আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: জর্জ ওয়াশিংটন থেকে বারাক ওবামার ইতিবৃত্ত

মনের মহাজন খুঁজে ফিরি.... আর কিছুক্ষণ পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হতে যাচ্ছে ইতিহাসের সব থেকে ব্যয়বহুল নির্বাচন। ৫৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আমেরিকা। বিশ্বের সর্বোচ্চ পদটির মহারণে সমানতালে মুখোমুখি বর্তমান প্রেসিডেন্ট আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ বারাক ওবামা ও ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের গভর্নর মিট রমনি। যুক্তরাষ্ট্রের ২১ কোটির বেশি ভোটার রায় দেবেন, ওবামা আরও চার বছর হোয়াইট হাউসে থাকবেন, নাকি সুরম্য বাড়িটির নতুন অতিথি হবেন মিট রমনি? বিশ্ববাসীর নজরও আজ ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ৬০০ কোটি ডলার খরচের এ নির্বাচনের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় শুরু হবে ভোটগ্রহণ (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা)।

তবে চারটি টাইমজোনে বিভক্ত দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে ভোটগ্রহণ শেষ হবে স্থানীয় সময় (ফ্লোরিডা) রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর ৬টায়)। অবশ্য নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডিক্সভিলে নচ গ্রামের বাসিন্দারা ভোট দেবেন মঙ্গলবার মধ্যরাতের পরপরই (বাংলাদেশ সময় আজ সকাল ১০টার পর)। ই-মেইলে ভোট দেবে নিউজার্সির বাসিন্দারা সুপারস্টর্ম স্যান্ডি বিপর্যয়ের জটিল অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে করে তুলেছে অনেক বেশি জটিল। স্যান্ডিদুর্গত নিউইয়র্কে ভোটার উপস্থিতি কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২৫ শতাংশের কম ভোট পড়লে ভোটগ্রহণের সময় একদিন বাড়ানো হতে পারে।

তার মানে নিউইয়র্কে ভোট হতে পারে দু'দিন। স্যান্ডিদুর্গত প্রতিবেশী রাজ্য নিউজার্সিতে ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারলে ই-মেইলে ভোটদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির যেসব ভোটকেন্দ্র স্যান্ডিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র থাকবে সেনা ট্রাকে। নির্বাচনে সাইবার হামলার আশঙ্কা জটিলতার কথা শোনাচ্ছে সাইবারজগৎ। যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত মেশিনগুলোর নিরাপত্তা নাকি বড় ধরনের ঝুঁকিতে।

আজ ভোটগ্রহণের সময় যে কোনো ভোটিং মেশিনে হানা দিতে পারে সাইবার আর্মিরা। হ্যাক হয়ে বন্ধ হতে পারে ভোটগ্রহণ। তবে এ সবই আশঙ্কার কথা। বাস্তবতা হলো, ভোটগ্রহণে বিলম্ব আর আইনি বাধ্যবাধকতায় ওহাইওর আগাম ভোট দেওয়া পোস্টাল ব্যালট আগামী ১০ দিনেও গণনা সম্ভব হবে না বিধায় আজ রাতেই শেষ হচ্ছে না নির্বাচনের ফল নিয়ে আমেরিকানদের আগ্রহের। কে হচ্ছেন পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট, তা নিয়ে দীর্ঘায়িত হতে পারে বিশ্ববাসীর আগ্রহও।

চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী ভোটের রাতেই হয়তো চূড়ান্ত ফল জানা সম্ভব হবে না। ৩৬টি দেশে অনলাইন জরিপে ওবামা এগিয়ে বিশ্বের ৩৬টি দেশের প্রায় ৫ লাখ ৭০ হাজার লোক এই অনলাইন জরিপে অংশ নেন। ৩৬টি দেশের মধ্যে চীন ছাড়া সব দেশেই ওবামা এগিয়ে। রমনি পেয়েছেন মাত্র ১৯ শতাংশ ভোট। চীনেই একমাত্র ৫২ শতাংশ ভোট নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন রমনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্যে ৮৫ শতাংশ মানুষ সমর্থন করছে ওবামাকে, যা একটু আশ্চর্যজনক বটে। কারণ এতদিন ধারণা করা হতো, ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজন কৃষ্ণাঙ্গকে কখনোই সমর্থন করবে না। সে ধারণা ভুল করে দিয়ে যুক্তরাজ্যে সর্বাধিক ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন ওবামা। যুক্তরাজ্যে রমনির জনপ্রিয়তার বেহালদশার কারণ হিসেবে এমএসএনের সংবাদ এবং ক্রীড়াবিষয়ক ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ডানকান হোপার অবশ্য লন্ডন অলিম্পিক প্রসঙ্গে রমনির উল্টাপাল্টা মন্তব্যকেই দায়ী করছেন। গত গ্রীষ্মে ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের জন্য দেশটি প্রস্তুত ছিল না রমনির এমন মন্তব্যই ব্রিটেনে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ার মূল কারণ হিসেবে মত দেন হোপার।

