আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজব মেয়ের আজব কাহিনী........ টিনা আমার দশ বছর আগের বান্ধবী

আমার পরিচিত অনেকেই বলে আমার সাথে নাকি মানুষের চেয়ে জানোয়ারের মিল বেশী। তাই দয়া করে কেউ আমার কাছ থেকে মানুষের ব্যাবহার আশা করবেননা। মানুষ আসলেই কত বিচিত্র ধরনের হয়। এর জন্যই বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে মিশলেই মনে হ্য় নিজের জানার পরিধিটা কতই না ছোট। ফেসবুকে গুতাতে গুতাতে আমার অনেক আগের পরিচিত একটা মেয়ের সাথে দেখা হলো।

তার আগে মেয়েটার একটু ইনট্রো দিয়ে নেই। তাহলে কিছুটা সুবিধা হবে। পরিচিত মানে আমার এক ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ডের ফ্রেন্ড ছিলো মেয়েটি। অনেক দিন এক সাথে ঘুরাঘুরি করা হয়েছে। মেয়েটার একটা গুন ছিলো প্রচুর কথা বলত, উচ্ছল এবং প্রানবন্ত ছিলো।

মেয়েটা অন্য মেয়েদের মত ন্যাকামি- ন্যাকামি ভাব দেখাত না। ছেলেদের সাথে সমানে মিশত। তখনই দেখতাম অবলিলায় অল্প পরিচিত ছেলেদের সাথেও রিকশায় ঘুরা-ঘুরি করত সেটা দিনের বেলা হোক বা রাতের বেলায় হোক। এইটা যে সে অন্য কিছু মনে করে ঘুরত তা না। সে খুব স্বাভাবিক ভাবেই করত যেমন নাকি তার অন্য মেয়ে ফ্রেন্ডের সাথে করত।

কেউ এজন্য কিছু মনেও করত না, কারন সবাই জানে টিনা মনের দিক থেকে ফ্রেশ। এমন কি একবার আমাদের মধ্যে কয়েকজন ছেলে মিলে ২ দিনের ট্যুরে কুমিল্লা গেলে মেয়েদের থেকে একমাত্র টিনাই গিয়েছিল। আমি আবার একটু শয়তানি করে ডাকতাম টিনা আপা বলে। এজন্য আমার উপর খেপে গেলেও ব্যাক্তিগত ভাবে আমাকে ভালই পছন্দ করত ফ্রেন্ড হিসাবে (অন্য কিছু না কিন্তু) ... বলত যে এই পোলাপান গুলার ভিতরে এই পোলাটাই আমার কাছে সারা জীবন ভালো লাগবে। অবশ্য আরো অনেকেই আমারে পছন্দ করত আমার একটা গুডি গুডি ইমেজের জন্য।

তো টিনা আপারে মেসেজ পাঠাইলাম। ২ ঘন্টার মধ্যেই ব্যাক। তারপর স্কাইপি-তে আলাপ শুরু হইল। আমারে পায়া দেখি ভালই খুশী হইছে। আমারও ভালো লাগলো নিজের জীবনের প্রায় দশটি বছর আগের সময়টায় ফিরে যেতে পেরে।

টিনা-র সাথে কথা বলতে গিয়ে একসময় খুব স্বাভাবিক ভাবেই সংসার এর প্রসংগ উঠল। আমি তো এই চান্সে আমার বউ-র একগাদা বদনাম করলাম। কারন বন্ধুর কাছে বউ এর বদনাম কইরা লাভ নাই কিন্তু বান্ধবীর কাছে করলে লাভ আছে। যাই হোক টিনা দেখি বেশী কথা না বলে খালি আমারটাই শুনে গেল। পরে আরেকদিন কথা বলতে গিয়ে দেখি টিনা কান্না-কাটি শুরু করে দিল।

আমি তো পুরাই টাশ্‌কি। পরে ওর সাথে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টার মত টানা কথা বলে যা শুনলাম তাতে আমার অদ্ভুত একটা দম বন্ধ করা অনুভুতি হলো। টিনার জামাই বিয়ের পর থেকেই টিনা-কে বাইরের কারো সাথে খুব একটা মিশতে দিতনা। টিনার চাল চলন তার কাছে ভালো লাগে নাই। ওর চলাফেরা ওর জামাই ( বাবু ভাই) এর কাছে খুব ছেলে ঘেষা মনে হত।

