আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পণ্য(জামদানি এবং………………..) বাংলাদেশের, কিন্তু মালিকানা স্বত্ব ভারতের!

এস এম আরিফ বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকার চুক্তি যা Trade Related Intellectual Property Rights (TRIPS) নামে পরিচিত। এটি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার(WTO) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি চুক্তি। বাংলাদেশ ২০১১ সালে এবং প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারত ২০০৭ সালে উক্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। প্রত্যেকটি ভৌগোলিক অঞ্চলের কিছু স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ওই স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যগুলো প্রত্যেকটি ভৌগোলিক অঞ্চলকে আলাদা আলাদাভাবে সমৃদ্ধ করেছে।

স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যগুলো বিশেষায়িত হতে পারে বিভিন্ন ধরণের পণ্য দ্বারা। তা প্রাকৃতিকও হতে পারে আবার হতে পারে প্রক্রিয়াজাতও। ওই প্রাকৃতিক বা প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলো সমগ্র বিশ্বব্যাপী এর ধারক ভৌগোলিক অঞ্চলটিকে পরিচিত করে তুলে। যা শুধু পরিচিতকরন কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ওই পণ্যগুলো বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হাতিয়ার হতে পারে।

অভ্যন্তরীণ পণ্যগুলোর মধ্যে মুক্তাগাছার মণ্ডা, টাঙ্গাইলের চমচম , বগুড়ার দই ইত্যাদি ইত্যাদি পণ্যগুলোর যেমন চাহিদা এবং সুনাম রয়েছে তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের জামদানি, ইলিশ মাছ, ফজলি আম, নিম গাছ ইত্যাদি পণ্যের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। এই পণ্যগুলোকে আবার ভৌগোলিক নির্দেশিক পণ্য বলে। চুক্তি অনুযায়ী স্বাক্ষরকারী দেশগুলো তাদের নির্দেশক বিভিন্ন পণ্যের স্বত্ব রক্ষার অধিকার রাখে। এতে পণ্যগুলোর বিভিন্ন আইনগত অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হবে। ২০০৮ সালে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় WTO-এর সহায়তায় ৩টি মৎস্য পণ্য, ১২টি ফল, ১১টি প্রক্রিয়াজাত খাবার, ৮টি শাক-সবজি, ১৪টি কৃষিজাত পণ্যসহ মোট ৪৮টি খাদ্যপণ্য এবং খাদ্য বাদে ১৮টি পণ্য মিলে ৬৬টি পণ্যকে বাংলাদেশের জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর আবেদন সাপেক্ষে যে পণ্যগুলোর মালিকানা স্বত্ব বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার(পাঠক পড়তে পারেন, ভারতকে উপহার দেয়ায়) কারণে জামদানি, ফজলি আম, নিমগাছ সহ আরো কিছু বিখ্যাত পণ্যের স্বত্ব ভারতের কাছে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্র ভারত এ বছরের শুরুর দিকে মালিকানা স্বত্বের জন্য আবেদন করে এ পণ্যগুলোর স্বত্ব ভাগিয়ে নিয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের বিখ্যাত এ পণ্যগুলো এখন থেকে বিশ্ব বাজারে এদের অবস্থান হারাবে। জায়গা করে নেবে ভারতের দ্বিতীয় শ্রেণীর পণ্যগুলো।

ভারতের যুক্তি ছিল, ফজলি আম পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার বিখ্যাত আম; নিম গাছ রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ বান্ধব ঔষধি গাছ; জামদানি অন্ধ্র প্রদেশের বিখ্যাত পণ্য এবং অন্যান্য পণ্যগুলোর ক্ষেত্রেও এরকমই খোঁড়া যুক্তি ছিল। তবুও বাংলাদেশ সরকার তখন এর কোন প্রতিবাদ করেনি বা পণ্যগুলোর স্বত্ব নিজেদের দাবি করেনি। অথচ ফজলি আম রাজশাহী অঞ্চলের বিখ্যাত ফল; নিম গাছ, জামদানি ইত্যাদি পণ্যগুলোও ভারতসহ অন্যান্য দেশ সমূহ বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে থাকে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের এ রকম বন্ধুসুলভ আচরণ আর কতকাল চলবে?! আর আমাদের সরকারও বা ভারতের প্রতি এভাবে আর কত উদারতা প্রদর্শন করে চলবে? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।