আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়

মানুষ যেমন হাসে, কাঁদে, তেমনি রাগ হওয়াটাও স্বাভাবিক ব্যাপার। তেমনি রেগে গেলে সে যদি তা প্রকাশ করে, তাও কিন্তু স্বাভাবিক। তবে অতিরিক্ত রাগের বহিঃপ্রকাশ একজন মানুষের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারেÑ যার প্রভাব পড়তে পারে তার পারিবারিক কাজকর্মে এবং ব্যক্তিগত জীবনে। মানুষ ঠিক কখন রেগে যায় এর বোধহয় কোনো নির্দিষ্ট উত্তর খুঁজে পাওয়া কঠিন। হতে পারে অফিসের কোনো কাজের কারণে; বাসায় বাচ্চারা কথা না শুনলে।

হাসি, কান্না, রাগ বা হিংসা এই সবই মানুষের ন্যাচারাল ইমোশন। কিন্তু রাগকে কীভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে তা মনে রাখা খুব প্রয়োজন। যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, রাগ হলে কী করেন; বেশিরভাগ উত্তর হবে চিৎকার করা, বা যা কিছু আছে সব ছুড়ে ফেলে দেওয়া, অথবা কেউ চুপ হয়ে থাকে বা কেঁদে ফেলে। কিন্তু এর কোনোটি কিন্তু সঠিক উপায় নয় রাগ প্রকাশ করার জন্য। একবার ভেবে দেখা উচিত যে এ ধরনের ব্যবহারে আমাদের আশপাশের মানুষকে কীভাবে প্রভাবিত করছে।

নিজেকে এবং আশাপাশের সবাইকে ভালো রাখতে হলে দরকার নিজের ইমোশনগুলো কন্ট্রোল করে রাখা। রাগের সময় নিজের মাথা ঠাণ্ডা রাখা আর এটা কার্যকর করা। কেউ যখন রাগ করে, তিন ধরনের রেসপন্স দেখতে পাওয়া যায়Ñ মানসিক, শারীরিক এবং ব্যবহারিক। যদি মাথা গরম হয়ে যায় তা হলে তো মানসিক রেসপন্স, বুক ধরফড় করা, হাত কাঁপতে থাকা হলো শারীরিক রেসপন্স’ শরীরের বিভিন্ন গ্ল্যান্ড থেকে হরমোন নিঃসৃত হয় যা হর্ট রেট বাড়িয়ে দেয়। রেগে গেলে একেকজন মানুষণ একেকভাবে রি-অ্যাক্ট করে।

কেউ কেউ যার উপার রেগে যান তাকে মার দেওয়া শুরু করেন, আবার কেউ চুপ করে অপেক্ষা করতে থাকে সঠিক সময়ের যখন যথাযথ শাস্তি দিতে পারবেন। কিছু লোক আছে, যাদের স্বভাবের সাথেই রাগ জিনিসটা খুব ছোটবেলা থেকেই আছে। কোনো তুচ্ছ ব্যাপার ঘটলেও সহজেই রেগে যায় তার, আর এদের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। এর ফলে অনেক সময় সাইকোথেরাপির দরকার হতে পারে। অতিরিক্ত রেগে যাওয়া যেমন খারাপ, তেমনি মনের মধ্যে রাগ লুকিয়ে রাখাটাও যেন অস্বাভাবিক।

তাই তারা সেটা প্রকাশ করেন না। কিন্তু এর ফলে অনেক সময় এটা শারীরিক এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এবং হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য জটিল রোগ দেখা দেয়। আরও দেখা যায় যে, যারা রাগ প্রকাশ করতে পারে না তারা কাউকে সামনা সামনি কোন কথা মুখ খুলে বলতে পারে না। আর পেছনে সমালোচনা করে থাকেন। এর ফলে নিজেকে একা একা মনে করতে থাকেন এবং সম্পর্ক গড়ে তুলতে কষ্ট হয়।

