আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা (সমাপ্তি)

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! প্রথম পর্ব প্রতিদিন ক্লাস ছুটির পরপরই নিশি আমার ডিপার্টমেন্টের সামনে এসে দাড়িয়ে থাকতো । আমি বের হয়েই দেখতাম নিশি সামনে দাড়িয়ে আছে হাসি মুখে । কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরতো । নিশির এরকম হাত ধরা নিয়ে বন্ধুরা হাসাহাসি করত । খানিকটা লজ্জা পেতাম ! একটু হাসতাম ।

তবে ভাল লাগত খুব । কিন্তু ঐ দিনের পর নিশি আমার সাথে দেখা করা তো দুরে থাক আমাকে একবার ফোন পর্যন্ত করে নি । মেয়েটা এমন কেন করছে ? আর তন্নীই বা এমন কেন করল ? প্রথমে তো আমি ওকেই পছন্দ করেছিলাম কিন্তু তন্নী নিজে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল । আমার কোন অবজেকশন ছিল না ! সব কিছু ঠিকই ছিল তাহলে এখন আবার এটা কেন ? তন্নী এমনটা কেন করল ? সিলেটে তন্নী সত্যি সত্যি আমাকে চুম খেয়েছিল । একে বারে অপ্রত্যাশিত ভাবেই ।

ট্রেনে আমরা পাশাপাশি বসেছিলাম । গল্প করছিলাম । আমরা সবাই আড্ডা মারছিলাম । রাত যখন বেশি হয়ে যায় তখন আড্ডার পরিমানটা কমে আসে । এক পর্যায়ে গল্প একদমই কমে আসে ।

আমি চোখ বুজি । ঘুম তখনও আসে নি । হঠাত্‍ আমি আমার ঠোটে নরম কিছুর স্পর্শ পেলাম । চোখ মেলে দেখি তন্নী আমার ঠোটে ওর ঠোট চেপে ধরেছে । আমি প্রথম কিছুক্ষন কোন কিছু বুঝতেই পারলাম না কি হচ্ছে ! আমার মাথার ভিতর এটা আসেই নি যে তন্নী আমাকে চুম খেতে পারে ! যখন তন্নী ওর ঠোট সরালো আমার ঘোর তখনও কাটে নি ।

কেবল চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি । তন্নী আমার দিকে চোখ তুলে তাকাল না একবারও । আমি যে ওকে কিছু জিজ্ঞেস করবো তাও করতে পারছিলাম না । কিছু একটা অস্বস্থি নিজের ভিতর ছিলই । তবে আমার মাথার ভিতর কিছুই ঢুকছিল না ।

বারবার কেবল এই প্রশ্নই মাথার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছিল । তন্নী এমন কেন করলো ? আর এখন আমি ঠিকই বুঝতে পারছি তন্নী এমনটা কেন করেছিল ! ভাবতেই রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে । এই মেয়েটার পেটের ভিতর এমন প্যাচের বুদ্ধি আছে আমি ভাবতেই পারি নি । যদি সামনে পাই কষে একটা থাপ্পড় মাড়তে মন চাচ্ছে ! এই কথাই ভাবছি ঠিক তখনই তন্নী আমার সামনে এসে দাড়াল । -কি করিস রে ! -তুই আবার আমার সামনে এসেছিস ! তোকে না আমার সামনে আসতে মানা করেছি ।

-আরে বাবা রাগিস কেন ? তোর পিচ্চি নিশি তোকে কোন দিন ভালবাসে নি । বাসলে অন্যের কথা শুনে তোর সাথে ব্রেকআপ করতো না ? বুঝেছিস ? আমি কিছুক্ষন তন্নীর দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম -তো তুই খুব ভালবাসিস আমাকে ? -বাসি তো ! তুই বুঝিস না ? ভালই হয়েছে ঝামেলা দুর হয়েছে ! আমি ঠিক জানি না আমার মনের ভিতর কি হল আমি সত্যি সত্যিই তন্নীকে চড় মেরে দিলাম । চড়টা মারার পর আমার নিজের কাছেই অবাক লাগছিল । এটা কিভাবে করলাম আমি ? তন্নীকে বললাম -কেবল তোর জন্য নিশি আমাকে ভুল বুঝে আছে । কেবল তোর জন্য ।

