আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিডিয়া কথন-কর্পোরেট কালচার বনাম মিডিয়া কালচার...

একি আজব কারখানা........... সামুতে আমার অনেক পরিচিত অপরিচিত ব্লগার বন্ধুরা আছেন, যারা মিডিয়াতে কাজ করতে আগ্রহী। ফেসবুকে আমাদের সিনেমা পিপল গ্রুপে মানুষের আগ্রহ থেকে বুঝতে পারি, ফিল্ম মেকিং এর স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। তাদের মিডিয়ার এবং শো বিজনেসের ভিতরের কিছু কথা জানানো নিজের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করছি। একটু বড় হলেও কষ্ট করে পড়ুন। আমি শিওর, আপনি একটু হলেও মিডিয়া কালচার সম্পর্কে জানতে পারবেন।

মিডিয়ার অনেক অজানা ব্যাপার ও উঠে আসবে ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে। আমি মেডিকেল ছেড়ে যখন মিডিয়ায় পড়াশোনা করি এবং মিডিয়া সেক্টরে জব করি, তখন আত্মীয় থেক শুরু করে সুশীল সমাজ আমার দিকে বাকা চোখে তাকিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে বলেছিলো- "ওহ মিডিয়া, তন্ময় তুমি তো খারাপ একটা পথ বেছে নিলে। মিডিয়ায় সবাই খারাপ, সবি খারাপ। " আমি তখন কিছু বলি নি। এখন বলছি- প্রথমেই বলি, আপনার জন্য শো বিজনেস না।

যে শো বিজনেস নারীকে পন্য করে, যে শো বিজনেস একজন নারীকে বর্ষায় ভিজিয়ে, তা দেখিয়ে একজন গরীব মানুষের টাকা দিয়ে বড়লোক হয়, সেই শো বিজনেস কে আপনি কেন ভালো ভাবছেন ! কেন আপনি ইন্টারটেইনমেন্ট বিজনেস কে উপাসনায়ের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন ! আপনি থাকুন না ভালোর দলে। কে মানা করেছে। কিন্ত আজকে একজন সেলিব্রেটিকে সবাই চিনছে, আপনাকে কেউ চিনলোনা, সেই জেলাসিতে আপনি আমাদের খারাপ বলতে পারেন না। আপনি সেলিব্রেটি নন, পপুলার নন, এটা আপনার ব্যার্থতা। আপনি যদি ভালোর দলে থেকে একটা পর্যায়ে এসে আমার গালে একটা চড় মেরেও বলেন, তুমি খারাপ, আমি মেনে নেব।

কিন্ত আপনি নিজে ভালো থাকতে না পেরে দোষ দিবেন মিডিয়ার, তাহলে কোন আপনার কথার প্রতিবাদ করবো না ? আপনি ভালো থাকতে পারেন নি, এইটা তো আপনার দোষ, আপনার ব্যার্থতা। তাহলে সবাই যে চিন্তা করে শো বিজ মানেই খারাপ, এর সত্যতা কতটুকু ? মিডিয়া কি আদোয় এত খারাপ ? আমার কথা হচ্ছে মিডিয়া আদৌ এত খারাপ না, এত ভালোও না। ডিপেন্ড করে। আর পুরা জগতটা কি আদৌ ভালো নাকি, কিংবা আদৌ খারাপ নাকি ? এ কথার প্রেক্ষিতে বলতে পারেন, "কর্পোরেট ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে তো এত কথা উঠেনা, তাহলে মিডিয়া নিয়ে কেন এত কথা উঠবে ? " আগে বলুন কেন উঠবেনা ? আপনি টিভি খুললেই মিডিয়া, কম্পিউটার খুললেই ফেসবুক, ব্লগ, মানে নিউ মিডিয়া। বিজ্ঞাপন মিডিয়া, ফিল্ম মিডিয়া, নিউজ মিডিয়া, এমন কি আপনার স্মার্ট ফোন টি হয়ে উঠতে পারে একটি মিডিয়া টুলস।

