আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মন খারাপ ও জীবন নিয়ে শঙ্কিত

সময় বদলায়, মানুষ বদলাই, হয়ে যায় ভীসন রকম হিসেবী, শুধু আমি পারি না। সপ্তাহের অন্য ৬ দিনের মতো রুটিন এ বাঁধা জীবনের আজকের দিনটা প্রায় শেষ করে এসেছি। পড়ন্ত বিকালে মোবাইলের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়ার অমীমাংসিত কিছু বিষয় নিয়ে বসের সাথে আলাপে মশগুল। হঠাৎ উচ্চ-স্বরের শব্দ কারওয়ান বাজারের মূল সড়ক হতে ভেসে আসছিল। জানালা হতে লক্ষ্য করলাম ১৫০-২০০ লোকজনের একটা দল (পরে জানলাম ছাগুর দল) কিছু একটা বলতে বলতে মিছিল নিয়ে সোনারগাঁ হোটেলের দিকে যাচ্ছিল।

বস জিজ্ঞাসা করল মিছিল করছে ভালো কথা মিছিলের ভিতর একটু পর পর মানুষের হাতে আগুন কেন? উত্তর না জানা থাকাই মজা করে বললাম ঠাণ্ডার দিনে শীত পোহাবে হয়তো। সেই আগুনের মর্মার্থ বুঝলাম যখন রাস্তাই গাড়িগুলো দাও দাও করে জ্বলছিল। চার রাস্তার মোড়ে মিছিলের বহর পৌছানো মাত্রই বিধ্বংসী রুপ ধারন করল। ফ্লাগ লাগানো কোন এক মন্ত্রি বা ভিএইপি ঠিক সেই মুহূর্তে রাস্তা দিয়ে ফার্মগেইট এর দিকে যাচ্ছিল। উপভোগ্য না হলেও দেখছিলাম ইটের বর্ষণে রাস্তাই গাড়ির গ্লাস এর ছড়াছড়ি।

কোন মতে আগে পিছে পুলিশের বহর থাকা সত্ত্বেও জান নিয়ে মন্ত্রি বা ভিএইপি রক্ষা পেল। পরবর্তী টার্গেট রাস্তার পাশে থাকা পুলিশ বক্স। আক্রমনের প্রথম শিকার হল মোটর সাইকেল। আগুনে দাও দাও করে জ্বলতে লাগলো আর উপত্থিত পুলিশ এদিক সেদিক দিক বেদিক দৌড় দিল। কিছুক্ষণ পরেই ১৫-২০ জনের দাঙ্গা বাহিনীর দাপটে ছাগুর দল পালালো।

পরক্ষনেই আবার সরকারি সন্ত্রাসি ৪০-৫০ জনের একটি বাহিনীর একই রাস্তা দিয়ে আগমন। হাতে বেতের লাঠি (বোধহয় দেশ স্বাধীন করার জন্য এসেছে) নিয়ে রাস্তাই সাগু ভেবে কয়েকজনকে উত্তম মাধ্যম দিল। বেশ কিছুক্ষণ পর ফায়ার সাভিস এর লোকজন পানি ঢালাই পরিস্থিতি শান্ত হল ও যান চলাচল শুরু হল। ঘটনা এখানেই শেষ হলেও আমার মন খারাপ এর শুরু এখান হতেই। সহকর্মীর এর সাথে রাস্তা পার হতে গিয়ে লক্ষ করলাম চতুর্দিকে ভাঙ্গা গ্লাস এর টুকরা আর পোড়ানো সেই মোটর সাইকেল।

রাস্তার পাশেই মিডিয়া কর্মীদের ঘিরে ধরা পুলিশের বড়কর্তার সাক্ষাৎকার গ্রহন পর্ব চলছে। কেমন করে মানুষ একজন আর একজনের জীবনের উপর এতো হুমকি হতে পারে। রাস্তার পাশে চা এর কাপ এ চুমুক দিতে দিতে আলোচনার সারমর্ম হল “আমার কি আজ নিরাপদ”। রাস্তা দিয়ে চলা পথচারী, গাড়িগুলো কি অপরাধ করেছিল? সরকার, বিরোধী দল, সমমনা নানা দল কারো কাছেই কি আজ জাতি নিরাপদ? চা চক্রের দ্বিতীয় পর্বে কাপে চুমুক দিতে দিতে লক্ষ করলাম রাস্তার উপর পড়ে আছে এই সব সাগুর দলের ফেলে যাওয়া একটি আদলা ইট। আজ পান্থপথের দোকানপাট বন্ধ থাকাই রাস্তায় গাড়ির গতিটা অনেক বেশি।

দুর্ঘটনা ঘটার আশংকাই ইটটা সরাবো চিন্তা করছি তখনই দেখলাম একটি সি এন জি ইটটার উপর দিয়ে যাবার সময় আছড়ে পড়ল রাস্তার উপর। একটা বিদ্ধা মহিলার রক্তাত দেহ ও হাত-মাথা ফেটে যাওয়া আর দুই জন মানুষকে টেনে হিঁচড়ে সি এন জি হতে বের করলাম। বড় মর্মান্তিক সন্ধ্যা !! কি অপরাধ ছিল এই মানুষগুলোর, বাসা হতে বের হবার সময় ওই মানুষগুলো কি ভেবেছিল সাগুদের ফেলে যাওয়া এক খণ্ড ইট তাদের রক্তাত সন্ধ্যা উপহার দিবে। এই রকম অনেক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হামলার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত সাধারন জনগন। নিজের ভূখণ্ডে আমরা কি এখন নিরাপদ? প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোট দিয়ে শোষণ আর শাসনের টিকিট দেবার বাইরে আমাদের কি কোন অধিকার আছে? আমি কি উপলব্ধি বা কল্পনাতেও আনতে পারবো আগামীকাল এমনই কোন রাস্তাতে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।