আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুভ জন্মদিন মহাত্মা গান্ধি

গতকাল থেকেই মনটা ভালো নেই... প্রথম আলো তে বৌদ্ধপল্লিতে হামলার ঘটনা,শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধবিহার ধ্বংস , বাড়িঘর পোড়ান, কত শত মানুষকে বাস্তুহারা করা..."সর্বোপরি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন" এই চরম অশ্লীল শব্দগুলোর অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা বিষম কষ্টের... আমি সত্যি বুঝতে পারিনা মানুষ কিভাবে নিজেকে এতটা নিচে নামায়... ধিক মানব সভ্যতা !!! বিমর্ষ চিত্তে গুগলে ঘুরতে গিয়েই চোখে পড়ল আজ মহাত্মা গান্ধির জন্মদিন ! মহান এই মানুষটার শত শত কীর্তি নিয়ে আমি আজ কথা বলছিনা...আমি বলছি তাঁর অহিংশ নীতির কথা। এই মানুষটির কিছু কথা এবং উক্তি এত চমৎকার... অর্থ গুলো হৃদয়ে ধারন করতে পারলে হয়তবা সত্যিকার অর্থেই মানবতার জয়গান গাওয়া হবে। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ১৮৬৯ সালে পোরবন্দরের হিন্দু মোধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গান্ধীর অস্ত্র ছিল অসহযোগ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ। ১৮ বছর বয়সে ১৮৮৮ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে যান।

শুরুতে যদিও তিনি ইংরেজ আদব কায়দা পরীক্ষামূলকভাবে গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু শুধু তার মায়ের কথায় সাধারণ নিরামিষভোজী জীবন যাপন না করে তিনি এ বিষয়ে পড়াশোনা করে একান্ত আগ্রহী হয়ে নিরামিষভোজন গ্রহণ করেন। । [লিংক] ২৩ বছর বয়সে ১৮৯৩ সালে তিনি তাঁর পরিবার রেখে দক্ষিন আফ্রিকায় গমন করেন অর্থ উপার্জনের উদ্দেশে...দক্ষিণ আফ্রিকা গান্ধীর জীবনকে নাটকীয়ভাবে পরবর্তন করে দেয়। এখানে তিনি ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সাধারণভাবে প্রচলিত বৈষম্যের শিকার হন। একদিন ডারবানের আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট তার পাগড়ি সরিয়ে ফেলতে বলেন।

গান্ধী তা অগ্রাহ্য করেন এবং আদালত কক্ষ থেকে ক্ষোভে বেরিয়ে পড়েন। তাকে পিটার ম্যারিজবার্গের একটি ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর কামড়া থেকে তৃতীয় শ্রেণীর কামড়ায় যেতে বাধ্য করা হয়, প্রথম শ্রেণীর বৈধ টিকিট থাকা স্বত্ত্বেও। স্টেজকোচে ভ্রমণের সময় একজন চালক তাকে প্রহার করে কারণ তিনি এক ইউরোপীয় যাত্রীকে জায়গা করে দেয়ার জন্য ফুট বোর্ডে চড়তে রাজি হননি। যাত্রাপথে তাকে আরও কষ্ট করতে হয় এবং অনেক হোটেল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এই ঘটনাগুলোকে তার পরবর্তী সামাজিক কার্যকলাপের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রাখে।

ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ, কুসংস্কার এবং অবিচার লক্ষ করে গান্ধী তার জনগণের মর্যাদা এবং অবস্থান নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে তাঁর জীবনের ২০ বছর তিনি এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর সত্যগ্রহ নীতি বজায় রেখেছিলেন। শান্তিকামী ভারতীয়দের উপর এহেন নিগীপনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ মানুষের মধ্য থেকেই প্রতিবাদ শুরু হয়। অগত্যা, দক্ষিণ আফ্রিকার জেনারেল ইয়ান ক্রিশ্চিয়ান স্মুট গান্ধীর সাথে সমঝোতা করতে বাধ্য হন। এর মাধ্যমেই গান্ধীর আদর্শ প্রতিষ্ঠা পায়, সত্যাগ্রাহ তার আসল রূপ পেতে শুরু করে।

