আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার গল্প নিভু নিভু আলো - অন্যরকম ভালবাসার গল্প

নিভু নিভু আলো ফিদাতো মিশকা চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার । হাত মেললে হাত দেখা যায় না। এরকম অন্ধকারের মধ্যে আমি মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে আছি। মোমবাতির আলোতে ভৌতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ভৌতিক পরিবেশে আমার ভয় লাগছে না ।

কারন আমি জানি কয়দিন পর আমার মৃত্যু হচ্ছে । মোমবাতির আলোতেwilliam butler yeats এর কবিতা পড়ছি। When you are old When you are old and gray andfull of sleep, And nodding by the fire,take down this book, And slowly read,and dream of the soft look Your eyes had once, and of their shadows deep; How many loved your moments of glad grace, And loved your beauty with love false or true, But one man loved the pilgrim soul in you. And loved the sorrows of your changing face ; And bending down beside the glowing bars Murmur ,a little sadly ,how Love fled And paced upon the mountains overhead And hide his face amid a crowd of star . আচ্ছা ,আমি কি কখনো বৃদ্ধ হব। আমার বয়স ২৩ বছর। যেহেতু কয়েকদিন পর আমার মৃত্যু হচ্ছে ।

তাই আমার বৃদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সামনের সপ্তাহে আমার ফাঁসী হচ্ছে। মৃত্যু বাপারটা আমাকে আলোড়িত করছে না। কয়েকদিন পর ফাঁসী হবে বাপারটা আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে । যেন ফাঁসী হওয়াটা ডাল ভাত ।

একজন মানুষের জীবনে ফাঁসী হওয়াটা খুব জরুরী । আচ্ছা sorrows of your changing face মানে কি ,এটা দিয়ে কবি কি বুঝাতে ছেয়েছেন। ব্যাপারটা পরে ভেবে দেখতে হবে। জেলেখানার মধ্যে বই পেলাম কেমন করে জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। প্রত্যেকটা জেলখানাতে একটা লাইব্রেরী থাকে।

তবে আমি লাইব্রেরীর বই পড়ছি না। আমি বইগুলো জেলার সাহেব কে দিয়ে আনিয়েছি। ফাঁসীর আসামীদের জেলখানায় জামাই আদর করা হয়। আমাকেও জামাই আদর করা হচ্ছে। এ পৃথিবীর নিয়ম অদ্ভুদ একজন মানুষ কয়দিন পর মারা যাবে দেখে তার প্রতি অদ্ভুদ সহানুবতি দেখানো হচ্ছে।

জেলার আমাকে বিশেষ পছন্দ করছেন। কেন করছেন কারনটা স্পষ্ট না। এইসব মানুষদের মতিগতি বোঝা মুশকিল। উনি যখন আমার কাছে আমার শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাইলেন। তখন বললাম ,আমাকে কিছু বইয়ের ব্যবস্থা করে দেন জীবনের শেষকটা দিন জ্ঞানচর্চা করে কাটাতে চাই ।

মহানবী (সঃ) বলেছেন,জ্ঞানচর্চার জন্য সদুর চিন দেশে যাও,আমি জ্ঞানচর্চার জন্য জেলখানায় এসেছি। জেলার সাহেব চমকে গেলেন ভাবলেন আমি রসিকতা করছি। তিনি বললেন, -আমার সাথে রসিকতা করবেন না আমি রসিকতার মানুষ না। আপনার কোন ইচ্ছে থাকলে বলুন,বইতো জেলখানার লাইব্রেরিতে আছে । সেখান থেকে নিয়ে পড়ুন ।

-লাইব্রেরিতে যে বইগুলো আছে সে গুলোতে হবে না ,আমার শেষ ইচ্ছে পুরন করতে হলে আমার লিস্ট অনুযায়ী বই আনিয়ে দিতে দিন। -এটা আপনার শ্বশুর বাড়ি না এটা জেলখানা এখানে আপনি পুণ্য করে আসেন নাই যে আপনাকে জামাই আদর করা হবে । -তাহলে ঠিক আছে আমার শেষ ইচ্ছে পুরনের প্রয়োজন নাই। আর একজন খুনের আসামিকে আপনি করে বলছেন কেন তুই করে বলুন। আমি খিক্ খিক করে হেসে উঠলাম ।

