আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তের একর জমিন : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী কারাগার। যার সহজ অর্থই হলো জেলখানা। শুনলেই কেমন যেন আতঙ্ক জাগে মনের ভিতরে। বাংলাদেশ কারাগার; এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে পত্রপত্রিকায়। মূল্যায়ন কতটুকু হয়েছে তা বলা বড়ই মুশকিল।

এ নিয়ে খালিদ হোসেন একখানা বই লিখেছিলেন �বাংলাদেশ কারাগার দুর্নীতি ও প্রতিকার�। বইটি প্রকাশ হওয়ার পর তৎকালীন জেল প্রশাসন তার মূল্যায়ন সাপেক্ষে জেলের হাল হকিকতের আমূল পরিবর্তন হয়তো করতে পারেনি, তবে তাদের উদ্দ্যোগ ছিল প্রশংসনীয়। বিশেষ করে তৎসময়ের আইজি (প্রিজন) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জাকির হোসেন ও ডিআইজি (প্রিজন) মেজর (অবঃ) সামছুল হায়দার সিদ্দিকী কারাবাসীদের জীবন মান উন্নতকরণে বেশ পরিশ্রম করেছিলেন। যদিও পরবর্তীতে হীন ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে সেখান হতে বেরিয়ে আসতে হয়েছে তাদেরকে। এমনকি সর্বজন প্রশংসনীয় ডিআইজি মেজর (অবঃ) সামছুল হায়দার সিদ্দীকিকে অপমানিত হতে হয়েছে।

বর্তমান সময়ের কারাগার নিয়ে কোন প্রতিবেদন লিখতে হলে প্রথমেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারকে নিয়ে লিখতে হয়। তের একর জমিনের ওপর প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। বর্তমানে প্রায় আট হাজার বন্দির অবস্থান। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এর হাল হকিকত সম্পর্কে আমাদের লেখক, বুদ্ধিজীবি, সমাজ সেবক, শিল্পপতি, নেতা-অভিনেতা বলতে গেলে ভালভাবেই ওয়াকিবহাল। বিশেষ করে গেল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সর্বদলীয় রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীসহ শিল্পপতি, সমাজসেবকসহ সমাজের প্রতি স্তরের স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের সমাবেশ ঘটেছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের প্রায় সকল কারাগারেই।

কারাগারে অবস্থানকালে সকলেই অনুধাবন করেছেন কারগারের নিয়ম অনিয়মগুলো। নিয়ম বললে ভুল হবে; অনিয়ম এর ব্যাপকতা এত প্রকট যে, এনিয়ে অনেকই অনেক কথা-বার্তা বলেছেন আড়ালে আবডালে বসে। অনেক নেতা ও ব্যক্তিত্বগণ মুক্ত হয়ে সমস্ত অনিয়ম দূর করার প্রতিশ্র�তি দিয়েছিলেন। তাদের প্রতিশ্র�তি অনেকটা গল্পে পরিনত হয়েছে কারাগারের বর্তমান হাল হকিকতের কারণে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার বন্দি রয়েছে।

যদিও সেখানে আড়াই হাজার এর বেশী বন্দি থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। জেল কোড আছে। তার সংস্কার হয়েছে। সেটাও কাগজে কলমে।

বাস্তবরূপটা ভীষণ রকমের ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে বর্তমান কালে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অনিয়মের কারনে ৮ হাজার বন্দি নিত্যদিন হাহাকার করে চলেছে এর প্রতিকারের জন্যে। বন্দি হয়েও ওরা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে চায়। তার ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার।

প্রধান ফটকের ওপর জ্বলজ্বলে অক্ষরে লেখা আছে �রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ�। কথাগুলো রচিত হয়েছে সাবেক আইজি প্রীজন ব্রিগেডিয়ার জাকির হোসেন ও ডিআইজি প্রীজন মেজর (অবঃ) সামছুল হায়দার সিদ্দীকির আমলে। তাদের মনে হয়তো এরকম ইচ্ছাই ছিল। যদি তা পরবর্তীতে সম্ভব হয়ে উঠেনি কুচক্রী মহলের কারণে। সকল কারাগারের মতো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশের পর তাদের কাষ্টডি দেখে লিপিবদ্ধ করা হয়।

