আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“খনা”-এক কিংবদন্তী : নারী -পুরুষ ক্ষমতার দ্বন্ধ ও স্বরূপ বিশ্লেষণ

লেখাটি শুরু করেছিলাম অনেক আগে। ব্যস্ততার কারণে শেষ করা হয়নি। অনেকটা জোড় করেই শেষ করলাম। সুদীর্ঘ রচনা। তারপরেও বলব, ধর্য্য নিয়ে পড়লে আশা করি খুব বেশি খারাপ লাগবে না ।

দ্বিমত থাকলে জানাতে পারেন, যুক্তির আলোকে ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করব। “খনা”-এক কিংবদন্তী প্রারম্ভিক কথন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সভ্যতা সৃষ্টির পেছনে নারীর ভূমিকাকে স্বীকার করেন নি। তিনি বলেন, “ সাহিত, কলায়,বিজ্ঞানে, দর্শনে, ধর্মে বিধি ব্যবস্থায় সবকিছু মিলে আমরা যাকে সভ্যতা বলি সে হল পুরুষের সৃষ্টি”। আবার ভলতেয়ার নারীর মননশীলতা, বুদ্ধিমত্তা, শক্তিমত্তাকে স্বীকার করলেও প্রবলভাবে অস্বীকার করেছেণ নারীর উদ্ভাবনী শক্তিকে। তিনি বলেন, “ ইতিহাসে জ্ঞানবতী নারী খুজঁলেই পাওয়া যাবে, এমনকি পাওয়া যাবে নারী যোদ্ধার অস্তিত্ব, কিন্তু কোথাও নারী উদ্ভাবক পাওয়া যাবে না”।

স্বীকার করতে হবে যে, ভলতেয়ার আর কবি গুরু উভয়েই ইতিহাস পর্যালোচনার এই বিষয়ে অন্তত ভ্রান্ত ছিলেন। সভ্যতার উষালগ্ন থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে নারীর অবদান সত্য হলেও স্বীকৃতি লাভ করেনি। ইতিহাসবেত্তারাই নারীর অবদানকে ইতিহাসে স্থান দেননি। পুরুষের জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা, আবিস্কার যেভারে লেখা হয়েছে, নারীর অবদানকে তেমনিভাবে পুরুষতন্ত্র এড়িয়ে গেছে। তারপরেও খনার মত অনেক নারী মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে বহুকাল ধরে ঠিকে আছে পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে।

“খনা”-এক কিংবদন্তী শুভক্ষণে জন্ম বলেই লঙ্কা দ্বীপে তাকে সবাই খনা নামে ডাকত। আবার কারো মতো, জিহ্বা হারিয়ে সে ‘খোনা’। সেই থেকে খনা। তবে তার অন্য নাম লীলাবতী। কেউ বলেন খনা লঙ্কা দ্বীপের ভাগ্যবিড়ম্বিত রাজকন্যা রাক্ষসের কবলে পড়ে পিতৃ-মাতৃহীন হয়ে দ্বীপবাসীর কাছে প্রতিপালিত।

আবার কেউ বলেন, খনা অন্য দ্বীপের রাজকন্যা রাক্ষসের আক্রমণে অনাথ হওয়ায় লঙ্কার রাক্ষসেরাই আমাকে লালন করেন। আবার অন্য আরেক পণ্ডিতের মতে রাজতরঙ্গিনীতে বলা আছে “বংগ-রাক্ষসৈঃ”। ফলে বাংলাদেশকেও রাক্ষসের দেশ আখ্যা দেয়া হয়েছিল। ফলে খনা বঙ্গীয় কোনো দ্বীপবাসীনিও হতে পারে। আরেক পণ্ডিতের মতে, খনার জন্ম পূর্ববঙ্গে।

খনা নিয়ে লিখিত কোনো ইতিহাস না থাকায় সে কোথা থেকে এসেছে তা নিশ্চিতরূপে জানা নেই । খনাকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই, শেষ নেই ভিন্ন মতেরও। প্রচলিত আছে, বিক্রমাদিত্যের রাজসভায় বরাহ মিহির নামে যে জ্যোতিষী ছিলেন তারই পুত্রবধূ খনা। আবার কেউ কেউ বলেন, খনা এসেছিল বাংলারই কোনো অঞ্চল থেকে তারপর গিয়েছিল উজ্জয়িনীতে বিক্রমাদিত্যের সভায়। রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে রাজসভার দশম রতœ নিয়োগ দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন বলে জানা যায়।