সব যায়গাতে মিডিয়া। তাহলে মিডিয়া যেখানে এত এভাইলেবল এবং সুপারফিশিয়াল, মিডিয়া নিয়েতো কথা উঠবেই। মিডিয়া তো চোখে পড়বেই। বিজনেসটাই যে শো বিজনেস। কাস্টিং কাউচ প্রবলেম মিডিয়ার কোথাও আপনি দমাতে পারবেন না।

এমন কি ইরানের মত ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও আপনাকে অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এটা হচ্ছে অত্যন্ত সিক্রেট একটা ব্যাপার ইন্ডাস্ট্রির। ইরান কেন তা ফ্লাশ করবে ? তারমানে হচ্ছে মিডিয়া আসলেই ভালো যায়গা না। আজকে হয়তো আপ্নি প্রডিউসার হয়ে নায়িকার সাথে সেক্স করছেন না, কিন্ত আমি ডিরেক্টর হয়ে করছি। তাহলে তো আমি ইন্ডাস্ট্রিকে খারাপ বানাচ্ছি ই।

যদিও আপনি কিন্ত ঠিকি মিডিয়াকে ভালো করার চেষ্টা করছেন, তাতে কি লাভ হচ্ছে আসলে? মেজরিটি মাস্ট বি গ্রান্টেড। যেখানে মেজরিটিই খারাপ সেইখানে আপনি হয়তো ভালো থাকতে পারবেন, কিন্ত সমস্যা হচ্ছে বাইরের মানুষ তা জানবে না। তারা ভালো খারাপ সবাইকেই জেনারালাইজ করে ফেলবে। এক বাক্যে বলে ফেলবে, মিডিয়া মাত্রই খারাপ। কাজেই মিডিয়াতে আসতে হলে আপনার চিন্তা ভাবনা করেই আসতে হবে।

আপনি অতি সাধু প্রকৃতির হলেও আপনি মধ্যম খারাপ, আপনি মধ্যম খারাপ হলেও আপনি খারাপ, আপনি অতি উচ্চ প্রকৃতির খারাপ হলেও আপনি মধ্যম খারাপ। কাজেই মহা খারাপদের জন্য মিডিয়া অভয়ারন্য। আপনি যদি ভালো থেকে সমস্ত প্রতিকুলতা জয় করে মিডিয়াতে নিজের একটা সফল যায়গা করে নিতে পারেন, একজন মিডিয়া কর্মী হিসেবে আমি আপনাকে স্যালুট দিবো। আপনি এটা ডিসার্ভ করেন। কিন্ত সুশীল সমাজ আপনাকে সেই লোফার ক্যারেক্টারেই জাজ করবে।

আচ্ছা, ফ্যাক্টস এ আসি। একজন টেকনিশিয়ান, যিনি ক্যামেরা ম্যান, অথবা প্রডাকশন বয় বা লাইটম্যান, তারা কতটা স্ট্রাগল করে ধারনা আছে আপনাদের ? শাকিব খান তার প্রথম জীবনে উত্তরা শুটিং ইউনিট থেকে হেটে হেটে চলে আসতো যাত্রাবাড়ি। প্রথমে ভেবেছিলো না খেয়ে কি আসতে দিবে নাকি ? কিন্ত তার ভাগ্যে খাবার নেই। আফসোস, তাদের জন্যই খাওয়া আছে, যাদের খাবার কোন দরকার নেই। আর যেই ছেলেটার আসলেই খাবার দরকার ছিলো তার ভাগ্যে জুটে কেমল বাস ভাড়া, আর কিছু নয়।

অথচ নায়ক নায়িকাদের (রিয়াজ, মৌসুমী) জন্য কত গিফট, গাড়ির ব্যাবস্থা, শেরাটনের খাওয়া। সেই শাকিব খান যখন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ধরে রাখে তার ছবি দিয়ে, তাকে স্যালুট জানাতেই হয়। ট্রাস্ট মি হি ডিজার্ভস দিস। আর বাইরের মানুষ বা টক শোতে সেই সব পরিচালকরাই বলে, আমার ইউনিটের সবাই খুব ভালো খাবার পায়। তাদের কোন সমস্যা হতে দেই না আমি।

