আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোরবানী স্পেশাল-২০১২। (রম্য রচনা১০১) আমার কোন দোষ নাই যা লিখছে সাগর নামের পাগলে।মারেন কে? উৎসর্গঃ ব্লগের সকল বন্ধু, ভাই এবং আপুদের।

দুঃখ সুখ, অহম খেলা খেলছে মানুষ, যখন তখন, বাঊন্ডুলে, ভাবনা গুলোয় বিভোর আমার, আপন ভুবন। খোচা নং...১...নং টিপসের টাকাটা পাঠিয়ে দিতে ভুল করবেন না দয়া করে!! আপনার টাকা পয়সা যথেষ্ট আছে, কিন্তু দেশের লোকে আপনাকে আজও চিনেন না। আপনি কি পরিচিতি লাভ করতে চান? তবে কোরবানীর এই সুযোগ কাজে লাগান। এবারের কোরবানীর হাঁটে গিয়ে বাজারের সেরা গরুটি কিনে ফেলুন। সাথে গরু নিয়ে ক্লোজাপ ছবি তুলুন দাঁত বের করে (দাঁত বের করার আগে হারপিক দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে ভুলবেন না যেন)।

দেখবেন পরের দিন আপনি পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায়, গেরান্টি সহকারে। । খোচা নং...২...বাসায় বাসায় দন্দ... পাশের বাসার বিবি গরু কিনেছে ভারত থেকে (বাংলাদেশের খামারিদের এত টাকা কোথায় যে মোটা তাজা গরু বাজারে আনবে) ১ লক্ষ টাকায়, আপনি কম কিসে? আপনিও পাকিস্তান থেকে দেড় লক্ষ টাকায় গরু কিনুন। তখন সে বুঝবে কত ধানে কত গরু। খোচা নং...৩...গোস্ত বিলি, কি দরকারি...? অনেক টাকা দিয়ে বড় গরু কিনেছেন।

অথচ ঢাকায় আপনার আত্মীয়-স্বজন তেমন কেউ নেই। শুধু শুধু এত দামী গোস্ত অন্যের মাঝে বিলি করবেন কেন? আর মূলত যাদের কোরবানির গোস্তের ভাগ পাওয়ার অধিকার আছে তারা আপনার হাই’রাইজ বাড়ির গেট এবং দারোয়ানের ঠ্যালা খেয়ে খুব কমই ভিতরে ঠুকতে পারবে। এই পরিস্থিতিতে এক কাজ করুন কিছু টাকা খরচ করে বড় সাইজের আরেকটা ফ্রিজ কিনুন, তারপর সব গোস্ত ফ্রিজে রেখে দিয়ে সারা বছরের গোস্তের নিশ্চিত মজুদ রাখুন এবং অপোক্ষা করুন পরের কোরবানীর জন্য। খোচা নং...৪...চামড়ার ব্যাবসা কিংবা বিটিবির নাটক... জীবনে অনেক ব্যাবসা করেছেন, কোথাও তেমন সুবিধা করতে পারেননি। এবারের কোরবানীর ঈদে চামড়ার ব্যাবসা করে দেখতে পারেন।

নতুবা আরো ভালো বুদ্ধি দেই, বিটিবি’র জন্য ‘কোরবান আলীর কোরবানী’ নামক গরু মার্কা একখান নাটক বানাতে পারেন। কারন জানেন বোধ হয় ইদানিং নাটক সিনেমা বানাতে লেখা পড়া জানা নির্দেশক হওয়া লাগে না, লাইট কেমেরা এ্যাকশান বলতে পারলেই হলো। নাটকে কোরবানী দিতে নেওয়া গরুর প্রতি মায়া মহব্বতে প্রেমিকার চরম কান্দনের একখান সিন, যে সিনের মাঝখানে আবার থাকবে আপনার হৃদয় বিদারক একখান মন খারাপের সেমি সিন আর আপনার ডায়ালগটা হবে, “হায়রে জরিনা গরুর প্রতি তোমার এত্ত মহাব্বত আর আমার প্রতি কোন মহাব্বত তো দূরের কথা একটু দরদও নাই”। ২০০ পারসেন্ট ওয়ারেন্টি (ভেলিডিটি কিন্তু একদিনই) দিয়া বলতে পারি আপনার নাটক হিট হিট সুপার হিট হবে। খালি মাঝ খানে একটাই সমস্যা, বিটিভি এখন খুব কম লোকেই দেখে তবু রিস্ক তো একটু লইতেই হবে।

