আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাসপোর্ট ভবনে আমার একদিন।

ঘুম থেকে জেগে দেখি মৃত্যু শিয়রে গুনছে প্রহর...... ইউনিভার্সিটিতে থাকার সময় বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে একবার পাসপোর্টের টাকা ব্যাংকে জমা দিলাম। এরপর এক বন্ধুর বাড়িতে পুলিশ ভেরিফিকেশনে আসার কাহিনি, আর এক বন্ধুর পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট ফর্ম হারানোর কাহিনি, এরপর এক ভাইয়ের পাসপোর্টে নাম ভুল আসার জন্য জীবনটা নরক হয়ে যাওয়ার কাহিনি ইত্যাদি শুনে আমার আর পাসপোর্ট করতে যাওয়া হয়নি। পুরো টাকাটাই আমার জলে গেল। গত দুমাস ধরে আশেপাশের পরিচিত জনদের পাসপোর্ট করানো দেখে মাথায় আবার কেরা উঠল পাসপোর্ট করাব। ২ সপ্তাহ লাগিয়ে নির্ভুলভাবে ফর্ম পুরন করলাম।

সবচেয়ে বড় ভয়টা ছিল আমার স্থায়ী ঠিকানা নিয়ে। দাদার বাড়িতে আমাদেরকে এক ডাকে চিনবে এমন পরিচিত আমরা নই। যাই হোক। ফর্ম তো পুরন হল। এখন সত্যায়িত করানোর পালা।

একজনকে দিয়ে করিয়েও ফেললাম। এখন ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার পালা। কাফরুল, বনানী, মহাখালীর সোনালী ব্যাংকগুলো চষে ফেললাম। কাফরুলের শাখায় গেলে বলে বনানী শাখায় খোজ নেন। বনানী শাখায় গেলে বলে উত্তরা, যাত্রাবাড়ি, আগারগাও শাখা ছাড়া কোথাও নেয়া হয় না।

তো পরের সপ্তাহে আগারগাও যাওয়ার জন্যই মনস্থির করলাম। ১১-নভে-১২: সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে না খেয়ে ঘর থেকে বের হলাম। গন্তব্য আগারগাও সোনালী ব্যাংক শাখা। দেরি করে ফেলছি। ৯ টার আগে গিয়ে লাইনে দাড়াতে হবে ভেবে সি. এন. জি ও নিলাম।

পাসপোর্ট অফিসের সামনে গিয়ে নামলাম। এক সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, আপনাকে আর ২০০ গজ সামনে যেতে হবে। মনে মনে হিসাব কষলাম। ৩*২০০ = ৬০০ ফিট। আমি প্রতি কদমে ১ ফুটের একটু কম দুরত্ব অতিক্রম করলেও ৭০০ কদমের মধ্যে পৌছে যাব।

কিন্তু ৭০০ কদম আসলে সময়ের হিসেবে কতক্ষনের পথ? একটা রিকসা নিয়ে নিব নাকি? বহু আগে একবার এসেছিলাম। কিন্তু এখন সবকিছু অপরিচিত লাগছে। নাহ্‌। হাটাই ধরলাম। হাটতে হাটতে পথেই দেখি একটা লাইন।

মনে মনে যা ভাবছিলাম। ব্যাংকের লাইন। ব্যাংক কিন্তু এখনও দেখা যাচ্ছে না। আমার সামনের জন বলল, "ভাই আমার যায়গাটা একটু রাইখেন। আমি সামনে গিয়া দেখি কি অবস্থা।

" কিছুক্ষন পর তিনি ফিরে এসে বললেন তিনি ১৮১ নম্বর সিরিয়ালে। আমি ১৮২ নম্বর সিরিয়ালে। ব্যাংক খুলবে ১০ টায়। এখন বাজে পৌনে ৯ টা। ৯:৪৫ বাজে।

আমার সামনের জন হঠাৎ পাগল হয়ে গেছে মনে হল। বলল, "ভাই আমারে একজন বলছে কলেজগেট শাখার সোনালী ব্যাংকে নাকি পাসপোর্টের টাকা জমা নেয়। চলেন যাই। " আমি আমার পেছনে তাকালাম। লম্বা লাইন দেখে মনে হল ১০০/১৫০ জনের কম হবে না।

যদি কলেজগেট গিয়ে দেখি টাকা নেয় না তাহলে আজকে আর টাকা জমা দিতে পারব কিনা আল্লাহই জানেন। তবুও ঐ লোকের বলার ভংগি দেখে বললাম, চলেন। সাই করে লাইন থেকে বের হলাম। রিকসা নিলাম। রিকসা আমাদেরকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের ভেতর দিয়ে নিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের গেটে নিয়ে নামাল।

রাস্তার ওপারেই ব্যাংক। দৌড়ে ভেতরে ঢুকলাম। ফর্ম নিলাম। পুরন করে টাকা জমা দিলাম। সাইন করিয়ে বের হয়ে দেখি পুরো কাজটি করতে আমাদের ২০ মিনিট লেগেছে।

আল্লাহ্‌র কাছে হাজার শোকর করতে করতে পাসপোর্ট অফিসের দিকে আবার রওয়ানা দিলাম। এবার ফর্ম জমা দেবার পালা। (আগামী পর্বে সমাপ্য) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.