আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গার্মেণ্টকর্মী সুমির আগুন লাগানোর ভিডিও ফুটেজ : কিছু সঙ্গত প্রশ্ন,কিছু সন্দেহ !

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার, ধর্মান্ধতা ও দলান্ধতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। আমার ফেসবুক বন্ধু জনাব Saifuddin Ahmed Nannu ভাইয়ের লেখাটা হুব হুব তুলে দিলাম। গার্মেণ্টকর্মী সুমির আগুন লাগানোর ভিডিও ফুটেজ : কিছু সঙ্গত প্রশ্ন,কিছু সন্দেহ ! ------------------------- বেসরকারি টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল 24’এর রাত এগারটার খবরে (29.11.2012) একটি বিশেষ প্রতিবেদন দেখলাম। প্রতিবেদনটি ডেবোনেয়ার গার্মেন্টে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত গার্মেণ্টকর্মী সুমী এবং তাকে টাকা যোগানদেয়া জাকির হোসেনকে নিয়ে। প্রতিবেদনে সিসি টিভিতে ধারণকরা ভিডিও ফুটেজটি বিস্তারিত দেখানো হল।

এই দৃশ্য অন্য সবার মত আমি এর আগেও সাধারণ দৃষ্টিতে একাধিকবার দেখেছি। এবার দেখলাম গভীর মনোযোগ দিয়ে, ভিন্ন চোখে । এবারের দেখায় কিছু সন্দেহ, কিছু প্রশ্ন মনে জেগেছে যা শেয়ার করবার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। হতে পারে সবই আমার সন্দেহবাতিকতার ফসল তবুও কষ্ট করে পড়ে দেখতে পারেন। ঘটনাক্রম :01 সিসি টিভিতে দেখাগেল গার্মেণ্টকর্মী সুমি ধীর পদক্ষেপে হেঁটে যাচ্ছে, সে অনেকগুলো টেবিল পেড়িয়ে একটি টেবিলের নিচে গিয়ে কয়েক সেকেণ্ডের জন্য বসলো এবং উঠে দাঁড়ালো (আগুন লাগিয়ে) ও দ্রুতগতিতে ঐ ফ্লোর থেকে বেড়িয়ে আসলো।

বিশ্লেষণ: এক: সুমীর হেঁটে যাওয়া লক্ষ্য করলে স্পষ্টতই মনে হবে সুমি কোন টেবিলের নীচে আগুন দেবে তা যেন পূর্বনির্ধারিত ছিল। কেন এমন মনে হল? কারন সে যখন হেঁটে যাচ্ছিল তখন ডানে বামে পেছনে কোন দিকে একটিবারের জন্যও তাকায়নি,সরাসরি ঐ টেবিলের সামনে গিয়েই বসে পড়লো এবং আগুন দিল। যদিও আগুনটা কিসে লাগালো,কি দিয়ে লাগালো সে দৃশ্য ক্যামেরায় আসেনি। দুই: সে কেন জন্যশূন্য একটি ফ্লোরে আগুন দেবার জন্য প্রায় কুড়ি-পঁচিশটি একই ধরনের টেবিল পেড়িয়ে অনেক ভেতরের টেবিলের নীচে গেল। সেতো দুতিনটা টেবিলের পরই আগুনটা অনায়াসেই লাগাতে পারতো।

কারণ যত ভেতরে যাবে আগুন লাগিয়ে বের হয়ে আসতে তত দেরি হবে। কেন সেটি সে করলো না। যদিও সব টেবিলের উপরেই প্রচুর কাপড় স্তুপাকারে ছিল। ঘটনাক্রম :02 সিসি টিভিতে দেখাগেল সুমি কক্ষ থেকে বেড়িয়ে যাবার কয়েক সেকেণ্ড পরই কয়েকজন নারীকর্মী প্রায় দৌড়ে ঐ ফ্লোরে প্রবেশ করে সুমী যে টেবিলের নীচে আগুন দিয়েছিল সেখানে গেল। পাশের টেবিলগুলোর উপর থেকে স্তুপীকৃত কাপড় সড়িয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলো, ততক্ষণে কক্ষটি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল।

