আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক জন ব্যতিক্রম ধর্মী আবুল সম্পর্কে জানুন।

আমার দিন কাটে আনন্দে কিন্তু আমার আত্মা গান করে বিষাদের! বাবা আবদুল খালেককে মানতেই হবে ব্যতিক্রম। মৌলভ... িবাজারের প্রত্যন্ত গাজীপুর টি-এস্টেটের এই হেড ক্লার্কের স্বপ্নপ্রবাহ ছুটছিল ভিন্ন পথে। তিন সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলেটিকে তিনি ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চাননি। বরং বুনে দিয়েছিলেন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নবীজ। আবদুল খালেক ইহলোক ছেড়ে অচেনা ভুবনে পাড়ি জমিয়েছেন বছর তিনেক।

তবে তাঁর স্বপ্নের ক্যারাভান ছুটছে ঠিকই। ছুটিয়ে চলেছেন আবুল হাসান। যে করেই হোক, বাবার স্বপ্ন যে পূরণ করতেই হবে। অচেনা ভুবন থেকে বাবার হাসিমাখা মুখখানি দেখার প্রতীক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আবুল হোসেন। নিরন্তর... শুরুতে ক্যারিয়ার গ্রাফটায় চোখ বোলানো যাক।

যার বাঁকে বাঁকে নানা রোমাঞ্চ। পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান থেকে ফাস্ট বোলার হয়ে ওঠার গল্প। শৈশবে চা বাগানের ফাঁকে ফাঁকা মাঠে শুরু আবুল হোসেনের ক্রিকেট-পাঠ। তবে তাঁর পেসার পরিচয়টা তখনো সুপ্ত। পাড়ার ক্রিকেটে বরং উদ্ভাসিত মারকুটে ব্যাটসম্যানের রুদ্ররূপ।

এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ দলে সুযোগ পেয়েছিলেন মূলত ব্যাটসম্যান হিসেবে। বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হতো তাঁর অফস্পিন। বিকেএসপির এক ক্যাম্পে একদিন কী বুঝে পেস বোলার হিসেবে হাত ঘোরালেন। তাতেই ঘুরে গেল ক্যারিয়ারের গতিপথ। কোচ মিনহাজুল আবেদীন পিঠ চাপড়ে বললেন, 'রাজু, তুমি পেস বোলার হওয়ার চেষ্টা করো।

ওটাই তোমার জায়গা। ' ভাগ্যিস, কোচের কথা শুনেছিলেন! তাই তো বছর কয়েকের ব্যবধানে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের ভবিষ্যৎ হিসেবে বিবেচিত হয় আবুল হাসানের নাম। কিন্তু শুধু সহজাত প্রতিভায় তো আর পেসার হওয়া যায় না। লাগে যথার্থ পরিচর্যা। আবুল হাসান সেটি পেয়েছেন চম্পাকা রামানায়াকের কাছ থেকে।

সিলেটের ইয়াং পেগাসাস, ঢাকার ইয়াং ক্রিকেটার্সে খেলার পর আবুল হাসান যোগ দেন এই শ্রীলঙ্কানের পেস বোলিং ক্যাম্পে। 'বলতে পারেন, পেস বোলার হওয়ার খুঁটিনাটি আমি জেনেছি সেখান থেকেই। অনেকেই ছিলাম আমরা। তবে এর মধ্যেও যে চম্পাকা আমাকে আলাদা যত্ন করছে, সেটি বুঝতাম। আমাকে হাতে ধরে ধরে রিভার্স সুইং শিখিয়েছিল সে'_কৃতজ্ঞতায় বুজে আসা কণ্ঠে বলে চলেন আবুল হাসান।

২০০৮ সাল তাঁর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। খালেদ মাহমুদ তাঁকে নিয়ে আসেন ওল্ড ডিওএইচএসে। ১০ ম্যাচে ২৯ উইকেট নিয়ে আবুল হাসান হয়ে যান প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য পরের মৌসুম খেলেননি কোনো ক্লাবে। আর এবার তো আবাহনীতে খেলেই বাজিমাত।