রাজসভায় স্থান লাভের পর খনা তার অসাধারন বুদ্ধিমত্তা ও কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞান দিয়ে রাজ্যের কৃষি ও জ্যোতিষী শাস্ত্রের মধ্যে সম্বনয় ঘটান এবং ব্যপক সফলতা লাভ করেন। এই সাফল্য পুরুষশাসিত সমাজ , পুরুষতন্ত্র সহজভাবে মেনে নেয় নি এবং খনার অসাধারণ মেধা, বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান সবই পুরুষতন্ত্রের কাছে পরাজিত হয়। ঐতিহাসিক “খনা” চরিত্র -অস্তিত্বের উৎস অনুসন্ধান কোলকাতা শহরের ৪০ কি.মি. উত্তরপূর্বে বারাসাত নগরীর কাছে বীরচম্পা নামক জায়গায়, মহাসড়কের উভয়পার্শ্বে দেখা যাবে প্রাচীন এক ভগ্নাবশেষ। দক্ষিণদিকে আছে প্রাচীন দূর্গ ও প্রতিরক্ষাবেষ্ঠনি এর নিদর্শন। ধারনা করা হয় এখানেই ছিল রাজা চন্দ্রকেতুর সাম্রাজ্য।

কৃষিকাজে বা অনান্য খননকাজে মাটির নীচ থেকে বেরিয়ে এসেছে নানান প্রতœতাত্তিক নিদশর্ন : মুদ্রা. পুতি, প্রস্তর,পোড়ামাটির ভাস্কর্য, গজদন্ত ইত্যাদি। এসকল প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন বিশ্লেষণে দেখা যায় এগুলো খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকের এবং সেই সাথে এই স্থানেই রাজা চন্দ্রকেতু ও খনার অস্তিত্ব ছিল বলে প্রতœতাত্ত্বিকগন মনে করেন। মহাসড়কের উত্তরপার্শ্বে আছে সমাধিফলক। বহুভুজাকৃতির এই স্থাপনাটি খনা-মিহিরের মূড়া নামে পরিচিত। খনা নাটকের কাহিনী সংক্ষেপ অনুমানিক ৫০০ খ্রীষ্টাব্দের কথা।

রাজা হর্ষ বিক্রমাদিত্যের রাজপ্রসাদের প্রধান জ্যোতির্বিদ বরাহমিহির পুত্রের জন্ম কোষ্টি বিচার করে দেখতে পান ম্ত্র এক বছরের মধ্যেই তার শিশুপুত্র মারা যাবে। পিতা হয়ে পুত্রের মৃত্যু অসহায়ের মত অবলোকন করতে হবে আর এই অশুভ দিনগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে এই ভেবে বরাহমিহির পুত্রকে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দেন। অনেক দূরের রাজ্যে এক সম্প্রদায় শিশুটিকে উদ্ধার করে এবং সে সেখানেই বড় হতে থাকে। ১৬ বছর বয়সে সে ঐ রাজ্যের এক মেয়েকে বিয়ে করে । মেয়েটি জ্যোতির্জ্ঞানে পারদর্শী ছিল এবং সে তার স্বামীকে নিয়ে বরাহমিহিরের কাছে গিয়ে সম্পূর্ণ ঘঠনা ব্যক্ত করে।

বরাহ স্বীয়পুত্রকে ফিরে পেয়ে খুবই আনন্দিত হন। জ্যেতিষশাস্ত্র ও কৃষিশাস্ত্রে অগাধ জ্ঞানের অধিকারিনী লীলাবতী ও মিহির উভয়েই বিক্রমাদিত্যের রাজসভায় স্থান রাভ করে। লীলাবতীর জ্ঞানে সারা রাজ্য ও রাজপ্রাসাদ মুগ্ধ। পন্ডিত বরাহের খবর আর কেউ রাখে না। এমনকি বরাহ নিজেও জনসমক্ষে এক বিতর্কে পুত্রবধূর কাছে পরাজিত হন।