দেশে দেশে অনলাইন জরিপের ফলাফল এশিয়া, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার সব দেশেই ওবামা এগিয়ে রয়েছেন। আর্জেন্টিনায় ওবামা পেয়েছেন ৮৩, রমনি ১৭ শতাংশ ভোট। অস্ট্রিয়ায় ওবামা ৯৩ শতাংশ, রমনি মাত্র ৭ শতাংশ। বেলজিয়ামে ওবামা ৯৩, পেরুতে ৭৫, পর্তুগালে ৯৪, ব্রাজিলে ৯০ ও ভেনিজুয়েলায় ৭৭ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন ওবামা। কানাডায় ওবামা ৮৩ শতাংশ, রমনি মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

চিলিতে ওবামা ৮০ শতাংশ ভোট নিয়ে এগিয়ে আছেন। চীনেই রমনির পোয়াবারো, এখানে ওবামা ৪৮ শতাংশ ও রমনি ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। জরিপ তালিকার ৩৬টি দেশের মধ্যে অধিকাংশতেই ওবামা গড়ে শতকরা ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। কলম্বিয়ায় ওবামা ৭৭ শতাংশ এবং কোস্টারিকায় ৮৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশ ফিনল্যান্ডে ওবামা ৯৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

ইউরো জোনে শ্বেতাঙ্গদের হার বেশি হলেও ওবামার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেননি রমনি। ফ্রান্সে ৮৮, জার্মানিতে ৯২, গ্রিসে ৮২, ইতালিতে ৮৭, আয়ারল্যান্ডে ৮৬, স্পেনে ৮২, সুইডেনে ৯০ ও যুক্তরাজ্যে ৮৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ওবামা। এশিয়াতেও ওবামা দাপট। হংকংয়ে ৮৫, ভারতে ৬৪, ইন্দোনেশিয়ায় ৮৭, জাপানে ৭৫, সিঙ্গাপুরে ৮২, তাইওয়ানে ৬৯ ও থাইল্যান্ডে ৬৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি। লাতিন আমেরিকায় বরাবরই ওবামার জয়জয়কার।

সেখানেও প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট নিয়ে ওবামাই জয়ী। মেক্সিকোতে ৮৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি। ওবামা আমলে মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা টালমাটাল ছিল। আরব বসন্ত ও অন্যান্য গণজাগরণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব থাকার পরেও ৭৯ শতাংশ ভোট নিয়ে এ অঞ্চলে জয়ী হয়েছেন ওবামা। ফিলিপাইনে ৬২ শতাংশ ভোট তার পক্ষে।

পোল্যান্ডে ওবামা ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। পর্তুগালে পেয়েছেন ৯৪ শতাংশ ভোট। রাশিয়ায় ওবামার জনপ্রিয়তা বিশ্লেষকদেরও অবাক করেছে। এখানে তার ভোট ৭৩ শতাংশ। আফ্রিকা বংশোদ্ভূত ওবামা আফ্রিকার দেশগুলোতে এগিয়ে থাকবেন এটিই স্বাভাবিক।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন তিনি। জরিপ তালিকার সর্বশেষ দেশ তুরস্কে পেয়েছেন ৭৩ শতাংশ ভোট। চীন ছাড়া কোনো দেশেই রমনি ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পাননি। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে পরিচালিত এই জরিপের ফল অবশ্য মঙ্গলবারের নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে খুব সামান্যই।

