আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই কি তোমার লীলা?

নিশ্চয় প্রত্যেকটি জীব-ই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। তারা হলেন অগ্রজ বালী নামক বানরের স্ত্রী। আর রুমা হলেন অনুজ সুগ্রীবের স্ত্রী। পিতার মৃতুর পর কিষ্কিন্ধ্যারাজ্যের সিংহাসনে বসেন মহাবীর ও ধার্মিক বালি। একদিন দুই দানব (সহদোর মায়াবী ও দুন্দুভি) কিষ্কিন্ধ্যা রাজ্যে উৎপীড়ন আরম্ভ করল।

মহাবীর বালি তাদেরকে আটমন করলেন। মহাবীর বালীর বিটম সহ্য করতে না পেরে দাবনদ্বয় পর্বতের সুড়ঙ্গে প্রবেশ করল। বালিও তাদের পশ্চাদ্ভাবন করে পর্বতের সুড়ঙ্গে প্রবেশ করলেন। ওদিকে ভ্রাতা অনুজ সুগ্রীব জ্যৈষ্ঠভ্রাতার প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় পর্বতের সুড়ঙ্গের মুখে অপেক্ষা করতে লাগলেন। এক বছর অপেক্ষা কররার পর দেখলে সুড়ঙ্গের মুখে রক্তধারা দেখে মনে করলেন ভ্রাতা বালি দানবদ্বয়ের হাতে মৃতু্য বরণ করেছে।

এই ভেবে তিনি সুড়ঙ্গের মুথে পাথর চাপা দিয়ে রাজ্যে ফিরে আসলেন। রাজ্যে এসে সকল ঘটনা বর্ণনা করে রাজ্যের শাসনভার হাতে নিলেন এবং কপি সমাজের রীতি অনুযায়ী অগ্রজের স্ত্রী তারাকে পত্নীরূপে গ্রহণ করলেন। এই ঘটনার কিছু কাল পরে মায়াবী ও দুন্দুভিকে নিহত করে বালি রাজ্যে ফিরে এলেন। তার অনুপস্থিতিতে রাজ্য দখল করেছে ভেবে বালি সুগ্রীবকে তিরস্কার করে রাজ্য থেকে বিতারিত করলেন এবং সুগ্রীবের পত্নী রুমাকে বিয়ে করে অনুজের ব্যবহারের প্রতিশোধ নিলেন। বিতারিত সুগ্রীব বিশ্বস্ত পাঁচ অনুচর নল, নীল, গবাক্ষ, জাম্বুবান ও হনুমানকে নিয়ে ঋষ্যমূক পর্বতে বাস করতে লাগলেন।

ওদিকে রামচন্দ্র সীতাকে হারিয়ে সুগ্রীবের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন। পত্নী বিরহে ভারাটান্ত সুগ্রীব ও রামচন্দ্র পরস্পরের সহযোগী হলেন। রাবনের বিপক্ষে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু রাজ্যহারা, সৈন্যহারা সুগ্রীবের ক্ষমতা ছিল না। তাই ভ্রাতা বালির নিকট থেকে রাজ্য উদ্ধারের পরিকল্পনা করলেন।

কিন্তু মহাবীর বালির বিটমের সামনে সুগ্রীব ছিলেন অসহায়। তাই তিনি ভগবান রামচন্দ্রের সাহায্য কামনা করলেন। সুগ্রীবের অনুরোধে ভগবানরামচন্দ্র নিরাপরাধ বালিকে হত্যা করলেন। বালির নিধন-সংবাদ শুনে পত্নী তারদেবী পুত্র অঙ্গদকে নিয়ে ছুটে এলেন। স্বামীর মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুমুখী তারা রামকে অভিশাপ দিয়ে বললেন-"যাকে পাবার প্রত্যাশায় আমার নিরপরাধ স্বামীকে হত্যা করেছ, তাকে কাছে পেয়েও তুমি পাবেনা।