ঈর্ষাপরায়ন বরাহ তাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পুত্রকেই লীরাবতীর জিহবা কাটার আদেশ দেন, স্তব্দ করে দিত চান জ্ঞানী, সত্যবাদী পুত্রবধূর কন্ঠ। এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হলে লীলাবতী হন খনা, উড়িয়া ভাষায় যার অর্থ বোবা। খনার আবির্ভাবকালিন সময়ে রাজ্যের সামাজিক অবস্থা বিশ্লেষণ ইছামতি আর ভাগিরথী বিধৌত প্রাচীন ভূমি গংগারিদই। সেই ভূমে প্রাকৃত, অনার্য কৃষককুল অধ্যুষিত বালহন্ডা অঞ্চল জুড়ে দেউলনগর, বেঁড়াচাপা, জীবনপুর, দেগঙ্গা, পৃথিবীগুনা, ঝিকরা, হাড়োয়া এমন সব জনপদে রাজা ধর্মকেতুর শাসন। উত্তরে স্রোতস্বিনীর উর্বর বিস্তার আর পশ্চিম ঘিরে বিদ্যাধরী নদীর কোমল স্পর্শ।

নদী-জল আর সরল কর্ষক মানুষ; তাদের জীবন, সংগ্রাম। নদীস্নাত পাললিক ভূগোলে তাদের হলকর্ষণ ফলায় ধান, আখ, কার্পাস, কাউন, হলুদ, পান, কলা আরো কত কি! যদিও সময়টা আজকের তুল্য নয়- প্রাচীনতর প্রায় চৌদ্দ কি পনেরো শত বৎসর। লোকায়ত জ্ঞান, চার্বাক দর্শন, আচার, পার্বন। সুর তাল লয়ে বৃষ্টির ছন্দ আর নদীর জলের তাল নিয়ে মানুষের জীবন। তবে দ্বন্দ আছে, আছে ঈর্ষা, ক্ষোভ, দ্বেষ।

প্রাকৃত লোকাচার আর ব্রাহ্মণ্য আচার সর্বস্বতার বিপ্রতীপ অবস্থান। তবু মানুষের জীবনের গান কোথাও আটকা পড়ে না কোন সমাজে কি কোন অন্য কালে। উপরের বর্ণনা থেকে ধারনা করা যায় তখন মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বাস করত তবে রাজার শাসন ছিল। বাস্তবিকপক্ষে, তখনকার রাজাদের সাথে প্রজাদের কতটুকু উঠাবসা ছিল সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ হলেও খনা নাটকে রাজা চন্দ্র্রকেতু ও রানীকে সাধারন প্রজাদের সাথে কথোপকথনে দেখা গেছে। রাজা এবং রানী উভয়েই প্রজাহৈতষী ছিলেন নিঃসন্দেহে।

রাজ্যের অধিকাংশই কৃষিনির্ভর জীবনযাপন করত। তখনকার সমাজের শ্রেণীবিভক্তি নাটকে ফুট উঠেছে তবে শ্রেণী বিভক্ত সমাজের কুৎসিত রূপটি প্রকট ছিল না। এককথায় বলতে গেলে প্রকৃতির রাজ্য আর রাজার শাসন, চার্বাক দর্শন, লোকায়ত জ্ঞান এসব নিয়ে মানুষ বেশ সুখীই ছিল। “খনা” নাটকে বর্ণিত নারী -পুরুষ ক্ষমতার দ্বন্ধ ও স্বরূপ বিশ্লেষণ বহুকাল আগে থেকেই সমাজে নারী-পুরুষ ক্ষমতার দ্বন্ধ ছিল এবং বর্তমান শ্রেণীবিভক্ত সমাজে এ বিষয়টি প্রকট। বলা যেতে পারে, যখন থেকেই নারী-পুরুষ প্রবৃত্তির তাগিদে কামে লিপ্ত হয়, তখন থেকেই নারী ও পুরুষের মধ্যকার ক্ষমতার দ্বন্ধ তৈরি হয়।

লিঙ্গ থেকে এ ক্ষমতার রাজনীতির সূত্রপাত বলেই একে লৈঙ্গিক রাজনীতি বলে। খনা নাটকেও নারী-পুরুষ ক্ষমতার দ্বন্ধের বিষয়টি প্রাধান্য লাভ করেছে এবং সুস্পষ্ঠ প্রতিয়মান হয়েছে। পুরুষতন্ত্র নারীর মেধাকে মূল্যায়ন ও সম্মান কোনটিই করেনি বরং নিজের প্রতিদ্বন্ধি ভেবে ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে। জ্যোতিষবিদ্যা আর কৃষকের কাছ থেকে শেখা কৃষিবিদ্যা দুটোতেই লীলাবতীর জ্ঞান ছিল ঈর্ষনীয়। অন্যদিকে বরাহমিহির স্বীয় পুত্রবধূর জ্যোতিষবিদ্যা জ্ঞান দেখে হিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেন এবং নিজের একচছত্র আধিপত্য, সুনাম ও ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য লীলাবতীকে ঘরের কাজে মনোনিবেশের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগি হন।

