আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রানা প্লাজা আর মর্জিনার মৃত্যুর গল্প !

uব্লগিং করলে নাকি জাতে উঠা যায় !জাতে ওঠার তীব্র আকুলতায় প্রতি দিনের মতো আজও মর্জিনা খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে । ফজরের নামায পড়ে । রাতের পানি দেয়া ভাতে মরিচ পিষে পিয়াজ কেটে খাবার ঝামেলা মেটায় !তরকারী রয়েছে সামান্যই তাই নিজে না খেয়ে সন্তানের জন্য রেখে দিলেন । ছেলেটা এখনও ঘুমে । উঠবে সেই আটটায় ।

তার আগেই মর্জিনাকে কাজে যেতে হবে । গতকাল বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরেছে । কেন যেন মনটা সায় দিচ্ছে না কাজে যেতে। সুপার ভাইজারের ফোনে আশ্বস্ত হলো । নাহ !তেমন কোন সমস্যা নেই ।

তাছাড়া ছেলেটা বায়না ধরেছে একটা ভাল স্কুল ব্যাগের । শত খন্ড সেলাই পড়ে স্কুল ব্যাগটা আর ব্যাগ নেই সুতার কারখানা হয়ে গেছে । কাজে গেলে কিছু টাকাও পাওয়া যাবে আর নিজের কাছেও গচ্ছিত কিছু আছে । ফেরার পথে ছেলেটার জন্য একটা স্কুল ব্যাগও কেনা হবে । রোজকার মতো আজও ছেলের স্কুলের ড্রেস গুছিয়ে,ভাত তরকারী ঢেকে রেখে বালিশের পাশে ১০ টাকার নোটটা রেখে দিল ।

দুপুর বেলা ওর বড্ড ক্ষুধা পায় তাই টিফিনের জন্য টাকাটা রেখে যায় ! সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিট । হটাত করে যেন পুরো আকাশ ভেঙ্গে পড়ল মর্জিনার মাথার উপর । কিছু বুঝে ওঠোর আগেই নিজেকে আবিস্কার করল ইট আর কংক্রিটের স্তুপের মধ্যে । কোমড়ের নীচের অংশের কোন অনুভুতি নেই । দুর থেকে অজস্র মানুষের অস্পষ্ট কোলাহল শোনা যাচ্ছে ।

পায়ের কাছে কি যেন আটকে আছে । যতদুর শক্তি আছে তাই দিয়ে হাতড়ে পাতড়ে দেখলো একটা খন্ডিত মাথা । চোখ দুটো এখনও খোলা । মৃত্যুর ঠিক আগে নিশ্চয়ই এমন বড় চোখে পৃথিবীটাকে দেখতে চেয়েছিল । অন্য যেকোন সময় মর্জিনা ভয়ে আতকে চিতকার করে উঠত ।

আজ উঠল না,গলায় বিন্দুমাত্র জোর শক্তি নেই । পরম মমতায় হাত দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে দিল । হয়ত তার চোখ এমনি করে কেউ বন্ধ করে দেবে এই আশায় । শাড়ীর আচলটা উপড়ে উঠে আছে । হাত দিয়ে আবিস্কার করল আচলে এখনও বাধা আছে ২৭০ টাকা ।

এই প্রথম কেদে উঠল মর্জিনা । সারা জীবন এই টাকার জন্য কত কষ্টই না করেছে । মৃত্যুর ভয় আছে জেনেও সামান্য ২০০ টাকা হাজিরার জন্য কাজে এসেছে । অথচ আজ এই টাকা কোন কাজেই আসছে না । শুধু একটাই দু:খ ছেলেটাকে একটা নতুন স্কুল ব্যাগ কিনে দেয়া হলো না ।

হটাত মানুষের চিতকার চেচামেচি স্পষ্ট হতে লাগল । মনে হল মাথার উপর দিয়ে কেউ হেটে যাচ্ছে । কান্না,হাহাকার,আর্তনাদ,চেচামেচি এক নারকীয় পরিবেশ । মর্জিনা আপ্রান চেষ্টা করছে চিতকার করতে কিন্তু কন্ঠ স্বায় দিচ্ছে না । হটাত কে যেন মা বলে ডাক দিল ।

আরে এইত আমার খোকা । খোকা আমাকে ডাকছে । মর্জিনা সব শক্তি ব্যায় করে চেষ্টা করছে সাড়া দিতে "বাবা আমি এইখানে তুই ফিরে যা,যেকোন সময় দেয়াল ভেঙ্গে পড়তে পারে এইখানে থাকাটা বিপদজনক !তুই মরে যাবি তুই বিল্ডিং থেকে নাম,ফিরে যা বাপ ফিরে যা । গল্পটি শেষ করতে পারলাম না । কম্পিউটারের স্ক্রীন বার বার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে ।

ভিতর থেকে দলা পাকিয়ে কান্না আসছে । জানি না মর্জিনা বেচে থাকবে কিনা । আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, মর্জিনা বেচে থাকুক । মর্জিনা আবার তার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরুক । আচলের ২৭০ টাকার সাথে আরো কিছু টাকা জোড়ার করে খোকাকে একটা নুতন স্কুল ব্যাগ কিনে দিক  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.