তাছাড়া যখন টিনার বান্ধবীদের কাছ থেকে টিনার আগের কাহিনী শুনত সেটাও তার কাছে ভালো লাগত না। তারপর বাবু টিনা কে বুঝানো শুরু করলো চেন্জ হবার জন্য। অনেক রেষ্ট্রিকসান দিলো মেয়ের চলা ফেরার উপর। যেমন, কোন ধরনের ছেলে বন্ধু রাখতে পারবে না, ঘরের বাইরে গেলে যেন একটু বুঝে শুনে চলাফেরা করে, বাচ্চা পোলাপানের মত খামখেয়ালী না চলে। তারপর শরীরে কাপর চোপড় যেন ঠিক থাকে।

এইটা অবশ্য আমারই একটা অবর্জাভেশন। টিনা-র এই একটা প্রবলেম ছিলো আমাদের সাথে চলার সময় থেকেই। যদিও কেউ কখনো এইটা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলত না। আরো কিছু ব্যাপার বাবু-র চিন্তা ভাবনা জটিল করে দেয়। যেমন টিনাদের ফ্যামিলি এর চলাফেরা আচার ব্যাবহার।

তাছাড়া টিনা বাবু'র সাথে বেশি ঘনিষ্ট হতে যেয়ে ওদের ফ্যামিলির বেশ কিছু গোপন কথা বলে দেয়। যেমন নাকি ওদের ফ্যামিলি'র ( ওর কাজিন দের) কিছু একষ্ট্রা মেরিটাল কাহিনি আছে যেটা নাকি বাবু'র ভালো লাগে নাই। প্রথম প্রথম ভালই চলতেছিল। তাছাড়া দুই জনের ভালোবাসার কোন অভাব ছিলো না। দুই জনই একজন আরেকজন কে ছাড়া থাকতে পারতনা।

কোন ঝগড়াই ২৪ ঘন্টার বেশী টিকত না। আর যখন মিল হত তখন একজন আরেকজন কে পাগলের মত ভালোবসত, কান্নায় গলা বশে যেত। একজন আরেক জন কে ধরে সারা-জীবন এক সাথে হাতে হাত রেখে পাড়ি দেয়ার পণ করত। বাবু টিনা-কে অসম্ভব ধরনের কিছু সারপ্রাইজ দিত। যেগুলা নাকি টিনা-কে আরো অবাক করে দিত।

কিন্তু আস্তে- আস্তে প্রবলেম হতে লাগল। টিনার কেন যেন আর ভালো লাগে না। মনে হয় যেন বাবু'র জন্য ও নিজেকে বেশী চেন্জ করে ফেলেছে। এতটা কি দরকার ছিলো? কেন ওর নিজেকে বদলাতে হবে। দুনিয়ার মানুষ কি আর নিজেকে পরিবর্তন না করেই সংসার করছে না? কারন শুধু জামাই নিয়ে কি আর দিন কাটানো যায়? কোথাও ঘুরার জায়গা পায়না।

গল্প করার মানুষ পায়না। আমি প্রস্ন করলাম কেন তোমার কোন বান্ধবী নাই যাদের সাথে তুমি ঘোরা-ফেরা করতে পারো। তারপরে টিনা যেইটা বল্লো আমার কাছে মনে হলো এইটাই আসল কোর প্রব্লেম। বাবু, টিনাকে মানা করছিলো তাকে ছেলেদের সাথে মিশতে । ঐটাই দাড়িয়েছে মেইন প্রব্লেম।

বাবুর কথা চিন্তা করে টিনা তার পড়া-লেখা থেকে শুরু করে সব জায়গায় ছেলেদের সাথে মিশা ছেড়ে দিছিল। এরপড় থেকেই দেখে তার কোন ফ্রেন্ড নাই। অনেক মেয়ের সাথেই মিশতে চাইছিলো কিন্তু ওর নাকি ভালো লাগে না। সে পরে দেখে যে মেয়েদের সাথে মিশতে তার খুব একটা ভালো লাগে না। ছেলেদের সাথেই ফ্রেন্ডশীপ, কথা-বার্তা বেশী জমে এবং মনের ভিতর থেকেই ভালো লাগে।