এওয়ার্ড অনুষ্টানে তারা পুরষ্কার হাতে নিয়ে বলে, " আমি আমার প্রডাকশনের সমস্ত কাস্ট এন্ড ক্রু কে ধন্যবাদ জানাই। সমস্ত টেকনিশিয়ান, যাদের হেল্প ছাড়া এই কাজ টি সম্ভব হতোনা। এটস আ টোটাল টিম ওয়ার্ক" , অথচ সেই ব্যাটার প্রডাকশনে কত দিন যে কতজন না খেয়ে থেকেছে। হা হা, কত বড় প্রহসন, চিন্তা করেন। ক্যামেরা অন হলেই, " আপনারা মাদক কে না বলুন, মাদক গ্রহন করবেন না।

" তার পরেই ব্যাকস্টেজ থেকে একটা ডাইল মেরে শুরু হয় মাদকবিরোধী কনসার্ট। এই প্রহসন আমি মিডিয়া ছাড়া আর কোথায় দেখতে পাবো বলেন ?? এই যে বিহাইন্ড দা সিনের এইসব মজা, তা আমি আরো ভালো করে দেখতে চাই, বুঝতে চাই মানুষের মনস্তত্ব। আপনারা কেউ যদি আমার স্ক্রিপ্ট গুলো পড়েন, তাহলে দেখবেন এইসব হিপোক্রেসিই আমার স্টোরি তে বেশি প্রাধান্য পায়। মানুষের মনের অন্ধকার দিকটা, পার্ভার্টনেস স্টাডি করার বেস্ট যায়গা মিডিয়া। এ কারনেই আমি থাকতে চাই মিডিয়াতে।

আমার স্ক্রিপ্টে আপনারা দেখবেন মানুষ কত বহুরুপি হতে পারে। মূলত এই শিক্ষাটা আমি পেয়েছি শো বিজনেস তথা মিডিয়াতে এসে। আমার ব্যাক্তিগত জীবনেও অনেক কাজে আসে এই শিক্ষা। আমি কৃতজ্ঞ মিডিয়ার প্রতি। একজন মানুষ হেসে আবার সাথে সাথে হাসিটাকে মিলিয়ে দেয়া, এটা শো বিজনেসের মানুষ ছাড়া আর কেউ পারেনা।

এই যে একজন নায়িকা আরেকজন কে দেখলেই গাল ঘষাঘষি, "ওহ গড, কেমন আছ তুমি, অনেক ভালো হচ্ছে তোমার কাজ। " কনসার্ট বা কোন প্রোগ্রামে একসাথে পারফর্ম করা অথচ মনে মনে বলে " হেহ, কাদের সাথে শুয়ে তুমি এই যায়গায় এসেছ, তা কি আমি জানিনা ? দাড়াও আসল যায়গায় প্যাচ বাধাচ্ছি। " কাজেই এই বিহেভিয়ার কিন্ত মিডিয়া কালচারের ই একটা অংশ। এখানে টিকে থাকতে হলে ব্রেইন খাটিয়েই চলতে হবে। নোংরা পলিটিক্সের খেলা খেলে, ব্রেইন ব্যাবহার করে, যে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবে, সেই সারভাইভর, সেই একসময় হবে মিডিয়া আইকন।

আমি ইন্টারনাল মিডিয়ার এই চ্যালেঞ্জ টা ভালোবাসি। কিন্ত একটা ব্যাপার মাথায় রাখবেন, যারা যারা এই নোংরা পলিটিক্স করছে, তারা তারাই কিন্ত আর্ট ফিল্ম বানিয়ে দেশের জন্য পুরস্কার নিয়ে আসছে। এখন এফডিসির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হচ্ছেন পিযুষ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন " দেশে পাচটাও ভালো ছবি হচ্ছেনা", তুমি শালা কয়টা সিনেমা বানিয়েছ ? এফডিসির উন্নয়নের জন্য তুমি কি করেছ ?? তারেক মাসুদ কে শহিদুল ইসলাম খোকন প্রশ্ন করেছিলো তৃতীয় মাত্রায়- " আমি এফডিসিতে ৩৪ টা সিনেমা বানিয়েছি, আপনি দেখেছেন এর একটাও ? " তারেক মাসুদ উত্তর দিলেন " না"। "তাহলে এফডিসি নিয়ে কোন কথা বলার অধিকাই আপনি রাখেন না।

