আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা !

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! এই মেয়েটা কি পাগল নাকি ? এমন পাগলামো কেউ করে নাকি? আমি ভেবে পাই না এই মেয়েটার মনে কি চলে ! এতো সিনেমাটিক হলে কি চলে নাকি ? আমি নিশিকে বললাম -কি করছো তুমি ? এভাবে কেউ জড়িয়ে ধরে ? তাও আবার সবার সামনে ? নিশিতো আমাকে ছাড়লোই না বরং আরো একটু জোড়ে জড়িয়ে ধরলো । বলল -জানো এই কয় দিনে তোমাকে আমি কি পরিমান মিস করেছি ? আর তুমি তো মজা করে বেরিয়েছ ! -আরে বাবা ঘুড়তে গিয়েছিলাম । মাত্র তিন দিনের জন্য ! তোমাকে তো বলেছিলাম, নাকি ? এখন একটু ছাড়ো ! মানুষ জন কি ভাবছে ? আসলে মানুষ জন কি ভাবছে সেটা নিয়ে আম খুব একটা ভাবছি না আমি ভাবছি তন্নী কে নিয়ে । ও যখন দেখবে যে নিশি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ও কি ভাববে !! আমাদের গ্রুপ থেকে ট্যুরে গিয়েছিলাম সিলেটে । তিন দিনের জন্য ! আজ মাত্র ফিরলাম ।

আমি ভাবি নি নিশি আমাকে রিসিভ করার জন্য ষ্টেশনে এসে হাজির হবে । আমি ট্রেন থেকে নেমেছি ওমনি এসে আমাকে সোজাসুজি জড়িয়ে ধরলো । এই মেয়েটা এতো সিনেমা দেখে ! দিনের মধ্য কমপক্ষে ১০০ বার ফোন দিতো তবুও নিশির মন ভরতো না । আমি তো ভাবতেই পারি নি ও এখানে চলে আসবে । নিশি যখন আমাকে ছাড়লো আমার সব বন্ধুরা চলে এসেছে ! নিশি একটু সরে দাড়ালো ।

ঠিক তখনই আমি তন্নী কে দেখতে পেলাম । সুমনের পেছনে দাড়িয়ে আছে । ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে আমাকে জড়িয়ে ধরার দৃশ্যটা ও দেখেছে ! আর এটাও খুব স্পষ্ট যে ব্যাপারটা ও একদম পছন্দ করে নি । তন্নী আর আমার সাথে কথাই বলল না । গম্ভীর হয়েই দাড়িয়ে রইলো সুমনের পেছনে ।

আমি কিছু বললাম না । না জানি কি সিন ক্রিয়েট করে ফেলে !! এই মেয়ে গুলো এতো কনফিউজিং ক্যারাক্টার কখন কি যে করে বোঝাই মুসকিল !! পুরো ট্রিপ জুরে তন্নী আমার পাছ একটুও ছাড়ে নি আর নিশিকে দেখে আমাকে যেন চিনছেই না ! আজিব !! নিশিকে হলে পৌছে দিতে দিতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল । রুমে পৌছাবো ঠিক এই সময়ে তন্নীর ফোন ! -কোথায় তুই ? -এই তো ! রুমে ঢুকবো ! -একটু ?আয় তো ! -এখন ? মাত্র রুমে ঢুকবো! -এখনও ঢুকিস নিতো ! আসতে বলছি আয় ! তোমার পুঁচকে গার্লফ্রেন্ড বললে তো ঠিকই চলে যেতে ! -আচ্ছা বাবা আসছি ! কোথায় আসবো ! তন্নীর কাছে পৌছাতে পৌছাতে রাত হয়ে গেল । ওদের বাসার পাশের গলিতে দাড়িয়ে ছিল আমার জন্য ! -বল ! কি জন্য ডাকলি ! তন্নীদের এই গলিটা মোটামুটি নির্জনই বলা চলে ! আসলে ভিআইপি এলাকা তো । যে কেউ আসতে পারে না ।

