আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"তন্ত্রে-মন্ত্রে আমরা"

এলার আজ আবারো প্রচণ্ড জ্বর এসেছে সাথে তীব্র মাথা ব্যথা। সে আজ তাঁর মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষ পত্রটি জমা দিয়ে বাসায় এসেছে। এলার আনন্দিত হবার কথা কিন্তু সে আনন্দিত নয় তাঁর উপর ভর করেছে ত্রাশ। সে যখন নবম শ্রেণীতে পড়ে তখন থেকেই তাঁর পারিবারিক জীবনে নেমে আসে অশান্তি, মেধাবী ছাত্রী এলা ধিরে ধিরে পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ হারায়। এলার গানের কণ্ঠ সুমধুর কিন্তু এখন আর সে গান গাইতে চায় না গানেও ধরেছে অনিহা।

এলার পারিবারিক অবস্থা বেশ ভালো ছিল, জন্মের পর থেকে সে বেড়ে উঠেছে উচ্চবিত্ত পারিবারিক আবাহাওায়। তাঁদের নিজ ফ্ল্যাটে বাবার বাণিজ্যের অর্থ স্রোতে কখনো তাঁদের কোন অভাবের সম্মুখীন হতে হয় নি। কিন্তু আজ তাঁদের অবস্থা খুব খারাপ শোচনীয়। তাঁর বাবা বিগত দেড় বছর তাঁদের কোন খবর নেয়নি, এলার মা এক সময় চাকরি করতো এলার মার জমানো অর্থে তাঁদের তিন বোনের পড়ালেখা সহ সাংসারিক খরচ মেটানো হয়েছে। এলার মা বাবার দুজনের এক সময়ের বান্ধবীর আগমনের পর থেকে তাঁদের পারিবারিক জীবনে নামতে থাকে ধূসর ছায়া।

এই মহিলা এলাদের তিন বোনকেই খুব আদর করত এই মহিলা তাঁর নিজ সংসার ফেলে এলাদের সাথে এক সংসারে বসবাস করা শুরু করে। বিষয়টি এলার মা বাবা ভালো ভাবে নেয় কারণ এই মহিলা তাঁদের বুঝাতে সক্ষম তিনি আইন নিয়ে উচ্চতর পড়ালেখা করার জন্য নিজ পরিবার রেখে এলাদের সাথে থাকছেন যাতে তাঁর পড়ালেখা ও জাতায়তে কোন সমস্যা না হয়। কিন্তু ধিরে ধিরে পরিবেশ বদলায়। এলারর বাবার সাথে এই মহিলা এক অন্য সম্পর্ক গড়ে তোলে, বিষয়টি এলার দৃষ্টি তে আসার কিছুদিন পর থেকে এলার শারীরিক অসুস্থতা শুরু হয়। এলার মা বাবার সাংসারিক সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে।

এক পর্যায় এলার বাবা মহিলাটিকে নিয়ে অন্য বাসায় নতুন জীবন শুরু করেন। তাঁর কয়েক মাস পরে এলার বাবা প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর বাণিজ্যে আঘাত হানে কালবৈশাখী ঝড়। এদিকে এলারা আবিস্কার করে তাঁদের ঘর ভর্তি তাবিজ, হাড়গোড়, মাটি। তাঁরা পীর ডাকলে সে সব তাবিজ হাড়গোড় দেখে পীর নিশ্চিত করেন তাঁদের উপর তন্রমন্ত্র করা হয়েছে। তাবিজ খুলে মা-কালি নিয়ে কিছু লেখা মন্ত্র পাওয়া যায় এলার বালিশের ভেতর থেকে বের করা হয় অনেক রকম তাবিজ।

সবাই এই মহিলার অপকর্ম সমন্ধে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে থাকেন। হৃদরোগে আক্রান্ত এলার বাবা ঘরে ফেরেন খুব করুন দশায় সরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা করা হয়। এলার পরীক্ষা গুলো একটুকুও ভালো হয়নি। দশম শ্রেণীতে থাকার সময় সে দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে আসক্ত হয় ঘুমের বড়ির। তবে এখন তাঁর এটুকু সান্ত্বনা তাঁর বাবা আবারো তাঁদের কাছে ফিরে এসেছে।