কারন কথায় আছে “নো রিস্ক নো গেইন”, কি বলেন? খোচা নং...৫...হিপ হিপ হিপ হিপ, কোরবানীর গোস্ত দিয়া পিকনিক... দীর্ঘ দিন ধরে পিকনিকে যাবার ব্যানার বানিয়ে রেখেছেন, অথচ বাজেটের মন্দাবস্থার দরুন কার্যসিদ্ধি হচ্ছে না। কোরবানীর পরের দিন আস্ত গরুর বিরানী করে ট্রাক ভাড়া করে স্বপরিবারে রওনা দিন কক্সবাজারের উদ্দেশ্য। ঘুরায় ঘুরাও হলো কোরবানীর গোস্তের স্ব-মূখ্যে ব্যাবহারও নিশ্চিত হলো। শেষের খোচাং... সেই ছোট বেলা হতে শুনে আসছি, ঈদ মানেই আনন্দ আর কোরবানীর ঈদ মানে আনন্দের সাথে ত্যাগের মহিমার সংমিশ্রন। কিন্তু আমাদের ক’জনেরই কোরবানী তার আসল উদ্দেশ্যে সফলতা লাভ করে।

কোরবানী আসতে না আসতেই আমার ওঠে পড়ে লাগি এক কুৎসিত প্রতি-যোগিতায়, কে কত দাম দিয়ে গরু কিনেছে, কার গরু দেখতে ভাল। শেষ একটা গল্প বলে বিদায় নেই আজকের মত- “আমার এক বন্ধু সে দিন বলল, গত কয়েকদিন আগে সে তার বসের বাসায় গেছে কি যেন এক জরুরি কাজে, তার বস অসুস্থ তাই অফিসে আসেন নি। যাই হোক, ঢাকার রাস্তার জ্যামের কবলে পড়ে, মতিঝিল থেকে উত্তরা যেতে তার দূপুরের খাবারের টাইম হয়ে গেল। বস এবং তাঁর ওয়াইফ কিছুতেই তাকে না খেয়ে আসতে দিবে না, অবশেষে সে খেতে বসলো এবং গরুর মাংস দেখে আমার বন্ধু বলল স্যার গরু মাংস খাওয়াটা তো একটু রিস্কি, এনথ্রাক্স এর প্রকট এখনো যায় নি ঠিক মত। তখন তার বসের ওয়াইফ তাকে আসস্ত করে বললেনঃ আরে নিশ্চিন্তে খেতে পারো এগুলো গত বছরের কোরবানির মাংস।

আমার বন্ধু অবাক ভাবটা লুকিয়ে রেখে খাওয়া শেষ করলো একটা আশংকা নিয়ে সেটা হলঃ এই মাংস মজুদ করার যে টেকনোলজি যা ফ্রিজ নামে পরিচিত এর যেমন সুবিদা প্রচুর আবার অসুবিধাও আছে বিশেষ করে আমাদের দেশে, যেখানে বিদুৎ যায় প্রতিনিয়ত কয়েক ঘন্টার জন্য ঢাকায়’ই আর গ্রাম বা মফস্বলের অবস্থা তো আরো খারাপ। এবং আমরা জানি যে, কোন নরম খাবার জিনিস বিশেষ করে প্রোটিন জাতীয় খাবার যদি একবার ফ্রিজিং করা হয় এরপর যদি বেশ কিছু সময়ের জন্য তার বরফ গলে গিয়ে নরম হয়ে আবার বরফ হয়ে যায়, এবং এটা যদি বার বার ঘটতে থাকে, তবে তার মধ্যে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, যা কলেরার মতো ব্যাধির সৃষ্টি করতে পারে। তবে একটা আশার কথা হল আমাদের দেশের মানুষের প্রতি সৃষ্টি কর্তার অশেষ রহমত আছে না হলে এতো ভেজাল আর ফরমালিনের মত বিষ মেশানো খাবার খেয়ে আমরা বেঁচে আছি কি ভাবে। তবু গল্পটা বললাম যদি এনথ্রাক্স আতংকের মত কলেরায় আতঙ্কিত হয়ে কোরবানী আসল এবং সঠিক উদ্দেশ্য আমরা পুরন করতে কিছুটা চেষ্টা করি এবং সফলতা পাই। আর অনেকই হয়ত ভাবছেন কলেরায় আতঙ্কিত হবার কি আছে।

তাঁদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, চিকিৎসা থাকলেও আমাদের হাসপাতাল গুলোতে পর্যাপ্ত ব্যাবস্থা কিন্তু নেই। বিঃ দ্রঃ ইহা একটি রম্য রচনা, কারো জীবনের সাথে মিল খাইলে আমি পাগল দায়ী নই। আর জানেন তো পাগলে কিনা বলে। সবাই ভাল থাকুন, শুভ কামনা এবং কোরবানীর ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা রইল।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।