বিশ্লেষণ: এক: আগুন নেভাতে যারা কক্ষে আসলো তারা সবাই গার্মেণ্টকর্মী,প্রথম প্রবেশ করা কর্মীটি সহ অধিকাংশই নারী । তাঁদের কাউকে কমকর্তা বা ফ্যাক্টরির অগ্নিনির্বাপন কর্মী বলে মনে হয়নি। অগ্নি নির্বাপন কর্মী কিংবা কর্মতাকর্তরারা তখন কোথায় ছিলেন ? দুই : নিশ্চিন্তপুরের তাজরীণ গার্মেণ্টে শতাধিক মানুষ আগুণে পুড়ে মরবার পর যে আগুণ আতঙ্ক সারাদেশের গার্মেণ্ট শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়েছে তাতে ফায়ার এলার্ম বাজার সাথে সাথে গার্মেণ্ট কর্মীদের প্রাণবাঁচাতে বাইরে ছুটে যাবার কথা । এক্ষেত্রে তা হয়নি , কোন ফায়ার ফাইটার আসেনি। এসেছে দশ-বারো জন গার্মেণ্টকর্মী।

প্রশ্ন থাকে তাহলে কি ফায়ার এলার্ম বাজেনি? যদি না বাজে তাহলে সুমী বেড়িয়ে যাবার কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই আগুন নেভাতে গার্মেণ্টকর্মীরা দ্রুততার সাথে এগিয়ে আসলো কি করে ? কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই তাদের কে পাঠালো আগুন নেভাতে ? তিন : যারা আগুন নেভাতে আসলো,তারা যখন কক্ষে প্রবেশ করছে তখনও পর্যন্ত আগুন কিংবা আগুনের ধোঁয়া ক্যামেরায় ধরা পড়েনি ( অন্তত: টিভিতে দেখানো ছবিতে দেখা যায়নি) তাহলে এত দ্রুত তারা বুঝলো কি করে সুমী আগুনই লাগিয়েছে। > 01. সুমীর জানা নাও থাকতে পারে কিন্তু তাকে টাকা সরবরাহকারী, বিভিন্ন গার্মেন্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মর্তাকর্তা জাকিরের জানবার কথা ঐ ফ্লোরে সিসি টিভি আছে। জাকির নিশ্চই জানতো সুমী যে ফ্লোরে আগুন লাগাবে সে ফ্লোরে সিসি ক্যামেরা চালু থাকে। আর সিসিটিভিতে সুমীর ছবি আসলে, সুমী ধরা পড়বেই এবং সে নিজেও ফেঁসে যাবে। সিসিটিভি চালু অবস্থাতে জাকির এবং সুমী এতবড় বোকামী করলো কেন? 02. সিসি টিভির রেকর্ডকৃত ছবি দেখে সুমীকে আটক করা হয়।

এর পরপরই তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আটক করা হয় জাকিরকে ,তুলে দেয়া হয় পুলিশের হাতে। এটাই স্বাভাবিক। একই সাথে সিসি টিভিতে ধারণকরা ভিডিও ফুটেজটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেণ্ট হিসেবে চলে যাবার কথা পুলিশের হেফাজতে। প্রশ্ন করবার সঙ্গত সুযোগ আছে, বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত সিসিটিভির ঐ ভিডিও ফুটেজ টিভি চ্যানেলগুলো কি ভাবে পেল? এই ভিডিও ফুটেজের কপি ডেবোনেয়ার গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষই কি টিভি চ্যানেলগুলোকে দিয়েছে, নাকি সংবাদকর্মীরা তা পুলিশের কাছ থেকে অথবা ডেবোনেয়ারের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন । এটিও গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, গার্মেণ্ট কর্তৃপক্ষ ঐ অবস্থাতে পুলিশ পর্যন্ত যাবারই কথা।

সোৎসাহে তা মিডিয়াকে সরবরাহ করবার কথা নয়। যদি নিজেরাই তা সরবরাহ করে থাকে তাহলে তা সরলভাবে না দেখাই ভাল। ---------------- কেন এই ভিন্নচোখে দেখা : আগুনে গার্মেণ্ট শ্রমিকদের পুড়ে মরা কেবলই গার্মেন্ট মালিকদের উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতার জন্য ঘটে না, এমন আগুনের তারা এককভাবে দায়ি নন,অদৃশ্য শত্রুরাও দায়ি। বিষয়টি এমনতো নয় যে, এমন ধারনাই বিক্ষুব্ধ দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার চেষ্টা ! আবারও বলি এ সবই নিতান্তই ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ। কামনা করি আমার বিশ্লেষণ যেন সত্য না হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।