আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভিনয়-১

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে হাসি হাসি মুখ করে বসে থাকতে হচ্ছে। একটু পরেই মঞ্চে বছরের সেরা চিত্রশিল্পীর নাম ঘোষণা করা হবে। পান্জাবীর কলারটা একটু টেনে নেয়া দরকার। আবরার তানভীর। হ্যাঁ….জানতো এই বছরের সেরা এশিয়ান জুনিয়র আর্টিস্ট দের মধ্যে সে-ই সর্বসেরা।

‘বিমূর্ত মন’ নামে তার আঁকা ছবির মত কোন ছবিই এই বছর ছবিপাড়ায় এতোটা আলোড়ন তুলতে পারে নি। দেশ থেকে এই ছবির জন্য ইতিমধ্যে অনেক পুরস্কার পেয়ে গিয়েছে সে। কিন্তু এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে। তাই শেষ অপেক্ষায় ভয়টাও একটু বেশি। চাইনিজ উপস্হাপিকার মিষ্টি আহবানে ভারী পাওয়ারের মেটাল গ্লাসটা একটু উপরের দিকে ঠেলে দিয়ে টানটান ভঙ্গিতে হেঁটে যায় সুদর্শন তরুণটি।

মুখে গর্বিত হাসি। মীরার দেখতে ভালো লাগে। রাত প্রায় ১২টা বাজতে চলেছে। বেইজিংয়ের ক্যাপিটাল হোটেলের রুম নম্বর ২৩৭ এ বসে একমনে সিগারেট টেনে যাচ্ছে আবরার। জোড়া ভ্রূ কুঁচকে আছে।

সামনে ডানহিলের প্যাকেট। কে হতে পারে মেয়েটা? এর আগে কি কখনো দেখেছে ও মেয়েটাকে? ও যখন মীরাকে নিয়ে থিয়েটার থেকে বেরিয়ে আসছিল তখন মীরা হঠাৎ একটা মেয়েকে হাই নওশীন বলে জড়িয়ে ধরল। কোলাকুলি করল। আর সেই সময় ছলছল চোখে আবরারের দিকে তাকিয়ে ছিল মেয়েটা। বেশ মিষ্টি এই অপরিচিতা।

হাইলাইট করা বাদামী ছোট চুলগুলো কপাল জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। নওশীন কে ছাড়িয়ে নিতে নিতে ওর সাথের ছেলেটিকে মীরা বলল,‘‘তোমাদের সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবিনি কায়েস। বেড়াতে এসেছ নাকি এদিকে?” -নাহ রে ভাই। জলবায়ুর উপর একটা সেমিনারে যোগ দিতে এসেছি। কোম্পানী আমাকেই চয়েস করল।

ভাবলাম নওশীনকে ও সাথে নিয়ে আসি। -ও। অনেকদিন পর নওশীনের সাথে দেখা হল। চলো কোথাও বসি। আজকে তানভীর ক্রিটিক চয়েস অ্যাওয়ার্ড পেল।

তোমাদের সাথেই প্রথম সেলিব্রেটটা করি। -ওহ মাই গড! কনগ্র্যাটস তানভীর ভাই। বলতে বলতে কায়েস নামক সপ্রতিভ চেহারার ছেলেটি হাত বাড়িয়ে দেয় আবরারের দিকে। আবরারও স্মিত হেসে হাত এগিয়ে দেয়। ‘‘সন্ধ্যাবেলা ব্রেকিং নিউজে দেখছিলাম বাংলাদেশ থেকে কে যেন প্রাইজটা পেয়েছে।

কিন্তু এটা যে আমাদের তানভীর ভাই তা জানতাম না! তাহলে তো এই উপলক্ষে বুফে পাচ্ছি। ’’ উচ্চস্বরে হেসে উঠে মীরা ও কায়েস। হঠাৎ বাদামি চুলের অন্যমনস্ক মেয়েটা বলে উঠে,‘‘না না! আজ থাক মীরা। অন্য আরেক দিন। আজ সারাদিন ঘুরাঘুরি করে মাইগ্রেনের ব্যাথাটা প্রচন্ড বেড়েছে।

