আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসঃ মানসিক রোগী মানেই 'পাগল' নয়

ভুল করেও যদি মনে পড়ে...ভুলে যাওয়া কোন স্মৃতি.. ঘুমহারা রাতে..নীরবে তুমি কেঁদে নিও কিছুক্ষণ...একদিন মুছে যাবে সব আয়োজন... একই শব্দের বহুবিধ ব্যবহারের সাথে আমরা পরিচিত। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে একটি নির্দিষ্ট শব্দের অর্থ যে ভিন্ন ভিন্ন রূপ নেয়, তার প্রচুর উদাহরণ আমরা জানি। তেমনি একটি সুপরিচিত শব্দ ‘পাগল’। বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের পরিমার্জিত সংস্করণ অনুসারে, ‘পাগল’ শব্দটির কয়েক ধরণের অর্থ হয়। ‘পাগল ছেলে, যা বায়না ধরবে, তা নেবেই’ - এই বাক্যে ‘পাগল’ বলতে বোঝানো হচ্ছে ছেলেটি ‘অবোধ’।

‘রবীন্দ্র সংগীত শুনতে একেবারে পাগল’- এখানে ‘পাগল’-এর অর্থ বিমুগ্ধ, বিমোহিত। ‘কি দিয়া সুন্দরী মোরে করিল পাগর (পাগর= কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী কর্তৃক ব্যবহৃত পাগলের বিকল্প শব্দ)’ - এখানে পাগর/পাগল এর মানে মত্ত বা মাতাল। উপরোক্ত উদাহরণগুলোতে ব্যবহৃত ‘পাগল’ শব্দের কোন অর্থই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কোনভাবে ‘অসুস্থ’ বলে চিহ্নিত করে না। বরং, ব্যক্তির কোন বৈশিষ্ট্যকে উপস্থাপন করে যা কখনো রসিকতা, কখনো øেহ, কখনো ভালবাসায় বিশেষায়িত। পাগলের আরেক ধরণের অর্থ অভিধানে রয়েছে যা হচ্ছে - বাতুল, উন্মাদ, বিকৃতমস্তিষ্ক, ক্ষ্যাপা।

এই অর্থটি এক ধরণের অসুস্থতার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং বহুল ব্যবহৃতও। সাধারণ্যে বা অধিকাংশের মাঝে অসুস্থ বোঝাতে ‘পাগল’ শব্দের ব্যবহারে যে চিত্রটি ফুটে ওঠে তা হচ্ছে- ঐ ‘পাগল’ ব্যক্তিটি উলঙ্গ অবস্থায় অথবা ময়লা, জীর্ণ, শতচ্ছিন্ন কাপড় গায়ে, রুক্ষ জটপাকানো চুলে, পুরুষ হলে মুখে দাঁড়ি-গোফের জঙ্গল নিয়ে, রাস্তায় রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়ায়; ডাস্টবিন ঘেঁটে খাবার কুড়োয়; অশ্রাব্য গালি-গালাজ বা অশ্লীল বাক্যের তুবড়ি ছোটায়; যখন-তখন যে কারো দিকে তেড়ে যায়- আক্রমণ করে বসে, ভাংচুর করে ইত্যাদি ইত্যাদি। দুঃখজনক ব্যাপারটি হচ্ছে, ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ বা ‘মানসিক রোগী’ বলতেও অনেকের চোখে রোগী বা অসুস্থ ব্যক্তিটিরও কেবল এই ধরণের চিত্রই ফুটে ওঠে, আদতে যা পুরোপুরিই অজ্ঞতাপ্রসূত। তাহলে মানসিক রোগ কি? মানসিক অসুস্থতা বলতে কি বোঝায়? সহজ কথায় মানসিক অসুস্থতা হচ্ছে মনের রোগ। শরীরের যেমন রোগ হয়, রোগ হয় মনেরও।

শরীরের যেমন অনেক অংশ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, মনও তেমনি অনেকগুলো বিষয়ের সমষ্টি। শরীরকে যেমন ভাগকরা যায় মাথা, হাত, পা, চোখ, পেট, বুক, শরীরের ভেতরের হৃৎপিন্ড, ফুসফুস, কিডনী, যকৃত, পাকস্থলী- এমনি নানা অংশে ; তেমনি মনও অনুভূতি, আবেগ, বোধ, চিন্তা, স্মৃতি - এমনি নানা উপাদানে গঠিত। শরীরের একেক অংশের রোগ, এর উপসর্গ-লক্ষণ যেমন একেক রকম, তেমনি মনেরও নানা উপাদানের অসুস্থতাজনিত বহিঃপ্রকাশও ভিন্ন ভিন্ন। আবার, শরীর ও মন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িতও। শারীরিক রোগে যেমন মানসিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে, তেমনি মানসিক রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে শারীরিক লক্ষণের মাধ্যমে।

