আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমন জিনিস বানামু মানুষ কাইন্দা দিবো

এমন জিনিস বানামু যে মানুষ আগে দেখে নাই আগে শুনে নাই আগে পড়ে নাই। যা দেখলে মানুষ কাইন্দা দিবো, পড়লে-শুনলে চোখের পানি অটো হয়ে যাবে। এই কথা গুলো বলছিলেন এক বড় ভাই কোন একদিন ঢাকার কোন এক স্থানে একটি তথ্যচিত্র বানানোর অগ্রিম পরিকল্পনার আসরে। এর আগে তিনি কিছু টিভি কমার্শিয়াল বানানোর সংলাপ ও আইডিয়া প্রদান করেছেন, কমার্শিয়াল গুলো ছিল বাংলাদেশে অতি সুনামের !! সাথে বাণিজ্য করা একটি টেলিকমের। উনি এবং উনার কিছু বন্ধু আরও কিছু অনুষ্ঠান বানান এবং বানাতে সাহায্য করেন।

এখন একটা ধারা খুব সুন্দর ভাবে মানুষ গিলছে টা হলো স্পর্শকাতর, অনুভূতিতে আঘাত হানতে সক্ষম গল্প, নাটক, সিনেমা, টিভি কমার্শিয়াল, মেধা শিকার প্রতিযোগিতা সুন্দরী বাছাই প্রতিযোগিতা। এই ধারায় মানুষকে আবেগি করে চাওয়া হচ্ছে ভোট যা কিনা খুদে বার্তা নামে পরিচিত, নষ্ট করা হচ্ছে সময়, বিজ্ঞাপন নাটক সিনেমায় ব্যাবহার করা হচ্ছে শিশু শিল্পী নামের অবুঝ কিছু শিশু কে। লক্ষ মানুষ কে গিলাতে হবে দেখাতে হবে বুঝাতে হবে কিনাতে হবে তাঁদের দিয়ে আমাদের লক্ষ পুরন করতে হবে। বিজ্ঞাপন চিত্রে দেখা যায়, একটি ছোট্ট শিশু কোন পানীয়, খাদ্য দ্রব্য বা নাম করা টেলি কোম্পানির জন্য আকুল আকুতি মিনতি সংযুক্ত সংলাপ আওড়াচ্ছে, সিনেমায় দেখা যায় এই শিশু গুলো এমন সংলাপ বলছে তা তাঁর বয়সে বুঝতে পারা সম্ভব নয়। তাকে খুব অল্প বয়সে এক কথায় নষ্ট করা হচ্ছে।

মেধা শিকার অনুষ্ঠান গুলোয় এই সব শিশু কে ভোট চেয়ে কাঁদতে দেখা যায়, বলতে শোনা যায় আমরা খুব গরিব না খেয়ে থাকি ইত্যাদি কথা বাত্রা। বিচারকদের দেখা যায় গুরু মন্ত্র আওড়াতে, তোমার কণ্ঠে এই নাই ওই নাই সুরে সমস্যা তুমি আধুনিক গান করেছো অমুক নজরুল সঙ্গিত গেয়েছে ওরটা ভালো হয়েছে তোমার টা হয় নাই। কতটা নির্বোধ হলে মানুষ একে প্রতিযোগিতা বলতে পারে, কতটা নির্বোধ হলে মানুষ এই সব অনুষ্ঠান দেখতে পারে খুদে বার্তা পাঠাতে পারে। এটা কি ভাবে প্রতিযোগিতা বলবো? এটা তো ধান্দা যা কিনা চ্যানেল মালিক গুলো কে টেলিকম মালিক কে কোটি টাকার মালিক করছে। অমুক ওয়ান প্রতিযোগিতার এক শিল্পী যিনি কিনা তমুক আসরে ১ম হয়েছিলেন তিনি বলতেন আমরা খুব গরিব আমার বাবা আর আমি ট্রেনে করে ঘুরে ঘুরে গান করতাম অনেক কষ্ট করেছি আমাকে ভোট দিন আমি শিল্পী হতে চাই ইত্যাদি করুন সংলাপে তিনি ১ম।