জেলার সাহেব চলে গেলেন। দুইদিন পর জেলার সাহেব আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন । তারপর বললেন, -আমি সহজে মুগ্ধ হই না । যারা অপরাধী নিয়ে বসবাস করে তাঁরা এক সময় মুগ্ধ হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে । কিন্তু আমি আপনার রসিকতায় মুগ্ধ হয়েছি।

মৃত্যুকে আপনি আমলে নিচ্ছেন না। এত হালকাভাবে মৃত্যুর কিছুদিন আগে কাউকে থাকতে দেখিনি। আচ্ছা, মৃত্যু কি আসলেই তুচ্ছ করার ব্যাপার । -তাহলে কি মৃত্যু নৃত্যগীতের বাপার,আমার ফাঁসী হচ্ছে ব্যাপারটা আমি নাচ গান করে সবাই কে জানাব। সবার সামনে চেহারায় টেনশন এঁকে বসে থাকব।

যেন মানুষ জন আমার দিকে তাকিয়ে বলে আহা বেচারা। -আমি আপনার সাথে তর্কে যাচ্ছি না। আমি আপনার ফাইল পত্র গেঁটে দেখেছি । কোর্ট আপনার বিরুদ্ধে কিছু প্রমান করতে পারেনি। আপনার স্বীকারউক্তিতে আপনার ফাঁসীর রায় হয়েছে।

নিজের মৃত্যু নিজে ডেকে এনেছেন -জেলার সাহেব জীবন মৃত্যু সব প্রাণীর জন্য দুইটা অধ্যায় মাত্র। জীবন নামক অধ্যায়টা ভালো লাগছে না বলে মৃত্যু বেঁচে নিলাম। -ফিলসফি কপচাবেন না আমার ফিলসফি সহ্য হয় না -তাহলে কি জোকস শুনবেন। একটা ছেলে নারিকেল গাছে উঠেছে ,তাই দেখে তার এক বন্ধু বলল কিরে তুই নারিকেল গাছে কেন। বন্ধুটি বলল এখান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এর মেয়েদের দেখা যায়।

প্রথম বন্ধুটি বলল, দোস্ত তুমি হাতটা ছেড়ে দাও তাহলে খুব কাছ থেকে মেডিক্যাল কলেজ এর মেয়েদের দেখতে পারবা। যে অবস্থায় জোকসটা বলেছি, সে অবস্থায় হাসার কথা না কিন্তু জেলার সাহেব গলা ফাটিয়ে হাসতে লাগলেন । তারপর বললেন ,কোন প্রয়োজন হলে আমাকে বলবেন । আমি কাউকেই সহজে পছন্দ করি না । কিন্তু কেন জানি আপনাকে খুব পছন্দ করছি।

মোমবাতিটা শেষ হয়ে আসছে । আর পড়তে ভালো লাগছে না । বাতিতি নিভিয়ে দিলাম। অন্ধকার প্রকট হচ্ছে । অন্ধকার প্রকট হলে আমার পুস্পিতার কথা মনে পড়ে।

পুস্পিতা,আমার পুস্পিতা তোমাকে খুব ভালবেসেছিলাম। ১৯৯৯ ,মে এর কোন এক দুপুরে আমাদের বাসার পাশে পুস্পিতারা আসল। পুস্পিতার বাবা সরকারি চাকরিজীবী । সরকারী বাসায় থাকতে ভালো লাগে না বলে বাসা ভাড়া নিয়েছেন। মেয়ে মানুষের চোখের দিকে তাকাতে আমার তীব্র অস্বস্তি হতো ,কিন্তু জানি না, কেন জানি পুস্পিতাকে দেখলে ওর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হত।

পুস্পিতার সাথে প্রথম যেদিন কথা হল সেদিন প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি দেখলেই কেমন জানি আমার ভিতরে অদ্ভুদ এক আকুলতা কাজ করে, বৃষ্টির ফোটাগুলোর স্পর্শ পাওয়ার জন্য আমার মধ্যে নেশা জাগে। আমি বৃষ্টিতে ভিজতে থাকি বৃষ্টির স্পর্শ নেই। আমি কলেজ থেকে ফিরছিলাম। হঠাৎ একটা মিষ্টি কণ্ঠ বলল ,এই যে দাঁড়ান,আমি দাঁড়ালাম ।

