আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ুন আহমেদের অনুজ আহসান হাবীবের স্মৃতিচারন .....হায়... !! এ পৃথিবী !! একবার পায় তারে বার বার পায় না তো আর!

হুমায়ুন আহমেদের অনুজ আহসান হাবীবের স্মৃতিচারণ -- বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন চলে এসেছে। তাঁর ৬৪তম জন্মদিন। এই জন্মদিনে তিনি নেই। আগের জন্মদিনেও তিনি ছিলেন না, ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে, তার পরও তিনি ছিলেন। এবার তিনি একেবারেই নেই।

সেই যে সম্ভবত এমারসনের একটা বিখ্যাত বাণী শুনেছিলাম... ‘জন্মদিনে তোমার আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই, কারণ মনে রেখো তুমি মৃত্যুর দিকে আরও একটি বছর এগিয়ে গেলে...!’ তাহলে তাঁর বেলায় এসে এই মহান বাক্যের কী ব্যাখ্যা? তিনি কি মৃত্যুর ভেতর থেকেই মৃত্যুর দিকে আরও এক বছর এগিয়ে গেলেন? ড্রিম...ইনসাইড ড্রিম?? নাকি তাঁর সেই ‘অন্যভুবনে’ সেই আনন্দযাত্রায় আরও একটি বছর এগিয়ে গেল? কে জানে! থাক...বরং জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে কিছু মজার গল্প বলি— গল্প নম্বর (এক) গভীর রাতে হূমায়ূন আহমেদকে এক বিখ্যাত অভিনেতা ফোন করলেন। এত রাতে ফোন পেয়ে হুমায়ূন আহমেদ কিঞ্চিৎ বিরক্ত! —হূমায়ূন ভাই, আমার অবস্থা খুব খারাপ —কেন, কী হয়েছে? —পেটে প্রচুর গ্যাস হয়েছে! —পেটে গ্যাস হয়েছে তো আমাকে কেন, তিতাস গ্যাসকে ফোন দিন। গল্প নম্বর (দুই) তাঁর বিয়ের কথাবার্তা চলছে। সিলেট থেকে এক প্রস্তাব এসেছে। মেয়েপক্ষ দুটি সাদাকালো ছবি পাঠিয়েছে (তখন অবশ্য রঙিন ছবির যুগ ছিল না)।

একটি দাঁড়ানো আর একটি বসা অবস্থায়, মেয়ে অত সুন্দরী না। ভাইবোনেরা সবাই ছবি দেখে নানা মন্তব্য করছে এবং সবাই একমত হলো যে, বসা ছবিটাতে পাত্রীকে বেশি সুন্দরী মনে হচ্ছে...!’ বড় ভাই বিরস মুখে বললেন, —কী আর করা, বিয়ের পর না হয় তোদের ভাবিকে সব সময় বসিয়ে বসিয়ে রাখবি...! গল্প নম্বর (তিন) এই গল্পটা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁর এক কলিগের কাছ থেকে শুনেছি কিছুদিন আগে। তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, তখনকার ঘটনা। একদিন ল্যাব ক্লাসে তাঁর এক ছাত্রী খুব দামি একটা অ্যাপারাটাস ভেঙে ফেলল। হুমায়ূন আহমেদ খুব রেগে গেলেন।

অসম্ভব বকাবকি করলেন মেয়েটাকে। মেয়ে কেঁদেকেটে চলে গেল। পরে হুমায়ূন আহমেদের মন খুব খারাপ হলো। পরদিন তিনি মেয়ের কাছে বকাবকির জন্য ক্ষমা চাইলেন। বললেন, ‘বলো, আমি তোমার জন্য কী করতে পারি? কী করলে তোমার মন ভালো হবে।

’ মেয়ে কথা বলে না। পরে হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘তুমি চাইলে আমি তোমাকে বিয়েও করতে পারি...!’ মেয়ে এবার মুখ তুলে স্পষ্ট স্বরে বলল, ‘না!’ বলাই বাহুল্য, শুরুর দিকে পাত্র হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের মার্কেট খুবই খারাপ ছিল!! একাধিক পাত্রী তাঁকে না বলেছে। গল্প নম্বর (চার) ১৯৭১ সালে তাঁকে পাকিস্তানি মিলিটারিরা মুহসীন হল থেকে ধরে নিয়ে গেল (খুব সম্ভব তখন তিনি মুহসীন হলে বসে তাঁর প্রথম উপন্যাস শঙ্খনীল কারাগার লিখছিলেন)। আমরা খবর পেলাম তাঁকে প্রচুর টর্চার করছে। তখন মেজো ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল ঢাকায় একা।