মানসিক রোগগুলোকে বোঝার সুবিধার্থে মোটা দাগে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হচ্ছে নিউরোসিস। অপরটি সাইকোসিস। নিউরোসিস জাতীয় রোগগুলোকে অনেকে মৃদু মানসিক রোগ বলে আখ্যায়িত করেন, তবে তা কেবল চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শিক্ষার সুবিধার্থেই। আদতে রোগীর জন্য নিউরোসিস-জাতীয় রোগের উপসর্গও কম কষ্টদায়ক নয়।

নিউরোসিস-জাতীয় রোগে আবেগের প্রকাশ বা মাত্রা স্বাভাবিকতা অতিক্রম করে যায়। যেমন- মন খারাপ, উদ্বেগ, ভয় এগুলো মানুষের স্বাভাবিক আবেগীয় প্রকাশ। দুঃখ বা ব্যর্থতায় যে কারো মন খারাপ হতে পারে, যে কোন দুঃসংবাদ বা বিপদাশংকায় উদ্বেগও স্বাভাবিক, কুকুর, উচ্চতা বা অন্ধকারে কিছুটা ভয়ও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এইসব আবেগ স্বাভাবিক মাত্রা ও সময়কে অতিক্রম করে যখন ব্যক্তির জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, শিক্ষা বা পেশাগত জীবনকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাধাগ্রস্ত করে, তখনই কেবল তা রোগ হিসেবে চিহ্নিত হয়। আবার, অনেক সময় মানসিক চাপের প্রকাশ ঘটে শারীরিক কোন উপসর্গে- এসব ক্ষেত্রে উপসর্গ শারীরিক হলেও এর পেছনে শারীরিক কোন রোগের প্রমাণ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পাওয়া যায় না।

নিউরোসিস রোগীর ক্ষেত্রে রোগী সাধারণত বাস্তবতার সাথে সংযোগ হারায় না এবং তার ব্যক্তিত্বেরও উল্লেখযোগ্য কোন বিশৃংখলা ঘটে না। বিষণœতা (ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার), উদ্বেগাধিক্য (অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার), অহেতুক ভীতি (ফোবিক ডিসঅর্ডার), শুচিবায়ু (অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার) প্রভৃতি নিউরোসিসের উদাহরণ। অন্যদিকে ‘সাইকোসিস’-এর রোগীদের আচার-আচরণ, ব্যবহার বা কথাবার্তা , ব্যক্তিত্ব এলোমেলো, বিশৃংখল হয়ে যায়। বাস্তবের সাথে তাদের সংযোগ থাকে না। অনেকের মাঝে অযৌক্তিক, ভিত্তিহীন কিন্তু দৃঢ় সন্দেহ দেখা দেয়।

অনেকে গায়েবী আওয়াজ শোনেন বা গায়েবী কিছু দেখেন। তারা সাধারণত নিজেরা বুঝতে পারেন না যে তারা রোগাক্রান্ত। আশপাশের লোকজন সহজেই তাদের ভেতর এই পরিবর্তনটি ধরতে পারেন। সিজোফ্রেনিয়া, ম্যানিয়া বা বাইপোলার ডিসঅর্ডার - এগুলো সাইকোসিসের উদাহরণ। এছাড়া মাদকাসক্তি, মানসিক প্রতিবন্ধী, ব্যক্তিত্ব বৈকল্যসহ আরও অনেক ধরণের মানসিক রোগ রয়েছে।

কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমরা অনেকেই এখনও ‘মানসিক রোগ’ বলতে আটকে আছি ঐ ‘পাগল’-এই। অথচ ‘পাগল’ বলতে যে চিত্র ভেসে ওঠে, মানসিক রোগীদের মধ্যে যারা সাইকোসিসে ভোগেন তাদের কেবল একটি ক্ষুদ্র অংশের মধ্যে সেরকম লক্ষণ-উপসর্গ দেখা যায়। এই ক্ষুদ্র অংশেরও অধিকাংশ চিকিৎসা নেন না বা চিকিৎসার আওতায় আসেন না বলেই উপসর্গগুলো এই পর্যায়ে পৌঁছায়। সময়মতো যথাযথ চিকিৎসায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীর অতটা অবনতি সহজেই রোধ করা যায়। বাংলাদেশে মানসিক রোগ বিষয়ক সচেতনতা ও এ রোগের হার নির্ণয়ের জন্য ২০০৩-২০০৫ সাল পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের গবেষকদল জাতীয় পর্যায়ে একটি জরীপ চালান।

সেখানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৮ বছরের উপরের জনসংখ্যার ১৬.১% মানুষ মৃদু থেকে গুরুতর মানসিক রোগে ভুগছে। আরও উল্লেখ করার মতো ব্যাপারটি হচ্ছে, এর মধ্যে ১.১% সাইকোসিসে আক্রান্ত। যে সাইকোসিসের একটি ক্ষুদ্র অংশের উপসর্গের সাথে মিল রয়েছে তথাকথিত ‘পাগল’দের। বাকী ১৫% রোগীর মধ্যে মাদকাসক্তি ও অন্যান্য কিছু রোগ বাদে প্রায় সকলই নিউরোসিস, যারা তাদের যে সমস্যা বা কষ্ট হচ্ছে- তা নিজেরাই বুঝতে পারেন। কিন্তু এই বুঝতে পারা সত্ত্বেও তারা চিকিৎসা নিতে যান না।

কারণ, সমস্যা বুঝলেও সেটা যে ‘মানসিক রোগ’ তা তারা বুঝতে পারেন না। ঐ যে - মানসিক রোগী মানে তো ‘পাগল’! তারা ভাবেন- আমি তো আর পাগল না! হ্যাঁ, আমার তো খুব মন খারাপ লাগে, কিছু করতে উৎসাহ পাই না, আত্মহত্যা করার ইচ্ছা জাগে তীব্র ভাবে- কিন্তু আমি তো ‘পাগল’ না! অথবা আমার রাতের পর রাত, দিনের পর দিন ঘুম আসে না- কিন্তু কোন ‘পাগলামী’ তো আমি করি না! তাহলে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাব কেন? সাইকিয়াট্রিস্ট বা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে তো যাবে ‘পাগল’রা। আবার অনেকে এটাকে মানসিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলেও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান না। মানসিক রোগের ডাক্তারের কাছে যাব বা মানসিক রোগের হাসপাতালে যাব?- লোকে কি বলবে! লোকে তো তাকে ‘পাগল’ ভাববে! অধিকাংশ মানুষ এখনও তা-ই ভাবেন। অজ্ঞ, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ব্যক্তিদের কাছে এখনও মানসিক রোগ মানেই ‘পাগলামি’।

বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে - এমনকি শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মাঝেও এই প্রবণতা দেখা যায়। ‘পাগল’ অভিধায় মানসিক রোগী যেন সমাজে অচ্ছুত, তার পরিবার যেন একঘরে। শারীরিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য পরিবার বা সমাজে যতটা আন্তরিকতা দেখা যায়, ‘পাগল’দের জন্য তা মোটেও দেখা যায় না। বরং, মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে করুণার চোখে, হেয় করে দেখার প্রবণতা এখনও বিদ্যমান। এজন্য ‘পাগল’ অ্যাখ্যায় সমাজচ্যূত হওয়ার ভয়ে মানসিক রোগে আক্রান্ত অনেক ব্যক্তিই চিকিৎসকের কাছে যান না, পরিবারও তাকে চিকিৎসা না করিয়ে ব্যাপারটি গোপন রাখতেই উৎসাহিত হন।

যদিও মানসিক রোগের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা রয়েছে। এছাড়াও মানসিক রোগীদের একাংশ বিশেষত সাইকোসিসের উপসর্গ-লক্ষণগুলোকে জ্বীনের আছর, পরীর আছর, যাদুটোনা, বাতাস লাগা, বান মারা, পাপের ফল - ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করে পীর-ফকির, ওঝা-কবিরাজী, ঝাড়-ফুঁক-তাবিজ, তেল-পানি পড়ার মতো অপ্রয়োজনীয় অপচিকিৎসা থেকে শুরু করে রোগীকে চিকিৎসার নামে নানা বর্বর উপায়ে নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে অহরহ। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগেও, নিমিষেই সকল তথ্য হাতে পাওয়ার অপার সুযোগের এই সময়েও মানসিক রোগ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার এই চলমান ধারা খুবই দুঃখজনক। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ১০ অক্টোবর সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয় ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’। মানসিক স্বাস্থ্য দিবসকে সামনে রেখে সকলের মাঝে মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা জাগ্রত হোক, সকল নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, কুুসংস্কার, জড়তা কাটিয়ে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সুচিকিৎসা লাভে সচেষ্ট হোন - প্রত্যাশা এটাই।