পিছন ফিরে দেখলাম পুস্পিতা । কেমন কেমন হতে লাগলো,মনে হল মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছি । পুস্পিতা আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল -আপনি হাতে ছাতা নিয়ে ভিজছেন কেন । ঠাণ্ডা লাগানোর খুব শখ আপনার । আপনার ঠাণ্ডা লাগানোর শখ হলে আপনি ঠাণ্ডা লাগান ।

আপনার ছাতাটা আমাকে দেন । আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিল না । পুস্পিতা বলল উজবুকের মতো কি দেখছেন ছাতাটা দিন। আমি ছাতাটা দিয়ে দিলাম । পুস্পিতা চলে গেল।

মাথায় যথেষ্ট পেইন হচ্ছে । এখন কিচ্ছু ভাবতে ভালো লাগছে না । এখন আমি ঘুমাব। মৃত্যু পথযাত্রিদের ঘুমের সমস্যা করতে নেই........................................................... ২ । দুপুর বেলা সময়টা আমার কাছে অসম্ভব কষ্টের ।

দুপুর বেলা আমার মাথায় প্রচণ্ড রকম ব্যথা হয় । মনে হয় মাথার সব নার্ভ ছিঁড়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড ব্যাথাকে ভুলে থাকার জন্য মনকে কোন চিন্তায় নিবিষ্ট রাখতে হয় । আমি ব্যাথা ভুলে থাকার জন্য পুস্পিতার কথা ভাবছি । পুস্পিতার কথা ভাবলে কেমন জানি আমার ব্যাথা কমে যায় ।

দিনের পর দিন আমি পুস্পিতাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম ,পুস্পিতাকে নিয়ে ভাবতাম । আমার পৃথিবীর দুটা অংশ হয়ে গেল একটা অংশ জুড়ে পুস্পিতা বাকি অংশ জুড়ে বাকি পৃথিবী । পুস্পিতার ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারছিলাম না। আমি যে তাকে এতোটা পছন্দ নিয়ে দিনের পর দিন ভালবেসে যাচ্ছি বিষয়টি সে বুঝতে পারছে কিনা। মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রায়ই একটা ব্যাপার হয় , কিছু ব্যাপার তারা চট করে বুঝে ফেলে আবার কিছু ব্যাপার অনেক বুঝানোর পরও বুঝতে পারে না ।

আমি খুব সিরিয়াস টাইপ এর ছাত্র ছিলাম। সিরিয়াস বলছি এইজন্য যে মফঃস্বলের মতো একটা জায়গা থেকে নিজে নিজে পরে সাতটা লেটার নিয়ে আমি এস এস সি তে বিভাগে তৃতীয় হয়েছিলাম । পুরো এলাকাতে আমার নাম ছড়িয়ে পড়েছিল । এইসব খবর বাতাসের সাথে ছড়ায় । আমি বোধহয় খুব এলোমেলো ভাবছি।

এবার পুস্পিতার কথা বলি ,যতদিন যাচ্ছিল আমার চিন্তার জগত ছোট হয়ে আসছিল । আমি বুঝতে পারছিলাম প্রায় প্রতিটা মুহূর্তে আমি ভাবছি পুস্পিতা, পুস্পিতা এবং পুস্পিতাকেই। এভাবে দিন চলতে থাকে । এর মধ্যে আমার ছোটবোন পিংকির সাথে পুস্পিতার বেশ ভাব হয়ে যায় । পুস্পিতা আমাদের বাসায় আসা শুরু করে ।

কিন্তু আমি ওর সামনে যাওয়ার সাহস পাই না । আমাকে দূর থেকে তাকে দেখে যেতে হয় ভালবেসে যেতে হয়। একদিন দুপুর বেলা আমি শুয়ে শুয়ে রবীন্দ্রসংগীত শুনছিলাম, ‘ দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি , এমন সময় আমি বুঝতে পারলাম আমার পিছনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে । আমি চোখ খুলে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম । হ্যাঁ পুস্পিতাই ছিল আমি কোন স্বপ্ন দেখছিলাম না ।