তাঁরা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সপ্ন দেখে। এলারা পারিবারিক ভাবে বিশ্বাস করে তন্ত্রেমন্ত্রে তাঁদের উপর নেমে এসেছিল এক কালো অধ্যায় যা সব গুলো তন্ত্রমন্ত্র খচিত তাবিজ হাড্ডি মাটি পুতুল এসব ঘর ছাড়া করার পর ওরা এখন মুক্ত ওরা এখন অশান্তি থেকে দূরে। সাখাওাত সাহেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। গনি মিয়া নামের এক তুচ্ছ মূর্খ লোক সাখাওাত সাহেব কে বুঝাতে সক্ষম উত্তরার একটি জমি এখন যদি তিনি ক্রয় করেন তবে তিনি অতি অল্প সময়ে এই জমি বিক্রি করে দিগুন অর্থ লাভ করবেন। এই জমি তে বাড়ি তুলে ভাড়া দিলে আয় করতে পারবেন অনেক টাকা, এই জমি যদি গৃহ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কে দেন তা থেকেও তাঁর ভালো লাভ হবে।

তাকে এমন ভাবে বুঝ দেয়া হয় যে তিনি জমিটি তাঁর সারা জীবনের সঞ্চিত সব অর্থ দ্বারা ক্রয় করে ফেলেন। পরবর্তীতে দেখা যায় সাখাওাত সাহেব একা নন তাঁর মতো আরও অনেক বিজ্ঞ উচ্চশিক্ষিত লোক এই জমিতি ক্রয় করে প্রতারিত হয়েছেন। বিভিন্ন পরিচয়ে বিভিন্ন প্রতারনামূলক ব্যবসা করা গনি মিয়া এক সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন। তাঁর পকেট থেকে পাওয়া যায় এক গুচ্ছ তাবিজ। যাতে বিভিন্ন আরবি অক্ষরে লেখা দয়া কালাম যা কিনা উল্টো করে লেখা যাকে কুফরি কালাম বলে আমরা জানি তা পাওয়া যায়।

এই গনি মিয়া কি করেনি? বিদেশে লোক পাঠাবার কথা বলে, চাকরি, তদবিরের জন্য, বিনিয়োগের কথা বলে বহু শিক্ষিত বিজ্ঞ লোকের টাকা মেরেছে। আদ্রির কথা বলি, আদ্রি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। তাঁর বাবা মা তাকে ঠিক মতো সময় দেয়না, সংসারে লেগে থাকে ঝগড়াঝাঁটি। আদ্রির বাবা মা আবিষ্কার করে আদ্রি অমনোযোগী, একরোখা, জেদি কথা শোনে না। দিনদিন আদ্রির বেয়াদবি মেনে নেয়া যাচ্ছে না।

তাঁরা কাকা হুজুরের পরা পানি আনেন। আদ্রি এইবার তুমি ভালো না হয়ে পারো না। কিন্তু হিতে বিপরীত আদ্রি আরও একরোখা জেদি বেয়াদব হতে থাকে। এলা, আদ্রি, শাখাওাত সাহেব এই সমাজের অবস্থা সম্পন্ন লোক, ভালো পরিবারে তাঁদের বাস কিন্তু আধুনিক এই সময় তাঁরা তন্রমন্ত্রের কবলে অথবা তন্রমন্ত্রে তাঁদের বশ করার চেষ্টা বড়ই বিস্ময়কর। সাখাওাত সাহেব যদি ভালো মতো খোজ খবর নিয়ে জমি ক্রয় করতো, আদ্রির বাবা মা যদি হুজুরের পানি পড়া না দিয়ে নিজেরা ঝগড়াঝাঁটি না করে আদ্রি কে সময় দিত, এলারা যদি পারিবারিক ভাবে সচেতন হতো এবং সে মহিলা পারিবারিক আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের সাথে থাকতে না দিত তাহলে কি আমরা তন্ত্রমন্ত্রের গল শুনতে পেতাম জানতে পারতাম?? হয়ত না হয়ত হ্যাঁ।

মিজান, রহিম গফুর যখন গ্রাম্য তান্রিকের খপ্পরে পড়ে তা মানা যায় তাঁরা অশিক্ষিত অসহায় তাঁদের সামর্থ্য নাই সুশিক্ষা গ্রহনের বা ভালো চিকিৎসা করানোর। কিন্তু শহুরে অধুনিক পরিবার গুলো কি ভাবে তন্রমন্ত্র বিশ্বাস করে? কি ভাবে তন্ত্রমন্ত্রের কবলে পড়ে?? পড়ে কারণ তাঁরা নিজেরা সচেতন না, তাঁরা নিজেরা নিজেদের ভুল ত্রুটি মানতে নারাজ নিজেরা পরিবর্তন হবে না তাই তাঁদের তন্রমন্ত্র দরকার। তাঁদের কে পরিবর্তন করার জন্য বা তাঁরা পরিবর্তন আনতে আশ্রয় নেয় তন্ত্রমন্ত্রের জ্বলে ওঠে আগুন তৈরি হয় পুতুল তাবিজ মন্ত্রপাঠ চলতে থাকে হত্যা করা হয় কালো বিড়াল মানব শিশু তৈরি হয় মহা ঔষধ তৈরি হয় শক্তি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।