মোহামেডানের বিপক্ষে দুই ম্যাচে ৪ ও ৬ উইকেট নিয়ে চলে আসেন আলোচনার পাদপ্রদীপে। তবে আবুল হাসানের স্বপ্নীল ছুটে চলায় শঙ্কার কাঁটাও আছে। ইনজুরি! সেই অনূর্ধ্ব-১৫ থেকে যে অ্যাঙ্কেল ইনজুরি, সেটি পিছু ছাড়েনি আজও। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে সেই ইনজুরির চিকিৎসা করানোর ব্যাপারে কথা বলেছেন বোর্ডের সঙ্গে। চিকিৎসা শেষে আরো ভালো বোলার হওয়ার প্রত্যয় আবুল হাসানের কণ্ঠে, 'ইনজুরি নিয়েই যদি আমি এটুক আসতে পারি, তাহলে ইনজুরি সেরে গেলে নিশ্চয়ই যেতে পারব বহু দূর।

' কত দূর? তারুণ্যের ছটফটে কণ্ঠে আবুল হাসানের উত্তর, 'আগে জাতীয় দলে ঢুকতে হবে। আর ক্যারিয়ার লক্ষ্য বিশ্বসেরা ১০ ক্রিকেটারের মধ্যে থাকা। তাহলেই যে বাবার স্বপ্ন পূরণ হবে। ' সত্যি যদি পারেন আবুল হাসান, তাহলে তো পেস বোলিং নিয়ে বাংলাদেশের নিরন্তর হাহাকারেও স্বস্তির একঝলক হাওয়া বয়ে যাবে! প্রোফাইল নাম : আবুল হাসান ডাকনাম : রাজু জন্ম : ৫ আগস্ট ১৯৯২, মৌলভীবাজার উচ্চতা : ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি ওজন : ৭৬ কেজি প্রথম ক্লাব : মৌলভীবাজারে ইয়াং পেগাসাস, ঢাকায় ইয়াং ক্রিকেটার্স বর্তমান ক্লাব : আবাহনী জাতীয় লিগের দল : সিলেট ব্যাটিং স্টাইল : বাঁহাতি লোয়ার অর্ডার বোলিং স্টাইল : ডানহাতি পেসার প্রিয় বল : ইয়র্কার প্রিয় ক্রিকেটার : ব্রেট লি, মাশরাফি বিন মর্তুজা অন্য প্রিয় খেলা : ব্যাডমিন্টন প্রিয় বন্ধু : সোহান প্রিয় অবসর : গান গাওয়া সেরা পারফরম্যান্স বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার টেস্ট। ১৩৫ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ১০ নম্বরে খেলতে নামা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান।

মোহামেডানের সঙ্গে ওই ৪ আর ৬ উইকেটেই তো তাকে সবাই প্রথম চেনে। এ ছাড়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপে গিয়ে প্রথম ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ৪ উইকেট পাওয়াও স্মরণীয়। মনে গেঁথে আছে আরেকটি ম্যাচের কথা। বিশ্বকাপের আগে শ্রীলঙ্কায় ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই খেলায় পেয়েছিল ৫ উইকেট। বিশেষজ্ঞের চোখে জাতীয় লিগে প্রথম দেখাতেই রাজুর (আবুল হাসান) ভেতরের আগুনের আঁচ পেয়েছিলাম।

নিয়ে এলাম ওল্ড ডিওএইচএসে। সেবার প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হলো ও। আর এবার তো আবাহনীতেও দারুণ করেছে। আসলে ভালো পেসার হওয়ার সব গুণই আছে রাজুর। বলে গতি বলুন কিংবা বৈচিত্র্য।

দিতে পারে ইয়র্কার, স্লোয়ার। আর আছে বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি নেই, কুঁকড়ে যায় না চাপে। মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচ দুটিতে রাজু বুঝিয়েছে, ও বড় ম্যাচের ক্রিকেটার। অনেক দূর যাবে ছেলেটি।

~খালেদ মাহমুদ, কোচ, আবাহনী। সৌজন্যঃ কালের কন্ঠ  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।