আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকেই বলছি

আমরা করবো জয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নিশ্চই অনেক ভাল আছেন? ভাল থাকারই কথা। আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সত্যি কথা বলতে ‘প্রধানমন্ত্রী’ শব্দটা শুধুমাত্র গণতন্ত্রের সাথে যায় বলেই ব্যাবহার করা, আসলে আপনি বাংলাদেশের রাজা। বিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেওয়ায় আমাদের কারো রাজা-বাদশাহ দেখার সৌভাগ্য হয়নি। রাজা-রানি, রাজমহল, ঘোড়ার পিঠে চড়ে রাজকুমারের শিকারে যাওয়া, এসব-ই ছেলেবেলায় রূপকথার বইয়ের পৃষ্ঠায় আবিষ্কার করেছিলাম।

চর্ম চক্ষে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু অনেক কিছুই ধারণা করে নিতে পারি। আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষ। আপনি যা বলবেন, তাই হবে।

যা চাইবেন তাই হবে। কি অদ্ভুত ক্ষমতা! দেশে এতো এতো মানুষ, তারা সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। নির্বাচনে আপনাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন। আপনি তাদেরকে রাতারাতি থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা করে দেবেন, সবাইকে কাজ দিয়ে দেবেন এই স্বপ্ন তারা দুঃস্বপ্নেও দেখার সাহস করেনা।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা এখন অসম্ভব। কিন্তু এই অসম্ভবকে ভবিষ্যতে অবশ্যই সম্ভব করা সম্ভব। তারজন্য প্রয়োজন আপনার ‘ইচ্ছা’ এবং ‘প্রচেষ্টা’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৬ কোটি মানুষকে আপনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন। একটিবারের জন্য কি আপনার কখনো জানতে ইচ্ছা করেনা আপনার দেশের মানুষেরা আপনার নেতৃত্বে কেমন আছে? এটা জানতে পারা খুব কঠিন কিছু নয়।

শুধুমাত্র একদিন আপনাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ থেকে ‘আমজনতায়’ নেমে আসতে হবে। ঢাকার রাজপথে প্রধানমন্ত্রীর বিলাসবহুল গাড়িতে চড়ে নয় লোকাল বাসে চড়ে যাতায়াত করতে হবে। তবে অবশ্যই রবি অথবা বৃহস্পতিবারে। যখন আমি ছোট ছিলাম তখন মৌচাক নাম শুনলেই ভয় পেতাম। মৌচাকের আলাউদ্দিন মিষ্টির দোকানের সাথে সাথে মৌচাকের জ্যামও ছিল বিখ্যাত।

জ্যামে পরার ভয়ে মৌচাকে যেতেই চাইতামনা। ঢাকা শহরের প্রত্যেকটি রাস্তা আজকে এক একটি ‘মৌচাক’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ট্র্যাফিক জ্যাম সমস্যা ঢাকায় নতুন নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার কি পদক্ষেপ নিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? এখন যেভাবে চলছে এভাবেই কি চলতে থাকবে? যদি চলতেই থাকে তাহলে আজ থেকে ৫ বছর পর কি হবে? আপনি হয়তো হেলিকাপ্টারে করে চলবেন, কিন্তু আমরা? অপেক্ষায় রইলাম কবে ঘোষণা দেবেন বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষকে একটি করে হেলিকাপ্টার দেবেন। আমার কথা আপনার কাছে হয়তো মিথ্যা লাগছে।

কারন আপনার চলার পথে কোন আমজনতা পরেনা। ঢাকার রাজপথ খালি করে এসির বাতাস খেয়ে আপনার চলাচল। এটা বুঝতে গেলে ‘আমজনতা’ না হয়ে উপায় নেই যে! এবার আসি বিদ্যুৎ সমস্যায়। দিনে চার থেকে- পাঁচবার (আট থেকে বারো বারের রেকর্ড গত বছরেই গেছে) ঢাকায় লোডসেডিং হচ্ছে। একেকবার লোডসেডিং এ কমপক্ষে ১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকেনা।

