আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোর মন বিদ্রোহ করেনা কেন.....?? বিশ্বজিৎদের মৃত্যূ দেখতে দেখতে একদিন নিজেই বিশ্বজিৎ হয়ে চলে যেতেই পৃথিবীতে এসেছিস তুই??

পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে.. অবরোধের দিন বিকেলে ভিক্টেরিয়া পার্কে পাশ দিয়ে হাটতে হাটতে বার বার নিজেকে প্রশ্নটি করছিলাম। নিজের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ‘‘জীবন নিয়ে তোর এত স্বপ্ন দেখার মূল্য আছে কি? যেখানে মাতৃভূমির ৯৯ভাগ মানুষ মাত্র ১ভাগ ‘অপরাজনৈতিক’ দানবের কাছে জিম্মি??’’। মন কোন উত্তর দিতে পারে না। তবে একটি অজুহাত বের করেছে সে। খুব সহসাই বলে দিলো ‘‘আমি একা একা কী করবো??’’ একই রকম চিন্তা করে এরকম আরো কিছু মানুষ নিয়েই তো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিদ্রোহ হল।

আমরা কী পারিনা.??? । না, হয়তো আসলেই পারি না। কথনো গণতন্ত্র কখোনো সামরিক তন্ত্রের ছদ্মাবরলে বিভিন্ন সময় খোলস পাল্টে এই ‘‘স্বার্থতন্ত্র’’ স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের জিম্মি রেখেছে। এ জাতি কে নিয়ে কোন স্বপ্ন দেখার নেই। ক্ষমতা আর টাকার জন্য এ মাটির সন্তানদের বলি দিতে ক্ষমতাসীনরা ইতিহাসের কোন কালেই পিছপা হন নি।

আমাদের বিশ্বজতরা মরবে এবং মরতেই থাকবে । রবীন্দ্রনাথ আজ বেঁচে থাকলে হয়ত, ‘‘ইহার চেয়ে হতাম যদি আরব বেদুঈন’’---না লিখে বাঙালীর পরিবর্তে আফ্লিকান হতেও রাজি থাকতে থাকতেন। আসলে লিখতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। একটি খুনের পর আমরা লিখে ব্লগ গরম করে ফেলি। কিন্তু কিছুই হয় না।

হবেও না হয়তো। এদেশে লিখে কোন লাভ নেই। বাংলানিউজে সাজেদা সুইটির একটি লেখা মনের গভীরে দীর্ঘদিন লুকিয়ে থাকা অনেক কথা প্রকাশ করেছে (আসলে আমাদের এই বেদনাগুলি কেবল লকিয়েই থাকে, উপলক্ষ্য ছাড়া প্রকাশ হয় না)। তাই সাজেদার কপি পেস্ট দিলাম। ‘‘বিশ্বজিৎ, ক্ষমা করো ভাই, ক্ষমা করো তোমার প্রভুকে!’’ ________________________________________ ঢাকা: বিশ্বজিৎ নেই।

বিশ্বজিৎ দাস মারা গেছে? মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও ছিলো। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে ছেলেটিকে। তার শরীরের নানা জায়গায় ছিঁড়েখুড়ে গেছে। সর্বাঙ্গে জখম নিয়ে নিদারুণ কষ্ট পেয়ে বিদায় নিয়েছে ছেলেটি। তার প্রিয় এই পৃথিবী থেকে।

হাজার চেষ্টা করেও নিজেকে বাঁচাতে পারেনি সে। মা-বাবাকে শেষ দেখাটিও দেখতে পারেনি। নয়া পল্টনে অবরোধের ডিউটি পালনে যারপরনাই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। একের পর এক সংবাদ, দুঃসংবাদ পাচ্ছি নানা জায়গা থেকে। এ পেশায় আসার পর মৃত্যুকেও নাকি স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখতে হয়।

আবেগ দমন করে নিজেকে বোঝাতে হয়, ‘মারা গেছে? কে মরলো? কখন? কোথায়? কেন? কীভাবে? কারা মেরে ফেললো?’ এরপর একটু বিশ্রাম, এরপরই আঁৎকে ওঠা, ‘আচ্ছা, আমার অফিস নিউজটা পেয়েছে তো?’ অফিসে ডায়াল, ‘হ্যালো, একজন মারা গেছে, নিউজটা কি পেয়েছেন?’ কিন্তু আজ বুঝলাম, এখনো পারি না! এখনো সাংবাদিক হতে আমার ঢের বাকি। সত্যি, আমি সাংবাদিক হতে পারিনি। এই খবরে কিছুক্ষণের জন্য শরীরের লোমকূপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলো। নিঃশ্বাস আটকে গেল ক’বার। একদম বরাবরের মতোই।

