আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপি-জামায়াত জোট আবারও ক্ষমতায় এলে-১

আমি ভাল নেই ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে রাষ্ট্রের সামগ্রিক নীতি নির্ধারণে নবনির্বাচিত দলের আদর্শের কিছুটা ছোঁয়া লাগবে এটাই স্বাভাবিক। এটা আলোচনাযোগ্য বিষয় নয় কিংবা আলোচনা হলেও খুব একটা আলোচনার দাবী রাখেনা। স্বাধীন বাংলাদেশের ৪১ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম দেশের সর্বস্তরের মানুষ এখন নিজের মত করে ধারণা করছে, বিএনপি-জামায়াত আবারও ক্ষমতায় এলে কি কি হবে। বিএনপি-জামায়াত জোট আবারও ক্ষমতায় এলে যা যা হবেই, আমি তেমনই কতক বিষয়াবলী এখানে বিবৃত করেছি। ১) যুদ্ধাপরাধের বিচার: আজকাল অনেকেই এমনকি প্রগতিশীল বোদ্ধারাও মনে করেন বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় এলে এই বিচার কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।

আমি তাদের সাথে বিনয়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করে হলফ্ করে বলছি, এতটা চরম ভুল করবেনা জামায়াত। এই কথাটা বোঝার আগে আপনাকে ২টা বিষয় জানতে হবে, ১ম বিষয় হচ্ছে, পরিচালিত যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রমের পক্ষ গুলো কে কে? প্রথম পক্ষ হচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ এবং দ্বিতীয় পক্ষ হচ্ছে আসামী পক্ষ এবং তাদের রাজনৈতিক শিবির জামায়াতে ইসলাম। ২য় বিষয় হচ্ছে, কোন মামলায় যে যে বিষয় বিবেচনা করে আদালত একজন আসামীর জামিন মন্জুর কিংবা নামন্জুর করেন। সেগুলো হল: ১) আসামী পালাবে কিনা? ২) আসামী মামলার আলামত নষ্ট করতে পারে কিনা? ৩) আসামী মামলা প্রভাবিত করতে পারে কিনা? তাহলে চলুন ১ম বিষয়ের আলোকে দেখি, বিএনপি জামাত যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে এই মামলার দুই পক্ষই থাকবে জামায়াত। আসামী পক্ষতো জামায়াত-ই, তখন রাষ্ট্রপক্ষও হবে জামায়াত।

আসামী বাইরে থাকলে মামলা প্রভাবিত হতে পারে বলে আদালত আসামীদেরকে জেলখানায় পাঠিয়েছে, সেই আসামী পক্ষই আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতার মালিক হবে। তাহলে বুঝুন এই মামলার ভবিষ্যত কি? বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে ৩টি ইসলামী দলকে স্বাধীনতার বিরোধীতা করার কারণে নিষিদ্ধ করেছিল। দলগুলো হল জামায়াতে ইসলাম, মুসলিম লীগ এবং নেজামী ইসলামী। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলেই যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ৭৩ সালে দালাল আইন প্রণয়ন করা হয় এ আইনের আওতায় ৪০ হাজার অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়, ১১ হাজার জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া হয় এবং ৮০০ যুদ্ধাপরাধীর Capital Punishment সহ মেয়াদী সাজা দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে মেজর জিয়া।

এসেই নিষিদ্ধ সেই ৩টি ইসলামী দলকে বহুদলীয় গনতন্ত্রের নামে এদেশে রাজনীতি করার অনুমতি দেয়। পরবর্তীতে জিয়া যখন রাজনৈতিক দল জাগদল(বর্তমানে বিএনপি) প্রতিষ্টা করে, তখন এই নিষিদ্ধ দলগুলোর অসংখ্য শীর্ষস্থানীয় নেতা এসে জিয়ার সাথে যোগ দেয়। এই জিয়াই প্রথম একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী শাহ্ আজিজুর রহমানকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী করে এবং আরেকজন যুদ্ধাপরাধী আব্দুল আলীমকে মন্ত্রী করে। দালাল আইন বাতিল করে এবং সকল যুদ্ধাপরাধীদেরকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে রাজনীতিতে ও সমাজে পূর্ণবাসন করে। পরবর্তীতে সেই বিএনপির আমলেই ১৯৯১ সালে নাগরিকত্ব বাতিল হওয়া গোলাম আজম ফের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ফিরে পায় এবং জামায়াত ইসলামের নায়েবে আমীর পদে আসীন হয়।

আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীর কারণে তত্‍কালীন বিএনপি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয় এবং এই মামলা কাঁধে নিয়েই জাহানারা ইমাম মারা যান। আবারও সেই বিএনপি ২০০১ সালে জামায়াতকে কাছে টেনে নেয় এবং বিএনপি ক্রমশই জামায়াতের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। এখন একজন বিএনপি আর আরেকজন জামায়াত নেতার মধ্যে আদর্শগত কোন বৈসাদৃশ্য খুজে পাওয়া যায়না। এবং সেবার বিএনপি দুজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে বাংলাদেশের মন্ত্রী করে। বিএনপি-জামায়াত আবারো ক্ষমতায় এলে, এই বিচার কাজ বন্ধ করা লাগবেনা।

বিচারক কিংবা প্রসিকিউশন টীমকেও প্রভাবিত করা লাগবেনা, এমনিতেই মামলা আসামীদের পক্ষে চলে যাবে। কেননা, তখন কোন সাক্ষী ভয়েই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে যাবেনা। আর কোন অপরাধ যদি বিচারক নিজের চোখেও প্রত্যক্ষ করে, তবুও কিছুই করার থাকেনা যদি না সে মামলার নথি-পত্র এবং সাক্ষী হাজির করা না যায়। আদালত তখন এই রায় দিতে বাধ্য হয়, এই অপরাধ কিছুতেই এই ব্যাক্তি করেনাই। যেমনটা হয়েছিল রমনা বটমূলের বোমা হামলা মামলায়, বিএনপি-জামাত জোট অপরাধীদেরকে আঁড়াল করার জন্য সকল আলামত নষ্ট করে ফেলে এবং কেহই সে সময় ভয়ে সাক্ষ্য দিতে আদালতে যায়নি।

ফলে আদালত বলে দিয়েছে, এই ঘটনার সাথে কিছুতেই হুজি প্রধানের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি, তাই সে বেকসুর খালাস। সুতরাং, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হুট করে বন্ধ করে দিয়ে জিয়া যে ভুল করেছিল, জামায়াত কিছুতেই তার পুনরাবৃত্তি চায় না। তারা চায় আদালতের রায়েই তারা নির্দোষ প্রমানিত হয়ে বের হয়ে আসুক। এবং এই ঐতিহাসিক রায়ের মধ্য দিয়ে তাদের গায়ে যুদ্ধাপরাধের যে কালিমা লেগে আছে তা ধুয়ে মুছে যাক। এমনটা ভেবেই আজকাল দেশের কোটি কোটি স্বাধীনতাপ্রেমী সাধারণ মানুষের নিঃশ্বাসটা ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে...... (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।