আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ কথা বুঝার কারো বাকি নেই যে, তিনি জাতিকে প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলবার চেষ্টা করছেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত নির্বাচনের সময় বলেছিলেন তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। তার এ কথায় সারাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। বর্তমান প্রজন্মের চোখ-কান খোলা। তারা দেখতে পাচ্ছে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহার করে। প্রযুক্তির বাইরে এখন আর কিছুই নেই।

যুবক-য্বুতীরা প্রযুক্তির মাধ্যমে বিনোদন পর্যন্ত উপভোগ করছে। এ কথা নিঃসন্দেহে সত্য যে, ‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে প্রধান হাতিয়ার হবে তথ্যপ্রযুক্তি। ’ বাজেট বক্তৃতার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমন ধরনের কথাই বলেছেন। এবারের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে তিনগুণ বরাদ্দ দিয়েছেন। আগামী ২০১২Ñ১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ দাঁড়ায় ১০৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে আগামী বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে তিনগুণ বেশি। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কম্পিউটারের সমস্ত উপকরণ আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ই-গভর্নেন্স, ই-সেবা, ই-শিক্ষা, ই-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে আমরা সমান মনোযোগ দিয়েছি। প্রান্তিক মানুষের কাছে তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য দেশের চার হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র চালু হয়েছে।

এসব কেন্দ্র থেকে প্রতি মাসে ৪০ লাখ মানুষ সেবা নিচ্ছে। এতে করে মাঠ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বেড়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে মোবাইল মানিঅর্ডার সেবা এবং ক্যাশ কার্ডের প্রচলন করা হয়েছে। আট হাজার গ্রামীণ ডাকঘর ও ৫০০টি উপজেলা ডাকঘরকে ই-সেন্টারে রূপান্তরের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা উন্নয়ন ও প্রসারের লক্ষ্যে আমরা জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ (আইসিটি) নীতিমালা প্রণয়ন করেছি।

এর আওতায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ৩০৬টি কর্মতালিকা বাস্তবায়ন হচ্ছে। সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা ৪৪ দশমিক ৬ থেকে ১৬০ জিবিপিএস পর্যন্ত বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যান্ডউইথ চার্জ কমিয়ে এক-তৃতীয়াংশ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা দেশব্যাপী আঞ্চলিক তথ্য মহাসড়ক সৃষ্টির পদক্ষেপ নিয়েছি। আশাকরি ২০১৩ সালের জুনের মধ্যে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপনের কাজ শেষ হবে।

এর ফলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের তথ্য মহাসড়কের অবকাঠামো নির্মিত হবে। তিনি বলেন, বিশ্বে প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলার অবস্থান ৬ষ্ঠ। কিন্তু ওয়েব কনটেন্টে মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ হচ্ছে বাংলা। ওয়েবে বাংলা বাড়ানোর জন্য জেলা-তথ্য বাতায়ন, ওয়েবসাইট ও জাতীয় ই-তথ্যকোষ বাংলায় প্রণয়ন করেছে। ২০১৩ সালের জুন মাসের মধ্যে সারাদেশের ৫০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ চালু করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

আরো জানান আমাদের, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন করতে বেসরকারি খাতে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২২টি প্রতিষ্ঠান আইজিডব্লিউ, ১৮টি প্রতিষ্ঠান আইসিজি এবং ৩৩টি প্রতিষ্ঠান আইআইজি লাইসেন্স দেয়ার জন্য সব কার্যক্রম শেষ করেছে। এ ছাড়া দেশের সব উপজেলাকে মোবাইল ইন্টারনেটের আওতায় আনা হবে। হাইটেক শিল্প স্থাপনে আন্তর্জাতিকমানের বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাইটেক এবং ঢাকায় একটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

গত অর্থবছর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আইসিটি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রায় ১০ হাজার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সফটওয়্যার শিল্পের আয় গত বছরের ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে এবার ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়েছে। কয়েকদিন আগে দেখেছি পত্রিকায়, ভূমি জরিপের মতো জটিল কাজে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে দুর্নীতিবাজচক্র জব্দ হবে। ডিজিটাল ভূমি জরিপ করা হলে দালালচক্রের অবাধ দৌরাত্ম্য কমবে।