রাগ করাটা কোনো অন্যায় নয়। মানুষ নিশ্চয়ই রাগ করবে কিন্তু তার প্রকাশ হতে হবে অন্যরকম। জীবনের সবকিছু যেমন ব্যালেন্স করে চলতে হয়, তেমনি ইমোশনগুলো প্রকাশের ক্ষেত্রেও ব্যালেন্স করে নিতে হবে। বলতে পারেন, জীবনে এতো কিছু মেনে চলতে গেলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাই তো কষ্টকর হয়ে যাবে, আমরা প্রতিদিন যেভাবে খাওয়া-দাওয়া, সাজপোশাক, জীবনযাপনের ধারা মেনে চলি তেমনি আমাদের ইমোশনগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হয়তো সবকিছু একদিনে সম্ভব হবে না।

কিন্তু একবার শুরু করে তো দেখা যাক। এইভাবে দেখবেন যে, আপনি অবশ্যই সাফল্য অর্জন করবেন। রাগ এবং অসুখ কিছু অসুখের কারণেও মাথা গরম হয়ে যায় বেশ তাড়াতাড়ি। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। যেমন, এপিলেন্সি, ব্রেন ইনজুরি, লেড পয়জনিং, মানসিক অস্থিরতা।

কিছু মানসিক অসুখের কারণেও অনেক সময় অতিরিক্ত রাাগ হতে পারে, যেমনÑ বর্ডার লাই পার্সোনালিটি ডিস অর্ডার, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, ডিপ্রেশন। কিছু সহজ কৌশল * প্রথমে যেটা করা প্রয়োজন তা হলো, খুঁজে বের করতে হবে সবগুলো জিনিস যা দেখতে বা কেউ করলে অথবা সেখানে গেলে আপনার মাথা গরম হয়ে যেতে পারে। এসব জায়গায় যদি দেখেন মাথা গরম হওয়ার মতো কোনো কিছু হচ্ছে, ভালো হয় ওখান থেকে চলে যাওয়া এবং আলোচনা করে সেই সমস্যার সমাধান করা। * যখন মাথা গরম হয়, তখন কেমন লাগে তা একটি ডায়েরিতে লিখে রাখুন। কারণগুলো লিখে রাখুন, আর সাথে রিঅ্যাকশনগুলো।

মাথা ঠাণ্ডা হলে এটি নিয়ে একটু ভাবুন এবং চেষ্টা করুন সঠিক উত্তরটি খুঁজে বের করতে। * রাগ হলে মানুষ যা ইচ্ছে তাই বলে ফেলে। সব কথা বলার আগে অবশ্যই ভেবে দেখুন, যা বলতে যাচ্ছেন সঠিক বলছেন তো? বুঝে, যুক্তি দিয়ে কথা বলাটাই কিন্তু একজন মানুষের কাজ। যখন রাগ করেন, যদি পারেন কোনো মজার লেখা, এসএমএস বা গল্প পড়তে বসে যান। দেখবেন এটা অবশ্যই কাজ করবে।

* এ ছাড়া রাগ হলে যদি এক্সারসাইজ করে থাকেন, তাও অনেক উপকারে আসে। মেডিটেশনও মনকে অনেক প্রশান্তি দিতে পারে। এই দুই মিলে আপনাকে করে তুলতে পারে প্রাণবন্ত। আর দিতে পারে রাগ থেকে মুক্তি। * যখন রাগ হবে, তখন পজিটিভ কথা ভাবুন।

হতেই পারে তা আপনার ছোটবেলার কথা। যে সময়গুলো আপনি খুবই উপভোগ করেছেন। আর সেগুলো আপনার কাছে খুবই স্পেশাল। * আবার আপনার খুব কাছের বন্ধুকেও ফোন করে কথা বলে নিতে পারেন। তবে আপনার সঙ্গীর কি হয়েছে আর আপনি কেনো রেগে আছেন।

তার থেকে পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করাই ভালো। * নিজের অ্যাটিচিউড বদলানোর চেষ্টা করুন। এমন যদি দেখেন যে সবার সঙ্গে আপনার ঝামেলা হচ্ছে। কারও কোনো কথাই আপনি মেনে নিতে পারছেন না, তাহলে বুঝতে হবে আপনারই কোথাও ভুল হচ্ছে সে ক্ষেত্রে প্রথমেই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো দরকার। * রাগ চেপে রাখেন যারা, তাদের জন্য প্রানিক হিলিং খুবই উপকারী।

এই পদ্ধতি মনের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ ভুলে যেতে সাহায্য করে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।