**তবুও কিছু কথা না বলাই থেকে যায়**
সকাল সকাল পার্থকে অফিসে বিদায় করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে ভাবতে থাকে নীরা। আজ কিভাবে দিনটাকে সেলিব্রেট করবে,কিভাবে চমকে দেবে,কিভাবে দিনটাকে মনে রাখার মত কিছু করবে? দু দিন ধরে ভাবছে তো ভাবছেই কিন্তু ভেবেই পাচ্ছেনা কিভাবে কি করবে...! প্রথম বিবাহ বার্ষিকী বলে কথা,যেন তেন ভাবে তো আর দিনটা শেষ করা যায় না।
নীরা মনে মনে অনেক কিছু প্ল্যান করে রেখেছে। এমন কিছু করবে যেন পার্থ দিনটাকে অনেক দিন মনে রাখতে পারে। তার মধ্যে যেগুলো না করলেই নয় সেগুলো হচ্ছে দুজন একই রঙ এর শাড়ি পাঞ্জাবী পড়ে সারা শহর ঘুরে বেড়াবে।
লেকের পাশ ঘেষে হাটা শুরু করবে। অনেক হাটবে অনেক। পাশাপাশি হেটে হেটে গল্প করাটা নীরার এক রকমের স্বপ্ন... হঠাত কলিং বেলের শব্দে ভাবনায় ছেদ পড়ে নীরার...
-আফা কতক্ষন ধইরা বেল বাজাইতেসিলাম...আফনে কি ঘুমাইতেসিলেন ??আর একটু হইলে তো আমি চইল্লাই যাইতাম।
-ওহ তুমি ...একটু কাজ করছিলাম। শুনিনাই বেলের শব্দ।
-আইচ্চা আমার আইজকা একটু তাড়া আসে। আমি আইজকা তাড়াতাড় যামুগা। কি কি কাম কইত্তে হইবো কন। ঝটপট কইরা দিয়া যাইগা।
-ওমা এটা কি?তোমারে না বলেছি আজ আমার এখানে একটু বেশি সময় দিতে হবে?এর জন্য তোমারে বাড়তি টাকাও দিবো।
তুমিও তো বলেছো পারবা। এখন আবার কি হয়েছে?
- কইসিলাম ফারমু কিন্তু এখন আর ফারুম না। আইজকা বাসায় মেহমান আইবো...দেন দেন কি কইত্তে হইবো বুঝাইয়া দ্যান...
মনে মনে হাজার গাল দিয়ে কাজ বুঝিয়ে দিতে থাকে নীরা। আজ তারমানে এক হাতেই সব সামলাতে হবে। যাহ সামলাতে হলে সামলাবো।
কষ্ট হলে হবে তারপরও আজকের এই দিনটা মনের মত করে সাজাবো। যা যা প্ল্যান করেছি সবই করবো । যেই ভাবা সেই কাজ...মেয়েটা তার কাজ শেষে চলে যাওয়ার পর একা একাই পার্থর পছন্দের সব ডিশই রান্না করে। এরপর একে একে সব কাজ শেষ করে।
কাজ শেষে নীরা অস্থির হয়ে যায় কখন পার্থ বাসায় আসবে কখন সেই মানুষটার আনন্দে উদ্বেলিত মুখ খানা দেখতে পারবে!!তাইতো পার্থকে বারবার ফোন করে বাসায় লাঞ্চ করতে বলে।
আর পার্থও কখনও ১ ঘন্টা আবার কখনও ২০ মিনিট কখনও আধা ঘন্টার মধ্যে আসছি বলে আশস্ত করে তাকে। নীরা ভাবতে থাকে লাঞ্চ করা শেষে তারা বিকালে ঘুরতে যাবে। সারা বিকাল ঘুরে বেড়াবে। এরপর রাতে বাইর থেকে খেয়ে দেয়ে এরপর বাসায় এসে পার্থর জন্য কেনা গিফটগুলা একটা একটা করে তার হাতে দেবে... ইস পার্থ কি এইগুলো পছন্দ করবে নাকি করবেনা...গিফটগুলো হাতে পেয়ে তার এক্সপ্রেশনটা কেমন হবে ভাবতে ভাবতেই এক রাশ আনন্দের হাওয়া তার মাঝে বয়ে যায়...
অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয়না। দুপুর ৩টা বেজে গেছে অথচ পার্থর আসার কোন নাম গন্ধই নাই।
একটু একটু করে মেজাজ খারাপ হতে থাকে নীরার। রাগে ফোন করবেনা করবেনা করেও অবশেষে সাড়ে ৪ টায় ফোন করে খুব ঠান্ডা মাথায় জিগেস করে
-তুমি কি আজ বাসায় আসবা?উত্তরে ব্যাস্ত হয়ে পার্থ জানায় আজ একটা জরুরী কাজে ঢাকার বাইরে যেতে হবে কাল বিকালে ঢাকা ব্যাক করবে। । তার জন্য যেন অপেক্ষা না করে। রাতে খেয়ে দেয়ে যেন শুয়ে যায়...
ল্যান্ড ফোনটা জায়গায় রেখে আনমনে একদৃষ্টে অশ্রুভরা নয়নে চেয়ে থাকে নীরা।
কিভাবে সম্ভব?কিভাবে পারলো আজকের দিনের কথা ভুলে যেতে?তার কাছে কি অফিসের কাজগুলোই সব?হঠাত করেই নীরার মনে পড়ে যায় গতকালের পার্থর মোবাইলে কংকা না ফংকা নামের মেয়ের এস এম এসের কথা! যেখানে লিখা ছিলো -'um bored...wanna go somewhere from out of Dhaka...plz lets go together...' এই মেসেজের কথা মনে হতেই নীরার কাছে মনে হতে থাকে তার পুরো পৃথিবী যেন দুলে উঠেছে । শ্বাস নিতেও যেন ভীষন কষ্ট হচ্ছে। তারমানে পার্থ কি তাহলে সেই মেয়েটার সাথেই...!!
আর ভাবতে পারেনা... নীরার খুব ইচ্ছা হয় চোখের জ্বলে সব কষ্ট বের করে দিতে। । কিন্তু কিছু চাপা কষ্ট থাকে যা মনের ভেতর চাপা থাকে তা কখনই হাজার চেষ্টাতেও বের করা যায়না...নীরার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
তাইতো কিছু অভিমান বুকের মাঝে জমিয়ে রেখে আয়নার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে অনেক বড় একটা সিধান্ত নিয়ে নেয় সে...
১ বছর ২ মাস আগের কথা...
ভার্সিটি থেকে বাসায় আসা মাত্রই নীরা দেখে যে বাসা ভর্তি মেহমান। তাও আবার সবাই অচেনা। ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই সবাই হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপার টাতে নীরা একটু বিব্রতবোধ করলেও সুন্দর ভাবে সবাইকে সালাম দিয়ে ভেতরে গিয়ে মামীর কাছে জানতে চায় এরা কারা?আর কেনই বা এসেছে। জবাবে উনি জানায় ,যে ছেলের ছবি তাকে দেখানো হয়েছে ঐ ছেলে মা আর খালা আনঅফিসিয়ালি মেয়েকে দেখতে এসেছে।
ছেলের বাসা থেকে তাকে দেখতে এসেছে ব্যাপারটা জানার পর নীরার হৃদয়টা এক রকমের ভালো লাগায় ভরে যায়..!!!
একদিন রাতে নীরা শুয়ে ছিল। তার মামী রূমে এসে নীরার হাতে ছবি দিয়ে কোন ভনিতা না করেই বলে-জানিস তোর জন্য আমরা এই ছেলেটাকে দেখেছি। আমার আর তোর মামার খুব পছন্দ হয়েছে। এখন তোর পছন্দ হলেই আমরা আগাবো। এই নে ছেলের ছবি...
ছবিটা নীরার খাটে রেখে উনি রুম থেকে বের হয়ে যান।
ধীরে ধীরে নীরা ছবিটা হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। সে সবসময়ই চেয়েছিল মামা মামীর পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করবে। কারন তার ভালোর জন্য এই মামা মামীই প্রতিনিয়ত হাজারও কষ্ট করে যাচ্ছে। মা মরা এই মেয়েটার যাতে এতটুকুনও সমস্যা না হয় সেদিকে তাঁদের যেন ভাবনার অন্ত ছিলো না।
নীরার স্পষ্টই মনে আছে একদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে শুনতে পায় সবার চিতকার চেচামেচি আর কান্নার শব্দ।
কিছুক্ষন পর তার এই একমাত্র মামীটাই তাকে কোলে তুলে জানান দেয় সবচেয়ে নিষ্ঠুর কথাটা। বুকে চেপে ধরে মামী কাদছিলেন আর বলছিলেন 'কি করে তুই একলা থাকবি? তোর মা যে তোকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেল...' মাত্র ৬ বছর বয়সে মাকে হারানোর পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নীরার বাবা আরেকটা বিয়ে করে মেয়েকে ফেলে রেখে নতুন বউকে নিয়ে দূর দেশে পাড়ি জমান। এরপর থেকে নীরার পুরো পৃথিবীই যেন এই মামা আর মামী। তারাই যেন নীরার সমস্ত কষ্ট দূর করেছিলেন।
তাই তো নীরা কখনই চায়নি নিজ থেকে কাউকে পছন্দ করে তাঁদের মনে কষ্ট দিতে...এই ব্যাপারটায় সে আপোষোহীন ছিল।
আর এর জন্যই ভার্সিটির একটা ছেলেকে খুব বেশি ভালো লাগলেও সে কখনই তাকে জানাইয়নি কিংবা সেই ভালো লাগাটাকে আর বেশি বাড়তে দেয়নি। শুধুমাত্র উনারা কষ্ট পাবেন ভেবে...!!!