" "রানওয়ের" আলী আহসান বা এডিটর মুশফিক ভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছি, তারেক মাসুদ ছবি বানাতেন এওয়ার্ডের জন্য। গনমানুষের সিনেমা বানিয়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কন্ট্রিবিউশন তার উদ্দেষ্য ছিলোনা। তারেক মাসুদ, ফারুকি, হুমায়ুন আহমেদ, তারা কি আসলেই সাধু পুরুষ ? কখনোই না। তাদের ভিতরের কথা বলতে হলে অনেক কথাই ফ্লাশ করে দিতে পারি, যা শুনলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। স্যার এমন কাজ ও করতে পারে ? কিন্ত তাই বলে তাদের বানানো ছবি কি জাত্রীয় পুরুষ্কার পায় নি ? আগুনের পরশমনি এখনো বাংলাদেশের মুক্তিযদ্ধের উপর শ্রেষ্ঠ ছবিগুলার একটা।

"থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, মাটির ময়না, ঘেটুপুত্র কমলা " নির্বাচিত হয় অস্কারের জন্য। তাদের ছবি কান, বার্লিন ফেস্টিভলে যাচ্ছে। ফারুকির কাজ কে যারা বালছাল বলেন, তারা কি ফারুকির "স্পার্টাকাস" দেখেছেন ? সে যে ভালো কাজও করতে পারে, এইতাই তার প্রমান। এরা নাকি খালি নাটক ই বানান, এদের দ্বারা ছবি তৈরি হবেনা। কেন, ভারতের অনুরাগ ক্যাশপ,অভিনব কশ্যাপ, দেখবেন তারা বস্তাপচা টিভি সিরিয়াল বানাচ্ছে, দাবাং এর মত ব্লকবাস্টার মাশালা মুভি বানাচ্ছে, আবার বরফি বা গ্যাং অফ ওয়াসিপুর এর মত অস্কারে পাঠানর মত ফিল্ম ও বানাচ্ছে।

তারা কিভাবে পারছে ? তারা নাটক বানালে তো কেউ সেটা নিয়ে কথা বলেনা। নুরুল আলম আতিকের "ডুবসাতার" ফুল লেন্থ ফিচার ফিল্ম হিসেবে পড়ানো হয় সত্যজিত রায় ফিল্ম ইন্সটিটিউটে। অথচ আমরা বাংগালিরা সেই ছবিকে বলতাম, এইটা কি বানিয়েছে ? এইটা তো নাটক। ফারুকি যদি আজকে "এ সেপারেশন " বানাতো দেখতেন, সেইটা কে পাব্লিক নাটক বলে পচিয়ে ছেড়ে দিতো। শুধু দেখুন "টেলিভিশন" ছবিটি কতগুলো পুরস্কার নিয়ে আসে দেশের বাইরে থেকে।

কিন্ত সুশীল সমাজ তাদের নিন্দা করা বাদে আর কি বাল টা ছিড়েছে ? কাধে বাকা করে কাশ্মিরি চাদর আর মোটা পাওয়ারের চশ্মাটা নাকের ডগায় ঝুলিয়ে তারা বলে- " এই ছবিটা/ নাটক টা আসলে ঠিক ব্যাবকরন সম্পত হলো না। নাহ, আজকালকার ছেলেমেয়েদের ভিতরে কোন প্যাশন নাই " , আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই সব বুইড়াচোদা সুশীল ফান্ডামেন্টালিস্ট গুলা কি করেছে দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য ? কয়টা ছবি তারা হলে গিয়ে দেখেন ? কয়টা ছবি তারা বানিয়েছেন আর কয়টা ছবি দিয়ে তারা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নাম উজ্জল করেছে ?? তারাতো পড়ে আছে তাদের সমালোচনা নিয়ে। আরে বাস্টার্ডস, তোরা কিছু করে দেখা না আগে। (পার্ডন মাই ল্যাঙ্গুয়েজ) তারিক আনাম খান, নিমা রহমান শধু নাটক বানিয়ে মাসে চ্যানেল থেকে ক্যাশ করে ২৫ লাখের উপর। তাদের "গুলশান এভ্যিনিউ" নাটক টি নাকি পুরা হিন্দি সিরিয়ালের মত।

