আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এলোমেলো-৮ ( নভেম্বর রেইন)

নভেম্বর রেইন!! কি অদ্ভুত সুন্দর বৃষ্টি বন্দনা ধরণী জুড়ে। বৃষ্টি আমার দারুন পছন্দ। তবে মাঝে মাঝে বিরক্তিও তৈরি করে বৈকি। স্কুল জীবনে বৃষ্টি খুব ভালো লাগতো সকাল বেলা। সকালে বৃষ্টি মানেই স্কুল এ পোলাপান কম আসা আর ক্লাস না হওয়া।

অল্প কয়েকজন যারা অতি আগ্রহ নিয়ে যেতাম তাদের জন্য সেদিন হত ঈদ এর দিন। মহা ত্যাঁদড়ামি করতাম। যাবার পথে ভিজতে ভিজতে যেতাম। স্কুল এ গিয়ে তুমুল মজা করা হত। আমার বাবা খুব হাসি খুশি মানুষ।

গল্প করতে দারুন পছন্দ করেন। তার ও বৃষ্টি দারুন পছন্দ। বৃষ্টি ভালো লাগার বিষয়টা বোধয় পৈত্রিক সুত্রেই পাওয়া আমার। এর আগেও কোন এক পোস্ট এ আমার আর আমার বাবার বৃষ্টি বিলাসের কথা বলেছিলাম। এখনো বৃষ্টি হলে তিনি মহা আনন্দে আমাদের নিয়ে ভিজতে নেমে পড়েন।

একা ভিজতে নাকি ভালো লাগে না। আম্মা যতই বলে ঠাণ্ডা লাগবে, তার কথা লাগবে না। সবাইকে নিয়ে ভেজার নাকি মজাই আলাদা। আমরা বোনগুলোও হয়েছি বাবার মতই। গ্রামে গেলে টিনের চালায় বৃষ্টির শব্দ শুনতে দারুন লাগে।

টিনের চালে বৃষ্টির ঝুম ঝুম শব্দে মনে ভিন্ন এক দোলা দেয়। এখন তো ঘরে বসে জানালার ফাঁকে বৃষ্টি দেখা ছাড়া উপায় নেই। তবে তখন যদি সাথে থাকে গরম এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা, একটা সুন্দর বই আর হালকা ভলিউমে রবীন্দ্র সঙ্গীত। ব্যাস!আর কি লাগে। ছোটবেলায় গ্রামে গেলে উঠানে বৃষ্টিতে খেলতাম।

কাঁদায় মাখামাখি হয়ে সে কি একাকার অবস্থা হত। ছোটবেলায় মানুষকে মাছ মারতে দেখে ভাবতাম লাঠির মাথায় সুতা বেঁধে পানিতে ডুবালেই বুঝি মাছ ওঠে। আমি লাঠির মাথায় সুতা বেঁধে পানিতে নিয়ে বসে থাকতাম, কিন্তু একটা মাছ ও উঠত না। পড়ে যখন বুঝেছি নিজেকে কত বোকা মনে হয়েছে। একবার বৃষ্টি তে আমাদের জামালপুরে বাসার সামনে পুকুর থেকে রাস্তায় মাছ উঠেছিলো।

আমি আর আমার ছোট মামা বৃষ্টি তে ভিজে সেই মাছ ধরতে গিয়েছিলাম হাত দিয়ে। কি মজাই না ছিল সেই সময়তা। একবার আমি আর আমার এক বান্ধবী গেলাম দাওয়াত খেতে। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আকাশ জুড়ে কালো মেঘ।

হঠাৎ আকাশ ঝেপে তুমুল বর্ষণ শুরু হল। আর এদিকে ট্র্যাফিক জ্যাম। বৃষ্টি দেখে আশে পাশে সবাই তাড়াহুড়ো করে রিকশার হুড তুলতে লাগলো। আমার খুব ভিজতে ইচ্ছে করলো। আমি তাকে অনেক কষ্টে রাজি করালাম ভিজবার জন্য।

সে আমাকে বলল, পাগল নাকি? শাড়ি পড়ে সেজেগুজে কেউ বৃষ্টি তে ভিজে নাকি? আমি বললাম, কেউ ভিজে না তাতে কি। তুই আর আমি ভিজবো। এই বলে মনের সুখে ভিজতে লাগলাম। পাশের গারিতে অনেক গুলো বাচ্চা আমাদের দেখে খুব মজা পাচ্ছিলো। শাড়ি পড়ে, খোঁপায় ফুলের মালা জড়িয়ে তারা কাউকে ভিজতে দেখেনি।

কিন্তু প্রকৃতির নির্মম পরিহাস!! হঠাৎ করেই শিলা বৃষ্টি শুরু হল। শিলার ঠোকাঠুকি তে বৃষ্টি বিলাস ওখানেই সমাপ্ত হল। বাসায় যখন গেলাম আম্মা তো ভুত দেখার মত চমকে গেলো। আমাকে দেখে যত না অবাক, তার চেয়ে বেশি দুঃখিত তার শাড়ি ভিজিয়ে আনার জন্য। হাহাহা!!! আজ সকালে বৃষ্টি দেখে কেন যেন ভালো লাগছিলো।

ঘুম থেকে উঠে ভাবলাম অনেক্ষন কি করা যায়। আলসেমি ঝেড়ে ঠাণ্ডা শীতল পানি দিয়ে গোসল টা সেরে তৈরি হয়ে বের হলাম অফিসের উদ্দেশ্যে। সারাদিন কাজে মন বসে নাই। তবুও কাজ করতে হল। খুব ইচ্ছে করছিলো ভিজতে।

মাথায় সকাল থেকে প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের লেখা “ যদি মন কাঁদে, তুমি চলে এস...এক বরষায়” গানটা ঘুরছিল। বিকেলে যখন বের হলাম তখনো বাইরে অনেক জোড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। গাড়িতে বসে উদাস দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাইরে দেখছিলাম আর গানটা গুন গুন করে গাইছিলাম যাতে কেউ বিরক্ত না হয়। গানে গানেই পথ শেষ হয়ে এলো। নামিল আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে।

বিষণ্ণ মনে গাড়ি থেকে নেমে ভিজতে ভিজতে বাড়ি চলে এলাম। ছাতা একটা ছিল সাথে, কিন্তু খুলতে গিয়ে দেখলাম ছাতা টা ভাঙা। এসেই নাই কাজ তো খই ভাজ অবস্থা। অখাদ্য মার্কা লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত। তবে এই ব্যস্ততা আমার ভালো লাগে।

থাকুক না এই ভালোলাগা।  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।