নাম ঠিকানা লেখার পর তল্লাশীর পালা। শুরু হলো নির্যাতন সেই সময় থেকেই। অনেকটা লুটপাটের স্বীকার হতে হয় তল্লাশীর নামে। বন্দিদের সাথে থাকা টাকা পয়সা থেকে শুরু করে মূল্যবান জিনিসের অর্ধেকও জমা হওয়ার সুযোগ অনেক কম। বের হওয়ার সময় ফেরৎ না পাওয়া নিয়ে রয়েছে অনেক অভিযোগ।

তল্লাশীর পর কারাগারের অভ্যন্তরীন আঙ্গিনায় প্রবেশ দ্বার পার হতেই চোখে পড়বে তাজমহল সদৃশ একটি ভাস্কর্য্য। ফুলের বাগান। প্রথম দর্শনে মনে হবে পরিবেশটা হয়তো থাকার মতোই। ধারনাটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত; তার প্রমান পেতে হয় আমদানী নামক জায়গাটিতে পা রাখার সাথে সাথে শুরু হয় বন্দিত্বের যন্ত্রনা। শুধু কি যন্ত্রনা, এখানেই শেষ নয়।

উঠা-বসা, শোয়া সবত্রই যেন কর দেয়ার এক অদ্ভুত ব্যবস্থা। আমদানী নামক ঘরটাতে ঢোকার সাথে সাথে শুনতে পাবেন রাইটার (যাদের ইদানিং সেবক বলা হয়) ও তার সহযোগীদের অশালীন ভাষার ব্যাপক ব্যবহার। তার প্রয়োগ হয় নতুন বন্দিদের ওপর। আমদানীতে পুরাতন বন্দিদের যারা কোর্টে যান তাদের মধ্যে যারা রাত করে ফিরেন তারা; যাদের বিরুদ্ধে কারা অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির তথাকথিত অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিচারের জন্য রাখা হয়েছে এবং নতুন বন্দিত্ব নিয়ে যারা আসেন তারা অবস্থান করে। প্রতিদিন আমদানি নামক ঘরটিতে ৩/৪শ বন্দিকে অবস্থান নিতে হয়।

এত অল্প পরিসরে এত লোকের অবস্থান অসম্ভব। তারই সুযোগ নেয় রাইটার তার সহযোগীরা এবং ইনচার্জ পাহারারা। আমদানীতে সবচেয়ে করুণ অবস্থা হয় নতুন আমদানীদের অর্থাৎ যাদের আদালত কর্তৃক ঐদিন কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে তাদের। রাইটার ও তার সহযোগীদের আশ্রাব্য ভাষায় হাকডাক, চিৎকারে ভীত সশস্ত্র নতুন আমদানীকৃত বন্দিদের ভয়ে জড়োসরো হয়ে থাকতে হয় প্রতিক্ষণ। নতুন বন্দিদের চড় তাপ্পর লাথি মারাতো স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ সবের মূল হল বন্দিদেরকে মানষিকভাবে বিপর্যস্ত করে দেয়া, যাতে করে বন্দিদের কাছে থাকা সিগারেট, লুকিয়ে আনা টাকা এবং ভবিষ্যতে বাসা হতে টাকা এনে রাইটারদের কাছে তুলে দেয়া হয়। ঘন্টা দেড়েক এভাবে চলে। খাওয়া-দাওয়া সে-তো নারকীয় ব্যাপার। নতুন বন্দিদের তা খাওয়া চরম কষ্টদায়ক। যদিও কোনভাবে সেটা গলধঃকরণ করা হয় গ্রেপ্তার হওয়া থেকে রিমান্ড নামক নির্যাতন করে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হওয়ার কারণে।

