আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুলনা-২

লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। তুলনা-২ মোহাম্মদ ইসহাক খান ১. সোহেল সিঁড়ি ভেঙে ধীরে ধীরে উঠলো। পাঁচতলায় তার ফ্ল্যাট।

লিফট নেই বলে উঠতে বেশ কষ্ট হয়। কিন্তু কী আর করা। কলিংবেল বাজানোর আগে সে একবার ঘড়ি দেখে নিলো। রাত সাড়ে ন'টা বাজছে। কলিংবেলের শব্দটা সে নিজেই কান পেতে শোনে।

অবিকল একটা পাখির ডাক। দরজাটা খুলে গেল। নাজিয়া দরজা খুলে দিলো। হাসিমুখে তাকালো, অভিযোগের দৃষ্টিতে। হাতজোড় করলো সোহেল।

আর দেরী হবে না। নাজিয়া বলল, থাক, আর ঢং করতে হবে না। রোজ রোজ তো একই কথা। ভেতরে এসো। সোহেল ঘরে ঢুকতেই বাবুকে আবিষ্কার করে।

সে মেঝেতে বসে খেলছিল। খেলনা ঘোড়া দিয়ে। ঘোড়া মাটির ওপর চালাচ্ছে, আর নিজেই মুখ দিয়ে শব্দ করছে, ঝিক ঝিক, ঝিক ঝিক। ঝিক ঝিক শব্দ হয় রেলগাড়ির, ঘোড়া চালালে হয় না। কিন্তু বাবুর এতসব বোঝার বয়স হয় নি, তার কাছে "মিঁয়াও" যা, "ঘেউ" ও তাই।

বাবার দিকে তাকিয়ে দন্তহীন মুখখানা তুলে ঠোঁট গোল করে হাসলো বাবু। তারপর মেঝেতে গড়াগড়ি দেয়া শুরু করলো। রোজ তার বাবা অফিস থেকে ফিরলেই খুশিতে সে মেঝেতে গড়াগড়ি দেয়। শিশুদের অদ্ভুত অদ্ভুত স্বভাব থাকে। এগিয়ে গিয়ে ছেলেকে কোলে তুলে নেয় সোহেল।

বাবু আধো আধো গলায় বলে, বাবা, বাবা, "ঘুলা। " "ঘুলা" মানে হচ্ছে ঘোড়া। "ড়"-এর মতো জটিল বর্ণ এখনো কচি মুখে স্থান পায় নি। "ঘ" কী করে সে আয়ত্ত করলো এটা একটা রহস্য। নাজিয়া এসে বলে, যাও, ফ্রেশ হয়ে এসো।

আমি খাবার দিচ্ছি। উফ, কত দেরী হয়ে গেছে দেখেছ? বাবু খায় নি, তুমি এলে খাবে। দুষ্টু ছেলেটাকে নিয়ে আর পারি না। রতনের মা, বাথরুমে গরম পানি দাও। "রতনের মা" নামের বুয়া বাথরুমে গরম পানির পাতিল রেখে আসে।

কাজের বুয়াদের সাধারণত কোন নাম থাকে না, তাদেরকে ডাকা হয়ে থাকে তাদের সন্তানের নামে। দ্রুত বাথরুম থেকে আগুন-গরম পানি দিয়ে গোসল করে বেরিয়ে আসে সোহেল। দরজাটা খুলতেই বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে ধোঁয়া। গরম পানির বাষ্পে বাথরুমের আয়না ঝাপসা হয়ে গেছে। রাতের বেলা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলেই সোহেলের নির্ঘাত ঠাণ্ডা লেগে যাবে, তাই নাজিয়া গরম পানি করে রাখে।