এক নজর ছেলের ছবি দেখেই অবাক হয়ে যায় নীরা। কি মায়াময় চেহারা। চশমা পরায় ছেলেটাকে যেন আরও বেশি ভালো লাগছে। কেমন এক অদ্ভুত ভালো লাগায় মনটা ভরে যায়।
নীরা ভাবতে থাকে ভালো লাগা ব্যাপারগুলা বুঝি এমনই যে কোন কারন ছাড়াই ভালো লাগতে থাকে। এই ছবির দিকে তাকিয়ে ছেলেটাকে ঘিরে মুহুর্তেই হাজারও কল্পনা করে ফেলে সে। টোনা টুনি র সংসার হবে। সারারাত জ্যোস্না দেখবে নির্ঘুম থেকে। জ্যোস্নার আলোর বন্যা ভেসে যাবে তারা।
আরও কত রকমের যে স্বপ্ন...!!!
কিন্তু বিয়ের পর বুঝতে পারে সে যাকে নিয়ে হাজারও স্বপ্ন দেখেছিলো এই ছেলে ঠিক তার বিপরীত। নীরার কোন ব্যাপারেই তার কোন আগ্রহ নেই। তার কাছে যেন অফিসের কাজগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি। যেদিন নীরা জ্বরে অস্থির হয়ে একাকী বাসায় খুব বেশি অসহায় বোধ করছিল ঐ দিনও সে ফোন করে পার্থকে আনতে পারেনি। সেদিনও সে খুব শান্ত হয়ে বলেছিল ঔষধ খেয়ে শুয়ে থাকতে সে নাকি তার জরুরী মিটিংটা শেষ করেই বাসায় চলে আসবে।
নীরার কাছে সেদিন নিজেকে অনেক বেশি তুচ্ছ মনে হতে থাকে। যেদিন নীরার মামা হার্ট অ্যাটাক করে হসপিটালে ভর্তি ছিলো সেই দিনও পার্থ এক নজর মামাকে দেখতে যাওয়ার মত সময় করে উঠতে পারেনি।
শুধু সেই দিনগুলোই না দিনের পর দিন এমন করেই তারা কাছাকাছি থেকেও যেন কোনদিন কাছে ছিলো না। পার্থকে ঘিরে হাজারও স্বপ্ন বুনলেও কখনই সেটা বাস্তবে পরিনত করতে পারেনি। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হত সব কিছু ফেলে চলে যেতে কিন্তু মানুষটাকে অন্ধের মত ভালোবেসে ফেলেছিল তাই যেতে পারেনি কখনও।
তাইতো তার এই দূরে সরে থাকার ব্যাপারটার জন্যে মাঝে মাঝে অভিমানে কান্না করলেও পার্থকে আজ পর্যন্ত কিছুই বুঝতে দেয় নি তার মনের ভেতর চাপা ক্ষোভের কথা গুলা। সে চেয়েছিলো একদিন হয়তো সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে। এক দিন হয়ত পার্থ বুঝতে পারবে নীরা নামের মেয়েটি যে তাকে কতটা ভালোবাসে। হয়ত...আরও অনেক কিছু...!!!
কিন্তু আজকের দিনের কথা ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটা নীরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনা। তার উপর সেই এস এম এস! এইভাবে আর কত !!! যে মানুষটার কাছে ভালোবাসার কোন মূল্যই নেই তাকে পাগলের মত ভালোবাসলেও কি না বাসলেও কি কোনদিনও তাকে নিজের করে পাওয়া যায় না।
নিজেকে আর এইভাবে কষ্ট দেবার কোন মানেই হয় না। কঠিন একটা সিদ্ধান্তের দিকে এসেগিয়ে যায়... !!