অতি নিম্নমানের খাওয়া শেষ করার পর শোবার পালা। একটু ভালভাবে শোবার জন্যে দিতে হবে এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট নতুবা একশত টাকা। যদি দিতে না পারেন তাহলে মাঝ ফাইলে। মাঝ ফাইলে প্রায় ৭০-৮০ জন শোবে। সেখানে ঠিকভাবে চিৎ হয়ে শুতে হলে ২০/২৫ জন শুতে পারবে।

কাত হয়ে শুতে হলে ৪০/৫০ জন শুতে পারবে। সেখানে প্রায় ৭০/৮০ জন শুবে। সেটা কি করে সম্ভব? এবার ইলিশ ফাইল। সেই ফাইলে নারকীয় তান্ডবতার মধ্য দিয়ে তাদের শোয়ানোর পালা। বাকী থাকলো কোর্ট থেকে যারা রাত করে ফিরছে তারা।

তাদের মধ্যে যারা কমপক্ষে পঞ্চাশ টাকা দিতে পারবে তাদেরকে ভালভাবে শোয়ানো হবে। নতুবা ইলিশ ফাইল। বাকী থাকলো অভিযুক্তরা। যাদের আমদানি রাখা হয়েছে তারা। তাদের সাথে এসব রাইটার বা তাদের সহযোগীরা খুব বেশী কুলিয়ে উঠতে পারে না।

অভিযুক্তরা যারা বেশ অনেকদিন যাবৎ জেলে রয়েছে বলে এদের জানা শোনা রয়েছে পরস্পরের সাথে; তদুপরী তারা প্রশাসনের বিচারাধীন। প্রশাসনকে ভাল রকমের কিছু ধরিয়ে দিয়েই পার হতে হবে। তা থেকে রাইটার ও তাদের সহযোগীরা কিছু পাবেই প্রশাসনের সাথে দেন দরবার-দালালী করে। রাতের পালা শেষ হয় এভাবেই। ভোর রাতের অবস্থা অত্যন্ত কঠিন।

ভোর ৪টায় তুলে দেয়া হয় নতুন বন্দিদেরকে। ফাইল করার জন্য অর্থাৎ জেলার সাহেব, সুপার সাহেব বন্দিদের মুখ দেখবেন বন্দি টিকেট সই করবেন। বন্দিদের ডাক্তার সাহেব এক নজর করে মুখটা দেখবেন। ওজন নেয়া হবে। নাম লেখা হবে।

এসব করে বেলা ১০টা পর্যন্ত পার করে দেয়া হবে। এরই মধ্যে এক ফাকে একটা পোড়া রুটি ও গুড় দেয়া হবে খেতে। রাতে নির্ঘুম। এসবের কারনে বান্দিরা হয়ে উঠে দিশেহারা কিভাবে এথেকে পরিত্রান পাওয়া যায় তার উপায় খুঁজতে থাকে। এর সুযোগ নিতে শুরু করে রাইটাররা।

বেলা ১০টার পর থেকে শুরু হয় বন্দি বেচা কেনা। গরুর হাটে যে রকম ক্রেতা এসে দেখে শুনে গরু দেন-দরবার করে, ঠিক সেইভাবে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ইনচার্জ পাহাড়া; রাইটার কয়েদী, রাইটার (হাজতী), জলভরী ওস্তাগার এসে দেখে শুনে দেন দরবার করে রাইটার থেকে বন্দি কিনে। প্রথমে দেখে নেয়া হয় বন্দিদের শরীরের জামা-কাপড়ের চাকচিক্য, তাতে বুঝা যায় কে ভাল মক্কেল হবে। বেচা কেনার ক্ষেত্রে বন্দিদেরকে মক্কেল বলা হয় থাকে। যাকে পছন্দ হবে তাকে ক্রেতারা নানা রকম প্রলোভন দেখায়।

যেমন; বলা হয়- তার সাথে গেলে ডিভিশনে রাখা হবে; অর্থাৎ ভাল সিটে ঘুমাতে দিবে। গোসল করিয়ে দেয়া হবে। পা টিপে দেয়া হবে। সকালের নাস্তা-চা, দুপুরে মাংস মাছ দিয়ে ভাত রাতে ভিআইপি খাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। বিনিময়ে তাকে সপ্তাহে ২০০০/৩০০০ টাকা করে দিতে হবে।

