আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভেজাল দুধ নয় পুরোটাই নকল

শুধু ভেজাল দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছেন না একশ্রেণীর ব্যবসায়ী, এবার নকল দুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন তারা। এই দুধ সংগ্রহে কোনো গাভীর প্রয়োজন পড়ে না, কষ্ট করে গড়ে তুলতে হয় না গবাদিপশুর খামারও। ছানার পানির সঙ্গে কেমিক্যাল মিশিয়ে সহজেই তৈরি করা হচ্ছে এমন 'বিষ'! পরে 'খাঁটি দুধ' হিসেবে তা চালান হয়ে আসছে রাজধানীতে। দীর্ঘসময় সতেজ রাখতে এতে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। জানা গেছে, পানি গরম করে তাতে অ্যারারুট মিশিয়ে সহজেই নকল দুধ তৈরি করা যায়।

তবে প্রয়োজন পড়ে আরও কয়েকপদের রাসায়নিক পাউডারের। যা পানিতে মিশে একেবারে সাদা দুধের আকার ধারণ করে। খালি চোখে তা ধরা অসম্ভব। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই নকল দুধের রমরমা ব্যবসা চলে। এর শিকার হচ্ছে পূর্ণবয়স্ক থেকে শিশু।

চিকিৎসকেরা বলছেন, কৃত্রিম উপায়ে তৈরি নকল দুধ পানে পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এর প্রভাব পড়তে পারে কিডনি বা লিভারের মতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও। রাজধানী ঘেঁষা আমিনবাজারের বড়দেশী, হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর রোডের ধলেশ্বরী ঘাটে এবং আশুলিয়া থানার নয়ারহাটের অদূরে নকল দুধ তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। কারখানাগুলোতে ছানার ফেলনা পানি, খাবার পানি, খাইসোডা, অল্প পরিমাণে পার অঙ্াইড, ময়দা, ভাতের মাড় ও চিনি মিশিয়ে আগুনে ফোটানো হয় এবং পরে কাটিং ওয়েল ও এসেন্স মিশিয়ে দুধের সুবাস সৃষ্টি করা হয়। ধলেশ্বরী ঘাট থেকে নকল দুধের চালান পাঠানো হয় দুটি নামিদামি ডেইরি প্রজেক্টে।

পরে ওই প্রজেক্টের প্লাস্টিক মোড়কে প্যাকেটজাত দুধ হিসেবে বাজারে বাজারে পেঁৗছে যায়। আমিনবাজার বড়দেশী এলাকার একটি প্রাচীর ঘেরা বাড়িতে নকল দুধ তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন সিরাজ মিয়া নামের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এলাকায়। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বড়দেশীতে তিনি ছয় রুমের বাড়ি ভাড়া নিয়ে দুধের কারখানাটি বসিয়েছেন। সিরাজ মিয়ার কারখানায় কাজ করেন মৃদুল ঘোষ ও তার ভাতিজা পরেশ ঘোষ।

তাদের বাড়ি ধামরাইয়ের বড় বাজার এলাকায়। পরেশ ঘোষ বলেন, 'রাজধানীতে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার দুধের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। বিকল্প দুধ তৈরি করে প্রতিদিন বড়জোর তিন-চারশ লিটার সরবরাহ দিচ্ছি_একটু হলেও তো অবদান রাখছি। ' এক প্রশ্নের জবাবে পরেশ দাবি করেন, ভেজাল দুধের চেয়ে তৈরি দুধ অনেক ভালো। এটার মধ্যে ফরমালিন ছাড়া বাকি সবই দুধের উপকরণ।

দুধ থেকে ননী তুলে নেওয়া হলেও ছানার পানিতে দুধের সব পুষ্টি বিদ্যমান থাকে। খাইসোডা, পার অঙ্াইড মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর উল্লেখ করা হলে তিনি জানান, দুধে ফেনা ওঠার জন্য এগুলো খুবই কম মাত্রায় ব্যবহার করা হয়। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, এর আগেও সিরাজ মিয়া সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এলাকায় নকল দুধের কারখানা স্থাপন করে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছেন। গত বছর ভ্রাম্যমাণ আদালতের এক অভিযানে তার কারখানাটি আবিষ্কৃত হয়। ওই সময় আদালত প্রায় সাড়ে তিনশ মণ নকল দুধ ধ্বংস এবং লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করেন।

পরে তিনি গা ঢাকা দিয়ে আমিনবাজার এলাকায় নতুন আস্তানা গাড়েন। ধলেশ্বরী ঘাট এলাকায় নকল দুধের আরেকটি কারখানা পরিচালনা করে মানিকগঞ্জ সিঙ্গাইরের এক ঘোষ পরিবার। স্থানীয় লোকজন জানান, ১০-১২ বছর আগেও মন্টু ঘোষের পরিবারের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে দুধ সংগ্রহ করে তা দিয়ে ছানা তৈরি করতেন। সেগুলো পাঠাতেন রাজধানীর কয়েকটি নামিদামি মিষ্টির কারখানায়। ওই সময় দুধে পানি মেশানো এবং কদাচিৎ পাউডার দুধ মিশিয়ে দুধের পরিমাণ বাড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত তাদের ভেজালের দৌরাত্দ্য।

কিন্তু এখন তারা পুরোটাই নকল দুধ প্রস্তুত করছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর চারপাশে অন্তত বিশটি পয়েন্টে নকল দুধ তৈরি করে ঢাকা মহানগরীতে সরবরাহ করা হয়। এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার লিটার নকল দুধ ঢাকায় ঢোকে। টঙ্গীর আরিচপুর, কামারপাড়া, কেরানীগঞ্জের আগানগর, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জের মামুদপুর, রাজধানীর ত্রিমোহনী, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ঢাকা উদ্যান মোড়, মিরপুর গুদারাঘাট সংলগ্ন কাউন্দিয়া, আশুলিয়া ব্রিজ সংলগ্ন বাজার ও তুরাগ থানাধীন ধউর এলাকায় নকল দুধের কারখানা রয়েছে। একেকটি কারখানায় উৎপাদন ও সরবরাহ কাজে ১২-১৪ জন জনবল আছে।

বেশি জানাজানি হলে স্থানীয় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে কারখানাগুলো সচল রাখা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের ডা. এস কে রায় জানান, রাসায়নিক মিশ্রিত এসব নকল দুধ পানের কারণে মানবদেহে ডায়রিয়া, জটিল পেটের পীড়া, কিডনি ও লিভার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। বেশি ঝুঁকি শিশুদের। যোগাযোগ করা হলে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (এসইএম) লুৎফর রহমান জানান, বাজারে প্যাকেটজাত দুধ কেনাবেচা প্রায়ই পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানেও দুধসহ শিশু খাদ্য হিসেবে চিহ্নিত ভেজাল পণ্যগুলোর ওপর কড়া নজরদারি রাখার নির্দেশনা রয়েছে।

তবে মাঠ পর্যায়ে ভেজাল রোধে জনসাধারণের অংশ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন বিএসটিআই পরিচালক। ............ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।