আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আশা’র বুকে ঘৃণার বুলেট!

সত্যের মাঝে সুন্দর, সুন্দরের মাঝে ভালবাস। ভালবাসার মাঝে বন্ধুত্ব, আর বন্ধুত্বের মাঝে তুমি আমি। রমজানের ছুটি গ্রীষ্মের ছুটি কিংবা শীতকালের ছুটি, যে নামের লম্বা ছুটি হোক না কেন, কোন্ শিশু আনন্দে লাফাবে না ছুটির কথা শুনে! স্কুলে লম্বা ছুটির আগের দিনটা সব শিশুর কাছেই একটা মহা আনন্দের দিন। শিক্ষকের কড়া শাসন নেই, পরীক্ষা নেই, পড়াশোনার চাপ নেই। বেড়ানোর অবাধ স্বাধীনতা।

কিন্তু এই শিশুটির মনে সেদিন একটুও আনন্দ ছিল না, যদিও স্কুলে শীতের লম্বা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে! আনন্দ ছিল না কারণ, হেডস্যার ছুটি ঘোষণা করেছেন কিন্তু স্কুল খোলার তারিখ ঘোষণা করেননি। শিশুটি বুঝতে পেরেছে হয়তো স্কুল আর কোনোদিনও খুলবে না। কারণ, তালেবান ফতোয়া দিয়েছে, কাল থেকে মেয়েদের পড়ালেখা বন্ধ! মেয়েটির নাম মালালা ইউসুফজাই। ১৯৯৮ সালে তার জন্ম পাকিস্তানের তালেবান অধ্যুষিত খাইবার পাখতুন খোয়া প্রদেশের সোয়াত জেলায়। ২০০৯ সালে তালেবান বিদ্রোহীরা সোয়াত দখল করে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ ঘোষণা করে।

তারা একে একে রকেট মেরে উড়িয়ে দেয় দুইশ’র বেশি স্কুল। তালেবান হুমকি দিয়েছিল, যেসব স্কুলে একজন ছাত্রীও পাওয়া যাবে সেই স্কুল ধ্বংস করা হবে। ইউসুফজাইর হেডস্যার স্কুল ধ্বংস হবার ঝুঁকি নেবেন না এটাই স্বাভাবিক। তাই তিনি স্কুল খোলার তারিখ ঘোষণা করতে সাহস পাননি। ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ইউসুফজাই কষ্ট পেয়েছিল।

কিন্তু মন খারাপ করে বসে থাকেনি। সে ডায়েরি লিখতে শুরু করে। তার কথা একসময় জানতে পারে বিবিসি। বিবিসি তাকে কলাম লেখার সুযোগ করে দেয়। ‘গুল মাকাই’ ছদ্মনামে ইউসুফজাই বিবিসিতে ব্লগ লিখতে শুরু করে।

তালেবানের ‘সুশাসনে’ মেয়েরা কেমন আছে নির্ভয়ে লিখে চলে তা। নারীশিক্ষা বন্ধ করতে তালেবানের দেয়া ফতোয়ার বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে সে। মেয়েদের পড়াশোনার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে। সেই বিদ্রোহকে একসময় কুর্নিশ করতে শুরু করে পাকিস্তান। কুর্নিশ করে বাইরের পৃথিবীও।

এর হাত ধরে গত বছর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পায় সে। একই বছর পাকিস্তানের জাতীয় শান্তি পুরস্কারও ওঠে তার হাতে। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানি হাত থেকে পুরস্কার নেয় ইউসুফজাই। পেয়েছে আরো অনেক পুরস্কার। এরপর ওই কিশোরী আন্তর্জাতিক মুখে পরিণত হয়।

আল-জাজিরাসহ বিশ্বের অনেক বিখ্যাত টিভি চ্যানেল সগৌরবে প্রচার করে তার সাক্ষাত্কার। অগণিত সংবাদপত্রের সাংবাদিক পিছু নেয় তার একটা সাক্ষাত্কার ছাপার জন্য! পুঁচকে এক মেয়ে একটা জাতির আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে, গণমাধ্যম তার পিছু নেবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু যে তালেবানের ভয়ে মার্কিন মুলুকের রুই কাতলারাও থরথর করে কাঁপে, সেই তালেবান মেনে নিতে পারেনি কিশোরী মেয়েটির এই ‘আলো’ বিতরণের ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ কর্মসূচি। পাকিস্তানে তালেবান যে শাসন কায়েমের স্বপ্ন দেখে, ইউসুফজাইর মতো ‘বেয়াড়া’ মেয়েরা বেঁচে থাকলে সেই শাসন কায়েম অতটা সহজ হবে না। পাকিস্তানের মেয়েরা দিন দিন তাকেই ‘আদর্শ’ বলে মানতে শুরু করবে।

তাই চিরদিনের জন্য ইউসুফজাইকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে তালেবান। এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে বাসের মধ্যে ফেলে গুলি করে। রক্তে ঢেকে যায় মেয়েটির ছোট্ট শরীর। তাই দেখে তারা ধরে নেয়, সে মারা গেছে। কিন্তু সে গুরুতর আহত হয়।

রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে মিঙ্গোরার একটি মেডিক্যাল কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার অবণতি হওয়ায় সামরিক হেলিকপ্টারে করে তাকে পেশোয়ারে একটি উন্নতমানের হাসপাতালে নেয়া হয়। তার মাথার খুলি ভেদ করে একটি গুলি প্রবেশ করে। আরেকটি গুলি প্রবেশ করে গলা ও বুকের মাঝামাঝি স্থানে। গতকাল সেই গুলি সফলভাবে বের করে পাকিস্তানের চিকিত্সকরা।

তার আহত হবার খবর শুনে হাসপাতালের বাইরে অবস্থান নিয়েছে শত শত নারী পুরুষ। তারা যে কোনো মুল্যে ইউসুফজাইর জীবন রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে। তার জন্য রক্ত দিতে ক্যাম্পও স্থাপন করেছে তারা। হামলার পর তালেবান স্বীকার করে তারাই এই হামলা চালিয়েছে। তারা বলে, কিশোরী ইউসুফজাই তালেবানের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলছিল।

তাই তাকে হত্যার টার্গেট করা হয়েছে। তালেবান ঘোষণা দিয়েছে, গুলিবিদ্ধ ইউসুফজাই যদি এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যায় তবে ‘না মরা পর্যন্ত’ তার উপর আবারও হামলা চালানো হবে। তাকে মেরে ফেলা হবেই! তরুণ প্রজন্মের প্রতি হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছে তারা, ইউসুফজাইকে সমর্থন না করতে। নিন্দার ঝড় : এদিকে, মালালা ইউসুফ জাইর উপর হামলার ঘটনায় পাকিস্তান জুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক সহ প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দলের শীর্ষ ব্যত্তিরা এক কিশোরীর উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্ব। সবার মুখে এক কথা, একটি জাতির আশার প্রতীক হয়ে ওঠা ছোট্ট কিশোরীকে যে দানবরা পথের কাঁটা মনে করে, সেই দানবদের চলার পথ চিরতরে বন্ধ করে দেয়াই ভালো। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।