কিন্তু সববাধা পেরিয়ে ও যখন স্পষ্ঠবাদী লীলাবতী এগিয়ে যাছ্ছিল, তখনই বরাহ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেন। নিজের সন্তানের জন্মকোষ্ঠি গণনায় ভুলকারী বরাহ বেশ কয়েকবার পুত্রবধূর জ্ঞান-দক্ষতার সামনে পরাজিত হন। শুধু তাই নয়, রাজপ্রাসাদে লীলাবতীর অনন্য কদর, নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি রাজ্যের যেকোন বিষয়ে লীলাবতীর মতপ্রাধান্য কেবলমাত্র বরাহকে নয় বরং অন্য সকল রাজসভাসদদের ঈর্ষার কারন হয়ে দাড়ায়। দশম শতাব্দীতে রচিত আদি বাংলা কাব্য চর্যাপদে মেয়েদের নানা রকম কাজের বিষয়টি উঠে এসেছে। তারা নৌকা বাইত, মদ চোয়ানোতে হাত লাগাত, হাতি পোষত, আরও অনেক কাজ করত।

সেই থেকে আজ কোনকালেই পুরুষ নারীর শ্রম ও মেধা কোনটিকেই মূল্যায়ন করে নি। বাঙালীর আদি ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে নীহারন্জন রায় তৎকালীন নারীর আদর্শ রূপ বর্ণনা করেছেন, “ লক্ষèীর মত কল্যানী, বসুধার মত সবংসহা, স্বামী ব্রতনীয়তাই ছিল নারীর চিত্তাদর্শ। ”এই চিত্তাদর্শ নারীকে স্বামীর ইচ্ছারূপিনী বানিয়েছে। নারী হয়ে উঠেছে পুরুষের ইচ্ছার পুতুল। মিহির, লীলাবতীর মেধাকে সম্মান করেছে ঠিক কিন্তু পুরুষতন্ত্রের জাল ছিন্ন করে লীলাবতীকে মুক্ত করতে পারে নি।

যদি তর্কের প্রাসঙ্গিকতায় ধরেও নি যে মিহির পিতৃস্নেহের কাছে হার মেনেছে, তবু ও মেনে নিতে হবে যে এ পরাজয় পুরুষতন্ত্রের কাছে পরাজয়। এটি পুরুষতন্ত্রের কাছে নারী-পুরুষ (মিহির-লীলাবতী) উভয়ের এবং বিশেষত ভালবাসা, সত্যবাদিতা, ন্যয়নিষ্ঠতা এবং মেধার পরাজয়। “খনা” নাটকে তৎকালিন সমাজের শ্রেণীসংগ্রাম আদিম সাম্যবাদী সমাজের অস্তিত্ব কতটুকু সত্য সেই বিতর্কে যাব না তবে একথা স্বীকার করতে হবে যে, সাম্যবাদী সমাজের (সাম্যবাদী সমাজের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়ে) ভাঙনের পর থেকেই সমাজ শ্রেণীবিভক্ত হয়ে পড়ে এবং শ্রেণীবিভক্ত সমাজ অনেকগুলো শ্রেণীসংগ্রাম পার করে এসছে। খনা নাটকে যেহেতেু রাজা ধর্মকেতুর শাসন দেখা গেছে, তাই নিঃসন্দেহে রাজা-প্রজা শ্রেণীতো ছিলই। অর্থাৎ একটি সামন্ত সমাজ ব্যাবস্থা দেখা গেছে যেখানে ভূ-স্বামী এবং ভূমিদাস এ দুটো শ্রেণী লক্ষণীয়।

রাজা ধর্মকেতুর রাজ্যে মানুষের সহজ সরল ও সুখী জীবনের রুপ ফুটে উঠেছে খনা নাটকে। কিন্তু গভীর পর্যবেক্ষণে প্রকৃতির কাছে মানুষের অসহায়ত্বের বিষয়টিও ধরা পড়ে। শ্রেণীবিভক্ত সমাজে ধনী নারী যে গরীব পুরুষের তুলনায় অধিক ক্ষমতাবান তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু একই শ্রেণীতে অবস্থানকারী একটি একজন নারী একজন পুরুষের তুলনায় নানা কারণে পিছিঁয়ে পড়ে যে বিষয়টি নাটকের শুরুতে কিছুটা অসত্য মনে হলেও নাটকের পটপরিবর্তনে তা সুস্পষ্ঠ হয়ে উঠে। তাছাড়া এটাও তো সত্য যে, ব্যক্তির শ্রেণী ও বর্ণ পরিচয় মিটিয়ে ফেলা গেলেও নারী Ñ পুরুষের মধ্যকার জৈবিক ব্যবধানটা থেকেই যায়।