কিন্ত এই তারিক আনাম খান ই "ঘেটুপুত্র কমলা" তে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দেন নি ? তাহলে তারা কি ক্রিয়েটিভ না ? অবশ্যই ক্রিয়েটিভ। তারা একইসাথে ক্রিয়েটিভ ও হতে পারে, একই সাথে ব্যাবসাও করতে পারে, মাগিবাজী করতে পারে, আর্টস কালচারে ভুমিকা রাখতে পারে, আবার দেশের জন্য পুরষ্কার ও আনতে পারে। তাদের জন্যই টিকে আছে ইন্ডাস্ট্রি। আপনার আমার জন্য নয়। এটা মাথায় রাখতে হবে।

কাজেই এইসব মিডিয়া কর্মিকে আমি একরতফা ভাবে ভাল বা খারাপ বলতে পারি না। একজন শো বিজনেসের মানুষের যেমন একজন কে ঠেলে ফেলে দেয়ার প্রবনতা আছে, তাদেরি মধ্যে আবার একজন কে টেনে তোলার প্রবনতা আছে। একজন সুশীল মানুষ যখন একজন নেশাখোর কে ঘৃনা করে, একজন ভন্ড মানুষ, হয়তো সে একজন অভিনেতা , নেশাখোর কে তখন বলে " তুমি পারবা, ইউ ক্যান উইন । " হয়তো কিছু উদাহরন দিতে পারে সেই অভিনেতা। আসলে হয়তো সেই নেশাখোর টা পারবেনা, অভিনেতা যাস্ট ভন্ডামি করেছে, অভিনয় করেছে।

কিন্ত নেশাখোর মানুষ টা কি পরিমান মটিভেটেড হয় জানেন ? ফারুকি ঠিক এভাবেই কবি রিফাত চৌধুরিকে নেশার থেকে বের করে আনেন। মিডিয়ার মানুষের এই কাজ কে কি আপনি আসলেই ভন্ডামি বলবেন ? একজন কর্পোরেট কালচারের মানুষ কিন্ত সেই নেশাখোরের দিকে ফিরেও তাকাবেনা। হাদিসের সেই গল্প টা মনে আছে ? একজন প্রসটিটিউট একটা কুকুরকে কুয়ায় পড়ে থাকতে দেখে তাকে তুলে আনে, তার সেবা সুশ্রষা করে ককুরটাকে সুস্থ করে তোলে। একজন হুজুর কিন্ত কুকুরটাকে দেখে আরো বিরক্ত হবে। গালি দিবে, "এই কুত্তা, সর সর ।

এহহে, সত্তুর দিন নাপাক রে। আমাকে নাপাক করে দিলি" , সারাদিন অজু করতে করতেই হজুর শেষ। কারন তার আছে নাপাকের ভয়। কাজেই পতিতা মেয়েটি যে কাজ টা করতে পারে, একজন হুজুর সেটা করতে পারেনা। শো বিজের খারাপ মেয়েরাও কিন্ত এইরকম কিছু কাজ করে।

কারন তার তো ইজ্জত যাবার ভয় নাই, সত্তুর দিন নাপাক থাকার ভয় নাই। তারাই পারে একজনের প্রান বাচাতে, বাচতে শিখাতে। কাজেই কে ভালো, কে খারাপ, এই জাজমেন্টে আপনি যেতে পারবেন না। শো বিজের একজন নর্তকীও যা করতে পারে, আপনি আমি তা পারবোনা। কারন আমরা তো শিক্ষিত, আমরা তো সুশীল, আমরা কর্পোরেট কালচারের মানুষ।