পর দিন বিকাল ৫টা
পার্থ বাসায় এসেই মেইন দরজায় বিশাল তালা দেয়া দেখে প্রথমে ধাক্কাটা খেল। সাথে সাথে ফোন বের করে নীরাকে ফোন দেয়...কিন্তু যত বারই কল দিচ্ছে প্রতি বারই একটা কথাই ভাঙ্গা রেকর্ডের মত শুনাচ্ছে 'দুঃখিত,এই মুহুর্তে............' আস্থির হয়ে যায় সে... নিজের কাছের ডুপলিকেট চাবি থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে তেমন কোন সমস্যা হয়নাই।
ফ্রেশ হয়ে সে টের পায় যে তার অনেক বেশি ক্ষুধা পেয়েছে। কিন্তু তারচেয়েও বেশি চিন্তা নীরাকে নিয়ে।
কই যেতে পারে। কখনই তো এমন করেনাই। তাহলে হঠাত করে না বলে এভাবে কোথায় চলে গেল। ভাবতে থাকে পার্থ... ভাবনার কোন কুল কিনারা খুজে পায় না...কোথায় ফোন করবে কাকে জিগেস করবে আর কিইবা জাগেস করবে... এভাবে না বলে চলে যাওয়ায় প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে যায় পার্থর।
একেতো সারা দিনে কিছুই পেটে না পড়ায় চরম ক্ষুধাইয় পেট চো চো করছে তার উপর রাজ্যের চিন্তা নীরা কে নিয়ে।
কি করবে ভাবতে ভাবতে পা টেনে টেনে ফ্রিজ খুলে অনেক বেশি অবাক হয়ে যায় পার্থ। ফ্রিজ ভর্তি কত শত রকমের খাবার ! আর সেগুলোর এক পাশে রাখা ছোট্ট একটা ভ্যানিলা কেক। কেকটা বের করে দেখে সেখানে লেখা 'Happy Anniversary to us ' তারিখটা দেখে সাথে সাথেই পার্থর মনে পড়ে যায় সে কত বড় ভুল করে ফেলেছে। কাজের মাঝে থাকতে থাকতে নিজের বিয়ের দিনটাও ভুলে গেছে। এক নিমিষেই দু দিন আগের কিছু মুহুর্তর কথা চোখের সামনে ভেসে উঠে।
কত আহ্লাদ করে পার্থকে নীরা বলেছিলো
-চলোনা আজ ছাদে গিয়ে রাতটা পার করি...
-নাহ...কাল অফিসে সকাল সকাল যেতে হবে। অনেক গুরুত্বপূর্ন কাজ আছে। ভাবলেশ হীন ভাবে উত্তর দিয়েছিলো সে। মুহুর্তেই যে নীরার হাসিখুশি মুখটা গাঢ় কালো মেঘে ঢেকে যায় । সেই মায়াবী চেহারাটা বার বার পার্থর চোখের সামনে ভাসছে।
মেয়েটার জন্য অনেক বেশি খারাপ লাগা শুরু করে। কেমন যেন নিজেকে খুব নিঃস্ব মনে হতে থাকে। কেন নিজেকে এতটা দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম? কেন এই মেয়েটাকে দেয়ার মত এক মুহুর্তও সময় বের করতে পারেনি। মনটা কেমন যেন করে উঠে পার্থর। নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকে।
টাকার পেছনে পাগলের মত ছুটেছিলাম অথচ কেও যে আমার জন্য পাগলের মত অপেক্ষা করতো সেই দিকে বিন্দু মাত্রও খেয়াল করিনি...কেন করলাম না কেন...কেন এতটা স্বার্থপর হয়ে গেলাম... !! নিজেকে পশ্নের পর প্রশ্ন করে বিদ্ধ করতে থাকে...!
হঠাত করে নীরার ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা তাদের সেই বিয়ের ফ্রেমটার উপর চোখ যায়। ছবিতে নীরার সেই হাস্যোজ্জ্যল চেহারা দেখে পার্থর মনটা তার জন্য কেঁদে উঠে। ফ্রেমটা কাছে টেনে নিতে গিয়ে চোখ পড়ে ছোট্ট একটা ভাজ করা কাগজের উপর...বুক টা ধক করে উঠে। কাগজটা খুলে দেখে যা ভেবেছিলো তাই...নীরা চিঠি লিখে গেছে...