এ বিভাজনের সুযোগ নেয় পুরুষতন্ত্র আর বাড়িয়ে তোলে শ্রেণী বৈষম্য। খনা নাটকে লীলাবতী রাজ্যের সাধারন মানুষ ও কৃষকক’লের প্রতিনিধিত্ব করেছে, অন্যদিকে বরাহ মিহিরসহ অন্য রাজসভাসদগণ শাসকশ্রেণী ও পুরুষতন্ত্রের প্রতিনিধিত্বকারী। মিহিরকে দিয়ে লীলাবতীর জিহবা কাটার বিষয়কে কেন্দ্র করে রাজ্যের কৃষকক’লকে একতাবদ্ধ ও প্রতিবাদমূখর দেখা গেছে। কেবলমাত্র শ্রেণীরূপ নয় বরং শ্রেণীচেতনার বিষয়টি ও সুসপষ্ঠ খনা নাটকে। বরাহের নিকট লীলাবতী ক্ষমা চাইলে তিনি জিহবা কর্তনের আদেশ তুলে নিবেন, এমন প্রেক্ষিতে গ্রামের কৃষকক’লই ক্ষমা না চাইতে অনুরোধ করে লীলাবতীকে।

সাধারন মানুষগুলোর মুখেই উচ্চারিত হয়েছে,“ক্ষমা যদি চাইতেই হয় তবে ঐ জ্যোতিষিই চাইবে, তুমি ( লীলাবতী) ক্ষমা চাইবে না, তুমিতো কোন দোষ কর নি। ” শ্রেণী সংগ্রাম দীর্ঘদিনের ক্ষোভ একিভবনের ফলে হঠাৎ উল্বনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। খনা নাটকেও ভূ-স্বামী ও ভূমিদাসদের মধ্যকার ছোট ছোট ক্ষোভ লক্ষ্য করা যায় তবে তা রক্তাত্ত সংগ্রামের আকার ধারন করে নি। রণেশদাশ গুপ্ত তাঁর লেখায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম কিভাবে ছোট ছোট ক্ষোভ থেকে সশস্ত্রসংগ্রামে রূপ ধারন করেছে তা দেখিয়েছেন, মার্কসের সূত্র প্রয়োগ করে। একইভাবে খনা নাটকের শ্রেণী সংগ্রামকেও ব্যাখ্যা করা সম্ভব যদিও তা সশস্ত্ররূপ লাভ করে নি।

অর্থাৎ শ্রেণীবিভক্ত প্রতিটি সমাজেই যুগে যুগে শ্রেণীচেতনা ও শ্রেণীসংগ্রাম ছিল। “খনা” নাটকে মার্কসীয় ও ফ্রয়েডীয় প্রভাব “প্রাণ তত প্রিয় নয় যে হারাবার ভয় করে লাভ হবে কিছু। ভয় শুধু একটাই- সত্যকে হারাবার। সত্য যদি বিকিয়ে যায় সে বেঁচে থাকা আর মৃত্যু সমান। ” -“ তার মানে এই নয় যে ভালোবাসিনা আকাশ, তপন, মেঘের ভেলা, তৃণ, বৃক্ষরাজি, বুক ভরে টেনে নেওয়া বর্ষার প্রথম বৃষ্টি স্পর্শে জেগে ওঠা মাটির বুকের সুবাস।

তার মানে নয় যে প্রিয়তমের প্রতি ধাবমান ভালোবাসা থেমেছে, কিংবা হয়েছে শীতল, হারিয়েছে স্পর্শের কোমলতা বা বুভুক্ষা। হারায়নি ভালবাসা গান, বাঁশি আর সুরের ধারায়; ভালোবাসা বেঁচে আছে আমায় প্রিয়তম নক্ষত্রের আলোকমালায়। শুধু তার চেয়ে বড় কিছু, অন্যরকম যার প্রতি ভালবাসা তুল্য নয় এদের কারো। ” কেবলমাত্র লীলাবতী নয় বরং পৃথিবীর সব মানুষের জীবনকে ফ্রয়েড দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে। লীলাবতী মুখে উচ্চারিত এসব বানীতে ফ্রয়েডের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

