আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে.....(জীবনের গল্প)

আমি মনে প্রাণে একজন মুসলিম। ঘৃণা করি ধর্ম বিদ্বেষী নাস্তিকদের এবং ধর্ম ব্যবসায়ী ছাগু তথা উগ্রবাদীদের। ক্যঁচাল পছন্দ করিনা । । ছবি-গুগল থেকে।

ডিসেম্বরে টেষ্ট পরিক্ষা শেষ..এস এস সি পরিক্ষা ফেব্রুয়ারী-মার্চে তখন ১৯৯৯ সাল। শহরের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি এসেছিলাম। কাজ বলতে খাওয়া ঘুমানো রাতে একটু রিভিশন দেয়া আর গ্রামের ক্রিকেট টিমের সাথে প্র্যকটিস করা। তবে আরেকটা কাজ ঠিকই করতাম ঠিক দেড়টা বাজলে দুইজন বন্ধু নিয়ে দেড় কিলো পথ পাড়ি দিয়ে আদ্রিতাদের স্কুলের দিকে যেতাম। দুটোয় স্কুল ছুটি হলে ওরা বাড়ি আসতো আমি ছুটে যেতাম দুইবন্ধুকে সাথে নিয়ে শুধু চোখের দেখা করতে।

আদ্রিতা নাইনে পড়তো তখন। আমরা নিরাপদ দুরত্বে থাকতাম পথ চলতে। কউ কাউকে ভালোলাগার কথাটা বলতে সাহস করিনি তখনও। শুধুই রাস্তায় ঘোরাঘুরি সার। এভাবে কাজ হবেনা সরাসরি প্রস্তাব দিতে বললো বন্ধুরা…আমার সে সাহস নেই।

কি আর করা। ফিরে এলাম বাড়িতে। আম্মা জিজ্ঞেস করলে বলতাম নামাজ পড়তে গেছিলাম মসজিদে। এভাবে দুএকদিন পর আম্মা বলছেন তুমি তো মসজিদে যাওনা খবর পেলাম। বললাম গাবতলা মসজিদে যাই।

দক্ষিনপাড়া মসজিদে যাইনা এখন। দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে ক্রিকেট খেলতে গেলাম আদ্রিতার মামাবাড়ির পিছনের জমিতে। সেখানেই আমাদের খেলার জায়গা। কিছুক্ষণ খেলে ঘর্মাক্ত শরীরে হেটে চলে আসলাম আদ্রিতার মামাবাড়ির সামনে। আলামিনকে পাঠালাম একজগ পানি সাথে একটা গ্লাস আনতে।

আলামিন খালি হাতে ফিরে এলো। কিরে কি হলো পানি কোথায়?..এরমধ্য আদ্রিতা একটা কাচের গ্লাস পরিস্কার করে একজগ পানি সাথে কিছু বিস্কিট নিয়ে এসেছে। আমরা ঘাসের বিছানায় বসে আছি। মামুন এগিয়ে গিয়ে হাত থেকে জগটা নিল। মামুন মুখ ফস্কে বলেই ফেললো ইশ! যদি প্রতিদিন এভাবে ফাউ বিস্কিট আর পানি পেতাম খেলো শেষে…তাহলে আর কষ্ট করে বাড়ি যেয়ে পানি পান করতে হতোনা।

আমি বললাম আগামীকাল আমাদের খেলা হবেনা হবে পিকনিক আদ্রিতার দাওয়াত রইলো..রান্নাবানা আমরাই করবো। পিকনিকের উপলক্ষ রুপসী গ্রামকে দুদিন আগেই আমরা পরজিত করে টুর্নামেন্ট জিতেছি। গ্রামের বড় ভায়েরা একহাজার টাকা দিয়েছে সেইটাকায় পিকনিক হবে। আদ্রিতা বললো কাল আসতে পারবনা নানু বাড়ি। আজ এসেছি আবার কমপক্ষে ৩-৪ দিন পরে আসতে পারবো।

আমরা জলখাবার খেয়ে বসে আছি একটু দুরেই সরিষা খেতের আইলে আমি, জাহাঙ্গীর, আর প্রেম বিশেষজ্ঞ মামুন। জাহাঙ্গীর নিচুস্বরে বলছে আমাকে আদ্রিতা তোমাকে পছন্দ করেছে আমি বললাম ধুর!.. ও এসেছে ওর নানুবাড়ি এখানে পছন্দ অপছন্দের কি আছে?.. বিশেষজ্ঞ মামুন মুখ খুললো অনেকদিন পর এসেছে আজ স্কুল থেকে ফেরার সময় তোমাকে দেখেছে তাই এসেছে। আমি বললাম হয়তো কোন দরকারে এসেছে তার নানাবাড়ি সব কিছু এমন নেগেটিভ ভাবলে চলবে?.. মামুন এবার প্রমান করতে বদ্ধপরিকর সে আমার নাম দিয়ে পত্র লিখে আদ্রিতার কাছে অন্যএকজন মেয়ের মারফত পাঠাবে। আমি নিষেধ করলাম তারপরও মানবেনা এরকম পরিস্হিতিতে ঠিক হলো রাতে আমরা তিনবন্ধু আমাদের বাড়িতে ঘুমুবো তখন তিনজনের মাথা খাটিয়ে লেখা হবে প্রথম প্রেমপত্র। কথামতো রাতে লেখা হলো সেই পত্র।