বন্দিদের শতকরা ৭৫ জনই এদের ফাঁদে পা দিতে বাধ্য হয়। পেরিয়ে আসা সময়ের চরম কষ্ট থেকে পরিত্রান পাওয়ার আশ্বাসে। মক্কেল বাছাই হলে যে ক্রেতা যে মক্কেল নিবে সেই মক্কেলের জন্য আমদানীর রাইটারকে ১০০০/-টাকা দিবে। ওয়ার্ড পাস করিয়ে দিবে। এভাবে কমপক্ষে ৫০ জন বন্দি বেচা কেনা হয়ে যায়।

যার ফলে আমদানী রাইটারের হাতে চলে আসে বন্দি বেচা বাবদ দৈনিক ৫০ হাজার টাকা। রাতের শোয়ানো বাবদ প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টাকা। পুরো টাকার ৯০ ভাগ পেয়ে যায় চীফ রাইটার। চীফ রাইটার নিযুক্ত হন কয়েদিন বন্দিদের মধ্য হতে। এটা মনোনয়নের পদ্ধতি হলো ডাক বা নিলাম দেয়া।

যে যত বেশি টাকা প্রশাসনকে দিতে পারবেন সেই হবেন চীফ রাইটার। ডাকের টাকা পেয়ে যান �জেলার� সাহেব। বর্তমানে চীফ রাইটার হলো কয়েদী মেসকার চৌধুরী। বাগেরহাটের লোক। গোলগাল চেহারা বেশ মোটাসোটা।

তিনি প্রতিমাসে ৪,৫০,০০০ (চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা প্রদান সাপেক্ষে চীফ রাইটার নিযুক্ত হয়েছে। তার আয়ের পথ হলো আমদানী থেকে মাসিক আয় ৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া কারা অভ্যন্তরে যে বিচার হবে তার দেন দরবার হতে আয়, রাইটার ও তার সহযোগী এবং জলভরী ওস্তাগারদের কাজ দেয়ার বিনিময়ে প্রতিজন মাসে ২০০০/- টাকা করে সমগ্র জেলে প্রায় ২০০ জন এর নিকট হতে ৪ লক্ষ টাকা। এছাড়া ওয়ার্ড পাস, সেল পাস, চালান দেয়া, চালান ঠেকানো ইত্যাদি থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা। তাকে দিতে হয় প্রতিমাসে ৪,৫০,০০০/-টাকা জেলার সাহেবকে।

এছাড়া ৪ সুবেদার, ডেপুটি জেলার, হাবিলদার ও মিঞা সাহেব (জেল রক্ষীদের)কে আনুমানিক আরো ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা মাসিক দিতে হয়। এতে দেখা যায় যে, তার মাসিক ব্যয় হলো ৬-৭ লক্ষ টাকা। তার মাসিক আয় হলো প্রায় ১০,০০,০০০/-(দশ লক্ষ) টাকা। তার মাসিক নীট আয় প্রায় ৩,০০,০০০/-(তিন লক্ষ) টাকা। এতো গেল চীফ রাইটার এর আয়।

আমাদানীতে তাকে সহায়তা করার জন্য আমদানী রাইটার এবং তার সহযোগী ও ইনচার্জ পাহারার মাসিক আয় গড়ে আনুমানিক ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা। এসব অর্থের একমাত্র আয়ের উৎস বন্দিদের নিকট হতে হাতিয়ে নেয়া অর্থ। ওয়ার্ডের বন্দিদের বেচা-কেনার পর শুরু হয় সেলে নেয়ার জন্য তয়-তদ্বীর। �জেলের মজা সেলে� মাত্র কয়েক ঘন্টায় বন্দিদের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। এদের মধ্যে কয়েকজন আমদানী রাইটার এর মাধ্যমে সেলে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েকটি সেল আছে- ৯০ সেল, ১০ সেল, ২৭ সেল, ৭ সেল, ২০ সেল এবং ২৬ সেল (শুধুমাত্র ডিভিশন প্রাপ্ত বন্দিদের জন্য)। একেক সেলের রেট একেক রকমের। ৯০ সেলে যেতে হলে বন্দিকে এককালীন ৬০০০/- (ছয় হাজার) টাকা দিতে হয়। এরসাথে প্রতি মাসে প্রশাসনের খরচ হিসেবে ৩০০ (তিনশত) টাকা করে দিতে হয়। ৯০ সেলে ৯০টি সেল রয়েছে।