তার স্বামীটির শরীর-স্বাস্থ্য অত্যন্ত নাজুক, এক ফোঁটা বৃষ্টির পানি গায়ে পড়লেই সারাদিন হাঁচি দিতে দিতে অস্থির হয়ে পড়ে। সোহেল এসে আবিষ্কার করে, খাবারের প্লেট হাতে বাবুর পেছনে পেছনে ছুটছে নাজিয়া। বাবু কিছুতেই খাবে না, বাবাকে ছাড়া। বাবু, জ্বালাতন কোরো না তো। খাও বলছি।

বললেই কি শোনে সে? দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে অন্য ঘরে। সোহেলকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তার স্ত্রী। বলে, ওকে একটু ধর তো। খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে আসি। তারপর একসাথে খাবো না হয়।

ঠিক আছে। ছেলেকে পাকড়াও করে ধরে নিয়ে আসে সোহেল, পাঁজাকোলা করে। এবার বাবু আর বাধা দেয় না। চুপচাপ খেয়ে নেয়। বাবুর বয়স আর কত, এইটুকু বাচ্চাকে খাওয়াতেই বাবা-মা দুজনের কালঘাম ছুটে যায় রোজ, বিশেষ করে রাতে তো কথাই নেই।

একদিক থেকে বাবা ওকে ধরে রেখেছে, নানারকম ছড়া বলে আর খেলনা দেখিয়ে ভুলিয়ে রাখছে, আর অন্যদিক থেকে মা তাকে হাঁ করিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে, দৃশ্যটি নিঃসন্দেহে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দৃশ্য। বাবুকে বিছানায় ঘুম পাড়িয়ে রেখে আসে নাজিয়া। কপালে জমে উঠেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম, শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে নেয় সে। খাবার টেবিলে এসে বসে সে। সোহেল তাকে প্লেট এগিয়ে দেয়, ভাত বেড়ে দেয়।

বলে, বাবু সারাদিন জ্বালাতন করে, ভাল লাগে? নাজিয়া হাসে, কিছু বলে না। মা যখন হয়েছে, তখন জ্বালাতনটাও সইতেই হবে, ঠিক যেমন নাজিয়া আর সোহেল যখন ছোট ছিল, তাদের বাবা-মা সয়েছিলেন। খেয়েদেয়ে দুজন কিছুক্ষণ টিভি দেখে দুজন। দশ-পনেরো মিনিট, তার বেশি না। চোয়াল ভেঙে হাই ওঠে সোহেলের।

চল, শুয়ে পড়ি গিয়ে। নাজিয়া বলে। চল। দুজন শুয়ে আছে। সোহেল ঘুমন্ত পুত্রের কপালে চুমু খায়।

নাজিয়া বাবুকে নিজের কাছে টেনে নেয়, আস্তে আস্তে গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। নাজিয়া সারাদিন ঘরের কাজ করেছে, সে ক্লান্ত। সোহেল সারাদিন অফিস করেছে, সে-ও ক্লান্ত। একসময় দুজনই ঘুমিয়ে পড়ে। সোহেল লক্ষ করে, নাজিয়া কি নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।

সোহেল খুব সাধারণ একজন মানুষ। তার জগৎ দুটি ভাগে বিভক্ত। তার পরিবার আর তার চাকরি। যখন সে অফিসে থাকে, তখন সে অফিসের কাজের কথাই চিন্তা করে। আর যখন বাসায় ফিরে আসে, তখন অফিসের কাজকে অফিসেই রেখে আসে।

পরিবার আর কাজ একসাথে মেলানোকে সে সঠিক বলে মনে করে না। সে বাসায় যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ পুরো সময়টাই স্ত্রী আর পুত্রের জন্য। সেখানে কোন ফাইলপত্র জায়গা পাবে না। তার ঘরে আছে মমতাময়ী গৃহিণী, ছোট্ট একটি মায়াকাড়া সন্তান, স্বপ্নের মতো সাজানো একটি সংসার। তার আর কিছু চাওয়ার নেই।

