আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্রোহ ও প্রেমের কবি আবুল হাসানের মৃত্যুবার্ষিকী আজঃ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর আবুল হাসানের মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়

আমি সত্য জানতে চাই ৭০ দশকে বাংলাদেশের স্বনামধন্য সাহিত্যিক, প্রেম ও দ্রোহের আধুনিক কবি এবং সাংবাদিক আবুল হাসান। তাঁর প্রকৃত নাম আবুল হোসেন মিয়া, আর সাহিত্যক নাম আবুল হাসান। আবুল হাসান নামেই তিনি লেখালেখি করতেন; আর এ নামেই চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। মাত্র ২৮ বছরের এক সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনি বাংলা কবিতাকে যা দিয়ে গেছেন, তা সাহিত্যে চিরস্থায়ী হয়ে আছে। তিনি আজও জনপ্রিয়, বহুল পঠিত কবিতার জনক।

অবিস্মরণীয় কবিতার জনক কবি ও সাংবাদিক আবুল হাসান ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। কবি আবুল হাসানের মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধায়। কবি আবুল হাসান ১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ার বর্নি গ্রামে মাতুলালয়ে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের ঝনঝনিয়া গ্রামে। তাঁর পিতা আলতাফ হোসেন মিয়া ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার।

১৯৬৩ সালে আবুল হাসান ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করেন। তারপর বরিশালের বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে বি.এ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ইংরেজিতে অনার্স পড়ার পাশাপাশি চালিয়েছেন কবিতা লেখা আর সাহিত্য সংগ্রাম। কিন্তু পরীক্ষা শেষ না করেই ১৯৬৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তাবিভাগে যোগদান করেন।

সাংবাদিকতায় তিনি মেধার পরিচয় দিয়েছিলেন। আবুল হাসান অল্প বয়সেই একজন সৃজনশীল কবি হিসাবে খ্যাতিলাভ করেন। মাত্র এক দশকের কাব্যসাধনায় তিনি আধুনিক বাংলার ইতিহাসে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেন। আত্মত্যাগ, দুঃখবোধ, মৃত্যুচেতনা, বিচ্ছিন্নতাবোধ, নিঃসঙ্গচেতনা, স্মৃতিমুগ্ধতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবুল হাসানের কবিতায় সার্থকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। মাত্র ২২ বছর বয়স থেকেই তিনি ছিলেন খ্যাতিমান কবি, ঢাকা শহরের আলোচিত তরুণ।

ব্যক্তিজীবনেও স্বকীয়তায় ভাস্বর প্রেম, দ্রোহ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে। ১৯৭০ সালে এশীয় কবিতা প্রতিযোগিতায় প্রথম হন তিনি। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্যগ্রন্থ রাজা যায় রাজা আসে। স্বাধীনতার পর (১৯৭২-৭৩) তিনি গণবাংলা এবং দৈনিক জনপদের (১৯৭৩-৭৪) সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরই মাঝে ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় তার কাব্য গ্রন্থ " যে তুমি হরণ করো এবং ১৯৭৫ সালে "পৃথক পালঙ্ক"।

কবিতায় বলিষ্ঠ হলেও আবুল হাসান শারীরিকভাবে ছিলেন কিছুটা দুর্বল। হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল তাঁর। অসুস্থতা তাঁকে ক্রমেই নিয়ে যেতে থাকে মৃত্যুর দিকে। ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর কবিতা ও ভালোবাসা ছেড়ে তাঁর যাত্রা অনন্তলোকের দিকে। তাঁর কাব্যনাট্য ওরা কয়েকজন (১৯৮৮) এবং আবুল হাসান গল্প সংগ্রহ (১৯৯০) প্রকাশিত হয়েছে মৃত্যুর অনেক পর।

কবিতার জন্য তিনি মরণোত্তর 'বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৫) এবং একুশে পদক (১৯৮২) পেয়েছেন। আবুল হাসানের কবিতা আধুনিক বাংলা কবিতায় নিয়ে এসেছিল নতুন সড়ক, নতুন আবহ। আধুনিক নাগরিক, মানুষের নিঃসঙ্গতা, যন্ত্রণা, মৃত্যু চেতনা, বিচ্ছিন্নতা তাঁর কলমে পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এক নজরে কবি আবুল হাসানঃ জন্মঃ ১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট মৃত্যুঃ ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত গ্রন্থঃ কবিতা ১। রাজা যায় রাজা আসে (১৯৭২) ২।

যে তুমি হরণ করো (১৯৭৪) ৩। পৃথক পালঙ্ক (১৯৭৫) গল্প ১। আবুল হাসান গল্প- সংগ্রহ (১৯৯০) কাব্যনাট্য ১। ওরা কয়েকজন (১৯৮৮) পুরস্কারঃ ১। বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৫) ২।

একুশে পদক (১৯৮২) মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর আবুল হাসানের মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। তথ্যসূত্র ১। Biography of Abul Hasan ২। poems of Abul Hasan  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।