প্রতি সেলে ৫/৬ জন করে বন্দি থাকে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক সেলে অবস্থানরত প্রত্যেক বন্দিকে ৬ হাজার টাকা প্রদান করার পরও প্রতিমাসে প্রতি সেলে অবস্থানকারী প্রতিজনকে ৩ শত করে টাকা দিতে হয়। ২৭ সেলে প্রতি সেলে ৪/৫জন থাকে। প্রতি বন্দিকে এককালীন ৪ হাজার টাকা দিতে হয়। মাসিক খরচ বাবদ জমা ২০০/= করে দিতে হয়।

১০ সেলে প্রতিবন্দিকে এককালীণ দিতে হয় ১০ হাজার টাকা করে। ১০ সেলে প্রতি সেলে ৫/৬জন করে থাকে। মাসিক ৫শত টাকা করে খরচা বাবদ দিতে হয়। ২৭ সেল, ৭ সেল প্রায় একই রেটে লেনদেন হয় জনপ্রতি বন্দির জন্য। ২৬ সেল যেহেতু ডিভিশন প্রাপ্ত বন্দিদের জন্য তাই এর কোন বেচা-কেনার পর্যায়ে পরে না।

সেলের সিট বরাদ্দ খাতের টাকা বন্টন হয় জেলর, ডেপুটি জেলার, সুবেদার ও চীফ রাইটারের মাঝে। সিট বরাদ্দের আরেকটি স্থান হলো হাসপাতাল। হাসপাতালে ৪টি ওয়ার্ড ছাড়াও রয়েছে গেন্ডু ওয়ার্ড (যাহা ৩ খাতার একাংশ) এবং ১৪ সেলের ওপরের তলা। মেডিক্যালে সিট পেতে হলে মাসিক দিতে হবে ১০ হাজার টাকা, এছাড়া গেন্ডু ওয়ার্ডের জন্য প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকা। হাসপাতালের রাইটার এবং আমদানী রাইটার এই বেচাকেনা দায়িত্ব নেন।

এই টাকার সিংহভাগ পান বড় ডাক্তারসহ ওয়ার্ড ভিত্তিক দায়িত্ব প্রাপ্ত ডাক্তারগণ। বাকী অংশ বন্টন হয় হাসপাতাল রাইটার ও ফার্মাসিষ্টদের মাঝে। বেচা-কেনার দায় দায়িত্ব শেষ করে শেষ বেলায় যে সমস্ত বন্দি বেচা হয়নি সে সমস্ত বন্দিদের বলা হয় �সরকারী�। সরকারীদের মধ্যে বয়স্করা আছেন। সরকারীদের মধ্যে যারা বয়স্ক তাদের কিছুটা ভাগ্যভাল বলাচলে।

অন্যদের ভাগ্য যে বিরম্বনা তা ভাষার বর্ণনা করা সত্যি দুষ্কর। বয়স্ক ওয়ার্ডের নাম �জলসিড়ি� যাকে পূর্বে বলা হতো স্কুল/২। এখানে সাধারণত ৬০ ও তার উর্দ্ধে বয়স্ক বন্দিদের মাঝে বন্টন হওয়ার বিধান। কিন্তু ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়স্করা ৬ শত টাকা দিয়ে স্কুল/২ এর স্থান করে নেয়। স্কুল-২ ধারণ ক্ষমতা যদি ৪০/৫০ জন।

তাতে থাকেন ২৫০ জনের মত। তার ৮০ শতাংশের অনাধিক ৪০ বৎসর বয়স্ক। এদের থেকে প্রাপ্য টাকা নেন সুবেদার ও চীফ রাইটার। চলবে....  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।