আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনলাইন-অফলাইন

আমি লেখক নই এই গল্পটি আমার এক বন্ধুর জীবনে ঘটে যাওয়া একটি সত্য ঘটনা উপর ভিত্তি করে লেখা। তার হয়ে আমি আপনাদের এই গল্পটি বলছি। শুধু মাত্র কিছু নাম পরিবর্তন করেছি। আমি রিফাত। ঘটনাটির শুরু আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগের।

ইন্টার পরীক্ষার আগে English প্রাইভেট পরতাম কামাল স্যারের কাছে। ছেলে-মেয়ে এক সাথে থাকলেও, পড়ার চাপের কারণে মেদের সাথে তেমন মেশা হত না। ধীরে ধীরে স্যারের পড়াও শেষ হয়ে পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেল। অবসরের দিন গুলোর কোন এক বিকেলে, কোন কাজ না থাকায়, বাসায় বসে বসে ফেসবুকে ঘাটাঘাটি করছিলাম। হঠাৎ, একটি Friend Request আমার দৃষ্টি কেড়ে নিল।

কারণ নামটি ছিল, লিজা খান, সে আমার সাথে কামাল স্যারের কাছে পড়ত, কিন্তু কখনো কথা হয়নি। আমি তাকে accept করলাম। কিছু দিন পর চ্যাটে কথা হল। এ কথা ও কথা বলার পর, ও জিজ্ঞেস করল, “ভার্সিটি ভর্তির জন্য কোথায় কোচিং করছ?”। আমি বললাম, UCC. ও বলল “আমিও UCC তেই পড়ি”।

এর পর থেকে আমাদের প্রায় প্রতিদিনিই দেখা হত, ফোনে কথা হত, আর Facebook এ তো ছিলই। তিন মাসেই আমরা একে অপরের খুব ভাল ফ্রেন্ড হয়ে গেলাম। আমাদের বাসার সবাই জানত আমাদের বন্ধুত্তের কথা। লিজার বাসার প্রায় প্রায়ই যাওয়া হত। সবাই আমাকে নিজের ছেলের মতই দেখত, একি অবস্থা ছিল আমার বাড়িতেও।

রাজশহী তে পরীক্ষা চলে আসলো। আমরা দুই জনই ফরম কিনেছিলাম পরীক্ষার জন্য। কিন্তু লিজার বাসায় একটা সমস্যা হয়ে গেল। হঠাৎ ওর বাবা অসুস্থ হয়ে পরায় ওর সাথে কেউ রাজশহী তে যেতে পারবে না। ওর মা আমাকে বলল তোমরা দুজন এক সাথে যাও।

পরীক্ষা দুপুরে থাকায়, আমরা ঐ দিন সকালে আমাদের প্রাইভেট কারে আমি, আমার মা, লিজা এবং ড্রাইভার রওনা দিলাম। আমি সামনে এবং মা আর লিজা পেছোনে বসল। ঢাকা থেকে রাজশহী যাওয়ার পথে তেমন কনো কথাই হলো না, পড়তে পড়তেই গেলাম সারা রাস্তা। পৌছেই যে যার পরীক্ষার হলে চলে গেলাম। পরীক্ষা শেষ হতে হতে বিকেল হয়ে গেল।

আমাদের দুজনেরি পরীক্ষাই খুব একটা ভাল হল না। পরীক্ষা্র পর লিজা মা কে বলল, “আন্টি চল রাজশাহী শহর টা একটু ঘুরে দেখি”। কিছুক্ষণ ভার্সিটির মাঠে বসে থেকে, পরে গেলাম রাজশাহীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গায়, পদ্মা নদীরপারে। সেখানে, সুর্য ডুবার যাওয়ার দৃশ্য আমার মনকে কেমন যেন করে দিল। ঠিক সেই মুহুর্তে আমার চোখ পড়ল লিজার দিকে।

হঠাৎ কেন যেন লিজাকে অনেক সুন্দর লাগছিল। ও আমার দিকায় তাকাতেই আমি আমার চোখ ফিরিয়ে নিলাম। তখন একটু ভয়ও করছিল, ও তো আমাকে দেখে ফেলেনি ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে। তার পর আমরা রওনা দিলাম রাজশাহী থেকে। এবার আমি আর লিজা বসলাম পিছনে আর মা বসল সামনে।

কিছুক্ষণ নানা বিষয় নিয়ে আমারা গল্প করলাম। রাতের বেলা, আর সারাদিন ধকলের পর, মা আর লিজা দুজনেই ঘুমিয়ে পরল। কিন্তু আমার চোখ নির্ঘুম। লিজার সেই চেহারাই আমার চোখের সামনে ভাসছিল। মাঝে মাঝে সামনের গাড়ির আলো ওর মুখে পরছিল এবং ওকে আরও সুন্দর লাগছিল।