পুস্পিতা বলল , - দুপুর বেলা এরকম ঘুমাচ্ছেন কেন । দুপুর বেলা তো ঘুমায় খরগোশ আপনি তো খরগোশ না । আমি কথা বলতে পারছিলাম না ,চুপ করে ছিলাম । পুস্পিতা বলতে লাগলো - কথা বলছেন না কেন , আপনি মেয়ে মানুষ দেখে এত নার্ভাস হচ্ছেন কেন। মেয়ে মানুষ তো বনের বাঘ ভাল্লুক না ।

আর মেয়ে মানুষকে তৈরি করা হয়েছে পুরুষের সঙ্গী হিসেবে । বাইবেলে কি আছে জানেন , Then the man said , This is now bone of my bone And flesh of my flesh She shall be called ‘woman’ For she is taken out of man -আমি আসলে মেয়েদের সাথে কথা বলতে অভ্যস্ত না। যারা সারাদিন পড়াশোনা নিয়ে থাকে তাদের মধ্যে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা যায় । আমার ক্ষেত্রে হল ,আমার মেয়েদের সামনে অনেক নার্ভাস লাগে । -কথাটা সত্য না ।

আপনি নিজের ক্ষেত্রে এরকম ভেবে নিয়েছেন আপনি কিন্তু পিংকির সামনে অনেক কথা বলেন । তখন কিন্তু আপনি নার্ভাস ফিল করেন না । - হয়তো -আপনার নার্ভাস লাগুক আর ভয়ে কাচুমাচু হন ,আমার কিছু যায় আসে না । আমার বকবকানির অভ্যাস আছে । মাঝে মাঝে বকবকানি করতে আসব ।

আপনি নার্ভাস হয়ে কাঁপতে থাকবেন আর আমি বকবক করব । এখন আপনি ঘুমান আমি আসি । পুস্পিতা চলে গেল ,আমি চুপ করে বসে থাকলাম । অতঃপর পুস্পিতা আমার কাছে আস্তে লাগলো ,আমি প্রচুর কথা বলা শুরু করলাম আমাদের সম্পর্ক আপনি থেকে তুমি তে নেমে গেল। কিন্তু আমি পুস্পিতাকে আমার মনের কথা বলতে পারলাম না ।

একদিন পুস্পিতা আমার সামনে এসে বলল , এখনই আমরা নদীর পাড়ে যাব। তোমার সাথে আমি সেখানে বসে গল্প করব । আমরা নদীর পাড়ে চলে আসলাম । পুস্পিতা কথা বলা শুরু করল -এই যে কাশফুল গুলা দেখছ , সেগুলো অনেক সুন্দর তাইনা । -হুম -কিন্তু এখন যদি তোমাকে বলি এই কাশফুলগুলো আসল না কৃত্রিম ,তখন তোমার আর এতোটা ভালো লাগবে না ।

আসলে সুন্দর ব্যাপারটা আপেক্ষিক । যেমন একটা মেয়ের চেহারা দেখে তোমার মনে হল মেয়েটার চেহেরাটা অনেক পবিত্র । তোমার ভালো লাগবে মেয়েটাকে । কিন্তু পরে যদি তুমি জানতে পার মেয়েটা পতিতা । তখন মেয়েটার দিকে তাকালে তোমার আগের মতো এতো পবিত্র লাগবে না ।

মনে এক ধরণের অস্থিরতা লাগবে। -তুমি পাগলের মতো এইসব কি বলছ। -আমি এখন তোমাকে একটা গল্প বলব ,এটা ছিল গল্পের ভুমিকা । এবার আমি গল্প বলা শুরু করব এর মাঝখানে তুমি একটা কথা বলবা না । আমরা যখন যশোর এ ছিলাম ।

তখন মিতুল নামের একটা ছেলের সাথে আমার বন্ধুত হয়। একদিন মিতুলের সাথে ঘুরছি হঠাৎ মিতুল বলে বাসা থেকে ফোন আসছে মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চল মাকে দেখে আসি । আমি মিতুলের সাথে ওর বাসায় যাই । সেখানে ওর তিন বন্ধু মিলে আমার উপর উপগত হয় ।