বিষণ্নতাঃ একটি বৈশ্বিক সংকট ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথ-এর তৎকালীন ডেপুটি সেক্রেটারী জেনারেল রিচার্ড ডিক হান্টারের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ বছর এ দিবসটির মূল ভাবনা - ‘বিষণ্নতা রোগ বা ডিপ্রেসন’ যেখানে বিষণœতাকে ‘একটি বৈশ্বিক সংকট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথ-এর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন বা ৩৫ কোটি মানুষ বিষণœতা রোগে আক্রান্ত। ১৭ টি দেশে পরিচালিত বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য জরীপে দেখা গেছে, প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন পূর্ববর্তী বছরে বিষণœতায় আক্রান্ত হয়েছেন। ২০০৩-০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বাংলাদেশের গবেষকদলের জরীপে দেখা গেছে, এদেশে ১৮ বছরের উপরের জনসংখ্যার ৪.৬% বিষণœতা রোগে আক্রান্ত।

যে কোন ব্যক্তি যে কোন সময় বিষণœতা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। নারীদের বিষণœতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষদের দ্বিগুণ। মনে রাখা দরকার, বিষণœতা রোগ ব্যক্তিগত দুর্বলতার লক্ষণ মাত্র নয়। এ রোগ স্বাভাবিক সাময়িক দুঃখবোধের চেয়ে আলাদা বিশেষ এক আবেগ-সংক্রান্ত মানসিক অসুস্থতা। তীব্রতা ভেদে বিষণœতা রোগ ব্যক্তির স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনযাপনকে বাধাগ্রস্ত করে।

বিষণœতা আত্মহত্যার জন্য অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক রোগ। গবেষকরা বলছেন, গুরুতর বিষণœতা বা মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১৫ শতাংশই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিষণœতা রোগে আক্রান্তরা দিনের পর দিন অধিকাংশ সময়ই মন খারাপ করে থাকেন, কোন কাজে উৎসাহ-মনোযোগ পান না, ঘুম-খাওয়ার রুচি-উদ্যম-গতি কমে যায়। পরবর্তীতে তা তীব্র আকার ধারণ করলে আক্রান্তরা নিজেদের জীবনকে নিরর্থক ও বোঝা মনে করতে থাকেন, সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন, প্রতিনিয়ত আত্মঘাতী চিন্তায় মন আচ্ছন্ন হতে থাকে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করালে এদের অনেকেই নির্মম সিদ্ধান্তের পরিণতি ঘটান।

বিষণœতা একটি চিকিৎসাযোগ্য মানসিক রোগ। বিষণœতার লক্ষণ দেখা দিলে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা ও চালিয়ে যাওয়া উচিত। ওষুধ এবং সাইকোথেরাপী- উভয় পদ্ধতিতেই চিকিৎসা করা যায়। কোন রোগীর জন্য কোন ধরণের চিকিৎসা প্রয়োজন - রোগের তীব্রতা ভেদে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সে সিদ্ধান্ত নেবেন। উল্লেখ্য, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কিছুদিন ওষুধ সেবনের পর অথবা সাইকোথেরাপীস্টের সাথে সেশনে অংশগ্রহণের পর রোগী যখন ভাল বোধ করেন বা উপসর্গ কমে যায়, তখন রোগী বা তার আত্মীয়স্বজন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন বা সাইকোথেরাপী সেশনে আর অংশ নেন না।

ফলে, রোগীর সঠিক চিকিৎসা হয় না। এবং কিছুদিন পর রোগীর উপসর্গ আবার ফিরে আসে। বিষণœতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি আরো কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন, মনকে বিষণœ করে বা মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে এমন কথা বা কাজ এড়িয়ে চলতে হবে। বিষণœতার সময়ে বড় কোন সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে যথা সম্ভব বিরত থাকতে হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা ভালো। সুষম, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে, তবে বেশী ঘুম নয়। সুস্থ-স্বাভাবিক সম্পর্কগুলোর চর্চা করতে হবে। মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে।

রুটিনমাফিক শৃংখলাপূর্ণ জীবনযাপন করতে হবে। বিষণœতা ব্যক্তির কর্মক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত বা নষ্ট করে দেয় বলে তা সামগ্রিকভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতার উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য যা মোটেও সুখবর নয়। এ কারণে বিষণœতা রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় শুধু ব্যক্তি ও পরিবারে নয়, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও সচেতনতা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অবশ্য প্রয়োজন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।