সুখী মানুষের অনেক কিছু লাগে, কথাটি সত্যি নয়। অল্প কিছু জিনিস লাগে। কিন্তু সমস্যা হল, সেগুলোকে অর্থমূল্যে বিচার করা যায় না। ২. সোহেল (সত্যি বলতে সোহেল-২) গাড়ির ভেতরে বসে আছে। ড্রাইভার আব্দুল হামিদ গাড়ি চালাচ্ছে।

সোহেল নিজে ব্যস্ত আছে অফিসের কাজ নিয়ে। ল্যাপটপ থেকে চোখ সরাতে পারছে না। একটা আস্ত রিপোর্ট তৈরি করতে হবে, তারপর সেটা কালকের মধ্যে জমা দিতে হবে। কিছু অসমাপ্ত হিসেব আছে, সেটাও মেলাতে হবে। একটা বিদেশী পার্টির সাথে কিছু কথাবার্তা আছে, সেগুলো শেষ করতে হবে।

ঘরে বসে ভিডিও কনফারেন্স হবে। ড্রাইভার তাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। সোহেল খানিকক্ষণের জন্য ল্যাপটপ বন্ধ করলো। লিফটে দাঁড়ানো অবস্থায় কাজ করা যায় না। ঘরে ঢুকে তার মাথা ধরে যায় তীব্র এক চিৎকারে।

তার ছেলে অয়ন চিৎকার করছে। কান্নাকাটি করছে। বুয়া, বুয়া। সে ডাক দিলো। কাজের লোক দুজন আছে এখানে।

জাহাঙ্গীর মিয়া আর ময়নার মা। জাহাঙ্গীর মিয়া বাইরের কাজ গুলো করে, আর ময়নার মা ঘরে বাবুর দেখাশোনা করে। ময়নার মা ভীত চোখে উঁকি দিলো। জে ভাইজান। এত চিৎকার-চেঁচামেচি কীসের? বাবুসাহেব কানতাছে।

(ময়নার মা অয়নকে "বাবুসাহেব" বলে ডাকে। ) কেন? ভাবীসাবের লাইগা। ওকে বোঝাও যে ওর মায়ের আসতে দেরী হবে। আপনে একটু উনারে দেইখা যান। আমার এখন কাজ আছে।

গোসল করবো, খাওয়াদাওয়া করবো। তারপর একটু গড়িয়ে নিয়ে অফিসের কাজকর্ম নিয়ে বসতে হবে। যেভাবে পারো চুপ করাও। সারাদিন পর বাসায় ফিরে চেঁচামেচি শুনতে ভাল লাগে না। সোহেল কাপড় ছেড়ে গোসল করতে ঢুকে যায়।

কিছুক্ষণ বাথটাবে গরম পানিতে পুরো শরীর ডুবিয়ে বসে থাকবে, তাতে আরাম হবে কিছুটা। বাবুকে দেখার প্রয়োজন মনে করলো না। বুয়া তো আছেই। তাছাড়া ঘরভর্তি খেলনা, সেগুলো থাকা সত্ত্বেও কান্নাকাটি করার কোন মানেই থাকতে পারে না। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে এই হয়েছে বিপদ, সবসময় কান্নাকাটি, চেঁচামেচি, কাপড় ভেজানো।

একটু যে নিজের ক্যারিয়ার-সংক্রান্ত কাজগুলো গুছিয়ে নেবো তার কোন উপায় নেই। সোহেলের স্ত্রী নাজিয়া (নাজিয়া-২) এখন আছে ব্যাংককে। ওর কোম্পানি থেকে ওকে পাঠিয়েছে একটা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে। সেখানে "পিতামাতার প্রতি সন্তানের অধিকারঃ বৈশ্বিক ভাবনা" নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা হবে। কাপের পর কাপ চা শেষ হবে।