আমার খুব খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে আমরা বন্ধু ছিলাম । আর কোন কালে আমি তোকে পছন্দ করতাম । তন্নী নিজেও ভাবতে পারে নি যে আমি ওকে চড় মারতে পারি ! ও কেবল অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন । আমি আর ওর সামনে দাড়ালাম না । তন্নীর সামনে থাকার আর কোন মানে হয় না ! আমি চলে আসলাম ।

নিশিকে একটু দেখা দরকার ! নিশির ক্লাস মনে হয় এখনও শেষ হয় নি । আমি নিশির ডিপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে দাড়ালাম । আগে নিশি আমার জন্য দাড়িয়ে থাকতো এখন আমি ওর জন্য দাড়িয়ে থাকি । কোন কিছু ভাল লাগে না । ঐ তো আসছে নিশি ।

আজ লাল রংয়ের একটা সেলোয়ার কামিজ পরেছে । এটা ওর পছন্দের একটা পোষাক । আমার সাথে কোথাও বেড়াতে গেলে ও প্রায়ই এই লাল ড্রেসটা পরত । আমি ওর সামনে গিয়ে দাড়াতেই ওর মুখটা কেমন গম্ভীর হয়ে গেল । অন্য দিন আমি ওর সাথে কথা বলতে যাই ও মুখ ফিরিয়ে চলে যায় ।

আমার একটা কথাও শুনে না । আমি আজ কোন কথা বলি না । বলতে পারি না । বুকের ভিতর একটা কষ্ট অনুভব করি । আমি অনুভব করি এই মেয়েটা আমার কাছে কত জরুরী ।

কিন্তু নিশি কিছুতেই বুঝতে পারে না । অথবা নিশি বুঝতে চাচ্ছে না । কেন বুঝতে চাচ্ছে না ? আমার চোখের দিকে কি ও একটা বারও তাকাচ্ছে না ? আমার চোখের ভাষা কি ও কি বুঝতে পারছে না । আজ আমি কোন কথা বলি না । কেবল দাড়িয়ে থাকি ।

চুপ করে দাড়িয়ে থাকি । ওর দিকে তাকিয়ে থাকি । নিশি প্রতি দিনের মত আমার সামনে দিয়ে চলে যায় । আচ্ছা এমন কেন করে মেয়েটা ? আমার কাছে কি কোন কিছু বলার নাই ! আমি নিশির পিছু নেই । ক্লাস শেষে নিশি সোজা রুমে যায় ।

আমি এই সময় টুকু ওর পেছন পেছন যাই । আমার মনে এটুকু বিশ্বাস ও একদিন না একদিন আমার সামনে এসে বলবে কি ব্যাপার আমার পিছু পিছু কেন আসছো তুমি ? তোমাকে আমি কোন দিন মাফ করবো না ! কোন দিন না ! তারপর কাঁদতে থাকবে । আমি ওর চোখের জল মুছিয়ে দিবো । এমন একটা দিন আসবে ! নাকি আসবে না ? না আসুক ! আমি অপেক্ষা করবো ! আমার এক টুকবো মেঘ নিয়ে আমি অপেক্ষা করবো ! আমি নিশি পেছন পেছন হাটতেছিই । কিন্তু আজকে একটু অবাক হতে হল ।

নিশি হলের দিকে গেল না । অন্য দিকে ঘুরে জারুল তলার দিকে এগিয়ে গেল । কি ব্যাপার নিশি ঐ দিকে কেন যায় ? আমার আর নিশির খুব পছন্দের জায়গা এই জারুলতলা ! বিকাল গুলোর বেশির ভাগই কেটেছে এখানে । নিশি জারুলতলার ডান দিকে বসল । আমি বসলাম ওর থেকে একটু দুরে ।

ওর দিকে তাকিয়ে আছি এক ভাবেই । নিশি মাথা নিচ করে বসে আসে । আহা রে ! আমার পিচ্চি নিশিটা কেমন মন খারাপ করে বসে আছে । আমি খুব ভাল করেই জানি আমি যেমন কষ্ট আছি নিশি নিজেও কষ্ট পাচ্ছে ! আচ্ছা ওকে একটা মেসেজ পাঠাই । আমি ওকে মেসেস পাঠালাম :রাগ কি কমবে না আমার পিচ্চিটার ? আমি জানি মেসেজের কোন রিপ্লে আসবে না ।

কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে রিপ্লে চলে আসল । :আমাকে পিচ্চি ডাকবা না ? :না ডাকবো ! পিচ্চি ! পিচ্চি ! পিচ্চি গার্লফ্রেন্ড আমার ! আমি একটু যেন আশার আলো দেখতে পেলাম । আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম নিশির দিকে !!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।