ছেলেদের সাথে মিশার জন্যই তার ভিতরে একটা ব্যাকুলতা কাজ করে, সোজা ভাষায় আকর্ষন বোধ করে। হোক সেটা পড়ালেখা বা বাইরে ঘুরা-ঘুরি। ছেলেদের সাথেই গ্রুপ করে স্টাডি করতে ভালো লাগে। সে নিজে মেয়ে হওয়া সত্তেও ক্লাসে খুজেঁ খুজেঁ ছেলেদের গ্রুপে জয়েন করে। আর যেকোন বয়সের একটু একষ্ট্রা অর্ডিনারি ছেলে দেখলেই মোহিত হয়ে যায়।

তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে যায়। তার জন্য ব্যাকুল হয়ে যায় ভিতর থেকেই। মনের ভিতর থেকেই অপেক্ষা করে তার সাথে বেশি সময় কাটানোর জন্য। সেটা হতে পারে কোন গ্রুপমেট যে নাকি খুব ভালো প্রেসেন্ট করতে পারে বা IELTS ক্লাসের ইয়াং টিচার যে নাকি একটু ইমপ্রেসিভ। সেই ছেলেকেই তার স্বপ্ন পুরুষ মনে হয়, ইচ্ছা হয় কিছু সময় মধুর সময় কাটাতে।

আর টিনার এই ব্যাপারটা-ই বাবু খুব ভালো ভাবে বুঝে। তাই আরো বেশী করে সর্তক হতে চায়, টাইট দিতে চায়। মেয়ে আবার হেভী ক্যারিয়ার মাইন্ডেড, পড়াশুনায় খুব সিরিয়াস। কিন্তু জামাই তারে জব কর‌তে দিবে না। কারন জব করতে গেলে মেয়ে আরো বেশি করে পোলাদের সাথে মিশতে পারবে তারপর যদি কারো সাথে লাইন লাগায় ফেলে।

এইটা নিয়া আরেক অশান্তি। ফেসবুক নিয়াও বলে প্রবলেম হইছিলো। টিনা' লুকিয়ে টার্কির কোন পোলার সাথে চ্যাট কর‌্ত। একজন আরেকজন-রে একেবারে দোস্ত বইলা ডাকত। সেইটা জামাই দেখে আরেক কাহিনী।

তারপরে অনলাইনে বলে আরেক বাংলাদেশি পোলার সাথে পরিচয় হওয়ার পরে বাইরে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু বাবু টের পেয়ে যায়, তারপর আরেক ফাটা-ফাটি। এগুলা নিয়ে তাদের সর্ম্পক এখন অনেক হালকা হয়ে গেসে। কি করবে না করবে কিছুই বুঝে না। ওর সাথে কথা বলে আমার নিজের মনটাই কেমন যেন থম মেরে গেলো। আমি আবার বেশ ইমোশোনাল।

রিলেশানের ব্যাপারগুলা আমাকে খুব টাচ করে যায়। ওকে কোনই উপদেশ দিতে পারলামনা। শুধু বল্লাম যে আমার এই অবস্থান থেকে ওকে কোনও সাপোর্ট দিতে পাড়লে যেন একটু হলেও জানায়। ওর সাথে আরো খুঁটি-নাটি অনেক কথাই হয়েছিলো কিন্তু সেই বিস্তারিত দিতে গেলে পাঠকের ধ্যের্যচ্যুতির সমুহ সম্ভাবনা দেখে চেপে গেলাম। এখন বলে সে আমার সাথে নিয়মিত কথা বলবে।

আমার সাথে কথা বল্লে হয়ত তার মনটা কিছুটা শান্ত হতে পারে যেহেতু আমি তার অনেক আগের পরিচিত। খুব করে রিকোয়েষ্ট করলো যেনো অবসর পেলে অনলাইন থাকি। আমিও তাকে কথা দিলাম যে তাকে সময় দিবো কারন আমি নিজেও বুঝতে পারছি তার কঠিন সময়টা। আর আমার পরোপকারী মনটাও তাই কথা না দিয়ে পারলোন। আার আমি সবসময়ই আমার জীবনের পিছনের মানুষগুলার প্রতি একটা টান অনুভব করি।

কিন্তু তাকে সময় দিতে যেয়ে আমার নিজের মাথার উপর কি ঝড় এসে পড়ে সেই টেনসনে আসি। হাজার হলেও আমার বউ এত পরোপকারি মনের না। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।