প্রাজ্ঞজনেরা অতি উত্তম এবং যৌক্তিক মত ব্যক্ত করবেন। এসব নগণ্য বিষয় নিয়ে কনফারেন্সের কী কারণ থাকতে পারে সেটা বোধগম্য নয়। মনে হয় নিয়তি মানুষকে নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। নাজিয়া নিজের ছেলেটির দিকেই তো খেয়াল রাখতে পারে না, অথচ সে গেছে সন্তানদের সম্পর্কে বৈশ্বিক ভাবনায় অংশ নিতে। মজার ব্যাপার হল, এই কনফারেন্সে বাংলাদেশ থেকে আরও কয়েকজন এসেছেন।

তার মধ্যে আনিস সাহেব নামের এক বক্তা নিজের মেয়ের মুখ মনে করার জন্য অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু পারছিলেন না। কাজের চাপে আর বড় বড় চিন্তা করতে করতে নিজের নামটাই ভুলে যাওয়ার দশা, আর ছেলেমেয়ে তো পরের কথা। বাংলাদেশে ফিরে আসা যাক। সোহেল খেয়েদেয়ে কয়েক মিনিট "পাওয়ার ন্যাপ" নিয়ে নিলো। তারপর আবার কম্পিউটার খুলে বসলো।

মেইল গুলো চেক করলো। নাজিয়া মেইল করেছে, তুমি আর বাবু কেমন আছ? এক লাইনের মেইল। দুটি প্রশ্নও হতে পারতো, তুমি কেমন আছ? বাবু কেমন আছ? কিন্তু টাইপ করার সময়ও পায় নি সে, বোঝাই যাচ্ছে। তাড়াহুড়োয় বাবু বানানটি ভুল হয়েছে, সে ইংরেজি অক্ষরে লিখেছে "বাউ। " সোহেল আর অয়ন নাজিয়াকে চোখের দেখা শেষ দেখেছে চারদিন আগে।

সহসা আবার দেখা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। এখন সে দেশে নেই, দেশে থাকলেও যে খুব একটা বেশি দেখা হয় তা না। হয়তো উইক এন্ডে একবার দেখা হয় স্বামী-স্ত্রীর। তবে কথাবার্তা বেশি একটা হয় না, ভদ্রতার কুশল জিজ্ঞাসা, ট্রেন কিংবা বাসে পাশের সীটের যাত্রীর সাথে যেমন কথা হয়ে থাকে। সবাই এখন ব্যস্ত, খুব ব্যস্ত।

কর্পোরেট হতে গেলে এসব দেখলে চলে না। এখন দরকার নিজের নিজের ক্যারিয়ার গড়া, একটা "হাই প্রোফাইল" তৈরি করা, তাতে "একটু-আধটু ক্ষতি" তো মেনে নিতেই হবে। সোহেলের ব্যক্তিগতভাবে কোন আপত্তি নেই, সমস্যা হয়েছে বাবুর। সে খুব ছোট বলে মায়ের কাছে যেতে চায়, বাবার কাছে যেতে চায়। তার তো আর ক্যারিয়ার গড়ার কোন চিন্তাভাবনা নেই, তাই এই অবস্থা।

বড় হলে নিশ্চয়ই সে বুঝবে যে, কর্পোরেট হতে গেলে "আমরা", "আমাদের" এই শব্দগুলো বাদ দিতে হবে। এখন শুধু আছে "আমি", "আমার" ইত্যাদি। সোহেল তো প্রায়ই ভাবে, এই সময়ে সন্তান নিয়ে একটু ভুলই হয়ে গেছে। ভাগ্যিস কাজের লোকজন ছিল, ময়নার মা ওকে দেখেশুনে রাখে, নইলে তো বিপদই হত। সোহেল রাত দুটো-তিনটা পর্যন্ত কাজ করেও শেষ করতে পারলো না, সে একসময় টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়ে।

