আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ২

বলার তেমন কিছু নাই... হাবাগোবা একজন মানুষ! নতুন ব্লগার... ব্লগ জিনিসটা এখনো আয়ত্ত্বে আসেনাই... কোয়ান্টাম কালচার এবং বিজ্ঞান ও ইসলাম ‌॥ পর্ব ১ কোয়ান্টাম মেথড প্রথমেই বেসিক প্রশ্ন - কোয়ান্টাম মেথড কি? তাদের ভাষ্যমতে এককথায় এটি - “Science of Living”. আশ্রম ও খানকার চৌহদ্দি থেকে বের করে ধ্যানকে গণমানুষের আত্মউন্নয়ন ও ব্যক্তিত্বের বিকাশে প্রয়োগ করাই তাদের উদ্দেশ্য। [৯] ধ্যানচর্চার মাধ্যমে প্রাচ্যের সাধনা আর আধুনিক বিজ্ঞানের নির্যাসে সঞ্জীবিত কোয়ান্টাম মেথড মেডিটেশন প্রক্রিয়া। সাধকদের সাধনা ও মনোবিজ্ঞানের প্রক্রিয়ার সমন্বয়ের ফলে সহজে মেডিটেটিভ লেভেলে পৌছে আত্মনিমগ্ন হওয়া যায়। [১০] সোজা কথায় ধ্যান চর্চার মাধ্যমে জীবনযাপনের বিজ্ঞান এটি। কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও কোয়ান্টাম মেথড কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের এই “কোয়ান্টাম” নামটি কিন্তু এসেছে কোয়ান্টাম মেকানিক্স থেকেই।

এ ব্যাপারে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ভাষ্য হচ্ছে - "কোয়ান্টাম শব্দটি নেয়া হয়েছে কোয়ান্টাম মেকানিক্স থেকে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আগে বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রিত হতো নিউটনিয়ান মেকানিক্স দিয়ে। আমরা জানি, বিজ্ঞানী নিউটন এবং ম্যাক্সওয়েলের সূত্র অনুসরণ করে পদার্থবিজ্ঞান ঊনবিংশ শতাব্দির শেষভাগে এক সুশৃঙ্খল বিশ্বদৃষ্টি উপস্থাপন করে। এই বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সবকিছুই ছিলো এক নিয়মের অধীন, সবকিছুই হিসেব করে বলে দেয়া যেত। সেখানে বিজ্ঞানীর কোনো ভূমিকা থাকলো না।

বিজ্ঞানী ছিলেন একজন দর্শকমাত্র। আর পুরো প্রক্রিয়া হচ্ছে দর্শক-মন নিরপেক্ষ। অর্থাৎ মনের কোনো ভূমিকা আর থাকলো না। বিজ্ঞান থেকে মন নির্বাসিত হলো এবং বস্ত্তবাদের বিকাশ ঘটলো। " [১১] "পরমাণু পর্যন্ত নিউটনিয়ান মেকানিক্স ভালোভাবেই সবকিছুর ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হচ্ছিলো।

কিন্তু বিজ্ঞান যখন পরমাণুর গভীরে বা সাব-এটমিক লেভেলে ঢুকলো তখন দেখা গেল, একটা সাব-এটমিক পার্টিকেল-পার্টিকেল ফর্মে আছে, না এনার্জি ফর্মে আছে তা হিসেব করে বলা যাচ্ছে না, দেখে বলতে হচ্ছে। যেকোনো সময় এটা পার্টিকেল ফর্মে থাকতে পারে, যেকোনো সময় এটা এনার্জি ফর্মে থাকতে পারে। এটাই হলো ওয়ার্নার হেইজেনবার্গের আনসারটেইনিটি প্রিন্সিপল। বিজ্ঞানে তখন আবার দর্শকের আগমন ঘটলো। "[১১] "কোয়ান্টাম মেকানিক্স বিংশ শতাব্দিতে এসে বিজ্ঞান থেকে নির্বাসিত মনকে আবার বিজ্ঞানে পুনর্বাসিত করে।

যেহেতু কোয়ান্টাম মেকানিক্স বিজ্ঞান থেকে নির্বাসিত মনকে বিজ্ঞানে পুনর্বাসিত করে, তাই চেতনার শক্তিকে, মনের বিশাল ক্ষমতাকে নিজের ও মানবতার কল্যাণে ব্যবহারের সহজ ও পরীক্ষিত এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটির নামকরণ করা হয়েছে কোয়ান্টাম মেথড। " [১১] "মন ও চেতনার ক্ষমতা সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গির সার-সংক্ষেপ নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী ইউজিন উইগনার তাঁর 'Remarks on the Mind-Body Question' নিবন্ধে চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, অধিকাংশ পদার্থ বিজ্ঞানীই এই সত্যকে মেনে নিয়েছেন যে, চিন্তা অর্থাৎ মনই হচ্ছে মূল। ‘চেতনার উল্লেখ ছাড়া কোয়ান্টাম মেকানিক্স-এর নিয়মকে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণভাবে গঠন করা সম্ভব নয়। ’ নিবন্ধের উপসংহারে বিজ্ঞানী উইগনার বলেছেন, ‘বিশ্বের বৈজ্ঞানিক গবেষণা শেষ পর্যন্ত চেতনাকে চূড়ান্ত সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

