আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফরহাদ মাজহারের মাদ্রাসার রাজনীতির চিন্তায় কে কার প্রতিপক্ষ? আমেরিকা নাকি খালেদা-হাসিনা?

ট্রুথ নট সেইড টুডে, কুড টার্ন টু আ লাই টুমোরো শ্যামলী থিকা ফরহাদ মাজহার লিখা জানাইসেন আমেরিকান বিদ্বান ও আন্তর্জাতিক কুটকূশলী কন্ডলিতসা রাইস কেন কওমী মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন চান। আতংকবাদবিরোধী মার্কিন নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়াডার কায়েমের যুদ্ধে কওমী মাদ্রাসার 'সাচ্চা মুসলিম' তৈয়ারের শিক্ষাব্যবস্থা একটা হুমকি হিসাবে দেখতেছে বইলাই তারা এর 'আধুনিকায়ন' ও 'যুগোপুযোগীকরণ' এর উসিলায় আধ্যাত্মিক শিক্ষার ভিতরে 'পুঁজিবাদের গোলাম' বানানোর রসদ ঢুকাইতে চায়। উনার মতে, কন্ডলিতসা চায় কওমী মাদ্রাসারা যেন আমেরিকারে ঘৃণা না করে। ‘ঘৃণা শিক্ষার’ পরিবর্তে তাদের শেখানো হবে 'বৃত্তিমূলক শিক্ষা', বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন। "শিক্ষা ও কওমি মাদ্রাসার রাজনীতি " শিরোনামের লেখাটার কলাকৌশল খুবই মাজহারীয়।

এতে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থাকে গ্লোরিফাই করা হইসে। কারণ এর প্রকাশকাল হেফাজতের ঢাকা আগমনের ঠিক আগে আগে। কিন্তু যে কন্ডলিতসার বয়ানের দোহাই দিলেন তাতে খোচা দিয়া জানতে পারি, এইটা ইন্ডিয়ান ইকোনমিক টাইমসে ২০০২ সালে প্রকাশিত একটা সংবাদ। শিরোনাম "US wants reform in Pak’s madrasa curriculum "। ২০০২ সালে আফগান যুদ্ধ যখন তুঙ্গে(২০০১ সালের ৯/১১ পরবর্তী সময়ে) তখন পাকি মাদ্রাসাগুলা যে যোদ্ধা তৈয়ার করতেছিল তাতে মার্কিন দখলদারির বিশেষ সমস্যা হইতেছি।

প্রায় এক যুগ পরে পাকিস্তানের গনতান্ত্রিক নির্বাচনেও সেই তালেবানিরাই দেদারসে বোমা-হামলা-হুমকি দিয়া নির্বাচন বয়কট করতে শাসায় জনগণকে। তারা সফল হন নাই। মডারেট মুসলিমপন্থী দল জয়ী হইসে। তৃতীয় শক্তি হিসাবে ইমরানের উধান হইসে। তার চেয়ে মুছিবতের কথা (তালেবানদের জন্য) এরা সকলেই আমেরিকান নীতির বিরুদ্ধে জনতার রায় পাইসে।

ফলে তাদের একচেটীয়া এন্টি-আমরিকান সেন্টিমেন্টের বাজার একটু ডাউন যাচ্ছে। ফিরা আসি, বাংলাদেশে। ২০০১ এর নাইন ইলাভেনের প্রায় এক যুগ পরে পাকি দোহাই টাইনা বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনে মার্কিন উগ্র বাসনা বইলা যে গল্প ফাঁদলেন তা কতখানি সত্যঘনিষ্ট জনাব? মার্কিনরা বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষার পরিবর্তন চায়, এতে আধুনিকতার বিষ পিচকারি দিয়া 'পুজিবাদি গোলাম' তৈয়ার করতে চায় তা কোন সংবাদে দেখি নাই। মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন নিয়া ফরহাদ মাজহার জানাইলেন, আলেমরাও মাদ্রাসাশিক্ষার আধুনিকায়ন চান, কিছু ক্ষেত্রে করেছেনও। নিজেদের মতন এই আধুনিকায়নের স্বরূপ উনি খোলাসা করেন নাই।