আপনার ডিকশনারিতে হয়তো লোডসেডিং শব্দটি রয়েছে কিন্তু এর ভয়াবহতা সম্পর্কে মনে হয়না পরিচিতি আছে। কারন যদি পরিচয় থাকতো তাহলে দেশের মানুষকে এই অন্ধকার দৈত্যকে দিয়ে গিলে খাওয়াতে পারতেননা। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একটা কথা স্বীকার না করে সত্যিই উপায় নেই। অস্বীকার করলে যে আমি নিজেকেই ক্ষমা করতে পারবোনা। আমাদের সরকার সত্যি সত্যিই শিল্পমনা।

হতে পারে আমাদের দেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কোন ফিল্ম ইন্সটিউট নেই কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই আমাদের পুরো দেশটাই একটা ফিল্ম ইন্সটিউট। একেকজনের দক্ষ অভিনয় দেখে মাঝে মাঝেই বিভ্রান্ত হয়ে যাই আমি কি আসলেই বাস্তবে নাকি সেলুলয়েড ফিতায়? এত গেলো ফিল্ম ইন্সটিউটের কথা। ঢাকার রাজপথের কোন কোন রাস্তা এমন যে গাড়িতে চাপলে ‘বিরতি-নৃত্য’ বা ‘ব্রেক ড্যান্স’ সম্পর্কে একটা ভাল ধারণা না হয়ে উপায় নেই। পৃথিবীতে খুব সম্ভব আমাদের দেশেই রাস্তা ঘাটে চলাচলের মাধ্যমে এই ‘বিরতি নৃত্য’ শেখানো হয়। সুতরাং স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি আমাদের সরকার সত্যিই শিল্পমনা।

ছোটবেলায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যফ্রন্ট দেখে ভাবতাম এটা কেন হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যফ্রন্ট হলনা? এখন এর উত্তর আমার জানা হয়ে গেছে। পত্রিকার পাতায় যখন মূর্তি ভাঙার খবর পড়ি বুঝতে পারি দুর্গা পুজা এসে গেছে। এসব ঘটনা এখন স্বাভাবিক মনেহয় কিন্তু রামুর ঘটনা? দুঃখিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এটা আমার কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিবছর মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ ৫ পাওয়া নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা হয়। এবং এই প্রতিযোগিতায় প্রতিবছরই আগের বছরকে সংখ্যায় বিপুল ব্যাবধানে পরাজিত হতে হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সব বিষয়ে ৮০ এর উপর নম্বর পেয়েও যদি কেউ হতাশায় ভোগে আপনার কি ভাল লাগে? হ্যা, শুধুমাত্র ৮০ এর উপর নাম্বার পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের কথাই বললাম। এর নিচে যারা পায় তারা তো গোনার বাইরে। আমি জানি এভাবে বলতে থাকলে দিস্তার পরে দিস্তা কাগজ শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আমার চিঠির শেষ হবেনা। আর বড় হলেও সমস্যা। এসএমএসের যুগে কে এতো বড় চিঠি পড়তে চায়! তারপরেও একটা কথা না বললে আমি নিজেই আসলে সন্তুষ্ট হতে পারবোনা।

আজকে আপনার সরকার ক্ষমতায় এর একটা বড় কারন ছিল তরুণদের ভোট। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন। ৪০ বছর পর দেশের মাটিতে শত্রুর বিচার হবে, এটা যে কতো বড় ব্যাপার তা হয়তো আপনি বুঝতে পেরেছিলেন। আপনার সরকার এখন শেষ লগ্নে। কবে হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার? ছোট্ট মেঘ হয়তো এখনো তার বাবা-মার অপেক্ষায় রয়েছে।

আমি আমার সোনার বাংলার অপেক্ষাতেই রইলাম। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.