’" [১২] যদিও কোয়ান্টাম মেকানিক্স কি বা এটা কি ধরণের থিওরির কথা বলে - এসব ব্যাপারে কোন আলোচনা করেনি কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। তবে দেখা যাচ্ছে যে কোয়ান্টাম মেকানিক্সে যেহেতু চেতনার বা মনের একটা কনসেপ্ট ঢুকেছিল সে জন্য কোয়ান্টাম মেডিটেশনকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। এবং একারণেই এই ধ্যানচর্চার নামকরণ করা হয়েছে - কোয়ান্টাম মেডিটেশন। এটা ছাড়া কেয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে এর কোনই সম্পর্ক নেই, অর্থাৎ অনিশ্চয়তার সূত্র বা মাল্টিভার্স থিওরি বা অন্য কোন কিছুর সাথে এর কোনই যোগাযোগ নেই! আমরা একটু আগেই পড়েছিলাম, বিজ্ঞানী ইউজিন উইগনারের হাত ধরেই কোয়ান্টাম মেকানিক্সে “চেতনা” জিনিসটার আগমন ঘটে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই চেতনার ব্যাপারটি থেকে ইউজিন উইগনার নিজেই সরে দাঁড়ান।

[৮] শুধু তাই নয়, শ্রোডিঙ্গারের থট এক্সপেরিমেন্টে ওয়েভ ফাংশন কলাপ্সে কনসাস অবজারভারের ভূমিকার প্রয়োজনই নেই এমনটা পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়েছে। দেখানো হয়েছে বাক্সে রাখা গিগার কাউন্টারই যথেষ্ট ওয়েভ ফাংশন কলাপ্স করাতে সেখানে দর্শক বা চেতনা বা মন দরকার পড়বে না। [১৩] তাছাড়া, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আরেকটি বহুল পরিচিত ইন্টারপ্রেটেশন হচ্ছে মেনি-ওয়ার্ল্ড ইন্টারপ্রেটেশন বা মাল্টিভার্স ইন্টারপ্রেটেশন। এই ইন্টারপ্রেটেশনে ওয়েভ ফাংশন আদৌও কলাপ্স হয়না বলা হয়েছে। এই ইন্টারপ্রেটেশনের পক্ষে অনেক বিখ্যাত পদার্থবিদকেই দেখা যায়, তাদের মধ্যে আছেন স্টিফেন হকিং, ভাইনবার্গ প্রমুখ[১৪]।

আরও আছে অবজেক্টিভ কলাপ্স থিওরি, এ থিওরিতে বলা হয়েছে চেতনা নয় বরং বিড়াল নিজেই নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে। এর অর্থ হল বিড়াল একটা নিশ্বাস নিলো, অতিক্ষুদ্র হলেও তার ভর বাড়ল সুতরাং ওয়েভ ফাংশন কলাপ্স। নিঃশ্বাস ছাড়ল? সাথে সাথে ওয়েভ ফাংশন কলাপ্স। তাপমাত্রা পরিবর্তন হল? সাথে সাথে কলাপ্স! অর্থাৎ কোন মন বা চেতনা সম্পন্ন দর্শকের বাক্স খুলে বিড়াল দেখার আগেই ওয়েভ ফাংশন কলাপ্স হয়ে বসে আছে! [১৫] তো আমরা দেখতে পাচ্ছি, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন যে দাবী করছে যে চেতনাই কোয়ান্টাম থিওরির সবকিছু, আসলে ব্যাপার সেটা না। উপরন্তু এই চেতনা জিনিসটা ভৌতবিজ্ঞানের কিছু না হওয়াতে এবং একে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়না দেখেই কোয়ান্টাম বিশ্বে চেতনাকে বাদ দেবার জন্য অনেক থিওরি তৈরি ও প্রমানিত হয়।