ভিডিও কনফারেন্স হয়েছে, রিপোর্ট তৈরি হয়েছে, কিন্তু এস্টিমেট করা হয় নি এখনো। কী আর করা, কাল সকালে অফিসে যেতে যেতে যদি পারা যায়। নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে তার, এসিডিটি, চোখ জ্বালাপোড়া, মাথার বাঁ পাশে প্রচণ্ড ব্যথা। সারাদিন কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকলে মাথা তো ব্যথা তো করবেই। কিন্তু উপায় নেই।

এখন সময় নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার। অনেক কাজ করতে হবে, অনেক কাজ। ভালোমতো নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে হবে। নাজিয়াকে তার কোম্পানি বেশ ভাল একটা রুম দিয়েছে। দক্ষিণমুখী, প্রচুর হাওয়া খেলে।

বারান্দা আছে। তাছাড়া রুমটিতে আছে সবরকমের সুযোগ-সুবিধা। এসি, হিটার, গরম কিংবা ঠাণ্ডা আবহাওয়া অনুযায়ী দু'রকম ব্যবস্থাই আছে। কফি ঘরেই বানিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। কনফারেন্স যতদিন চলে, ততদিন এখানেই থাকবে সে।

বিদেশীদের ব্যাপার-স্যাপারই আলাদা, বাংলাদেশ হলে হয়তো পয়সা বাঁচাতে এমন একটা রুম দিত, যেটার বিছানাতে তেল চিটচিটে বালিশ, বাথরুম নোংরা, ঘরের দেয়ালে মাকড়সার বাসা ইত্যাদি। সারাদিন সে কনফারেন্সের কাজে দৌড়াদৌড়ি করেছে, এখন ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তার। স্বামী এবং সন্তানের কথা চিন্তা করার সময় তার নেই। সে কুণ্ডলী পাকিয়ে আরাম করে ঘুমোচ্ছে। কাল সকালে আবার ছুট লাগাতে হবে।

সুখী হতে হলে চাই একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়ানো, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। তার জন্যই তো এই "স্যাক্রিফাইস। " একটা সময় আর এই সমস্যা থাকবে না। বাবু ঘুমোতে চায় না, শুধু কান্নাকাটি করে। বলে, "আম্মু যাবো।

" ময়নার মা অনেকক্ষণ ধরে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে। এখন অয়ন নামের এই শিশুটি মেঝেতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে। তার নিজের ঘর আছে, ঘরভর্তি খেলনা, বিনোদনের আধুনিকতম সব উপকরণ। কিন্তু সে কাঁদছে কেন? কারণ, বোধহয় সে এসব চায় নি। সে পিতামাতার একটু সান্নিধ্য চেয়েছিল।

কিন্তু তারা তো নিরুপায়, তাদের তো সময় হয় না। তারা সফল ক্যারিয়ার গড়ুক। শিশুটির ঠিকভাবে বেঁচে থাকার, বাবা-মায়ের আদর পাওয়ার কোন অধিকার নেই। নাজিয়া দেশের ফ্লাইট ধরেছে। কনফারেন্সে জ্ঞানী-গুণী লোকেরা বলেছেন, পিতামাতার উচিৎ সন্তানকে আরও বেশি করে সময় দেয়া।

তাকে আদর করে কাছে টেনে নেয়া। কর্পোরেট হতে গিয়ে নিজের সন্তানের ভবিষ্যতকে মলিন করে দেয়ার ব্যাপারটা নতুন প্রজন্ম মেনে নেবে না। আনিস সাহেব বলেছেন, এমন অনেক অপদার্থ পিতা আছেন, যাঁরা কাজের চাপে নিজের ছেলেমেয়ের মুখ পর্যন্ত মনে করতে পারেন না। ধিক তাদের জন্য, সরোষে টেবিলে কিল মেরেছেন তিনি। নাজিয়ার ওখানে বসে থেকেই হাসি পেয়েছিল, এখন আরো বেশি পাচ্ছে।

(৭ ডিসেম্বর, ২০১২) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।