মনে হচ্ছিলো কোন পরি আমার পাশে বসে আছে। সারা রাস্তা আমি ওর শুধু ওকেই দেখি। রাত প্রায় ১২ টার দিকে আমরা ওকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে আসি। ঐ দিনের পর থেকে, ধীরে ধীরে আমি ওর প্রতি অসম্ভব রকম দুর্বল হয়ে পরি। দেখা যেত প্রতি দিনিই লিজার সাথে দেখা করার চেস্টা করতাম।

প্রায়ই এক সাথে মুভি দেখতে যেতাম। আমার প্রতিটি চিন্তা-ধারায় চলে আসে লিজা, লিজা এবং শুধুই লিজা। কিন্তু বাধা হয়ে দারায় আমার সাহস। আমার মনের কথা গুলো বলার সাহস ই পেতাম না। কত প্ল্যান করতাম যে আজ বল্বই, এভাবে না ওভাবে আরও কত কি।

এভাবেই কেটে গেল আরও ৩ মাস। কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স না পেয়ে আমি প্রাইভেট এ ভর্তি হলাম। কিন্তু কেন যেন লিজা কথাও ভর্তি হল না। ওরা পুরো পরিবার সহ ওদের গ্রামের বাড়ি গাজীপুর চলে গেল। আমাদের দুরত্ব অনেকটাই বেরে গেল।

আমাদের আর দেখাই হত না, শুধু মাঝে মাঝে ফোন এ কথা হত আর facebook এ চ্যাট। কয়েক দিন ধরে, ওর কথা বলার ভাব, ওর কন্ঠ সব কিছুরই মাঝেই কেমন যেন একটা পরিবর্তন লক্ষ করলাম। কিছু দিন পরই আমার সাথে ও সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। আমি হতাশা আর নিরাশার মাঝে হারিয়ে গেলাম। পড়া লেখাও আমার সাথেই হারিয়ে গেল।

এমন কোন রাত যায় নি, ওর জন্য আমার চোখের জল ঝরে নি। এরই মাঝে, প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়ে গেল। রেজাল্টাও কি বলতে হবে? ফেল। তার কিছুদিন পরই, লিজা আমাকে ফোন দেয় এবং বলে ওরা সবাই নাকি আমেরিকা চলে যাবে। লিজা ওখানেই পড়া লেখা করবে।

আমি ওর কথা বিশ্বাস করতে পারি নি। পরে ওর মার কাছে শুনে সিওর হলাম। তখন মনে হল আমি যেন ওকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেলছি। আমার পিঠ দেয়ালে গিয়ে ঠেকল। ভাবলাম আমার মনের কথা এখন যদি বলতে না পারি তবে আর কখোনই বলতে পারব না।

সারা রাত চিন্তা করে, পর দিন সকালেই চলে গেলাম ওদের বারিতে। ওকে নিয়ে আসলাম বাইরে এবং আমি আমার মনের যত কথা ছিল সব এক নিশ্বাসে বলে গেলাম। লিজা সব কিছু শুনে শুধু একটা কথাই বলেছিল “রিফাত, অনেক দেরি হয়ে গেছে”। এ কথা বলেই ও চলে গেল। ওর চোখে তখন ছিল জলের ধারা।

আমার জীবনে এই প্রথম এবং শেষ বার আমি লিজার চোখে দেখেছিলাম অশ্রু ধারা। আর আমি? ……… সেই দিন থেকেই ড্রগসের অন্ধকার দেশে আমার পথ চলা শুরু হয়। দেখতে দেখতে এক বছর পেরিয়ে যায়। সময়ের আবর্তনে, আমি আবার আমার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসি। সব মেনে নিয়ে, ভুলে গিয়ে আগাতে থাকি সামনের দিকে।

জ়ীবনের পালে সবে হাওয়া লাগতে শুরু করেছিল, এমন সময় গত ২১শে নভেম্বর ২০১২ তে একটি খবর আসে যা আমার জীবন তরীকে আবার ডুবিয়ে দেয়। যা ছিল আমার কল্পনারও অতীত। আমি তখন আমার বন্ধু দের সাথে ভার্সিটিতেই আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন আমার ফোনে একটা পরিচিত গলা শুনে আমি চমকে যাই। না, সে লিজা ছিল না, ছিল লিজার মা।

কারণ ততক্ষনে আমার সাথে কথা বলার জন্য লিজা এই পৃথীবিতে ছিলই না। তার জীবনের Account টি ততক্ষনে Deactivate হয়ে গেছে। দু বছর আগে ধরা পরা “কিডনি ক্যন্সার” নামক এক ভয়ানক পশু তিলে তিলে হত্যা করে আমার লিজাকে। এই ছিল রিফাত আর লিজার অসমাপ্ত প্রেম কাহীনি। আ্পনাদের কি জানতে ইচ্ছা করছে না?যে রিফাত এখন কেমন আছে? উত্তর টা আপনারাই ভেবে দেখুন।

কেমন আছে রিফাত …….. ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।