তারপর তাঁর কোন খবর নাই। ২-৩ বছরে কয়েকটা অনুষ্ঠানে একই গান একই সুর দিয়ে মানুষের মাথায় জ্বালা ধরানো ছাড়া আর কি করেছেন? করেছেন বড়লোক বয়ফ্রেন্ড আর মাজায় হাত রেখে অভিজাত গুলশানের কোন পানশালা থেকে সুরা পান করে বনানীর অভিজাত পুল সেন্টারে ঠোটে সিগারেট লাগিয়ে বয়ফ্রেন্ড এর গলা জড়িয়ে নিজেকে জাতে তুলেছেন আগে যদি জানতেন এমন হবে ভোট দিতেন?? গরীব খেটে খাওয়া মানুষ যারা বাড়িঘর ছেড়ে পথে থাকে, ঈদে একটা জামার জন্য পদতলে পিষ্ট হয়ে মরে, দেহ বিক্রি করে আয় করে, অকালে মরে তাঁদের নিয়ে লেখতে হবে, তাঁদের নিয়ে নাটক, বিজ্ঞাপন, সিনেমা, প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান বানাতে হবে। এইগুলা পাবলিক খুব ভালো ভাবে গিলে, অনেক দিন মনে রাখে, এই গুলা দেখলে শুনলে পাবলিকের চক্ষের পানিতে নাকের পানিতে সরবত তৈরি হয়, তাঁরা তখন আমগো কোম্পানির টিস্যু পেপার দিয়া মুছামুছি শুরু করে। শেষ একটা কাহিনী বলি, কয়দিন আগে রামু বিশৃঙ্খলায় কিছু মানুষ কান্দাকাটি করে রামু কে উদ্ধার করে ফেললো। রামু ঘটনার কয়েক দিন পর তাঁরা কালা দিবস পালন করলো।

একটা ভিডিও বানাইল যা তে তাঁরা কাদছে দুঃখ প্রকাশ করছে হাতে সংলাপ আলা কাগজ ধরে রাখসে কাগজে আবার লেখা ছি এতো খারপ, আমি দুঃখিত, আমি লজ্জিত ইত্যাদি। কিন্তু রামুতে যা হবার তা হয়ে গেসে। তাঁরা তাঁদের কোম্পানির নাম সংযুক্ত এই ভিডিও চিত্র মানুষ কে দেখাইলো, ফাসবুকে শেয়ার করাইলো মানুষ কে দিয়া কালা প্রোফাইল পিক লাগাইলো। যখন কথা শুরু হইল এটা দ্বারা কি হবে তখন তাঁরা চান্দা উঠানি শুরু করলো। তাঁদের আগেই প্রধানমন্ত্রী সহ অনেক দাতব্য সংস্থান এনজিও সেখেনে গেল আর্থিক সাহায্য ও অন্যান্য করনীয় কাজ করলো এবং শান্তি ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিল।

তাঁরা সেখানে গেল এই সবের পর, ভিডিও দিয়া কালা পিক লাগায় পরিচিতি তো পাইসে এই পরিচিতি দিয়ে ভালো মাপের প্রায় ৯ লাখ টাকার মতো তুলে কিছু সেবা সামগ্রী টয়লেট পেপার, মোমবাতি, পানি স্যালাইন এই সব নিয়ে হাজিরা দিল। এই বেপক কাজের পুরস্কার পেতে সময় লাগলো না এই কোম্পানি মালিকের তাকে বিভিন্ন টক শো তে ডাকা শুরু হলো যেখানে ফ্রি তে তাঁর কোম্পানির নাম ও তাঁদের বীর কর্মকাণ্ড সমন্ধে জাতিকে অবগত করা হলো জাতি কাইন্দা দিলো। এই কোম্পানি যদি নিজেদের বিজ্ঞাপন বানায় তা টিভি চ্যানেলে চালাত বা রাস্তায় বিলবোর্ডে টানাতো তাহলে কি রকম খরচ হতো?? মানুষ কি তা দেখে কাইন্দা দিত?? তাঁর বিজ্ঞাপনের জন্য কি টকশো আলারা ডাকতো। না তাঁরা ভালো কাজ করসে, রামু তে সাহায্য করছে জাতিরে দেখায় দিসে তাঁরা পারে। প্রধানমন্ত্রী সহ, দাতা সংগঠন, এনজিও অমুক তমুক রা ফিরে আশার দুই দিন পর আরও ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হোল এইবার আর কেও গেলো না শোক দা আনলিমিটেড টিআরস বিসর্জন দিলো না।

আসছে বিজয় দিবস, এই উপলক্ষে যদি পতাকা বিতরন করা হয় এবং পতাকায় বিভিন্ন কোম্পানির নাম সংবলিত গুনকীর্তন লেখা থাকে তা দেখে অবাক হবার কিছু নাই। মাগনা দেশ প্রেম দেখায় কি হবে? দেশ প্রেম দেখায় মানুষরে কোম্পানিটার কথা জানাই তে হবে না? শিক্ষিত করতে হবে না মূর্খ এই জাতিরে। বিজয় দিবসে লাফালাফি ঝাপাঝাপির পর যদি দেখি ঢাকা শহরে ড্রেন গুলায় কোন ময়লা নাই আছে বিভিন্ন সাইজের বাংলাদেশী জাতীয় পতাকা কিছুতেই অবাক হবো না, এই দৃশ্য দেখে শুধু চোখের অশ্রু বিসর্জন দিবো। পাবলিকরে কান্দাইতে হবে না, অবশেষে কান্দায় দিলো। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।