[লিংক] ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনের সূচনাকারী তিনি ছিলেন। “অসহযোগ'” ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও সাফল্য লাভ করে। [এখানে দেখুন] উত্তেজনা বৃদ্ধিকারী এ আন্দোলনকে সমাজের সকল স্তরের লোক অংশগ্রহণ করে। আন্দোলনটি শীর্ষে আরোহন করামাত্র অপ্রত্যাশিত ভাবে এ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে উত্তর প্রদেশের চৌরি চৌরায় এরক তীব্র সংঘর্ষের ফল হিসেবে। আন্দোলনটিতে সহিংসতার দিকে মোড় নিতে দেখে এবং এর ফলে সকল কর্মকাণ্ডের ব্যর্থতার আশংকায় গান্ধী গণ অসহযোগ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

গান্ধী ১৯২০ এর দশকের বেশির ভাগ সময় নীরব থাকেন, এ সময় তিনি স্বরাজ পার্টি এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মাঝে বাধা দুর করতে চেষ্টা করেন। অস্পৃশ্যতা, মদ্যপান, অবজ্ঞা এবং দারিদ্রতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। ১৯২৮ সালে তিনি আবার সামনে এগিয়ে আসেন। গান্ধী এর মাধ্যমে তরুণ নেতা সুভাষ চন্দ্র বসু এবং জওহরলাল নেহরুর দর্শন সঞ্চালন করেন যারা অবিলম্বে স্বাধীনতার পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি একজন ক্লান্তিহীন সমাজ সংস্কারক ছিলেন এবং সব ধর্মের ভণ্ডামী, অপকর্ম ও অন্ধবিশ্বাসের বিপক্ষে ছিলেন।

ধর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন: “ যদি আমি খ্রিস্টান ধর্মকে নিখুঁত এবং শ্রেষ্ঠতম ধর্ম হিসেবে মেনে নিতে না পারি, তবে হিন্দু ধর্মকেও সেভাবে মেনে নিতে পারি না। হিন্দুধর্মের ত্রুটিগুলি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যদি অস্পৃশ্যতা হিন্দু ধর্মের অংশ হয় তবে, এটি একটি পচা অংশ বা আঁচিল। বেদবাক্যগুলোকে ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত উক্তি বলার কারণ কি? যদি এগুলো অনুপ্রাণিত হয় তবে বাইবেল বা কোরান কেন নয়। খ্রিস্টান বন্ধুরা যেভাবে আমাকে ধর্মান্তরিত করতে প্রবল চেষ্টা করেছেন তেমনি মুসলিম বন্ধুরাও করেছেন।

আবদুল্লাহ শেঠ ইসলাম চর্চা করার জন্য আমাকে প্ররোচিত করে চলেছেন এবং এর সৌন্দর্য সম্পর্কে সবসময়ই তার কিছু বলার থাকে। যখনি আমরা নৈতিক ভিত্তি হারিয়ে ফেলি, আমরা ধার্মিক হওয়া থেকে ক্ষান্ত হই। নৈতিকতা হারিয়ে ধার্মিক হওয়া বলতে কিছু নেই। উদাহরণস্বরুপ, মানুষ মিথ্যাবাদী, নির্মম এবং আত্মসংযমহীন হয়ে দাবি করতে পারে না যে ঈশ্বর তার সাথে আছেন। ” [এখানে দেখুন] পরবর্তী জীবনে তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তিনি হিন্দু কি না তিনি বলেন, “ হ্যাঁ, আমি তাই।

এ ছাড়াও আমি একজন খ্রিস্টান, একজন মুসলিম, একজন বৌদ্ধ এবং একজন ইহুদি। ” অনেক রাজনৈতিক নেতা ও আন্দোলনকে গান্ধী প্রভাবিত করেছেন। আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলন-এর অন্যতম নেতা মার্টিন লুথার কিং ও জেসম লওসন গান্ধীর অহিংস নীতির আলোকে নিজেদের কর্মপন্থা ঠিক করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা নেলসন মেন্ডেলাও গান্ধীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। এই তালিকায় আরো আছেন খান আবদুল গাফফার খান , স্টিফ বিকো ও অং সান সু চী গান্ধীর জীবন ও শিক্ষা অনেককে অনুপ্রাণিত করেছে।

