আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সে এক রহস্য

অনেকবার লিখি লিখি করেও লেখা হয়ে ওঠেনি শুধু কর্মব্যস্ততার জন্য। তাই ব্লগও খোলা হয়নি । এখন খুলে ফেললাম ব্লগ আর শুরু হলো পথচলা । এক কর্মব্যস্ত সকালে কোনোমতে সকালের খাবারটা সেরে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিঁড়ি দিয়ে নামছি। হঠাৎ তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো।

জুন-জুলাইয়ের আকাশটা অবশ্য এ রকম মেঘ-বৃষ্টির খেলায় ব্যস্ত থাকে। মিনিট দশেক বৃষ্টির পর একটু যখন কমে এল, তখন একটা রিকশা নিয়ে ব্রিজের মোড়ে রওনা হলাম। উদ্দেশ্য, ওখান থেকে চার্জার-গাড়ি করে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে যাব। ব্রিজের মোড়ে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে তড়িঘড়ি একটা চলন্ত চার্জার-গাড়িতে উঠলাম। গাড়িটা কেবল ফুলের দোকানগুলো পার হয়ে কথাকলি লাইব্রেরির কাছে পৌঁছেছে, হঠাৎ মনে হলো, আমার পকেট কেমন হালকা লাগছে।

হাতরে দেখি, আমার মানিব্যাগ নেই। ওর মধ্যে মোটামুটি দরকারি কিছু কাগজও ছিল। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ব্যাগে প্রয়োজনীয় টাকা আর কাগজপত্র ছাড়া তেমন কিছু থাকেও না। তবে সেদিন আমার ব্যাগে বেতন তোলার জন্য সই করা একটা চেকের পাতা ছিল, যদিও সেই টাকার অঙ্ক ছিল সামান্যই। যা-ই হোক, গাড়িটা থামিয়ে নেমে পড়লাম।

একটা রিকশা নিয়ে আবার ওই ব্রিজের মোড়েই গেলাম, যেখানে প্রথমবার রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়েছিলাম। ওখানে নেমে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলাম। পাশেই জুতা সেলাই করার ছোট্ট একটা দোকান। ছাতার নিচে বসে একজন জুতা সেলাই করে যাচ্ছেন আপন মনে। হয়তো চলার পথে কখনো আনমনে তাকিয়েছি তাঁর দিকে, কিন্তু দেখা হয়ে ওঠেনি।

তাকানো আর দেখা তো এক কথা নয়। সেই ছাতার নিচ থেকে লোকটি মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি কিছু খুঁজিছেন, কিছু কি তুমি হ্যারায় ফেলিছেন?’ এখানকার স্থানীয় লোকজন এভাবেই কথা বলে; তুমি আর আপনি মিলিয়ে। আমি বললাম, হ্যাঁ, আপনার দোকানের সামনেই রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিলাম, কিন্তু তারপর আর মানিব্যাগটি পাচ্ছি না। কালো রংয়ের। আপনি কি দেখেছেন? একটু মুচকি হেসে মানিব্যাগটি বের করে দিলেন তিনি।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে রইলাম। খুব তাড়া ছিল, তাই ‘আসছি’ বলে নিজ গন্তব্যে রওনা হলাম। স্কুলে পৌঁছাতে মিনিট পনেরো দেরি হলো। বৃষ্টি ছিল বলে কোনো কৈফিয়ত কোথাও দিতে হলো না। মনটা অন্য রকম এক অনুভূতিতে ছেয়ে রইল।

ওই ভদ্রলোককে বকশিশ দেওয়ার স্পর্ধাও আমার হয়নি। অনেক দিন পর ওই রকমই ব্যস্ত এক সকালে স্কুলে যাওয়ার পথেই গাড়ি পরিবর্তন করার ফাঁকে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, সামনে তো ঈদ, আমি যদি আপনাকে একটি লুঙ্গি উপহার দিই, আপনি কি নেবেন? উনি হেসে বললেন, ‘সে হবিনি। ’ অর্থাৎ, তাঁর সম্মতি আছে। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত মানুষকে কত কিছু শিখতে হয়। কত নীতিকথা শিখি আমরা বই পড়ে।

বইয়ের ভারী সেসব কথা সেই জুতা সেলাই করা মানুষটি জানেন না; তবু তো আমাদের সেই মানুষটির কাছেই সততার শিক্ষা নিতে হয়। চারদিকের অসামঞ্জস্যতা যখন মনপ্রাণকে বিরক্ত আর বিভ্রান্ত করে তোলে, তখন পথে দেখা এই মহৎ ব্যক্তিদের মহত্ত্বগুলো মনকে ভরে দেয়। মনে হয় কাজী নজরুল ইসলামের সেই লাইন, ''শাস্ত্র না ঘেঁটে ডুব দাও সখা, সত্য সিন্ধুজলে। '' ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।