চেতনা নামের জিনিসটাই ছাড়াই বেশ ভালোভাবেই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সবকিছু চলছে। অবশ্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন শুধু চেতনাই না, মানুষের মনকে ইলেক্ট্রনের সাথেও তুলনা করেছে। মন কিভাবে ইলেক্ট্রনের সাথে তুলনীয় হতে পারে সেটা অবশ্য বোধগম্য নয়। তাদের কথানুযায়ী - "তাছাড়া কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে, পরমাণুর ভেতরে নিউক্লিয়াসকে ঘিরে একটি ইলেকট্রন যখন তার কক্ষপথে ঘোরে, তখন ঘুরতে ঘুরতে আস্তে আস্তে কেন্দ্রের দিকে নামতে শুরু করে। এরই একপর্যায়ে সে একটা উচ্চতর কক্ষপথে লাফ দেয়।

খুব দ্রুত ঘটা এ উচ্চস্তরে উত্তরণ বা উত্থানকে বলা হয় কোয়ান্টাম লিপ বা কোয়ান্টাম উল্লম্ফন। তেমনি একজন মানুষ যখন ধ্যান করে, আত্মনিমগ্নতার গভীরে চলে যায়, তখন তার মধ্যেও একটা উপলব্ধির স্ফূরণ ঘটে, যা তাকে আগের চেয়ে উন্নততর মানসিক ও আত্মিক স্তরে নিয়ে যায়। কোয়ান্টাম লিপের মতো তার চেতনার জগতেও একটা উল্লম্ফন হয়। কোয়ান্টাম মেথড নামকরণের এটাও একটা কারণ। " [১৬] ভালকথা যে ইলেক্ট্রন উচ্চতর শক্তিস্তরে লাফ দেয়, যাকে এখানে উত্থানের সাথে তুলনা করা হয়েছে।

পরের লাইনগুলোতে যা বলা হয়েছে যে তার সারসংক্ষেপ হচ্ছে যে, ধ্যানেও নাকি লোকজনের এই রকম আত্মিক উত্থান ঘটে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে, ইলেক্ট্রন শুধু উচ্চ শক্তিস্তরেই লাফ দেয়না বরং নিম্ন শক্তিস্তরেও লাফ দেয়। [১৭] ইলেক্ট্রনের উচ্চস্তরে লাফানোকে উত্থান বলা হলে, নিম্নস্তরে লাফানোকে নিশ্চয়ই পতন বলা হবে। তো সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা কি দাঁড়ায়? ধ্যানে লোকজনের আত্মিক পতনও ঘটে? সোজা কথা, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে কোয়ান্টাম মেথডের কোন সম্পর্কই নেই। ইনফ্যাক্ট বিজ্ঞানের সাথেই এর কোন সম্পর্ক নেই।

শুধুমাত্র চটকদার নাম নেবার জন্য “কোয়ান্টাম” শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আমার ধারণা। যদিও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন দাবী করে যাচ্ছে যে এটা নাকি বিজ্ঞান- "তাই আমরা কোয়ান্টামকে বলি জীবনযাপনের বিজ্ঞান, সফল জীবনের বিজ্ঞান। " [১৬] কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের লোগোতেও লেখা আছে - “Science of Living”। কিন্তু এখানে বিজ্ঞানের কোন ব্যাপারটা আসলো, যার কারণে একে আমরা বিজ্ঞান বলব, সেটাই বুঝলাম না! কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে তো বৈজ্ঞানিক উপায়ে কিছু হচ্ছেনা, কোন গবেষণা হচ্ছে না। কেবল মেডিটেশন হচ্ছে।

তাহলে কি বলব যে ধ্যান করাটা বিজ্ঞান? কিন্তু কেন? ধ্যানকে তো মাপজোখ করা যাচ্ছেনা। কোন গানিতিক সূত্র দিয়ে একে সংজ্ঞায়িত করা যাচ্ছেনা। তবে কেন কোয়ান্টাম মেথড বিজ্ঞান বা বৈজ্ঞানিক কিছু একটা হবে? চলবে... রেফারেন্সসমূহঃ ৯। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। (উৎসর্গ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য) ১০।

http://quantummethod.org.bd/about-quantum ১১। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ । । মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২। পৃষ্ঠা - ১৫।

১২। সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক; পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণ - জানুয়ারী, ২০০০। পৃষ্ঠা - ১৩। ১৩। R.H.S. Carpenter, Andrew J. Anderson; The death of Schrödinger’s cat and of consciousness-based quantum wave-function collapse; Annales de la Fondation Louis de Broglie, Volume 31, no 1, pp-45, 2006. ১৪।

Click This Link ১৫। Click This Link ১৬। কোয়ান্টাম হাজারো প্রশ্নের জবাব - পর্ব ১ । । মেডিটেশন - মহাজাতক; প্রথম প্রকাশ - ১৫ জুন, ২০১২।

পৃষ্ঠা - ১৬। ১৭। http://en.wikipedia.org/wiki/Energy_level ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৬২ বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.