খুবই সংক্ষিপ্ত গল্প । তাইনা । আমি চুপ করে থাকি পুস্পিতা বলে যায় -মিতুলের কাজই ছিল মেয়েদের সাথে বন্ধুত করে তাদের সর্বনাশ করা । ওর মামা সরকার দলীয় সাংসদ ছিল । তাই ওর বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে পারত না ।

আমিও পারিনি । এর পর বাবা ট্রান্সফার হয়ে এখানে চলে আসেন । আমি ভাগ্যকে মেনে নিতে চেষ্টা করি । কিন্তু প্রায়ই মনে হয় আমার গা গিন গিন করছে ,আমার শরীরে থেকে আছে কয়েকটা নিকৃষ্ট পোকা। কি আমাকে দেখে এখন ঘিন্না হচ্ছে তাই না, গা গিন গিন করছে তাই না।

-না পুস্পিতা , হায়েনার আঁচড়ে শরীরে ক্ষত হয় ,কিন্তু মনে না । আর শরীরের ক্ষত মনে ছড়াতে নেই । চিরকাল পাশাপাশি থাকতে হয় মন নিয়ে, শরীর নিয়ে নয় । তোমার সাথে থাকতে আমার আপত্তি নেই । -আমি জানতাম তুমি এইরকমই বলবে অন্থু ।

তারপর পুস্পিতা আমাকে প্রথম বারের মতো বুকে টেনে নেয় । আলতো করে ওর চুম্বনে ভিজিয়ে দেয় আমায় । আমি আনন্দে সাত আসমানে ভাসতে থাকি । এরপর পুস্পিতা আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দেয় । বলে এখানে আমার ভালবাসার কথা লিখা আছে ,আমি যেদিন বলব সেদিন তুমি সেটা খুলে পড় আচ্ছা।

পুস্পিতা চলে যায় । এরপর থেকে পুস্পিতার সাথে আমার কম কম দেখা হত আমি পরীক্ষা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরলাম । আর ভাবলাম , পাইলাম আমি ইহাকে পাইলাম । একমাস পড় আমি কলেজ থেকে বাসায় ফিরলাম। পিংকি বলল ,ভাইয়া এদিকে আয় ।

আমি গেলাম । সে বলল ভাইয়া মনটা শক্ত কর । পুস্পিতা আপু সুইসাইড করেছে। আমার চারপাশটা অন্ধকার হয়ে আসল । মনে হল আমি প্রানহীন নিঃস্পন্দ।

পুস্পিতাকে কবর দিয়ে এসে আমি চিরকুটটা খুললাম , “ জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো , তুমি সব অবস্থায়ই আমায় কাছে টেনে নিতে পারবে । কিন্তু তোমার পাশে দাঁড়িয়ে সবসময় মনে হত আমার শরীরের উপর কয়েকটা পশু । তাই আমাকে চলে যেতে হবে । কিন্তু মাঝে মাঝে তোমার বুকে মাথা রাখতে খুব ইচ্ছে হয় । খুব ।

নিজের খেয়াল রেখ । আর একটুও দুষ্টুমি করবা না । বাই “ তারপর আমি ভীতু ছেলেটা অনেক সাহসী হয়ে গেলাম । আমি যশোর গেলাম । মিলন ও তার বন্ধুদের খুজে বের করলাম ।

প্লান করে খুন করলাম । লাশ সালফিউরিক এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিলাম । কোন প্রমান থাকলো না । বাসায় চলে আসলাম । কোনকিছুতে মন বসাতে পারলাম না বারবার পুস্পিতার কথা মনে হল।

একবছর পর মনে হল ,এভাবে বেঁচে থেকে কি লাভ । তাই পুলিশের কাছে ধরা দিলাম। নিজের মৃত্যু নিজে ডেকে আনলাম । এখন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি , পুস্পিতার কাছকাছি যাওয়ার জন্য । বিকেল হয়ে যাচ্ছে ।