তন্নী কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন । ওর মুখটা বেশ গম্ভির মনে হল -কি ব্যাপার ? এতো গম্ভীর কেন ? -তোর গার্লফ্রেন্ড এমন করলো কেন ? -কেমন? -কেমন মানে ? একে বারে যেন বাংলা সিনেমা । তুমি নায়ক সে নায়িকা ! -আরে এতো গম্ভীর কেন রে তুই ? কি হয়েছে তাতে ? ও তো একটু এমনই ! তন্নী আমার দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন । বলল -তুই ওকে কবে বলবি? -কি বলবো ? -কি বলবি বুঝতে পারছিস না ? আমি তন্নীর মুখ দেখে খানিকটা চিন্তিত হলাম । ঐদিনকার ঐ ঘটনা কে তন্নী কি তাহলে খুব সিরিয়াসলী নিয়েছে ? কি এক ঝামেলায় পড়লাম ।

তন্নী এগিয়ে এসে আমার হাত টা ধরে বলল -দেখ, আমি একটা ভুল করেছিলাম তাই আমি কষ্ট পাচ্ছি । মেনেও নিয়েছিলাম । কিন্তু এখন আমি আর তা মনাবো না । কিছুতেই না । -তন্নী তুই কি বলছিস এসব ? তোর মাথা ঠিক আছে তো ? দেখ ঐদিন যা হয়েছে তা ইচ্ছে করে হয় নি ।

এটা যেমন তুই জানিস আমিও জানি ! এই কথা শোনার পর শোনার পর তন্নীর কি হল ঠিক বলতে পারবো না তবে ও সরাসরি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো ! আমি বুঝতেই পারি নি যে ও এমনটা করবে ! তবে ভাগ্য ভালো যে আশে পাশে কেউ নাই ! এমনিতেই অন্ধকার হয়ে এসেছে ! -এই কি করছিস তুই ? ছাড় ! ছাড় বলছি । তন্নীর আমার কথা খুব একটা কানে গেল বলে মনে হল না । আমাকে কিস করার জন্য আর একটু এগিয়ে এল । আমি এবার জোর করেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম । বললাম -কি করছিস তুই ? -কেন ? এখন ভাল লাগছে না ? ঐদিন আমার ঠোট তোর কাছে খুব মিষ্টি লেগেছিল ।

এখন নিজের গার্লফ্রেন্ড কে পেয়ে আমার কথা ভুলে গেলি । তারপর তন্নী বেশ কিছু খারাপ কথা বলল ! আমি চুপ চাপ শুনলাম কেবল ! কথা শেষে বললাম -তোর মাথা এখন গরম । মাথা ঠান্ডা কর ! আমি যাই ! -খবরদার বলছি যাবি না ! -আমি যাই । আমি আর দাড়ালাম না । পিছন ঘুরে হাটা দিলাম ।

তন্নী মাথা এমনিতেই খারাপ । এখানে থাকলে আরও কি হবে কে জানে !! আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ঐদিন তন্নী ইচ্ছা করেই কাজ টা করেছিল ! অন্ধকার পথে হাটতে হাটতে নিশির মুখটা ভেসে উঠল । ওর কথা মনে হতেই মনের একটা আনন্দ অনুভব করলাম । মেয়েটা এমন পাগলামো করে মাঝে মাঝে । একবার কি মনে হল আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবে ।

তাও আবার রিক্সায় চড়ে । আকাশে মেঘ হলে আমাকে ফোন দিত । আমরা কত ঘুরেছি বৃষ্টির অপেক্ষায় কিন্তু বৃষ্টির দেখা মেলে নি । কিন্তু সিলেটে যাওয়ার আগে একদিন আমি আর তন্নী রিক্সায় করে নিউমার্কেটে যাচ্ছিলাম বলা নেই কওয়া নেই হুড়মুড় করে বৃষ্টি নেমে গেল । আমি হুট তুলতে যাবো তন্নী কিছুতেই তুলতে দিল না ।

