নিঃশঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর কোনো বড় সম্পদ নেই। বিশ্বজিৎ নামক একজন 'মানুষ' মারা গেছেন। হত্যাই করা হয়েছে। হত্যার ধরনটা কেমন জানি... গনতান্ত্রিক দেশের সাথে একেবারেই বেমানান । যদিও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এরকম হত্যা নতুন কিছু নয় ।
মিডিয়ার কল্যাণে কিছুদিন পর পরই এরকম ঘটনা চোখে পড়ে। একেবারে সরাসরি ধারণকৃত অবস্থায়। টিভিতে যখন দেখানো হয় একটা নিরীহ বেসামরিক এবং অরাজনৈতিক মানুষ কে কিছু মানুষরূপী জন্তু নির্দয়ের মত ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলছে ... মাথায় আগুন ধরে যায় । আমার মনে আছে এর আগেও টিভিতে লগি- বৈঠার মুহুর্মুহু আঘাতে একজন মানুষ কে কিভাবে চোখের সামনে মেরে ফেলা হল সেটা দেখানো হয়েছিল । অদ্ভুত এক পরিবেশ... পুলিশ এর উপস্থিতিতে, সাংবাদিক- মিডিয়া কর্মীদের সামনে এরকম আচরন করার ধৃষ্টতা, সাহস কিভাবে পাওয়া যায় ।
তাও আবার গনতান্ত্রিক একটা দেশে... যেখানে আইন আছে, শাস্তির বিধান আছে ।
অলরেডি লেখার মধ্যে একটা আওমি বিদ্বেষী ভাব চলে আসছে। অদ্ভুত এক দেশ... যেখানে আওমি বিরোধিতার নাম মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা, জামাত-শিবির- বি এন পির দলভুক্ত হওয়া!
হ্যা... মিডিয়াতে আরও অনেক কিছুই আমি দেখি । কিভাবে পুলিশ কে পর্যন্ত অসহায় করে দিয়ে শিবির-দলের পিকেটার রা তাণ্ডব চালায়... কিভাবে রাস্তার অবরোধে আটকে যাওয়া গাড়ীগুলো নির্দয়ের মত চুরমার করে দেয়া হয়... কিভাবে গ্রেনেডের বিস্ফোরণে হাওয়ায় উড়তে থাকে 'মানুষের' হাত-পা... জীবন!
বি এন পির শাসনামলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যে অকথ্য নির্যাতন আমি তাও ভুলে যাই না... তবে কালের আবর্তে স্মৃতি ঝাপসা হয়ে যায় এই যা...
আজকের এইসব ঘটনা গুলোও তো দুই দিন পর ভুলেই যাব!
ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী দের অস্ত্র হাতে মহড়া তো এই দেশে নতুন কিছু না। হয়ত পর্যায়বৃত্তিক ভাবে কুশীলব পরিবর্তন হয়।
পেপারের প্রথম পেজে ছবি আসবে জনৈক ক্যাডারের... এরপর হয়ত অনেক গুলো প্রমোশন হয়ে যাবে তার... কালের পরিক্রমায় সে নেতা হয়ে উঠবে... এরপর এক সময় এম পি, মন্ত্রী... প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি...
নিজের নাতি-নাত্নি দের শুনাবে যৌবনের 'সংগ্রামী জীবনটার' কথা...
এই দেশে রাজনীতি হয় মানুষের অনুভুতি নিয়ে। কেউ পুজি করছে ধর্ম... কেউ করছে মুক্তিযুদ্ধ । কে কারচেয়ে খারাপ সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে ।
একটা 'মানুষ' মারা গেছে...
দেখা গেল , তার লাশ মাথায় নিয়ে একটা দল সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার মিছিল বের করবে...
একটা দল এই হত্যা কে ধর্মের উপর আক্রমন, সংখ্যালঘুর উপর অত্যাচার ইত্যাদি বিবৃতি দিয়ে মিছিল বের করবে...
একের পর এক ইস্যু তৈরি হবে... রাজনীতি হবে...
লাশ নিয়ে সম্ভাব্য সবই হবে কিন্তু যাকে হত্যা করা হলো তার সুষ্ঠু বিচার হবে না... এটাই এই দেশের সংস্কৃতি ।
মানুষের অনুভুতি- জীবন এগুলো নিয়ে যারা রাজনীতি করছে... যারা নিজের ছেলে মেয়েদের বিদেশে নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করে এখানে একদল পশুকে রাস্তায় নামিয়ে দিচ্ছে অন্য ছেলে মেয়েদের জীবন বিপন্ন করতে... ধিক্কার তাদেরকে।
আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে... এগুলোর শেষ কবে হবে?
শেষ তো হবে নিশ্চয়ই... কিন্তু কবে...
একটা সময় অত্যাচার সহ্য করতে করতে বাঙ্গালির দেয়ালে পিঠ ঠেকেছিল... ফলাফল ১৯৭১। এবং অপশক্তির বিনাশ ।
কথা হলো এখনও হয়ত আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে নাই... অচিরেই ঠেকবে... সেদিন এই ভণ্ড রাজনীতিবিদ - দলগুলাকে লাত্থি মেরে মানুষ সরায় দিবে । নতুন জাগরন সৃষ্টি ও তাতে অংশগ্রহণ এর অপেক্ষায়...
দেশে এখন চলছে দুই দলের মনোপলি। এরা জানে এরা ছাড়া মানুষের হাতে আর কোন অপশন নাই ।
হয় চোর নাহয় ডাকাত!
এমতাবস্থায় আমি মোটেও অবাক হব না... যদি দল দুটির মধ্যে এমন চুক্তি হয়ে থাকে... এই ৫ বছর আমি খাবো পরের ৫ বছর তুই...
লোক দেখানো রাজনৈতিক আচরণ গুলো মঞ্চস্থ হয়...
এগুলোর মঞ্চায়নে খরচ হয় কিছু 'বিশ্বজিৎ'...
বিশ্বজিৎ কে খালি রক্তাক্তই করে গেল... কেউ ওর শার্ট খুলে দেখেনি...
ভিতরে হয়ত লেখা ছিল -
আওয়ামী -বিএনপি নিপাত যাক... বাংলাদেশ মুক্তি পাক । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।