কিন্তু এই আধুনিকায়ন যে সারা মুসলিম বিশ্বের সাথে ১০০ হাত নিরাপদ দূরত্ব পিছনে তা এড়ায়ে গেছেন। আধুনিক ইসলামিক ভার্সিটির অনলাইন কোর্স দূরের কথা তার ধ্যান ধারনার সাথেও মাদ্রাসাশিক্ষা বিকশিত হয় নাই। কওমি মাদ্রাসার রাজনীতি নিয়া বয়ান করতে গিয়া তিনি এর নানা পক্ষবিপক্ষকে হাজির করলেও হেফাজতের বিপক্ষ শক্তি সরকার অনুগত বলে খারিজ করে দেন। মাদ্রাসার রাজনীতির একটা ঐতিহাসিক দিক উনার নজর এড়ায়ে গেল কিনা বুঝলাম না। কোন এক অদ্ভুত কারণে মাদ্রাসার রাজনীতিতে বামধারার মতই নানান দল মত।

এরা সামাজিক নানান সমস্যা, ইসলামিক মুল্যোবোধের অভাব সংস্কারে অগ্রসর হয় না, জনতার কাছেও আসতে পারে না। অপ্রদিকে বামধারা সবকিছু নিয়াই চিন্তিত কিন্তু ধর্মীয় কারণে জনতার নেকনজর বঞ্চিত। ইসলামী রাজনীতির নানা দলের একাবদ্ধ হওনের একমাত্র উসিলা থাবাবাবা, তসলিমারা। যাদের আবার ম্যাডামের শেখানো ভাষায় 'নাস্তিক' বলে ডাকা হয়। কিন্তু এরা আসলে প্রচন্ড ইসলামবিদ্বেষী।

তাই 'নাস্তিক'দের দেশত্যাগ বা দুনিয়াত্যাগের মাধ্যমে তাদের একতাও ঢাকা থিকা মাদ্রাসা যাওয়ার পথে ১০০ভাগে ভাগ হইয়া যায়। এইটা কেবল হেফাজতের জমায়েত না, গেল ২০-৩০বছরে যত তৌহিদি জনতার সমাবেশ দেশ কাপাইসে তার সবগুলার পরিণতি। এরা মুন্ডুপাত করতে একত্রিত হয় আর মুন্ডু নিয়া বাড়ি ফেরে। কিন্তু ইসলামিক মুল্যোবোধের বিকাশ ও প্রতিষ্ঠায় আজ পর্যন্ত ঘৃণার চাষবাস ছাড়া আর কিছুই করতে পারে নাই। সমাজের যে ব্যাপক ইসলামাইজেষন হচ্ছে তাতে তাদের অবদান নাই।

তাবলীগ ও অন্যান্য ইসলামিক টিভির ইসলামিক চিন্তা চেতনাই সেক্যুলার শিক্ষায় শিক্ষিত শহুরে মানুষের ভিতরে গভীরভাবে ঢুকসে। যার ফলাফল হিসাবে ফেইসবুকে ব্যাপক হেফাজত-সিম্পেথাইজার দেখা গেলেও মাঠে তাদের পাওয়া যায় না। এরা ইসলামের মধ্যযুগের বর্ননায় আর প্রায়-সামরিক অপারেশনে মুসল্লী হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার। কিন্তু এই সোচ্চার জনতার ইসলামিক জিল বারবার ধরা খাইতেছে দুই দলের চাতুরীর কাছে। ট্রয়ের ঘোড়া হিসাবে ব্যবহার কইরা শাপলা চত্ত্বরের 'গনহত্যা'র যে পরিসংখ্যান বিরোধীদল দেয় তাতে সরকারী শুন্যের ব্যাপক আধিক্য।