আমার কাছে আরসিজের প্যড খাম ছিলো সেগুলা দিয়েই তিনপাতায় মোট ৫ পৃষ্ঠায় লেখা হলো সেই পত্র। মামুনের হাতের লেখা সুন্দর তাই ওকে দিয়েই লেখানো হলো। পত্রের ৭৫% আদ্রিতার রুপের বর্ণনা গুণগান করেই শেষ করা হলো বাকি ২৫% লেখা হলো তোমাকে না পেলে… টাইপের কথাবার্তা। আমার আপত্তি স্বত্তের বিশেষজ্ঞ মামুনের যৌক্তিক কথায় সন্মতি দিলাম। মামুন পকেট থেকে একটা অডিও ক্যসেট বের করে প্লেয়ারে চালিয়ে দিল।

তখন রিফুজি সিনেমাটা সবে মুক্তি পেয়েছে বলউডে। গান চলছে…পানছি নাদিয়া পাবন কি ঝোকে, কই ছাড়হাদনা মিল রোকে..মামুন গানের পঠভুমি ব্যক্ষা করছে। ঠিক দুদিন পর চিঠির রিপ্লাই এলো আমাদের বাড়ির সামনের বাড়ির এক মেয়ের মারফত একটা বইয়ের ভাজে করে। আবারো রাতে তিনবন্ধুর গোপন পরামর্শ। চিঠি পড়া হলো বিশ্লেষণ করা হলো।

মাত্র কয়েকটি লাইন লেখা গোল গোল অক্ষরে তাতে সন্মতি জানিয়েছে আদ্রিতা আর দেখা করতে বলেছে বৃহঃবার একটা কিন্টার গার্টেন স্কুলে আদ্রিতার প্রাইভেট পড়া শেষে সেখানে দেখা করতে বলছে। বৃহঃবার সকাল। চলছে দেখা করার পুর্ব প্রস্ততি। শলা পরামর্শ মামুন আর জাহাঙ্গীর বিভিন্ন উপদেশ দিচ্ছে। সার্ট কোনটা পড়বো প্যন্ট কি পরবো জিনস না লুজ সেই বিষয়ে.. প্রথম কি বলে শুরু করবো ইত্যাদি।

ঠিক বারোটা বাজতেই বেরিয়ে পড়লাম। পরনে কালো জিনসের প্যন্ট গায়ে লাল রঙের কট কাপড়ের সার্ট হাতে ঘড়ি সু পরেছি কালো হিল। চলছি সেই কিন্ডার গার্টেন স্কুলের উদ্দেশ্য কেজির মোড়ে এসে একটি টি ষ্টলে বসে চা খেয়ে নিলাম। অপেক্ষা করছি ১:৪৫ সময়ের। গল্পগুজব করে সময় পার করছি।

অবশেষে চললাম বাঁশের সাকো পর হয়ে স্কুলের আঙিনায়। স্কুল ছুটি হয়েছে দু একজন হাইস্কুলের শিক্ষক কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যচ করে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। আদ্রিতাদের ছুটি হলো ঠিক দুইটায়। আমরা বেরিয়ে এলাম স্কুল থেকে কিছুদুর পর একটা কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে একটা টংয়ে বসলাম। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা আদ্রিতার বান্ধবী শশী মুখ টিপে হাসছে…বিব্রতকর! চরম বিব্রতকর পরিস্হিতিতে পরেছিলাম সেদিন।

বন্ধুতা তাছিল্য করতেছিল.. আদ্রিতা-শশী হাসতেছিল প্রেমিকের বুকের পাটা দেখে..মুখ দিয়ে কথাই বের হয়না। ভিষণ অসহায় এবং একা লাগছিল সেদিন…প্রেম করতেও বুকের পাটা লাগে…আমারমতো কাপুরুষের দ্বারা সম্ভব নয় প্রেম করা..ভগ্ন মনরথে পা বারালাম বাড়ির উদ্দেশ্য… চলবে.. আদ্রিতা নিয়ে লেখা প্রথম পর্ব Click This Link আদ্রিতা নিয়ে ২য় পর্ব Click This Link আদ্রিতা নিয়ে ৩য় পর্ব Click This Link  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।