তবে বিদেশে রমনির গ্রহণযোগ্যতার এই করুণ হালে রিপালিকান শিবির কিছুটা হতাশ হবে সন্দেহ নেই। ইলেক্টোরাল ভোটের ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ আজ অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায় ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্য দিয়ে মোট ৫৩৮ জন ইলেকটোরাল কলেজ ভোটার নির্বাচিত হবেন। আর তাদের ভোটে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে কমপক্ষে ২৭০ ইলেকটোরাল ভোটের প্রয়োজন।

এবারের নির্বাচনে বারাক ওবামার রানিংমেট হিসেবে জো বাইডেন ও রমনির রানিংমেট হিসেবে পল রায়ান লড়ছেন। দ্বি-দলীয় রাজনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পর্যায়ে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও মিট রমনির মধ্যে একজনকে বেছে নেয়ার লক্ষ্যে, ৫০টি স্টেট ও ওয়াশিংটন ডিসির প্রায় ২০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রায় ১৫ কোটি মানুষ ভোট দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা যুক্তরাষ্ট্রের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণকারী ৫০টি স্টেটের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া, কানেকটিকাট, ডেলওয়ার, হাওয়াই, ইলিনয়, মেইন, মেরিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস, মিশিগান, নিউজার্সি, নিউ মেক্সিকো, নিউইয়র্ক, ওরিগন, পেনসিলভেনিয়া, রোড আইল্যান্ড, ভারমন্ট, ওয়াশিংটন, ওয়াশিংটন ডিসি, উইসকনসিন এই রাজ্যগুলোয় ডেমোক্র্যাট স্টেট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই স্টেটগুলোতে মোট ইলেকটোরাল কলেজ সংখ্যা ২৪৭। সর্বশেষ জনমত জরিপের ফলের ভিত্তিতেই এই স্টেটগুলোর মোট ২৪৭ জন ইলেকটোরাল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ওবামার পক্ষে নিরাপদ বলে অনেকটা নিশ্চিত।

অন্যদিকে আলাবামা, আলাস্কা, এ্যারিজোনা, আরাকানসাস, ক্যানসাস, কেন্টাকি, লুইজিয়ানা, মিসিসিপি, নেব্রাস্কা, নর্থ ডাকোটা, ওকলাহোমা, সাউথ ক্যারোলাইনা, সাউথ ডাকোটা, টেনেসি, টেক্সাস, উটাহ, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ও ওয়াইমিংসাহ এই রাজ্যগুলোকে রিপাবলিকান মিট রমনির জন্য নিরাপদ মনে করা হচ্ছে। এই স্টেটগুলোর মোট ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা ১৮০। এছাড়া এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কলোরাডো, ফ্লোরিডা, আইওয়া, মিনেসোটা, মিসৌরি, মন্টানা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও ও ভার্জিনিয়া এই রাজ্যগুলোকে সুইং (দোদুল্যমান) স্টেট হিসেবে প্রেসিডেন্ট ওবামা বা মিট রমনি যে কারও পক্ষে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই রাজ্যগুলোতে মোট ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা ১২৩। রাজ্যওয়ারি ইলেক্টোরাল কলেজের বিন্যাস আমেরিকার ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসি এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে থাকে।

সারা দেশে ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্য সংখ্যা ৫৩৮ জন। ইলেক্টোরাল কলেজের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করা হয়ে থাকে দলীয় ভিত্তিতে। ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে যিনি ন্যূনতম ২৭০টি পাবেন, তিনিই বেসরকারীভাবে নির্বাচিত বলে ঘোষিত হবেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর রানিং মেট আপনা-আপনিই নির্বাচিত হয়েছেন বলে বিবেচিত হবেন। তবে দুজন প্রার্থী যদি সমান সমান ইলেক্টোরাল কলেজ জেতেন তাহলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার মালিক কংগ্রেসের নিম্নœকক্ষ-প্রতিনিধি পরিষদ। রাজ্যওয়ারি ইলেক্টোরাল কলেজের বিন্যাস হচ্ছে- আলাবামা-৯, আলাস্কা-৩, আরিজোনা-১১, আরকানসাস-৬, ক্যালিফোর্নিয়া-৫৫, কলোরাডো-৯, কানেটিকাট-৭, ডেলাওয়ার-৩, ওয়াশিংটন ডিসি-৩, ফ্লোরিডা-২৯, জর্জিয়া-১৬, হাওয়াই-৪, আইডাহো-৪, ইলিনয়-২০, ইন্ডিয়ানা-১১, আইওয়া-৬, কানসাস-৬, কেন্টাকি-৮, লুইজিয়ানা-৮, মেঈন-৪, ম্যারিল্যান্ড-১০, মন্টানা-৩, নেব্রাস্কা-৫, নেভাডা-৬, নিউ হ্যাম্পশায়ার-৪, নিউজার্সি-১৪, নিউ মেক্সিকো-৫, নিউইয়র্ক-২৯, নর্থ ক্যারোলাইনা-১৫, নর্থ ডাকোটা-৩, ওহাইও-১৮, ওকলাহোমা-৭, ওরিগন-৭, প্যানসিলভেনিয়া-২০, রোড আইল্যান্ড-৪, সাউথ ক্যারোলিনা-৯, সাউথ ডাকোটা-৩, টেনেসি-১১, টেক্সাস-৩৮, উটাই-৬, ভারমন্ট-৩, ভার্জিনিয়া-১৩, ম্যাসাচুসেটস-১১, মিশিগান-১৬, মিনেসোটা-১০, মিসিসিপি-৬, মিসৌরি-১০, ওয়াশিংটন স্টেট-১২, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া-৫, উইসকনসিন-১০ এবং ওয়ায়োমিং-৩।