কিছুক্ষণের মধ্যেই কল্পনায় ভেসে এলো একটি দৃশ্য, যুবকটি একা, চারপাশে কিছু বিচ্ছিরি কুকুর! ঘেউ ঘেউ করে চরম উল্লাসে কামড়ে চলেছে তাকে! দিগ্বিদিক ছুটে চলেছে যুবকটি... একটু বাঁচার আশায়... কিন্তু নাহ! বাঁচতে পারলো না, মরতেই হলো তাকে। বিশ্বজিতের কেমন লাগছিল সেই মুহূর্তটিতে! প্রথম কোপটি যখন শরীরে পড়লো, নিশ্চয়ই ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরলো, কার চেহারাটি চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল তখন? মা কল্পনা দাস, যে নিজের সবটুকু মমতা ঢেলে এক ফোঁটা দূষিত রক্তের দলাকে তিল তিল করে মানুষ বিশ্বজিতের রূপ দিয়েছেন? নাকি বাবা অনন্ত দাস, শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু ঘামে রূপান্তর করে যে নতুন শার্টটি এনেছেন ছেলের আব্দার পূরণ করতে? নাকি অন্য কোনো প্রিয়জনের, যে কপালে এসে পড়া চুলটি সরিয়ে লাজুক হেসে আড়ালে লুকাতো? কিন্তু এখনো কেন আমরা কষ্ট পাই বিশ্বজিতদের মরতে দেখলে! এ কি নতুন হলো? বিশ্বজিৎদের তো মরতেই হবে। যুগে যুগে মরেছেও। দেশের যারা কল্যাণ (!) চায়, তাদের এক-আধটু শিকারের নেশা থাকবে। তাদের খায়েশ মেটাতে হরিণ শাবক তো বিশ্বজিৎরাই হবে।

তীরের ফলা বিশ্বজিৎদের বুকের যতো গভীরে গেঁথে যাবে, শিকারের মজাতো ততই বেশি হবে ক্ষমতা লিপ্সুদের। আমাদের নেতারা, আমাদের নেত্রীরা বড় বড় রাজা- উজির মারবেন, কিন্তু কখনো হয়তো জানতে পারবেন না, তাদের এই ক্ষমতার যুদ্ধে শুধু ঘোড়ার খুরের আঘাতেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে কতো জীবন! কতো মায়ের বুক! এ দল সে দলকে দুষবে, সে দল ওই দলকে দুষবে- কী যাবে আসবে কারো? কিচ্ছু না। বেঁচে যাবে রক্তপিপাসু মানুষগুলো। তারা হয়তো বিশেষ কাজটি (!) সেরে ভালো মানুষটি হয়ে বাড়িতে ফিরেছে। খুব খাটুনি (!) করে এলো বলে, মা গরম ভাত বেড়ে খাইয়েছে, ‘বাছা আমার, মুখটা রোদে পুড়ে কেমন লালচে হয়ে গেছে!’ কিন্তু সেই মা হয়তো কখনোই জানবেন না।

তার এই বাছা অন্য মায়ের বাছাকে লালচে নয়, লাল রক্তে লতপত করে এসেছে। তাই কষ্ট শুধু বিশ্বজিতের মায়ের জন্য হচ্ছে না। তার হত্যাকারীদের মায়ের জন্যও হচ্ছে। কারণ সেসব মায়েরা জানেন না, এতো আদরে সোহাগে বুকের মধ্যে তারা কালসাপ পুষছেন। একজন মেয়ে, একজন বোন আমি।

আছে আরো অনেক ভূমিকা। কোনো ভূমিকা থেকেই বিশ্বজিতদের জন্য কিছুই করার ক্ষমতা নেই। শুধু আছে নির্লজ্জের মতো ক্ষমা চাওয়ার মানসিকতা। সেটাই আজ চাইছি বিশ্বজিতের কাছে। ক্ষমা করো ভাই।

ক্ষমা করো এদেশের মানুষকে, ক্ষমা করো তোমার প্রভুকে... যে চাইলেই তোমাকে বাঁচাতে পারতো! উল্লেখ্য, ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচিতে ঢাকায় নিহত বিশ্বজিতের (২২) গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর মশুরা গ্রামে। ঢাকায় তার একটি দর্জি দোকান আছে। ৬ বছর আগে ঢাকার শাখারি বাজারে দর্জি ব্যবসা শুরু করেন বিশ্বজিৎ। রোববার দোকানে যাওয়ার পথে কিছু লোক তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। পরে স্যার সলিমুল্যাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান বিশ্বজিৎ।

বিশ্বজিতের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিলো না বলে তার পরিবার জানান। বাংলাদেশ সময়: ২২৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১২ ‘‘আমরা মরতে থাকি, ওনারা খেলা দেখুক। আমরাই ওনাদের খেলার উপকরণ’’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।