"যদি সত্যিকার অর্থেই নীরা নামের এই মেয়েটাকে ভালোবেসে থাকো তবে হয়তো বাসায় ঢুকেই যখন দেখবে আমি নেই খানিকটা বিচলিত হবে অথবা অবাকও হবে কিংবা ঘাবড়ে যাবে কোথায় যেতে পারি আামি...অবাক হবার মতই কাজ করেছি না?আমি নিজেও কখনও ভাবতে পারিনি যে আমি বাসা ছেড়ে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো। কিন্তু আসলে একটা ব্যাপার কি জানো মাঝে মাঝে মানুষকে এমন কিছু কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হয় যা কেও কখনই চায় না।
আমিও তার ব্যতীক্রম নই। আমি চেয়েছি এই ছোট্ট একটা জীবনে যাকে পেয়েছি তার পাশাপাশি সারাটি জীবন থাকতে। তার হাতটি ধরেই কাটিয়ে দেবো আমার অনন্ত কাল। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের কোন চাওয়াই যে পূর্ন হয় না এবং তা হবারও নয় আজ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।
আজ আমি চলে গেলাম তোমাকে মুক্তি দিয়ে ।
আর কখনই তোমার কোন কাজে বাধা হয়ে থাকবোনা। তোমার আর কংকার মাঝে কোন বিরাট দেয়াল হয়ে থাকবোনা। আর কোন দিন সময় অসময় ফোন করে বিরক্ত করবোনা। কারও আশায় পথ চেয়ে থাওকবো না। যার জন্য এই আমি প্রতিটা দিন অধীর হয়ে থাকতাম যার জন্য আমার প্রতিটা ক্ষন ব্যকুলতার মাঝে কেটে যেত যাকে কাছে পাবার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতাম সারাটি ক্ষন,অথচ সেই মানুষটাকে কখনই আমি আমার মত করে পাইনি।
আর সেই মানুষটাও হয়ত কখনই আমাকে ভালোবাসেনি। সত্যি বলছি যদি ঘুনাক্ষরেও টের পেতাম তোমার হৃদয় মন্দীরে কংকা নামটা লিখা আছে। তাহলে তোমাকে অনেক আগেই তার জায়গা ছেড়ে দিয়ে সরে যেতাম!
কি অবাক হচ্ছো এই নামটা বলায়? ভাবছো নামটা কি করে জেনেছি কিংবা কোথা থেকে শুনেছি তাইতো? আচ্ছা আমিই বলে দিচ্ছি। যেদিন তুমি ফোন বাসায় রেখে অফিসে গিয়েছিলে এই মেয়েটা বার বার অস্থির হয়ে ফোনের পর ফোন করে তোমার খোঁজ নিয়েছিলো। এত বার ফোন করার কারন জানতে চাওয়ার পর সে যখন বলেছিলো ‘ভালোবাসার মানুষের খোঁজ নিবে না তো কার নিবে?’ তখনই যা বুঝর বুঝে নিয়েছিলাম...!! এরপর আরও একদিন কোন বলা নেই কওয়া নেই হঠাত করেই বাসায় এক গুচ্ছো গোলাপ ফুল।
হাতে নিতেই দেখলাম ছোট্ট একটা কাগজে লেখা কংকা নামটী লেখা। বুঝতে দেইনি তোমায়। এরপর তোমার মোবাইলে তার কত শত মেসেজ... কিন্তু সব কিছুই মেনে নিয়েছিলাম তোমায় আমৃত্যু ভালোবাসব বলে। তাছাড়া তোমাদের এক সাথে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারটাও চোখ এড়ায় নি। কিন্তু এক মুহুর্তের জন্যও ভাবিনি এই দিনেই... নাহ আর কিছু বলতে ইচ্ছা হচ্ছেনা...
আজকের এই দিনটায় সব কিছু ভুলে চেয়েছিলাম আবারও নতুন করে শুরু করবো।
সমস্ত কষ্টকে ছুড়ে ফেলে সুখের সাগরে ভেসে বেড়াবো তোমায় নিয়ে। তোমায় বেঁধে রাখবো আমার ভালোবাসার বাঁধনে। কিন্তু ঐ যে বলেছিলাম কারও কারও চাওয়া যে কখনই পূর্ন হয়না তাই আমার এই ছোট্ট চাওয়াটাও অপূর্নই রয়ে গেল। আজ বুঝতে পারছি সেই মানুষটার জীবনে তার কাজই হচ্ছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ন কিংবা সেই মেয়েটি। অনেক কিছুর বিনিময়ে চেয়েছিলাম তোমায় কিন্তু তুমি আসলে কখনই আমার ছিলে না... তাই রাগ বল অভিমান বল কিংবা ক্ষোভ বল সব কিছু সাথে করে নিয়ে চলে গেলাম।
ভালো থেকো...অনেক বেশি ভালো থেকো...