খোকার তিন হাজার, তারেকের দেড়-দুই হাজার, আলজাজিরাতে আবার বলে আসছে তিন চারশো। ফলে গুজব মাঠে মারা গেছে। সেই সাথে ফরহাদ মাজহারীয় গনহত্যার অসারত্ব প্রমাণিত হইসে। ভয়াবহ কিছু ভিডিও চিত্রে সরকারী শুন্যতত্ত্বও একইভাবে ধরা খাইসে। এইভাবে বার বার ব্যবহৃত হইয়া ইসলামী রাজনীতি পরিপক্কতা অর্জন করতেছে কিনা তা আগামীতেই বোঝা যাবে।

মাদ্রাসার রাজনীতিতে ম্যালা দল। কিন্তু মাদ্রাসার ভিতরে কোন প্লুরালিস্ট পলিটিকাল এনভায়রনমেন্ট নাই। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন নানান দল ও মত আছে, মাদ্রাসায় তেমন নাই। সেকারনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবছাত্রছাত্রীকে কোন জনসভায় পাবেন না, কিন্তু মাদ্রাসার সবছাত্রকে ঠিকই পাবেন যদি বড়হুজুর বলেন বা আদেশ করেন। নানান মতের প্রতি তারা ওপেন নন।

এই প্রথম টক শো আর জনসমাজের নানান জিজ্ঞাসার উত্তর দিলেন তারা। এইটাও মাদ্রাসার রাজনীতির সামাজিকিকরনের একটা অংশ। কিন্তু এইসব দিকে মনোযোগ না দিয়া ফরহাদ সাহেবরা মাদ্রাসার রাজনীতিকে মার্কিন শত্রু দেখান। বইলা দেন আরো মৌলবাদী হইয়া মূল আকড়াইতে, যাতে কেউ ক্যাপিটালিস্ট সমাজের বিষ না মিশাইতে পারে। কিন্তু এই মূল আকড়াইয়া থাকতে গিয়া ক্যাপিটালিস্ট সমাজের মধ্যে যে ভয় ও ভ্রান্তি তৈয়ার হইতেছে তা দূর করতে সমাজের কাছে আশতে বলেন না।

বহুমতের চর্চা কইরা ইসলামিক সমাজব্যবস্থা ও ভ্যালু বাড়াইতে বলেন না। মাদ্রাসা থিকা কোন বখতিয়ার খিলজি বা ট্রয়ের ঘোড়া আসলে 'ফ্যাসিবাদী' সরকার সুড়সুড় কইরা নাইমা আসবে আর সেক্যুলার শিক্ষায় শিক্ষিত ঢাকাইয়া সমাজ ম্যাডাম খালেদার আহবানে সাড়া দিয়া হৈ হৈ কইরা ফুলের মালা নিয়া রাস্তায় নামবে- এমন আশা করা বৃথা। যে সামরিক ক্যু এর খোয়াব দেখতেছিল তার গোড়াতেই গলদ। সামরিকবাহিনীও ঢাকাই মধ্যবিত্ত সমাজেরই অংশ। পেটে ভাত থাকলে জাতিসংঘ মিশনের রুটি রেশনের মায়া ছাইড়া কেউ ক্যু করতে আসবে না।

২২বছর কোন সরকার ১দিন আগে ক্ষমতা ছাড়ে নাই। আগামীতেও ছাড়বে না। ঘোড়ায় চইড়া না, মানুষের মন-মগজের ভিতর দিয়া আগ্রসর হইতে হবে। সবার আগে চিনতে হবে গাছে তুইলা মই কাইড়া নেয়ার বেঈমানকে। সে যতই ছলনা কইরা গ্লোরি গ্লোরি হেফাজতে ইসলাম গান করুক, তারে সাফ জানায়া দিয়ে হবে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাড় করানোর চেষ্টা করলে সেই লড়াই আলেম সমাজ করবে না।

শুধু রাজাকাররাই করবে। লেখাটি ফেইসবুকে বাঙ্গাল পেইজে প্রকাশিত ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।