কাজ দ্রুত হবে, সঠিক ও নিখুঁত হবে। নিরীহ-অসহায় পরিবার বিজ্ঞানভিত্তিক জরিপকৃত জায়গার সীমানা বুঝে নিতে পারবে, জমি কেনা বা বেচার সময় জমির চৌহদ্দি নিয়ে আর ঝামেলা হবে না। ভূমি জরিপ নিয়ে, খারিজ নিয়ে, দলিল-পর্চা নিয়ে, অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে সারা বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর জালিয়াত ও দালালচক্র গড়ে উঠেছে। এদের দৌরাত্ম্য সাংঘাতিক। এ ছাড়া দেশের নিম্ন আদালতগুলোতে জমি নিয়ে এতো মামলাÑ আদালতে যাওয়ার দুর্ভাগ্য যাদের হয়েছে তারাই বলতে পারবেন বিষয়টি কী দুর্বিষহ! এসব জটিলতা-জালিয়াতি ক্রমাগত হ্রাস পাবে ডিজিটালে ভূমি জরিপ হলে।

পত্রিকায় দেখেছি চিকিৎসা সেবায়ও ডিজিটাল ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডিজিটালাইজ কার্যক্রম চলছে; তাতে সুফলও পাওয়া গেছে। আমরা জানি বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চরম অব্যবস্থানা চলছে। এমন চিত্র আমরা প্রায়শ দৈনিক পত্রিকাগুলোতে দেখতে পাই। যদি সার্ভিস দ্রুতগতিসম্পন্ন করে তোলা যায়, তাহলে অধিক সংখ্যক গরিব রোগীদের সেবা প্রদান করা যাবে; এটা সম্ভব হবে চিকিৎসাকে ডিজিটালের আওতায় আনা সম্ভব হলে।

আমরা চাই, আইন-আদালত, পর্যটন কর্পোরেশন, পোশাকশিল্পসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রয়োগ করা হোক। সমগ্র দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করা হলে আমরাও অতি সত্বর একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবো। এখন প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে উন্নতির কথা কল্পনা করা যায় না। ‘মৎস্য ধরিবো খাইবো সুখে’Ñ সেদিন এখন আর নেই। প্রযুক্তি ছাড়া এক পাও চলার উপায় নেই।

শিক্ষাক্ষেত্রে আরো আগে থেকে ডিজিটাল প্রক্রিয়া প্রয়োগ শুরু হয়েছে। পরীক্ষায় গ্রেডিং সিস্টেম সফল হয়েছে। এখন সারা দেশের ছেলেমেয়েরা অনলাইনে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। অনেক ছাত্রছাত্রী কষ্ট করে হলেও কম্পিউটার কিনে বাড়িতে বসে চর্চা করছে। আজকাল কম্পিউটার ছাড়া কোনো একটি চাকরির কথা কল্পনা করা যায় না।

প্রযুক্তির প্রভাবে মানুষের মনমানসিকতা-ধ্যান-ধারণার পরিবর্তন হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ একজন বিজ্ঞানীর চেয়ে বিজ্ঞানমনস্কতার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি আজ বেঁচে থাকলে প্রযুক্তিমনস্কতার কথা বলতেন। মানুষ যে ধীরে ধীরে প্রযুক্তি নির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাবেÑ রবীন্দ্রনাথ তার ইঙ্গিত রেখেছেন ‘গুপ্তধন’ ছোটগল্পে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারের যে চিত্র তুলে ধরেছেন, এটা শেখ হাসিনার সুঅভিপ্রায়ের এবং স্বপ্নেরই একটি চিত্র উন্মোচিত হয়েছে।

ডিজিটাল কথাটি শুকনো কণ্ঠে উচ্চারণ করে তিনি বসে থাকেননি, তা দেশে প্রয়োগেরও পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার মন যেমন কুসংস্কার মুক্ত, রক্ষণশীলতা ও গোঁড়ামি মুক্ত, তিনি দৃষ্টিভঙ্গিতে অসাম্প্রদায়িক, তেমনি তিনি জাতিকে প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলবার চেষ্টা করছেন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।