নেশাখোর আর কুকুর দুইটাই আমাদের কাছে অপদার্থ। আমাদের সমাজে অপ্রয়োজনীয়। এই বাইজি নর্তকিদের নিয়েই শো বিজনেস, আপনার দরকার নেই এই মিডিয়ায় আসা। (রাগ করে বললাম) একটা মেয়ে তার মাকে লেক্সাসে চড়াচ্ছে। এবং মা গ্লাস খুলে দেখছে শহরটাকে।

তিনি বলতেই পারেন- "হ্যা, এটা আমার ই মেয়ে, যে আমাকে গাড়িতে চড়াচ্ছে, যে তার ছোট ভাইটাকে রিহ্যাবিটেশনে পাঠাচ্ছে, যে সংসার চালাচ্ছে, যে তার ভাইকে সিঙ্গাপুরে পড়তে যাওয়ার টাকা বিয়ার করছে। যেখানে বাবা তাদের লাথি দিয়ে চলে যায়, সুশীল সমাজ যেখানে একটু ফিরেও চায় নি আমার দিকে সেইখানে এই মেয়েই আমাকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে দিচ্ছে , ইহাই আমার কাছে ইম্পর্টেন্ট। আমার মেয়ে তথাকথিত মিডিয়া গার্ল,সিনেমার নায়িকা, কিন্ত আমার কাছে সেইটা ইম্পর্টেন্ট না। ঘৃনা করি আমি কর্পোরেট সমাজ কে , যে আমার মেয়েকে একটা চাকরি দিতে পারেনি, চাকুরির জন্য তাকে অফার করেছে বসের সাথে শুতে। সেই মেয়ে এখন আমাদের টেক কেয়ার করছে, মিডিয়ায় ক্যারিয়ার গড়েছে, দেশের মানুষ তাকে চিনে, তার অটোগ্রাফ নেয়, এটাই আমার কাছে সবচাইতে বড়।

" যে ভাবেই মেয়েটা টাকা ইনকাম করুক, মায়ের গর্ব হবেই। মায়ের গর্ব হবেনা সেই ছেলের জন্য, যে এসি রুমে বসে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টায়, নায়িকাদের ছবি দেখে আর বৃদ্ধ বাবা মা কে ফেলে আসে বৃদ্ধাশ্রমে। গুল্লি মারি এইসব ভদ্দ্রচোদার সমাজ কে। "নিরন্তর" ছবিটা দেখেন নি ? আবার, একজন নায়িকা (নাম প্রকাশ করছি না) , বস্তিতে থাকতো। এখন বাড়ি করেছে উত্তরায়।

আরেকজন নায়িকা বাড়ি বানাচ্ছে অস্ট্রেলিয়াতে, যেই নায়িকা আর তার মা, এহতেশামের দুই পাশে বসে থাকতো। কতটা কষ্টে, অভাবে পড়ে মেয়েটাকে নিয়ে গিয়েছে ডিরেক্টরের কাছে, তাতো আমরা বুঝতে চাইবো না। তো আমার সুশীল সমাজ কি তাদের খেয়ে পড়ে বেচে থাকার টাকা দিচ্ছে ? তার গাড়ি বাড়ি , মায়ের স্বপ্ন পুরনে হেল্প করছে ? তাতো করছেনা। হেল্প করছে আমার এই মিডিয়া। আমি মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব করি।

এতে করে কর্পোরেট পাব্লিক আমার উপর আরো আরো চেতবে। অসুবিধা নেই তাতে। ঐ কর্পোরেট আমাকে কি ভাবলো না ভাবলো তা দিয়ে তো আমার কিছু যায় আসেনা। আমি মেডিকেলে পড়তাম দেখে মেয়ের বাবা বিয়ের জন্য এসে বসে থাকতো, আর মিডিয়ায় পড়েছি বলে আমার দিকে সোজা চোখ তাকায় না, এমন লোকেদের আমি থুথুও দেই না। আমার কাছে গুরুত্বপুর্ন হচ্ছে আমি মিডিয়ার মানুষদের ভালবাসতে পারছি কিনা, তারা আমাকে ভালোবাসতে পারছে কিনা।

