন্য ভালো নাকি খারাপ ? আমি জানি না, আপনি এটাকে কি হিসাবে দেখবেন ।

হয়তো ভালো হিসাবেই । কিন্তু আমি বলে রাখছি, আপনি যদি শিশুদের সাইকোলজিক্যাল দিক গুলো বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষনার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো জানতে পারতেন হয়তো আপনার সিদ্ধান্তটা পরিবর্তন হয়ে যেত। আমার নিজের সুযোগ হয়েছে খুব বড় মাপের তিনজন চাইল্ড সাইকোলজিস্ট দের এ ব্যাপারে আলোচনা শুনার । ফলে আপনার সিদ্ধান্ত আর আমার সিদ্ধান্ত একই হবে না । শুধুমাত্র দুজনের জ্ঞানের পরিধির তারতম্যের কারনে ।

এবং আমরা সারাদিন ধরেই তর্ক করে যেতে পারব যেটা থেকে কোন সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব না । আমি আসলে এটাই বুঝাতে চাইছি মোরালিটি বা দেখে শুনে নিজের যেটা ঠিক মনে হয় ,সেই অবস্থান থেকেও সঠিক সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব না । মোরালিটি একটা এবস্ট্রাক্ট ব্যাপার । ব্যক্তিভেদেও ভিন্নতা ঘটে । সোজা কথায় তুমি যেটাকে ঠিক মনে করছো সেটা যে 'আসলেই' ঠিক সেটা কীভাবে বুঝা যাবে! আবার এই যে 'আসলেই' শব্দটা বললাম ... এই আসলটাই বা আমি নির্ধারন করছি কিসের সাপেক্ষে! তাই আমার ধারনা কনফিউশনের একটা দুষ্টচক্র তৈরী হচ্ছে ।

প্রশ্ন ২: হিটলারের কাছেও তার কাজের যুক্তি ছিল । মানবসভ্যতার কতটুকু কাজে লেগেছে সে যুক্তি! প্রশ্ন ৩ : মানুষ ব্যক্তিগত পর্যায়ে 'স্বাধীনতা' শব্দটা দিয়ে যে কী বুঝাতে চায় আমার অনুর্বর ছোট্ট মাথায় সেটা ধরে না। স্বাধীনতা মানে কি যা খুশি তা করার অধিকার রাখা ? একজন মানুষের যেমন খুশি জামা পড়ার স্বাধীনতা আছে মানেই কি সে বিবস্ত্র হয়ে রাস্তায় ঘুরতে পারে ? সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা আছে বলেই কি একটা ছেলে বা মেয়ে একসাথে দুই তিনটা প্রেম বা পরকীয়া করে বেড়াতে পারে ? অজস্র যুক্তির তুবড়ি ছুটানো যাবে এসব প্রসঙ্গে । কাজের কাজ কি কিছু হবে? কোনটা স্বাধীনতা কোনটা স্বেচ্ছাচারিতা আমরা কি গুলিয়ে ফেলছি না ! এইগুলোর সংজ্ঞা হয়ে পড়ছে ব্যাক্তিনির্ভর। তখন দেখতে হচ্ছে ব্যাক্তির ক্ষমতা কোন পর্যায়ের ।

তার সংজ্ঞা কে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন আছে কিনা... একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে , যে তোমার বস তার মোরালিটিই আসলে মোরালিটি ... তার চিন্তাই আসলে প্রগতিশীল চিন্তা ... তার যুক্তিই আসলে যুক্তি ... কারন সে তোমার বস ... তুমি তার উপর নির্ভরশীল! তুমি দুর্বল হলে বা বাধ্য হলে সেটাকে মেনে নিবা আর তোমার সাহস থাকলে মেনে নিবানা ... হিসাবটা কিন্তু সোজাই! ২ টা ভালো কথা দিয়ে লেখাটা শেষ করি - তোমার যুক্তি গুলো কাউকে বোলো না । সে যদি তোমার বন্ধু হয়, যুক্তির প্রয়োজন হবে না । সে যদি তোমার শত্রু হয় , তোমার যুক্তি সে বিশ্বাস করবে না । ভালো -মন্দ ,সাদা -কালো ,সুন্দর -কুতসিত এসব কিছুই না ... পৃথিবীতে মানুষ হলো দুই ধরনের ... পছন্দের মানুষ আর অপছন্দের মানুষ । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।