আমার দিকে তাকিয়ে খুব হাসতে লাগলো । তারপর বলল -দেখছিস উপরয়ালাও চায় না তুই নিশির সাথে বৃষ্টিতে ভিজিস ! পরে নিশি খুব মন খারাপ করেছিল । আমি বলতে চাই নি নিশিকে । তন্নী নিজেই নিশিকে ফোন করে বলেছে । কি বলেছিল কে জানে কিন্তু পর যখন নিশির মন খুব খারাপ ছিল ।

কি বলেছিল সেটা দুজনের কেউই আমাকে বলেনি কিন্তু নিশ্চই কিছু একটা বলেছিল যেটাতে নিশির মন খুব খারাপ ছিল । আমি কারন জানতে চাইলেও নিশি কোন জবাব দিল না। অনেক্ষন পর মুখ গোমড়া করে বলল -জানো অপু, আমার মাঝে মাঝে খুব ভয় হয় ! -কেন কিসের ভয় ! -আমার মনে হয় তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলবো । -এমন কথা কেন বলছো ? নিশি কোন জবাব দিলো না । মন খারাপ করেই রইলো ! আমি বুঝলাম তন্নী আসলেই এমন কিছু বলেছে ! আমি তন্নীর কাছে জানতে চাইলাম ।

কিন্তু ও কোন কথাই বলল না -তুই নিশিকে কি বলেছিস রে ? তন্নী কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর হাসতে লাগলো । -তোর পুচকে গিএফ কি খুব কান্না কাটি করছিল ? -দেখ ! ফান করিস না । সিরিয়াস লি বল ! কি বলেছিস ? -বলব না । কি করবি ! আমি কিছু বলতে পারি না ।

এই মেয়েটার মনে কি চলছে ? কে জানে ? তন্নী আবার বলল -তুই ভাবিস না তোকে আমি এমনিতেই ছেড়ে দিবো !! কিছুতেই ছাড়বো না । দেখি তোর পিচ্চি জিএফের ভালবাসায় কত জোর ! তোকে আটকয়ে রাখতে পারে কি না ! আমি এবার একটু ভয় পেলাম । তন্নী এমন কথা কেন বলছে !! আমি এতো দিনে ওকে যতটা চিনেছি তাতে অবশ্য একটু ভয়ের কথাই ! যদি তন্নী একবার কোন কিছু ঠিক করে ফেলে তাহলে সেটা ও করেই ছাড়বে ! যে কোন কিছুর বিবিময়েই হোক ! আমি খানিকটা টেনশন ফিল করলাম । আচ্ছা তন্নী সব কিছু বলেছে নাকি নিশিকে ! তাহলে তো সমস্যা হবে । মেয়েটা যা ইমোশনাল এসব কথা শুনে আবার কিছু করে না ফেলে ।

আমি পড়েছি এক ঝামেলায় । এই মেয়ে গুলো এমন ভেজাল তৈরি করে না ! রাতের বেলা নিশির ফোন । অনেক রাতে ! ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি প্রায় তিনটা বাজে । এতো রাতে কেন ফোন দিল । কোন সমস্যা হল নাকি ? আমি একটু টেনশন নিয়েই ফোনটা ধরলাম ।

নিশি চুপ করে রইলো । কোন কথা বলল না প্রথমে ! -কি হল কথা বলবা না ? আমি শুরু করলাম ! আরো কিছুক্ষন নিরবতা । তারপর -তুমি কি তন্নী আপুকে ভালবাস? -মানে ? -সত্যি কথা বলবা ? আমার সাথে রিলেশনের আগে তুমি কি তাকে ভালবাসতে ? -কি বলছো এসব ? কে বলল তোমাকে এই কথা ? তন্নী বলেছে ? -যেই বলেছে ! কথাটা সত্যি কি না বল । আমি একটু সময় নিলাম । তারপর বললাম -হ্যা কথাটা সত্যি ! আমি ওকে প্রোপজ করেছিলাম ।