তিনি ডালে-পালে আমাদের আত্মীয় এক আর্মির ক্যাপ্টেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানালেন ঘটনাটা। সেই ক্যাপ্টেন শুনে উত্তেজিত হয়ে গেল, ‘কী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে রড দিয়ে পেটাবে মানে?? ইয়ার্কি নাকি? এর চেয়ে গুলি করে মেরে ফেলুক। ’ তাঁর কথা শুনে মেঝো ভাই হতভম্ব! বলে কী!! পরে এই ঘটনা যখন বড় ভাইকে জানানো হলো, তখন বড় ভাই শুনে মুগ্ধ, ‘বাহ, আর্মি অফিসার হলে এমনই হওয়া উচিত!’ গল্প নম্বর (পাঁচ) আমি তখন ক্লাস টু কি থ্রি-তে পড়ি কুমিল্লা ফরিদা বিদ্যায়তন স্কুলে। বক্সার মোহাম্মদ আলীর খুব ভক্ত। বড় ভাই চিঠি লিখে আমাকে জানালেন, থ্রিতে ফার্স্ট হতে পারলে আমাকে এক জোড়া বক্সিংয়ের গ্লাভস কিনে পাঠাবেন ঢাকা থেকে।

আমরা তখন থাকি কুমিল্লায়। আমি গ্লাভস পাওয়ার লোভে দ্বিগুণ উদ্যোগে পড়াশোনা শুরু করলাম এবং রেজাল্টের পর দেখা গেল, আমি সসম্মানে ফার্স্ট না...লাস্ট হয়েছি। আমার সাফল্যের(!) কথা বড় ভাইকে লিখে জানালাম। তিনি উত্তরে লিখলেন, —শাবাশ! দুটো না একটা গ্লাভস পাঠাচ্ছি! গল্প নম্বর (ছয়) এই গল্পটা শুনেছি বিখ্যাত আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুনের কাছ থেকে। এটা অবশ্য হুমায়ূন আহমেদের গল্প না, তাঁরই গল্প।

তার পরও বলি— নাসির আলী মামুন তখন তরুণ আলোকচিত্রী, চারদিকে তাঁর নাম ছড়াচ্ছে ভালো আলোকচিত্রী হিসেবে। তো একদিন প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ তাঁকে ডেকে পাঠালেন, কী ব্যাপার? তাঁর নাতির বিয়ের ছবি তুলতে হবে। নাসির আলী মামুন বললেন, ৫০ টাকা দিতে হবে। ইব্রাহিম খাঁ রাজি হলেন। বললেন, আরেক দিন এসে টাকা নিয়ে যেতে।

পরে আরেক দিন নাসির আলী মামুন গেলেন, তখন তাকে ২৫ টাকা দেওয়া হলো। বাকি টাকা পরে দেওয়া হবে। তরুণ নাসির আলী মামুনের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। তিনি টাকা না নিয়ে একবারে পরে পুরো টাকা নেবেন বলে চলে এলেন এবং পরে আর গেলেনই না। কিন্তু অনেক পরে জানতে পারলেন বিয়েটা ছিল হুমায়ূন আহমেদের।

পাত্রী ইব্রাহিম খাঁর নাতি গুলতেকিন খান। গল্প নম্বর (সাত) হুমায়ূন আহমেদ তাঁর ছেলেবেলা বইয়ে লিখেছিলেন তিনি নানার বাড়িতে গোয়ালঘরের গরুরা মানুষের মতো কথা বলছে...এমন একটা কিছু। পরে ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিচ্ছেন তিনি...একদিন এক ছাত্র প্রশ্ন করে বসল, ‘স্যার, আপনি নাকি গরুর কথাও বুঝতে পারেন?’ ক্লাসের মধ্যে অন্য প্রসঙ্গ আনায় হুমায়ূন আহমেদ বিরক্ত হলেন, বললেন, ‘হ্যাঁ, পারি নইলে তোমাদের ক্লাস নিচ্ছি কীভাবে?’ এ রকম অনেক গল্প হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে। মুড ভালো থাকলে তিনি প্রতি মুহূর্তে মজা করতেন। আজ তিনি নেই।

আমাদের পরিবারেও যেন কোনো আনন্দ নেই। তিনি বেঁচে থাকলে কোনো একটা উপহার নিয়ে যেতাম তাঁর ধানমন্ডির বাসায়। গিয়ে দেখতাম ফুলে ফুলে তাঁর ঘর ভরা। ভক্তরা সব ফুল দিয়ে গেছে। ফিরে আসার সময় তিনি বলতেন, ‘কিছু ফুল নিয়ে যা তোদের বাসায়, এখানে এত ফুল নষ্ট হবে...’ আমরা ভাইবোনেরা কিছু ফুল নিয়ে ফিরতাম যার যার বাসায়...তাঁর জন্মদিনের ফুল...তাঁর প্রথম পৃথিবীতে আসার প্রথম দিনটির সৌরভ...হায়... !! এ পৃথিবী !! একবার পায় তারে বার বার পায় না তো আর!  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।