কিছু মনে করো না। ” মীরা কি বলতে গিয়েও থেমে যায়। হাসি মুখে বলে,ঠিক আছে নওশী্ন। ব্যাপার না। আরেকদিন যাবো আমরা।

কায়েস লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে,‘‘ওর আসলেই শরী্রটা খুব খারাপ যাচ্ছে। আজ তাহলে আসি মীরা। স্কাইপে তে কথা হবে। আসি তানভী্র ভাই। ’’ নওশী্ন মেয়েটার চোখে তখনও কেমন ঘোরলাগা দৃষ্টি।

অপলক তাকিয়ে আছে আবরারের দিকেই। ‘‘অবশ্যই। ভালো থেকো তো্মরা। আর একদিন ছুটির দিনে অবশ্যই সময় করে চলে এসো। ” মীরা হাসিমুখে ওদের বিদায় জানায়।

যাবার সময় আবার নওশী্ন কে বুকে জড়িয়ে ধরে। কায়েস পরম মমতায় নওশী্নের মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে নিয়ে যায়। ‘‘এ্যাই! ভ্রু কুচকে আবার কোথায় ডুব দিচ্ছ?” চমকে উঠে আবরার। খাটের কোণায় মুখোমুখি বসে মীরা। বাহির থেকে বেড়িয়ে এসে ফ্রেশ হলো এইমাত্র।

ভেজা টাওয়েলে চুল জড়িয়ে শুকিয়ে নিচ্ছে মেয়েটা। কি যে পবিত্র লাগছে! -এখন আবার কি দেখছো? -না। কিছু না। সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে আবরা্র বলে,‘‘আচ্ছা মীরা,এই নওশী্ন টা কে?” ‘‘তোমার সাবেক প্রেমিকা। ’’চোখ টিপে বলে মীরা।

‘‘কি আবোল তাবোল বকছো? ঠিকমত বলো। ’’ ‘‘Hey Princess !!! If my heart is a piano then there tunes only for you because my heart is lent to you” ‘‘হাহ হাহ হাহ!! তুমি লিখেছো নাকি? না টীনেজে তো্মাকে কেউ লিখেছিলো?” ‘‘নাহ। ইংরেজী সাহিত্যের টিচার হলেও আমার মাথায় এতো গুছানো লাইন আসবে কি করে? এগুলো আমার কবির মাথায়ই আসা সম্ভব। ’’ ‘‘লিখেছিলাম নাকি তো্মাকে? মনে পড়ছে না তো !” ‘‘আমাকে তো আর এটা লিখো নি তানভী। লিখেছিলে নওশী্ন কে।

’’ ঝলমল করে হেসে উঠে মীরা। ‘‘দাঁড়াও আসছি। ’’ ফোনে দুটো চকলেট কফির অর্ডার দিয়ে আবার আবরারের মুখোমুখি বসে মীরা। ওর শ্যা্ম্পু করা চুল শুকিয়ে গন্ধ শুকাতে শুরু করেছে। অ্যাশট্রে তে সিগারেটের ছাই ঝাড়তে ঝাড়তে তানভী্র বলে,‘‘বলো,কি সব গালগপ্পো করছিলে?’’ মীরা আবরারের চোখে চোখ রেখে বলে,‘‘তানভী,তুমি কি জানো? তুমি যতো ছবি একেই বিশ্বসেরা হও না কেনো, আমার চোখে তো্মার আঁকা সেরা ছবি কোনটা?” ‘‘কোনটা?’’খুশি খুশি গলায় বলে তানভী্র।

‘‘পিয়ানো বাদিকা। নওশী্ন যেখানে তো্মাকে অবাক দৃষ্টিতে দেখছে। ” মীরা ব্যাগ থেকে ছোট একটা কাগজ বের করে আবরারে্র দিকে এগিয়ে দেয়। হালকা বাদামি একটা কাগজ। আবরার কাগজটা মেলে ধরে।

একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে স্কেচটার দিকে। হ্যাঁ,আজ সন্ধ্যা্য় দেখা বাদামী চুলের সেই মেয়েটাই তো। চোখে সেই ঘোরলাগা দৃষ্টি। দরজায় কে যেন কড়া নাড়ে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।