এখানেও মূলত দুইটি স্বত্বা কাজ করছে। জীবনমুখী স্বত্বা মৃত্যুমুখী স্বত্বা নাটকের শুরুর অংশে খনা বাচঁতে চেয়েছে। বিদ্যাধরী নদী, নদীর জল, গায়ের পথ, গ্রামের কৃষক আর ভালবাসার পাত্র মিহিরকে নিয়ে লীলাবতী স্বপ্নের জাল বুনেছে। এক্ষেত্রে তার জীবনমুখী স্বত্বার প্রকাশ ঘটেছে। আবার নাটকের শেষ অংশে লীলাবতী জেনে বুঝে নিজের অস্তিত্ব ধংসের মাধ্যমে সুখ চেয়েছে।

একে একে সকলের অনুরোধকে উপেক্ষা করে, সত্যকে বুকে ধারন করে নিজের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছে লীলাবতী। এক্ষেত্রে মিহিরের ভালবাসাও তার ধংসাত্বক মৃত্যুকামনার কাছে পরাজিত হয়েছে। “কেউ কি বোঝে আসলে কাউকে? মহান জ্যোতিষ তাপস - এত সংকীর্ণতা ধরেছেন আতœায়! কোন গহ্বরে ছিলো লুকানো এত হিংসা- অবিবেচনা। ” - এখানেও বরাহমিহিরের আদিম ধ্বংসাতœক স্বত্বার কথা বলা হচ্ছে। এছাড়া মিহিরের চেয়ে বয়সে লীলাবতী সামান্য বড় হলেও শরীরের রসায়নের তাড়নায় ধর্ম, সমাজ আর সব বাধাকে পেছনে ফেলে তারা বারবার মিলিত হয়েছে এক আদিম প্রবৃত্তির নেশায়, কামে।

খনা নাটকজুড়েই মাকর্সের প্রভাব ছিল। তৎকালীন সামন্তসমাজ, ভূ-স্বামী এবং ভূমিদাস, শ্রেণীবিভক্তি এসবই মার্কস দিয়ে পূর্বেই ব্যাখ্যা করা করেছি। তারপরেও গভীর পর্যবেক্ষণে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়: গ্রামের বৃদ্ধ জ্যাঠোকে প্রাসাদ থেকে দুধ এনে খাওয়ানোর বিষয়টি বলা যেতে পারে। লীলাবতী হাসতে হাসতে বলছিল, “ও ঘরে কত দুধ নষ্ঠ হয়! তুমি এটুকু খাওতো জ্যাঠো!” অর্থাৎ, সম্পদের সুষ্ঠুবন্টনের বিষয়টিকে ঈঙ্গিত দেয়্ হয়েছে, এখানেও মার্ক্সীয় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ”খনা” নাটকে নারীবাদী রানী চরিত্র “লীলাবতীর অনেক ভাগ্য- এমন স্বামী- এমন সংসার! পিতা! ঐ বুঝি পারে কোন পিতা? এত ভক্তি তবু? লীলাবতীকে রেখে এসেছেন সেই পুরুষের কাছে যার উদ্দেশ্য তার রক্তাক্ত বচন? আপনি কি মানুষ মিহির? এখনো পিতাকে নিয়ে ভাবিত? লীলার হাত ধরে বেরিয়ে আসার সাহসটুকুও হয়নি আপনার।

ধিক এমনি স্বামীত্বে- যার জোর শুধু ভোগে- রাজাকে নিয়ে বরাহকে শান্ত করাবেন আপনার ভাবনায় এলো কি করে অমন পিতার সংসার মুহূর্তে ত্যাগ না করে। ” “ পুরুষ নানা কথা বলে- বলে বিবেচক- বুদ্ধিতাড়িত কেজো কথা। ” “রানী সুমিত্রার কণ্ঠের ধিক্কার আর বাঁধ মানেনা, বাহ্ পুরুষ। আজ যদি থাকতো কঙ্কনা এতো তিক্ততা কি করে সইতো সে। ভাগ্য-সে বেচারী মরে বেঁচেছে।