মাথার ব্যাথা কমে যাচ্ছে । মৃত্যুর আগে আমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে । আমি মনে মনে বিজয় আহমেদের কবিতা পড়ছি ইঙ্গিতে কি কথা বলে ধান প্রেম নাকি ধূসর-শাদা প্রিয়তম বিষাদ আমি জানি না , তবে ধানের ধবনিতেই আমাদের যতো বোবা মুহূর্তের গান, AwaK ev•gq n‡q †e‡R I‡V †`wL! ৩। আমি জেলার সাহেবের সামনে বসে আছি, হাতে হাতকরা পায়ে বেড়ি। জেলার সাহেবকে বিরক্ত মনে হচ্ছে তিনি আমায় দেখে বললেন , -আপনি দিগদারী করতে আসছেন কেন ।

আমার আপনার দিগদারী ভালো লাগছে না । -জেলার সাহেব আমিতো দিগদারী করতে আসিনি আপনাকে ম্যাজিক দেখাতে আসছি । আমি ম্যাজিক দেখাব , আপনি দেখে তৃপ্ত হবেন, হাততালি দিবেন। চা নাস্তা খাওয়াবেন । - হারামি ,খবরদার তুই ফাজলামি করবি না থাপরাইয়া তোর সব দাত ফেলে দিব।

কদিন পর মারা যাবি এক পা কবরে নিয়া রসিকতা করস । -জেলার সাহেব উত্তেজিত হবেন না । উত্তেজিত হলে আপনি স্ট্রোক করতে পারেন । আমি সত্যি সত্যি ম্যাজিক দেখাতে আসছি । আপনি আমাকে একটা কয়েন দেন ।

জেলার সাহেব রাগে রাগে কটমট করতে করতে আমার দিকে কয়েন এগিয়ে দিলেন । আমি কয়েন হাতে নিয়ে ম্যাজিক দেখানো শুরু করলাম। জেলার সাহেব এই যে আমি কয়েনটা ডান হাতে রাখলাম । এবার মুঠ বন্ধ করলাম। এবার মুঠ খুলালাম ।

কয়েন ভানিশ । এবার বাম হাত খুলে কয়েন বামহাত থেকে বের করলাম । বামহাত বন্ধ করে বললাম ,জেলার সাহেব এবার কয়েনটা আপনার পকেটে। জেলার সাহেব পকেটে হাত দিয়ে কয়েনটা ফেলেন এবং মুগ্ধ হলেন । আমি বললাম, -জেলার সাহেব মানুষের জীবনটা কয়েনের মতো চলমান ।

যেমন আমি বাইরে ছিলাম, এখন জেলে আছি কয়দিন পর কবরে থাকব । ইন্টারেস্টিং না । -আপনি এবার বিদায় হন । এই এঁকে নিয়ে যাও তো। -জেলার সাহেব এত বিরক্ত হচ্ছেন কেন ।

আমি একজন মৃত্যুপথযাত্রী আমার সাথে আপনি দোয়া করে কিছুক্ষণ কথা বলুন । আমি লক্ষ করে দেখেছি যে আপনি প্রায় সময়ই অন্যমনস্ক থাকেন । মনে হয় ছারপাশের কিছুই আপনি খেয়াল করছেন না । যাদের মনে কষ্ট লুকানো থাকে তাদের ক্ষেত্রে এমনটা হয় । আমার বিশ্বাস আপনার মনে কোন কষ্ট লুকানো আছে।

কষ্ট পুষে রেখে কি লাভ কষ্টের কথা কাউকে বললে কষ্ট কমে যায় । -আপনারে কে বলছে আমার কষ্ট আছে । রসিকতা করবেন না রসিকতা আমার পছন্দ না । -দেখেন আমি কয়দিন পর মরে যাচ্ছি । আমাকে বলে ফেললে কোন সমস্যা নাই ।

আপনার কষ্ট কমে যাবে। -এতো যখন শুনতে ছাচ্ছেন তবে শুনেন । গত বছর আমার স্ত্রী আত্মহত্যা করে । সে চিরকুটে লিখে যায় , তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ি নয়। কিন্তু আমি জানি সে আমার উপর রাগ করে এটা করেছে।