জনসংখ্যার ওঠানামার সঙ্গে এই বিন্যাস পরিবর্তন হয়, কিন্তু মূল সংখ্যা ৫৩৮-এ স্থির থাকে। ইলেক্টোরাল কলেজে রানিংমেট মার্কিন নির্বাচনের একটি বিষয় অনেক সময় আলোচনায় আসে না। তা হলো, ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর রানিং মেট বলা হয়। রানিং মেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরাই ঠিক করে থাকেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে যিনি ন্যূনতম ২৭০টি পাবেন, তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর রানিং মেট আপনা-আপনিই নির্বাচিত হয়েছেন বলে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ যে দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় সে দল থেকেই ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়। এবার রিপাবলিকান দলের প্রার্থী মিট রমনির রানিংমেট হলেন উইসকনসিন থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য ও প্রতিনিধি পরিষদের বাজেট কমিটির চেয়ারম্যান ৪২ বছর বয়সী পল রায়ান। অন্য দিকে ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বারাক ওবামার রানিংমেট হলেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিনেট ফরেন রিলেশনস এন্ড জুডিশিয়ারি কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান ৬৯ বছর বয়সী জো বাইডেন। জর্জ ওয়াশিংটন থেকে বারাক ওবামা জর্জ ওয়াশিংটন থেকে প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা আমেরিকার প্রায় সোয়া দুইশ’ বছরে ৫৫টি নির্বাচনে ৪৪ জন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

এদের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। আবার কেউ কেউ এক মেয়াদকালও পূর্ণ করতে পারেননি। এবার আমেরিকানরা তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে যাচ্ছেন ৬ নভেম্বর মঙ্গলবার। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই ব্যক্তি হবেন আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। প্রতি চার বছর অন্তর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রথম সোমবারের পর মঙ্গলবার প্রথা মাফিক এই নির্বাচন হয়ে থাকে।

আগামী ৬ নভেম্বরের নির্বাচনে ভোটাররা প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি গোটা দেশজুড়ে ৪৩৫ জন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ এবং ইউএস সিনেটের ১০০ সদস্যের মধ্যে ৩৩ জনকে নির্বাচিত করবেন। এ নির্বাচনে আমেরিকার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী সিনেটর বারাক হোসেন ওবামা ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী মিট রমনি ছাড়াও প্রেসিডেন্ট পদে দলীয়ভাবে লড়ছেন আরও তিনজন প্রার্থী। এরা হলেন লিবারেটেরিয়ান দল থেকে নিউ মেক্সিকো রাজ্যের গ্যারি জনসন। তারা রানিংমেট হচ্ছেন জেমস গ্যারি। গ্রিন পার্টির মহিলা প্রার্থী হচ্ছেন ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের জিল স্টেইন।

চেরি হনকালাকে রানিংমেট হিসেবে নিয়েছেন তিনি। পঞ্চম প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলেন কনস্টিটিউশন দলীয় ভার্জিনিয়ার ভিজিল গুড, তার রানিংমেট জিম ক্লাইমার। এরই মধ্যে ব্যালটে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে অবশ্যই জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক এবং কমপক্ষে ১৪ বছর আমেরিকায় বসবাসের প্রমাণ থাকতে হবে। বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৩৫ বছর।