চিঠি পড়া শেষ করে পার্থ টের পায় তার সামনে সব কিছুই ঝাপসা লাগছে। নিমিষেই চোখের কোনে এক সমুদ্র পানি জমে যায় । এমন তো হবার কথা ছিলোনা। কোন বাঁধাই যেন সেই নোনা জলকে আটকাতে পারেনা । বুঝতে পারে কত বড় ভুল করে ফেলেছে।
ভাবতে থা্কে কেন আগে ওই স্টুপিড কংকার ব্যাপারটা নীরাকে বললাম না। এই সিক মেয়েটা যে অফিসের অনেক ছেলের সাথেই টাংকিবাজী করে বেড়াতো আর এর জন্য যে তার চাকরীটাও চলে গেছে আর সেই মেয়েটাকে নিয়েই নীরার এত সন্দেহ !!ছিহ... পরোক্ষনেই আবার ভাবে নীরার তো কোন দোষ নেই। !! এমন ভাবাটা তো অস্বাভাবিক না !! নাহ নীরার ভুলটা ভাঙ্গাতেই হবে।
সাথে সাথেই ফোনটা হাতে নিয়ে নীরার নম্বরে আবারও ফোন দেয় আর মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকে 'এইবার যেন ফোন অফ না থাকে। 'রিং হচ্ছে শুনেই যেন হাত পা জমে যায় পার্থর।
বেশ কয়েকটা রিং হবার পর ওপাশ থেকে ভেসে আসে সেই চেনা কন্ঠস্বর..
-হ্যালো
-হ্যা...হ্যা...লো...কথা যেন মুখ দিয়ে বেরই হতে চাচ্ছিলো না পার্থর ।
-হুম বল
কিছুক্ষন নীরব থেকে পার্থ উত্তর দেয়
-নীরা তুমি ভুল বুঝে চলে গেছো। এর জন্য আমিই দায়ী। বিশ্বাস কর ঐ কংকা মেয়েটার সাথে......ছিহ...সম্পূর্ন ভুল বুঝেছ। আমাকে ভুল ভাঙ্গার সুযোগটুকু দাও ! ফিরে আসো প্লিজ।
আমাকে ক্ষমা করে শুধু একটা বার বল কোথায় আছ তুমি?
ওপাশ থেকে পার্থ শুনতে পায় নীরার চাপা কান্নার শব্দ। বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে নীরা শান্ত ভাবেই বলে
-তোমাকে আমি ঘৃনা করি। প্রচন্ড ঘৃনা... আই জাস্ট হেইট ইউ বলেই ফোন কেটে দেয়।
হতাশার মাঝে ডুবে যায় পার্থ।
২ দিন পর...
কি সমস্যা তোমার? মাত্র দু দিনে কয় হাজারবার ফোন দিয়েছো আর কয়'শ টা মেসেজ দিয়ছো জানো?এখনের পর আর একবারও ফোন দিবেনা।
তুমি জানো না আমি যে মুনদের বাসা ছাড়া আর কোথাও তেমন যাইনা। তাহলে কেন নিতে আসছ না? কেন একবারও মুনদের বাসায় খোঁজ নিলেনা? কেন তুমি একবারও মুনের ফোনে কল দিয়ে জানতে চাইলানা আমি সেখানে আছি কিনা? তুমি কেন.........
কংকা নীরার কাছে ফোন করে মাফ চাওয়ার পর তার সমস্ত ভুলের অবসান হয়। এবং নী্রাও তার মনের মাঝের জমিয়ে রাখা হাজারও ক্ষোভ , অভিমান ঝেরে ফেলে দেয় ভালোবাসার মানুষকে আবারও নতুন করে পাবার আশায় কিংবা নতুন করে ভালোবাসার স্বপ্ন বুনার অপেক্ষায়...
ভালোবাসা হয়ত এমনই যেখানে খুব বেশি কিছু পাবার আশা থাকেনা। শুধু এটুকুই চাওয়া থাকে যে,যে মানুষটিকে কেও অন্ধের মত ভালোবাসে ঐ মানুষটাও যাতে ঠিক তার মত করেই তাকে ভালোবাসবে...এই তো... !!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।