আমি নতুন জেলার হলে অনেক ব্যাস্ত হয়ে পড়ি । তার উপর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের এক আসামি পালিয়ে যায়। আমার উপর চাপ আসতে থাকে প্রায় রাতে আমি বাসায় ফিরতে পারতাম না । বাসায় ফিরলেও ওর সাথে কেমনে কেমনে খারাপ ব্যাবহার হয়ে যেত। আমার মনে হয় আমি তাকে খুন করে ফেলেছি ।

ব্যাপারটা আমাকে কষ্ট দেয় । -দেখেন জেলার সাহেব ,আমরা যেভাবে জীবনটাকে ভাবি, সবসময় টা ঠিক হয় না । আপনি আপনার স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করছেন । বিষয়টা হয়তো সত্য না । আপনার উপর রাগ করে উনি কাজটা করলে চিরকুটে আপনার উপর তার অভিমান থাকতো।

আপনার স্ত্রী হয়তো অন্য কারনে মৃত্যুবরণ করতে পারেন। আপনি আপনার স্ত্রীকে অনেক ভালবাসেন দেখেই আজ আপনার খারাপ লাগছে আজো কষ্ট পাচ্ছেন । আপনি মন খারাপ করে থাকবেন না । আপনি মন খারাপ করে থাকলে আপনার স্ত্রী অনেক কষ্ট পাবেন । এবার একটু হাসেন ।

আমি দেখলাম জেলার সাহেবের চোখে জল টলমল করছে । আমি বললাম, জেলার সাহেব আমার ক্ষমতা থাকলে আমি সব জেলখানাতে একটা করে বাথট্যাব বানিয়ে দিতাম। যাতে ফাঁসির আসামীরা শেষ কয়দিন বাথট্যাবে শুয়ে সিগারেট –চা খেয়ে আনন্দে দিন কাটাতে পাড়ে । উৎসব করে নিজের মৃত্যু উদযাপন করতে পারে । জেলার সাহেব এসে দিলেন ।

আমার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো । হঠাৎ মনে হল ইশ আর কয়টা দিন বাঁচতে যদি পারতাম । আমি lord Tennyson er কবিতা আবৃত্তি করছি Tears, idle tears I know not what they mean Tears from the depth of some devine despite Rise in the heart and gather to eyes In looking on the happy autumn –field And thiking of the days that are no more. 4. ২৯ ডিসেম্বর রাত ১২.০১ মিনিটে অন্তুর ফাঁসী হয়ে যায়। ৭ জানুয়ারি জেলার সাহেব চট্টগ্রাম কারাগারে বদলি হয়ে যান । বাসার জিনিসপত্র স্থানান্তরের সময় তার হাত থেকে পরে তার স্ত্রীর মেইকআপ বক্স ভেঙ্গে যায় ।

সেখানে তিনি একটা চিরকুট পান । আমি জানিনা তুমি এটা কখনো পাবে কিনা । যদি পাও তবে আমাকে ক্ষমা করে দিও । আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো , কিন্তু আমি তোমার সুযোগ নিয়েছি । তুমি যখন ব্যাস্ত হয়ে পরলে তখন আমি সুজন নামে আমার পুরনো বন্ধুর সাথে মেলামেশা শুরু করি ।

আমাদের সম্পর্ক শরীরের দিকে জরিয়ে যায় । আমার গর্ভে ওর সন্তান চলে আসে ও আমাকে বিয়ে করার কথা বলে । কিন্তু তার আগে সে পালিয়ে আমেরিকা চলে যায় । আমার আর কোন রাস্তা ছিল না..................। গোলাপ শুকিয়ে যায় তবু মনেতে থেকে যায় গোলাপের ভালোবাসা বি দঃ এহা একখানা কাল্পনিক গল্প তবুও কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে তার দায়ভার পুরোটা লেখকের উৎসর্গ ।

- আমার বর্ষাকে যার বৃষ্টিতে আমি প্রতিনিয়ত ভিজতে চাই । কিন্তু সে জানে না তার বৃষ্টি আমার জন্য কিনা ধন্যবাদ জলফড়িং এর গল্প কে , তুই না থাকলে হয়ত গল্পটা শেষ করতে পারতাম না দোস্ত । লেখক- ফিদাতো মিশকা ফেসবুক foyjul islam szmc Email : ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.