সাংবিধানিকভাবে আমেরিকান সরকার নির্বাহী, আইন ও বিচার এই তিন শাখায় বিভক্ত। পারস্পরিক ভারসাম্য রক্ষাকারী এই তিনটি বিভাগ এমনভাবে গঠিত যে, এক বিভাগ অন্য বিভাগের ওপর প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করে থাকে যাতে, কোনো বিভাগ তার এখতিয়ারবহির্ভূত কোনো কর্মকাণ্ডে ব্যাপৃত না হয়। সরকারের নির্বাহী বিভাগ প্রেসিডেন্ট কর্তৃক পরিচালিত হলেও তা কখনও খুব দুর্বল বা শক্তিশালী নয়। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাও সাংবিধানিকভাবে সীমিত করে দেয়া আছে। সাংবিধানিকভাবে একে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স প্রক্রিয়া বলে।

সরকারের পাঁচটি বিষয়ে প্রেসিডেন্টের সর্বময় ক্ষমতা থাকলেও ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ প্রক্রিয়ায় আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক তা নিয়ন্ত্রিত। সুতরাং ইচ্ছা করলেই প্রেসিডেন্ট যা খুশি তা করতে পারেন না। ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রেসিডেন্ট কোনো আইন ভঙ্গ বা অপকর্ম করলে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস তার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট আনতে পারে। হাউস অব কংগ্রেসে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করে পদচ্যুত করা যাবে। প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসন ও বিল ক্লিনটনকে ‘ইমপিচড’ করা হলেও তাদের কেউই কার্যত পদচ্যুত হননি।

অবশ্য প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ইমপিচমেন্টের মুখে পদত্যাগ করেন। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ও সীমাবদ্ধতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী প্রেসিডেন্ট সংবিধান ও কংগ্রেস কর্তৃক পাসকৃত আইন প্রয়োগ এবং সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, কেবিনেট মন্ত্রীসহ সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। প্রধান আইন প্রণেতা হিসেবে প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসে পাসকৃত বিলে যেমন ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা রাখেন তেমনি বিল পাস করার ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে প্রভাবিত করতে পারেন। কিন্তু দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে আবার কংগ্রেস তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে। প্রেসিডেন্ট আমেরিকার প্রধান ডিপ্লোমেট এবং পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারক, বৈদেশিক চুক্তির মধ্যস্থতাকারী।

কংগ্রেসের অনুমোদন সাপেক্ষে বিদেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের অধিকারী তিনি। প্রেসিডেন্ট আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স ও মেরিনের প্রধান-কমান্ডার ইন চিফ। তিনি উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদান করেন। তিনি দেশের ভেতরে ও বাইরে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাতে পারলেও আন্তর্জাতিক কোনো সংঘর্ষের ক্ষেত্রে কংগ্রেস কর্তৃক আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা ব্যতিরেকে ৯০ দিনের অধিক তা বহাল রাখতে পারবেন না। চিফ অব স্টেট হিসেবে প্রেসিডেন্ট দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ধাপ মূলত চারটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দলীয়ভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্রের দলীয় সমর্থকরাই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন ভোটের মাধ্যমে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে হলে তাই অবশ্যই প্রার্থীকে প্রথমে দলীয় মনোনয়ন লাভ করতে হয়। এই পর্যায়ে একই দল থেকে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনের বছরের শুরুতেই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে তাদের স্ব-স্ব প্রচারণা ও ফান্ড রেইজিং শুরু করেন এবং অঙ্গরাজ্যের দলীয় রেজিস্টার্ড ভোটার প্রাইমারি ইলেকশনের মাধ্যমে একজন প্রার্থীকে বাছাই করেন। পরবর্তীতে সিংহভাগ রাজ্য থেকে তাকে জিতে আসতে হয়।