এদের অনেকে পরবর্তী সময়ে গান্ধীকে তাদের শিক্ষাগুরু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কথা প্রসঙ্গে একটি মজার ঘটনা না উল্লেখ করলেই নয়,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও গান্ধীর ভিতরে পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকা স্বত্ত্বেও তাঁরা একাধিকবার নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এই বিতর্কগুলি সে সময়কার জনপ্রিয়তম দুই ভারতীয়ের ভিতরে দার্শনিক মতভেদকে প্রমাণ করে। ১৫ জানুয়ারি, ১৯৩৪ সালে বিহারে একটি ভূমিকম্প আঘাত করে এবং এটি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের কারণ হয়। গান্ধী বলেন, এটি হবার কারণ হল উঁচুশ্রেণীর হিন্দুদের অস্পৃশ্যদের তাদের প্রাসাদে ঢুকতে না দেবার পাপের ফল।

রবীন্দ্রনাথ গান্ধীর এই মন্তব্যের ব্যাপক বিরোধীতা করে বলেন, ভূমিকম্প কেবল প্রাকৃতিক কারণেই সংঘটিত হতে পারে, অস্পৃশ্যতার চর্চা যতই বেমানান হোক না কেন। [লিংক] গান্ধী ছিলেন বহুমূখী লেখক, সম্পাদক। দশক ধরে তিনি সম্পাদনা করেছেন গুজরাটী, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকা হরিজন। গান্ধীর বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তার আত্মজীবনী, সত্যের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতার গল্প (The Story of My Experiments with Truth), দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রাম নিয়ে “দক্ষিণ আফ্রিকায় সত্যাগ্রহ (Satyagraha in South Africa), স্বাধীকার বিষয়ে মেনিফেস্টো “হিন্দি স্বরাজ” (Hind Swaraj or Indian Home Rule) ও গুজরাটী ভাষায় জন রাসকিন-এর ( Unto This Last) ।

১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি এই মহান নেতা কে গুলি করে হত্যা করা হয়। সারাজীবন যিনি অহিংসার কথা প্রচার করেছেন এবং বিশ্বাস করেছেন, তাঁকেই কিনা মারা যেতে হয় হিংসা এবং চক্রান্তের শিকার হয়ে !!! গান্ধীর জন্মদিন অক্টোবর ২ ভারতের জাতীয় ছুটি, গান্ধী জয়ন্তী হিসাবে পালিত হয়। ২০০৭ সালের ১৫ জুন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গান্ধীর জন্মদিনকে বিশ্ব অহিংস দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব বিখ্যাত একটি প্রবচন “ পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা কর”। তাঁর বিখ্যাত কিছু উক্তি গুলোর মধ্যে আমার খুব পছন্দের কিছু এখানে লিপিবদ্ধ করলাম... মূল ভাবটুকু অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য আর অনুবাদ করলাম না... আগ্রহীরা আরও জানার জন্য [এখানে দেখুন] “Live as if you were to die tomorrow. Learn as if you were to live forever.” “Be the change that you wish to see in the world.” “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.” “First they ignore you, then they ridicule you, then they fight you, and then you win.” “Seven Deadly Sins Wealth without work Pleasure without conscience Science without humanity Knowledge without character Politics without principle Commerce without morality Worship without sacrifice.” “A man is but the product of his thoughts. What he thinks, he becomes.” “Your beliefs become your thoughts, Your thoughts become your words, Your words become your actions, Your actions become your habits, Your habits become your values, Your values become your destiny.” এমন আরও অসংখ্য চমৎকার অনুপ্রেরনা মুলক কথা উনি বলে গেছেন।

আজকের এই দিনে, উনার জন্মদিনে উনাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি...শুভ জন্মদিন মহাত্মা গান্ধি!!!  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।