কিন্তু ও আমাকে রিফিউজ করেছিল ! কথাটা আসলেই সত্যি । নিশি আমার প্রথম ভালবাসা না । ভার্সিটির প্রথম দিকে তন্নীর প্রতি বেশ দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম । প্রোপজও করেছিলাম । কিন্তু তন্নী সেটা গ্রহন করে নি ।

কেন করে নি কে জানে !! কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বে তেমন কোন একটা প্রভাব পড়ে নি । আমি যাতে ওর সামনে অপ্রস্তুত না হয়ে পড়ি সে কারনে ও নিজেই আমার দিকে বেশি এগিয়ে এসেছিল । আমাকে বুঝিয়েছিল যে এই সব প্রেম ভালবাসা তার জন্য না । এটার জন্য আমাদের বন্ধুত্ব যেন নষ্ট না হয় ! তারপর আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায় ! তারও কিছুদিন পর আমার নিশির সাথে পরিচয় হয় ! সেখান থেকেই ওকে ভাল লাগে । তারপর ওর সাথেই আছি ।

কিন্তু আমার একটা ভুল হয়ে গেছে যে নিশিকে আমার এই কথাটা না বলা । বললে আজ হয়তো এই কথাটা বলতে পারতো না । আমি বুঝতে পারছি এর পরের কথা কি বলবে ? নিশি বলবে আমাকে এটোদিন বল নি কেন এই কথা ? কিন্তু নিশি এই প্রশ্নটা করলো না । আমাকে বলল -এখনও কি ভালবাস তাকে ? -মানে ? না ! দেখো একটা সময় ছিল যে ওকে পছন্দ করতাম কিন্তু তুমি আসার পর থেকে আমি আর ভাবিও নি । ও আমার কেবলই বন্ধু !! -আচ্ছা বন্ধু ?? তাহলে সিলেটে গিয়ে ওকে চুম খেয়েছ কেন ? -মানে ???? আমি আকাশ থেকে পড়লাম ।

তন্নী এই কথা যে ওকে বলেদিবে আমি ভাবতেই পারি নি ! -এখনও কি বলবা যে তুমি ওর কেবল বন্ধু ! -দেখ ব্যপারটা এই রকম না । পরিস্থিতিটা এমন ছিল যে ....। আমি ঠিক বোঝাতে পারছিলাম না ঠিক কিভাবে বোঝাবো ওকে ! -দেখ অপু আমি কিন্তু ওটোটা কচি খুকি না যে তুমি আমাকে যা বলবা আমি তাই বুঝবো !! -দেখ ব্যাপারটা ঐ রকম না ! -আমি কিছু শুনতে চাচ্ছি না যে ব্যাপার টা কি রকম । আমি কেবল জানতে চাই তুমি তন্নীকে চুম খেয়েছ কিনা ? আর কোন কথা না ! -হ্যা মানে.....। কিন্তু...........।

আমার কথা শেষ হবার আগেই নিশি ফোন রেখে দিল । তন্নীর উপর মেজাজটা খুব খারাপ হল ! মেয়েটা এমন কেন করলো ? কেন ? একটা সময় ছিল তন্নী নিজেই আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল । ওর ভাষ্য অনুযায়ী প্রেম ভালবাসা ওর জন্য না আর এখন ও নিজের আমাদের মধ্য এমন প্যাচ লাগিয়ে দিল । আমি বেশ কিছুদিন ধরেই ব্যাপারটা খ্যাল করছিলাম । তন্নীর মধ্যে কেমন একটা যেন পরিবর্তন এসেছে ।

বিশেষ করে আমাকে যখন নিশির সাথে দেখতো অথবা যখন আমি নিশির সাথে ফোনে কথা বলতাম ওর মুখ কেমন যেন গম্ভীর হয়ে যেত ! তারপর কেমন একটা ভার ভার করে থাকতো ! আমার সাথে ঠিক কথাও বলতো না কিছ সময় ! পরে আর কি লিখবো বুঝতে পারছি না !! লিখতে ভালও লাগছে না আর !  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।