নভেম্বরের নির্বাচনের আগেই গ্রীষ্মের কোনো এক সময়ে অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে যোগদানকারী দলীয় প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ‘ন্যাশনাল কনভেনশন’-এ প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। দ্বিতীয় ধাপ দলীয় কনভেনশন প্রার্থী চূড়ান্ত করেন। এই কনভেনশন থেকে দলীয় প্রতিনিধিরা নির্বাচনী প্রচারণা এবং এজেন্ডার বিষয়বস্তু, যেমন—শিক্ষা, চাকরি, স্বাস্থ্যসেবা, ওয়েলফেয়ার, ট্যাক্স, অপরাধ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত ইস্যুগুলোও নির্ধারণ করে থাকে। তৃতীয় ধাপ, গণপ্রচারণা শুরু হয় কনভেনশনের পরদিন থেকে এবং নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত প্রার্থীরা দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটে বেড়ান। নির্বাচনী সভায় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের দলীয় কর্মসূচির প্রতি আনুগত্য লাভের চেষ্টা করেন।

প্রধান দুই দলের প্রার্থীরা কয়েক দফা টিভি বিতর্কে অংশ নেন। দলীয়ভাবে ফান্ড রেইজ করে থাকেন। সংগৃহীত এই অর্থকে ‘সফট মানি’ বলা হয়। চতুর্থ ধাপে নির্বাচনের দিন জনগণ সরাসরি প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেন না। ভোটাররা প্রথমে ইলেক্টোরাল কলেজকে ভোট দেন।

পরে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটাররা তাদের ভোট প্রয়োগ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মাঝে বিতর্ক প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মাঝে প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় ইলিনর রাজ্যে ১৮৫৮ সালে আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ও স্টিফেন ডগলাসের মাঝে। শিকাগোর স্থানীয় একটি পার্কে বৃহদকার পাথরের উপর দাঁড়িয়ে ১০ হাজার মানুষের সামনে বিতর্কে অবতীর্ণ হন তারা। সেবার হারলেও পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হন আব্রাহাম লিংকন। এরপর থেকেই প্রতিটি নির্বাচনে প্রধান দু’প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী পারস্পরিক বিতর্কে অবতীর্ণ হয়ে নিজেদের যোগ্যতার জানান দেন দেশবাসীর মাঝে।

বিতর্কের এ ধারাবাহিকতা এখন স্থান পেয়েছে আধুনিক তথ্যপ্রবাহে। বিতর্কিত ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি আমেরিকানরা কি আসলেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেন? এক কথায় বলতে গেলে না। ভোটাররা আপাতদৃষ্টিতে যদি মনে করে থাকেন যে, তারা তাদের পছন্দনীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন আসলে তা ঠিক নয়। তারা ভোট দেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রতি প্রতিশ্রুত ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের। ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি সত্যিকারার্থেই একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা সাধারণ ভোটারদের কাছে দুর্বোধ্য।

নির্বাচনের ব্যালট নিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে ভোটাররা প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পরিবর্তে ইলেক্টোরাল কলেজের একদল লোককে বেছে নিচ্ছে তাদের প্রদত্ত ভোটের মাধ্যমে। আমেরিকায় মোট ইলেক্টোরেটরের সংখ্যা ৫৩৫। তার মধ্যে ৫০টি অঙ্গরাজ্য থেকে মোট ৫৩৫ জন এবং ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ৩ জন। প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা সমান এবং নির্দিষ্ট সিনেট সদস্য সংখ্যার সমান ইলেক্টোরেট বাছাই করা হয়। উদাহরণস্বরূপ নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে নির্দিষ্ট ২ জন সিনেটর এবং ২৭ জন রিপ্রেজেনটেটিভ রয়েছে, সে হিসাব অনুযায়ী নিউইয়র্কের ইলেক্টোরাল ভোটারের সংখ্যা ২৯ জন।

মোট ৫৩৮ জন ইলেক্টোরালের মধ্যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যিনি ২৭০ ভোট পাবেন, তিনিই বিজয়ী হবেন। প্রায় দুইশ’ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই পদ্ধতি চলে আসছে। এ নিয়ে অনেক বিতর্কও হচ্ছে। কারও কারও মতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য এটি একটি বাজে পদ্ধতি। এই পদ্ধতির কারণে অনেক ভোটারই ভোট প্রয়োগে উত্সাহ হারিয়ে ফেলেন।

