আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাইয়ের হাতে মেহেদীর রঙ দেখা হল না রোকেয়ার

অযথা ঝগড়া বিবাদ ভাল লাগে না। শিক্ষা বলতে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়। সু শিক্ষা চাই সর্বত্র। ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর ছিল সোমবার। এর পরের সোমবার তিন বোনের একমাত্র ভাই হাফিজুর রহমানের বিয়ে।

ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে বেশ উচ্ছাসিত ছিলো বোন রোকেয়া বেগম। তবে ঘুর্নাক্ষরেও আঁচ করতে পারেনি বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগেই একমাত্র ভাই হারিয়ে যাবে অজানার দেশে। যে হাতে বিয়ের মেহেদী লাগার কথা ছিল সেই হাত রক্তাক্ত হয় পাক সেনাদের গুলিতে। ঘটনার ৪ দশক পেরিয়ে গেলেও ভাইয়ের কথা মনে আজো কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে রোকেয়া। এভাবে সেদিন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন বক্তাবলী ও আলীরটেক ইউনিয়েনর কয়েকটি গ্রামে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা।

জ্বালিয়ে দেয় বাড়ি ঘর। গুলি করে, বেনট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে ১ শ’ ৩৯ জনকে। বছরের এই দিনে নানা কর্মসূচীর আয়োজন করা হলেও এখনো অবহেলিত রয়েছে এ জনপদ। দু:খ দুর্দশায় দিন যাপন করছে অনেক শহীদ পরিবার। তখনও ভোরের কুয়াশা কাটেনি।

নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল বক্তাবলীর মানুষ ছিলেন ঘুমিয়ে। এ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি আছে এমন তথ্য পেয়ে দেশীয় দোসরদের নিয়ে হামলা চালায় পাক সেনারা। অতর্কিত হামলায় মুক্তিযোদ্ধারা ভড়কে যায়। কিছুটা সময় যুদ্ধ করলেও কৌশলগত কারনে তারা চলে যায় পাশের জেলায়। পাক সেনারা তাদের না পেয়ে বক্তাবলী, লক্ষীনগর, কানাই নগর, আলীর টেকসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় সবকটি বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

আগুনে পুড়ে যায় অনেক মানুষ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নদীর ধারে লাইন করিয়ে গুলি করে মারা হয় অনেককে। রোকেয়া বেগম জানান, ভাই হাফিজুর মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হয়েছে মাত্র। তাকে ধরে নিয়ে নদীর ধারে গুলি করে পাক সেনারা। পরে নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে কবর দেয় স্বজনরা।

সাবেক ইউপি সদস্য আ: রহিম জানান, বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধারা এখানে এসে থাকতো। এ খবর রাজাকার মাউরা গুলজার পাকসেনাদের দেয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে এসে অর্থাৎ ২৯ নভেম্বর তারা এখানে হামলা চালায়। রাজনীতিক আলাউদ্দিন বারী জানান, সে সময়ে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ৫/৬ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে হত্যা করে পাক সেনারা। তাদের মধ্যে আ: করিম খাঁর ছেলে দুই সহদোর ফারুক হোসেন ও মো: সহিদুল্লাহ, নেওয়াজ আলীর ছেলে মনির হোসেন।

মেধাবী শিক্ষার্থী মোস্তফা, শহিদুল্লাহ ও নূরে আলম। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার রক্তিম সুর্য উদিত করতে দেশের লাখো মুক্তিযোদ্ধার মতো এই অজপাড়া গাঁ বক্তাবলী ও আলীরটেক ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামবাসীরও রয়েছে অনেক অবদান। দেশ স্বাধীনের ৪১ বছর পেরিয়ে গেলেও এ সব এলাকায় লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। যা নিয়ে ক্ষোভ ঝড়ে পড়ে অনেকের মনে।

স্বজনহারা বেদনা,স্বাধীনতা প্রাপ্তির আনন্দ,আর আধুনিক সুযোগ-সুবিধার প্রত্যাশায় প্রতি বছর পালিত হয় বক্তাবলি দিবস। সেদিনের সেই ভয়াল স্মৃতি আজো কুঁকড়ে খায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজন হারাদের। দুঃখে ভরা সেই স্মৃতি মনে করে কেউ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে কেউবা হয় বাকহীন। তাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে প্রিয় স্বজনের মুখ সেই সাথে পাকসেনাদের লোমহর্ষক অত্যাচারের কথা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.