ধর্মকেতুর নিষেধ অগ্রাহ্য করে বলে চলেন তিনি, লীলাবতী কন্যা আমার-এ দেহে প্রাণ থাকতে তার কোন ক্ষতি হতে দেবো না আমি। তবে দুঃখ একটাই-আমার মেয়ের স্বামী ভাগ্য বড় ভালো। ” উপরের সংলাপ থেকে রাণীর কন্ঠে নারীবাদী চরিত্রের প্রতিফলন ঘটে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসহায়ত্বের বিরোদ্ধে রাণী সুমিত্রাই প্রথম প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেন। পুরুষের ষড়যন্ত্রের বিরোদ্ধে তিনি লড়তে চেষ্টা করেছেন, লীলাবতীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে লীলাবতীকে মাতৃস্নেহের মায়ায় বেধেছেন, বেচেঁ থাকার স্বপ্ন দেখাতে চেয়েছেন,স্পষ্ঠভাষায় বরাহ ও মিহিরকে ধিক্কার দিয়েছেন।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে “খনা” যাদের প্রতিনিধিত্ব করছে... পুরুষতান্ত্রিক সমাজে দেশে দেশে মেয়েদের মূল্যহীনতা নিয়ে বহু প্রবচনের সূচনা হয়েছে। পল্লীগাথায় জানা যায় মেয়েদের প্রকৃত শোচনীয় অবস্থা। প্রাচীন ভিয়েতনামের পল্লীগীতিতে নারীকে বৃষ্টির ফোটার সাথে তুলনা করা হয়েছে। মেয়েরা যেন বৃষ্টির ফোটা কেউ জানে না পড়বে কোথায় প্রাসাদে কি ক্ষেতের কাদায়.... প্রাসাদে পড়েও এক প্রতিভাবান নারী পুরুষতন্ত্রের ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে আসতে পারে না। ক্ষমতার লড়াইয়ে নারী আপন বিছানা থেকে পৃথিবীর সবত্রই পুরুষতন্ত্রের ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত।

পুরুষতন্ত্র চেয়েছিল খনার মেধা ও প্রজ্ঞাকে অবদমিত করে রাখতে। ঐতিহাসিক কাল থেকেই প্রাসাদ-ক্ষেতখামারে শ্রমজীবী নারীর কথা উঠে আসেনি। ইতিহাস ও শ্রেণীস্বার্থ রক্ষা করেছে এবং পুরুষতন্ত্রের কাছে পদানত হয়েছে। তারপরেও ইউরোপের মেরী ওলস্টোনক্র্যাফট, পশ্চিমা নারী মাদাম কুরী, লরা বেসী, মেরী এ্যানী, ডিএনএ উদ্ভাবক রোজালিন ফ্র্যাংকলিন, বাংলার নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া, বাংলাদেশের প্রথম মহিলা রাজনীতিবিদ জোবেদা খাতুন চৌধুরী, নাচোল বিদ্রোহের রাণী ইলা মিত্র, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকারী প্রীতিলতাসহ আরো অসংখ্য নারী দীর্ঘকাল ধরে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে জ্ঞানী ও সত্যবাদী খনার প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে। ঐতিহাসিক চরিত্রে খনা’র জীবনের প্রতিচ্ছবি ...... যে জানে যে সে কিছুই জানে না সে-ই সবচেয়ে জ্ঞানী..... কথাটি আর কারও নয়, সকলের পরিচিত গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিসের।

সক্রেটিস ছিলেন নতুন যুগের প্রতিনিধি, ভৌগলিকভাবে যেমন, তেমনি কালগতভাবেও। অ্যানাক্সোগোরাসও কিছুদিন এথেন্সে কাটিয়েছিলেন, কিন্তু সূর্যকে একটা লোহিত তপ্ত পাথর বলে অভিহিত করায় তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। অবশ্য সক্রেটিসের জীবনে এরচেয়েও বহুগুন নিষ্টুর পরিণতি নেমে এসেছিল। উপরোক্ত বিষয়টিতে খনার জীবন ও জীবনের পরিণতির এক দারুণ মিল লক্ষ্য করা যায়। খনা ও মনের অজান্তে বারবার বলেছে, ... যে জানে না সে তো মূঢ় নয়, মূঢ় সে, যে জেনে ও বুঝে না, কত কম জানা যায়... ... খনা ও সক্রেটিস উভয়েই সত্যের কাছে মাথা নত করে নি, সত্যকে বুকে ধরে জীবনের জয়গান গেয়েছে, সানন্দে মৃত্যুকে বরন করেছে।