৪৮টি অঙ্গরাজ্যে ইলেক্টোরাল কলেজ একই পদ্ধতিতে কাজ করলেও মেইন ও নেব্রাক্সা রাজ্যে এই প্রক্রিয়া ভিন্নতর। সিংহভাগ আমেরিকান এই পদ্ধতি পছন্দ না করলেও বিশালকায় এই দেশের কেন্দ্রীয় সরকারপ্রধান অর্থাত্ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে শুরুতেই ঝামেলা দেখা দেয়। আমেরিকার স্থপতি ও প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন তত্কালীন আমেরিকার মাত্র ১৩টি ছোট-বড়, দুর্বল ও শক্তিশালী রাজ্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি বেছে নিতে বাধ্য হন। এ ব্যাপারে সাংবিধানিক কনভেনশনে প্রথমে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ, রাজ্যসভার সদস্য এবং জনগণের সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তিনটি প্রস্তাব উত্থাপিত হলেও শেষ পর্যন্ত তা নাকচ হয়ে যায়। অবশেষে সাংবিধানিক কনভেনশনের প্রস্তাবে ইলেক্টোরাল কলেজ তথা পরোক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার পদ্ধতি স্বীকৃত হয়।

রোমান ক্যাথলিক চার্চে ‘কলেজ অব কার্ডিনালস কর্তৃক পোপ নির্বাচনের আদলেই মূলত ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি উদ্ভাবন। পরে বিভিন্ন সময়ই এই পদ্ধতিকে পরিবর্ধন ও পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রতিটি রাজ্য নিজস্ব সংবিধান মোতাবেক ইলেক্টোরাল কলেজ নির্বাচিত করে। কোনো কংগ্রেস সদস্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তা ইলেক্টোরেট হতে পারেন না। রাজনৈতিক দলগুলো এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিটি রাজ্যের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর তাদের নিজ দলের প্রতি অনুগত ব্যক্তিদের একটি করে তালিকা পাঠায় ইলেক্টোরাল কলেজের জন্য।

দলগুলোর জাতীয় কনভেনশনেই সাধারণত তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়। ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি না হলে আমেরিকার ৫০টি রাজ্যের মধ্যে মাত্র ১০টি রাজ্যের প্রধান শহরগুলোর পপুলার ভোটেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় বুধবারের পরের সোমবার প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীতে ইলেকটররা মিলিত হয়ে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে ভোট দেন। সেখান থেকে তাদের প্রদানকৃত ভোট সিলগালা করে সিনেটের প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হয়। পরবর্তী বছরের ৬ জানুয়ারি ইউএস সিনেট ও কংগ্রেসের উভয় হাউসের সম্মিলিত অধিবেশনে ৫০টি রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করে বিজয়ী প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করা হয়।

মোট ইলেক্টোরাল ভোট ৫৩৮-এর মধ্যে যিনি অর্ধেকের চেয়ে একটি ভোট বেশি অর্থাত্ ২৭০টি ভোট পাবেন, তিনিই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রেসিডেন্ট হবেন। কখনও কোনো প্রার্থী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সে ক্ষেত্রে প্রতি রাজ্য থেকে একজন করে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ শীর্ষ তিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে একজনকে নির্বাচিত করবেন এবং এ ক্ষেত্রেও সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের সমর্থন প্রয়োজন। ১৮২৪, ১৯৪৮ ও ১৯৬৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ না করায় তা হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে যায়। ভাইস প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে ইউএস সিনেট প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে একজনকে নির্বাচিত করেন। এখানে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট একই দল থেকে নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

এটি এক ধরনের প্যাকেজ ডিল। ২০ জানুয়ারি বিকালে প্রথা অনুযায়ী নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট প্রায় ২০ হাজার অতিথির উপস্থিতিতে এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শপথ গ্রহণ করেন। পপুলার ভোট নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটার প্রদত্ত গণনাকৃত মোট ভোটকেই পপুলার ভোট বলা হয়। যে অঙ্গরাজ্যে যে দলের প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পান, সে রাজ্যে ইলেকটরেটরা ওই দলের হিসেবে জয়ী হন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, স্ব স্ব প্রার্থীর প্রতিশ্রুত ইলেকটররা ইচ্ছে করলে তাদের প্রার্থীকে ভোট নাও দিতে পারেন।

যদিও সচরাচর এ ধরনের ঘটনা ঘটে না। তারপরও ১৮৭৬-এর নির্বাচনে রাদারফোর্ড হেইস এবং ১৮৮৮-এর নির্বাচনে রেঞ্জামিন হ্যারিসন কম পপুলার ভোট পেয়ে এভাবে নির্বাচিত হন। সংখ্যাধিক্য পপুলার ভোট পেয়েও নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হবে। অর্থাত্ ৫৩৮টি ভোটের মধ্যে ২৭০টি ভোট পেতে হবে। কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ পপুলার ভোট পেলেও যদি ইলেক্টোরাল ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হয়, তাহলে সে প্রার্থী হেরে যাবেন।