" সুগ্রীব তার পত্নী রুমাকে ফিরে পেলেন। রাজ্যের শাসনভার হাতে নিলেন। পুনরায় অগ্রজের পত্নী তারাদেবীকে বিয়ে করলেন। (অগি্ন পুরাণ ৯অঃ ১-৩ শ্লোক ও শ্রীরামচরিতামানস এবং কৃত্তিবাসী রামায়ন-কিষ্কিন্ধ্যা কান্ড,পৃষ্ঠাঃ ৬৬২-৬৬৪। ) রাবণের সাথে যুদ্ধ করে লঙ্কা বিধ্বস্ত করে সীতাকে মুক্ত করলেন।

রাবণের রাজ্য থেকে মুক্তি পেয়ে সীতাকে অগ্নি পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। আবার সেই রাবনের চিত্র অঙ্কন করে চিত্রের পাশে নিদ্রা যাওয়ার অপরাধে দ্বিতীয়বার সীতাকে অগ্নি পরীক্ষার জন্য রামচন্দ্র আদেশ দিয়েছিলেন কিন্তু সীতা তাতে অস্বীকৃতি জানালে গর্ভবতী অবস্থায় সীতাকে বনবাসে পাঠানো হয়েছিল। একজন গর্ভবতী নারীর প্রতি রামায়নের ভগবানের প্রজানুরঞ্জনের বিচারের দৃষ্টান্ত- যা কিনা ন্যায়-সম্মতই ছিল। (তবে অন্যায়-অবিচার কোনটিকে বলবেন?) উক্ত নারীর জন্যই ভগবান বালীকে হত্যা করেছিলেন, লঙ্কাকান্ড করেছিলেন, তারই জন্য রাজ্যসভায় হরধনুতে জ্যা-রোপন করেছিলেন; মমতাময়ী সেই নারী প্রবল-ক্ষমতাশীল ভগবানের প্রয়নসুত্রে বাঁধিত পত্নীই ছিলেন। "সেই অশুভক্ষণে রাম সীতাকে এই অবস্থায় দেখতে পেলেন।

সীতার স্বহস্ত আঙ্কিত রাবণাকৃতির পার্শ্বে নিদ্রিত সীতা। " "লোকলজ্জা ও অপবাদের প্রসঙ্গ উত্থান করে রাম সীতাকে গ্রহণ করবার পূর্বে পুনর্বার অগি্নপরীক্ষা গ্রহণের কথা সিদ্ধান্ত নিলেন। রামের মন্তব্য শুনে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ সীতা অগি্নপরীক্ষা দিতে অসম্মত হলেন। তীব্র অপমানের দহন সহ্য করে তিনি কেবল রামকে জানালেন, প্রজানুরঞ্জনের জন্য তুমি বার বার অগ্নিপরীক্ষার কথা বলে আমাকে প্রজাদের চোখে অত্যন্ত হীন করেছ। দেবতাদের সম্মুখে লঙ্কায় আমি পরীক্ষা দিয়েছি, তাদের বক্তব্য শোনার পরেও আমাকে বনবাসের জীবন ভোগ করতে হয়েছে সেই একই লোকাপবাদের অজুহাতে।

এরুপ লজ্জা থেকে চিরতরে মুক্তি লাভ করব আমি, এবারে তুমি আমাকে আর পাবে না। এই বলে সীতা তাঁর জন্মদাত্রী বসুমতীকে আহ্বান করে আত্যাহতা করল। " (মহামুনি বাল্মীকি পন্ডিত কর্তৃক বিরচিত, মহাকবি কৃত্তিবাস পন্ডিত কর্তৃক অনূদিত, কৃতিবাসী রামায়ন, উত্তকান্ড, পৃষ্ঠ- ৭০৯-৭১৫) (রামায়নে এমন গালগপ্পের জুড়ি নেই, কি করে লিখল রামায়নের সম্মানিত লেখকবৃন্দ? ভগবানের নামে এমন কল্পকাহিনী নানা ভঙ্গিমায় রচনা না করলে হত নাকি? ভগবানের স্বপক্ষে নাই বা লিখতে পারল; বিপক্ষে লিখে নাস্তিক হয়ে যাওয়া উত্তম; এমন করে আপন গাত্র আপনা-আপনি নষ্ট করার প্রয়োজনটা কি ছিল?) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।