আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ থেকে নিজেকে আর একেবারে ফেলনা মনে হচ্ছে না

ভুল করেছি,প্রায়শ্চিত্য করবো না, তা তো হয় না চীনের হেই-লোং-জিয়াং প্রদেশের লোকাল গভঃ আজ আমাকে ভলান্টিয়ার হিসেবে বাচ্চাদেরকে ইংরেজী শেখানোর টেকনিকের উপর ভিত্তি করে সম্মানসূচক সার্টিফিকেট দিয়েছে। আজ মনটা খুব ভাল,খুবই ভাল লাগছে। এতদিন নিজেকে মনে হত “গুড ফর নাথিং” কারন আমার বি.এস.সি. ইঞ্জিনিয়ারিং রেজাল্ট ছিল খারাপ, সোনার হরিণ নামক সরকারী চাকরির পেছনে ছুটে বিফল হওয়া, এসময়টাতে বেকারত্বের তিক্ত অভিজ্ঞতা, জীবনের প্রথম চাকরিতে ফ্যাক্টরির এমপ্লয়িদের বিভিন্ন গ্রুপের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পেরে চাকরি ছেড়ে দেওয়া, দুনিয়াতে এত এত মেয়ে থাকতেও কোন একজনকে নিজের তরে দেওয়ানা বানাতে না পারা; সব মিলিয়ে নিজেকে অথর্ব মনে হয়েছে,ভাবতাম আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। না,আজ আর তা মনে হচ্ছে না। চীনে আসার পরপরই গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের Youth Volunteer Association এ যোগ দেই।

এরা গরীব বাচ্চাদেরকে ইংরেজী ভাষা এবং সায়েন্স & টেকনোলজি বিষয়ে ধারনা দেয়। আমি একটি প্রাইমারী স্কুলে প্রতি শুক্রবারে দরিদ্র কিছু বাচ্চাকে ইংরেজী পড়াই। মূলত এখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল ওদের সাথে কমিউনিকেশনের মাধ্যমে নিজের চাইনিজ ভাষার উপর দক্ষতা বাড়ানো। অন্যের উপকার করব কিংবা সওয়াব হাসিল হবে এধরনের কোন উদ্দেশ্য ছিল না, শ্রেফ নিজের লাভের জন্য। কিন্তু ঐ বাচ্চাগুলোর সাথে এতটাই সক্ষ্যতা গড়ে উঠেছে যে ওরা কাগজে মনের মাধুরী মিশিয়ে কালার পেন্সিল দিয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি এঁকে আমাকে দেয়।

ওদের তো আর দামি ড্রয়িং পেপারে জলরং ব্যবহার করে কিছু করার সামর্থ্য নেই। ওরা মাঝে মাঝে ১ ইউয়ান বা ২ ইউয়ান দামের ছোট ছোট জিনিস গিফট্ হিসেবে দেয়। এখন মনে হয়, কিছু মানুষের উপকারে আসতে পেরেছি, এটা ভেবে ভাল লাগে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইনিজ পোলাপানও বিভিন্ন স্কুলে ভলান্টিয়ার হিসেবে বাচ্চাদেরকে ইংরেজী শেখায়। ওরা বাচ্চাদের মাতৃভাষায় ইংরেজী বুঝাতে পারে কিন্তু আমার তো হাজারও সমস্যা।

বাচ্চাগুলোর চাইনিজ উচ্চারণ আমি বুঝতাম না কারন ওরা লোকাল একসেন্টে কথা বলে, ওরাও আমার চাইনিজ বুঝতো না। প্রথম যখন ঐ স্কুলে যাই তখন ওখানকার শিক্ষকরা মিটমিট করে হাসত, হয়ত ভাবত এই বিদেশী আবার বাচ্চাদের কি ইংরেজী শিখাবে !!! এছাড়াও এক আমেরিকান ছেলে, সেও ভলান্টিয়ার হিসেবে বাচ্চাদেরকে ইংরেজী শেখায়। তার চাইনিজ ভাষার উপর ভাল দখল, কেননা সে এখানে চাইনিজ ভাষার উপর bachelor করছে। হেই-লোং-জিয়াং লোকাল গভঃ বাচ্চাদেরকে ইংরেজী শেখানোর টেকনিকের উপর ভিত্তি করে ২০১১-২০১২ শিক্ষা বছরের জন্য আমাকে মনোনীত করে সম্মানসূচক সার্টিফিকেট দিয়েছে। Native Chinese , native English speaker তারা কেউ মনোনীত হয় নি।

ওদের পেছনে ফেলে নিজে এটা পাওয়ায় এখন মনে হচ্ছে না আমিও পারি,একেবারে ফেলনা নই। আমার দ্বারাও কিছু করা সম্ভব। ছবি এখানে লোকাল গভঃ ২০০৭ হতে ২০১২ এই ৫ বছরে মোট ১২ জনকে এই সম্মাননা দিয়েছে। আজ নিজের উপর আস্হা অনেকগুন বেড়ে গেছে, খুব ভাল লাগছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।