২০০০ সালের নির্বাচনে জর্জ বুশের চেয়ে ৫ লাখ পপুলার ভোট বেশি পেয়েও আলগোর ইলেক্টোরাল ভোটে হেরে যাওয়ায় প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে রাজনৈতিক দলের কোনো উল্লেখ নেই। আমেরিকার প্রধান রাজনৈতিক দল দুটি—রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। এছাড়া আমেরিকান ইনডিপেনডেন্ট পার্টি, গ্রিন পার্টি, হ্যারিটেজ পার্টি, রিফর্ম পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টিসহ নামসর্বস্ব অনেক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব রয়েছে। আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।

১৮৩২ সালে বাল্টিমোরে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান পার্টি হিসেবে দলটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। এর আগে ফেডারালিস্ট পার্টি অরাজনৈতিক দল হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। জন অ্যাডমস ফেডারালিস্ট পার্টির প্রথম প্রেসিডেন্ট। রিপাবলিকান পার্টির গোড়াপত্তন ১৮৫৬ সালে। রিপাবলিকান দলীয় প্রথম প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলেন জন সি ফ্রিমন্ট।

রিপাবলিকান পার্টি জর্জ ডব্লিউ বুশের শাসনকালসহ মোট ৮৮ বছর হোয়াইট হাউস দখলে রেখেছে। প্রেসিডেন্টের বেতন-ভাতা প্রেসিডেন্টের বেতন বার্ষিক ৪ লাখ ডলার ও অতিরিক্ত ভাতা ৬০ হাজার ডলার (ট্যাক্স কর্তনযোগ্য), ভ্রমণ ও আপ্যায়ন ভাতা ১ লাখ ডলার (ট্যাক্স ফ্রি) পেয়ে থাকেন। হোয়াইট হাউসের পশ্চিমাংশে ডিম্বাকৃতির কক্ষটি হচ্ছে ওভাল অফিস। ১৯০৯ সালে প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হাওয়ার্ডের সময় থেকে ওভাল অফিস প্রেসিডেন্টের প্রধান সরকারি দফতর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শতাধিক বিভাগে সামরিক ও বেসামরিক মিলে প্রায় ৩০ লাখ কর্মকর্তা প্রেসিডেন্টের অধীনে কর্মরত।

প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউস আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হচ্ছে হোয়াইট হাউস। প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সরকারি বাসভবন ছিল পেনসিলভানিয়ায়। জর্জ ওয়াশিংটনই প্রথম প্রেসিডেন্টের জন্য স্থায়ী একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন এবং ১৭৯০ সালে হোয়াইট হাউস নামে এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ওয়াশিংটন ডিসির পটোম্যাক নদীর ১০ বর্গমাইলের মধ্যে অবস্থিত এ ভবনে ১৮০০ সালে আমেরিকার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস এবং তার স্ত্রী অ্যাবিগেল অ্যাডামস প্রথম বসবাস শুরু করেন। হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন ক্ষমতাসীন অবস্থায় তিনজন প্রেসিডেন্ট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

তার মধ্যে প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের বিয়ের অনুষ্ঠান শুধু হোয়াইট হাউসে হয়। দু’বার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পায় হোয়াইট হাউস। সময়ের ব্যবধানে হোয়াইট হাউসের আঙ্গিকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ষষ্ঠতলা বিশিষ্ট হোয়াইট হাউসে মোট ১৩২টি কক্ষ রয়েছে। হোয়াইট হাউসে ১৮৪৫ সালে ক্যামেরায় প্রথম ছবি তোলা হয় প্রেসিডেন্ট জেমস পুলকের।

হোয়াইট হাউস আঙিনায় প্রথম মোটরযানে আরোহণ করেন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট (১৯০১-১৯০৯)। প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট (১৯৩৩-১৯৪৫) প্রথম উড়োজাহাজে চড়ে পানাম সফরে যান। বি:দ্র: দৈনিক সমকাল, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক আমারদেশ এবং দৈনিক জনকন্ঠ অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদনটি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।