এছাড়া, সাহিত্যের দিক থেকে হয়ত অসংখ্য ছোট গল্পের নায়িকার মধ্যে খনাকে খুজেঁ পাওয়া যাবে। রবীন্দ্রনাথের অনবদ্য সৃষ্টি হৈমন্তীর সাথেও মিল পাওয়া যায় খনা নাটকের। সত্য বলার অপরাধে খনাকে যেমন সহ্য করতে হয়েছে শশুরবাড়ির অপমান ,ষড়যন্ত্র, অপু কিছুই বলতে পারেনি; তেমনি মিহিরও খনার এমন পরিণতির কাছে অসহায় ছিল। পিতৃস্নেহ মিহিরকে বারবার পরাজিত করেছে সত্যের মুখোমুখি হতে। আরও একজন ঐতিহাসিক নারীর জীবনের সাথে খনার মিল পাওয়া যায়।

তারঁ নাম হাইপেসিয়া। আলেজেনিাদ্রয়ায় জন্মগ্রহনকারী ক্ষণজন্মা এই বিদূষী নারী ছিলেন একজন অসাধারণ গণিতবিদ, পুরুষতন্ত্র তাঁর মেধাকেও অবমূল্যায়ন করে এবং হাইপেসিয়ার ভাগ্যেও খনার পরিণতি নেমে আসে। আমাদের সমাজে অনেকে বলে, নারীরা কেবল মূখস্ত করতে পারে;নারীদের দৌড় বড়জোর শিল্প, সাহিত্য কিংবা কলা পর্যন্ত, নারীরা বিজ্ঞানে তেমন অবদান রাখতে পারেনি। এসকল মানুষের কাছে হাইপেসিয়া হতে পারে এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত যার তিরোধানের পর আলেকজেন্দ্রিয়াকে অন্তত শতাধিক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে পুনরায় এমন একজন গণিতজ্ঞ পেতে। একইভাবে খনা আজ আর নেই, কিন্তু দ্বিতীয় কোন খনাও আমরা পাইনি।

“খনা”চরিত্র ও “খনার বচন” কি কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে ? খনা আজ আর নেই, কিন্তু তার বচন রয়ে গেছে যুগে যুগে মানুষের মুখে মুখে। সুদীর্ঘকাল ধরে ঠিকে থাকা খনার বচন কি কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে, নাকি কৃষিনির্ভর বাংলার মানুষ একে অনন্তকাল ধারণ করবে? কৃষকদের কাছে শেখা জ্ঞানকে শাস্ত্রীয় রুপ দিয়ে খনা এখনো ঠিকে আছে কৃষাণীর বুকে, ফসলের মাঠে। কিন্তু বিশ্বায়ণের মত্ত থাবায় আমাদের কৃষিব্যবস্থা, কৃষিনির্ভর অর্থনীতি সবই যখন বাণিজ্যমুখী , শিল্পায়নমূখী বাজারে পরিণত হচ্ছে তখন স্বভাবতই খনার এসকল বচনের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন আসে। আধুানক বিজ্ঞান খনার এই বচনকে কিভাবে মূল্যায়ণ করে সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারপরেও আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারি যে, খনার যেসকল বচনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে, সেসব বচন অন্তত ঠিকে থাকবে।

আর বিশ্বায়ন, নগরায়ন ও শিল্পায়ণ যদি কৃষকের বুক থেকে খনাকে মুছেও দেয়, তখনও হয়ত খনা ঠিকে পাবে ইতিহাসের পাতায়। শেষকথা চার্লস লিক›টের কবিতার অনুবাদ, যে কবিতাটি খনার মত এক ভাগ্যহত নারীর উদ্দেশে তিনি লিখেছিলেন: “সে একা বেঁেচ আছে, যেন শাশ্বত চিরন্তনী হয়ে, কিন্তু আজো সৌর্ন্দয তার আগুন হয়ে জ্বলে আর তার ভিতর পুনজন্ম ঘটে যেন সকলের... ... ... প্রতিটি বিষয়বস্তুকে সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝার এবং উপলব্ধি করার বিষয়টি শেখলাম। সমাজ, সমাজব্যবস্থা, পুরুষতন্ত্র, পিতৃতন্ত্র, নারী-পুরুষ ক্ষমতার দ্বন্ধ বিষয়গুলোর একটি সমাজতাত্তিক ব্যখ্যা দিতে চেষ্টা করেছি। এ বিষয়ে সকলের সুদৃষ্টি কামনা করছি। -নূর-ই-মকবুল ফরচুন।

- কৃতজ্ঞতা স্বীকার নাটক খনা শিল্পকলা একাডেমী, ঢাকা। সামিনা লুৎফা এবং মোহাম্মদ আলী হায়দার , নির্দেশক, খনা। মুক্তমনা, ফোরাম, প্রবন্ধ সংকলন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।