সুশিল কর্পোরেট সমাজ কি এতই ভালো ? হলমার্ক এর মালিক কি চার হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়ে মার্সিডিজ বেঞ্চে দু পাশে দুইজন মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে না ? রুবাবা দৌলা কি পার্টিতে গিয়ে মাতাল হয়ে ঘরে ফিরছে না ? সি এস আর (সোশাল কর্পোরেট রেসপনসিবিলিট) নামে তারা কি একটা ইস্যু ক্রিয়েট করছেনা ? তো ঐসব কর্পোরেট লোকজন যদি পার্টিতে বসে মদ খেতে খেতে একটা ধান্দাবাজি ক্রিয়েট করে, সেইটা তো কেউ বলেনা। কারন সেইটা হচ্ছে সিএসার। হা হা... পরে দেখা যায়, এ এই ব্যাঙ্ক থেকে এত কোট টাকা মারসে, সে আরেক ব্যাঙ্ক থেকে অত কোটি টাকার ঋনখেলাপি, ব্লা ব্লা। তখন ? এটা হচ্ছে ধরা পড়লে, আর ধরা না পড়লে তারা সবাই ভালো? সবাই দুধে ধোয়া তুলসী পাতা ?? আর সব কিছুতেই সবাই দেখে খালি মিডিয়াকে। তাহলে সবার আগে যেটা করতে হবে নিজের মানসিকতাকে ঠিক করতে হবে।

একজন কি শেয়ার মার্কেটে গ্যাম্বেলিং করে কোটি কোটি টাকা খাইসে কিনা সেটা দেখতে হবে। সমাজের জন্য দেশের জন্য কি করেছে কিনা সেটা দেখতে হবে। তারপরে শো বিজনেস নিয়া কিছু বলতে পারবে। এত সোজা না একজন মানুষ কে ধুম করে খারাপ বলে ফেলাটা। সে কেন খারাপ হলো, খারাপ হতে গিয়ে সে তার পরিবারের রক্তের ঋন শোধ করেছে কিনা কে জানে ? সব কর্পোরেট মানুষদেরি আমি খারাপ বলছিনা।

যেই কর্পোরেট মানুষ টি স্ট্রাগল বুঝে, যার বাবা ছিলো কৃষক, অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন, সেই কর্পোরেট ব্যাক্তি কিন্ত কখনই একজন মিডিয়ার স্ট্রাগলার কে খারাপ বলবে না। আর যারা বাবা মারা ছেলেকে পড়িয়েছে আমেরিকায়, কথা বলে পারেনা বাংলায়, অথচ বাংলা ছবির সম্পর্কে ধুম করে মন্তব্য দিয়ে বসে। তাদের কথামত বাংলাদেশের মিডিয়ার সবাই হচ্ছে মূর্খ। আমি তাদের খারাপ বলছি, যারা না জেনে, না বুঝে বলে মিডিয়া খারাপ ,মিডিয়া কালচারের সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান না রেখেই মিডিয়া জগৎ নিয়ে মন্তব্য করে। জীবনে একটাও বাংলা সিনেমা না দেখে বাংলা সিনেমার নিন্দা করে।

এই কর্পোরেট মানুষগুলাই পিসিতে বসে শাকিব খান কে পচাবে, ইভ টিজিং এর বিরুদ্ধে পেজ খুলবে, আবার মেহজাবীনের হট ছবিতে লাইক দিয়ে র‍্যাডিসন বা ওয়েস্টিনে গিয়ে মিডিয়ার গার্লদের সাথে রাত্রিযাপন করবে। আমরা সেই মানুষ টাকে খারাপ বলছিনা, অথচ রাতিযাপনের জন্য খারাপ বলছি মিডিয়ার মেয়েটিকে। আরে, এখানে মিডিয়ার মেয়েটার সাথে তুমি শুতে পারলে, আবার পার্টিতে মিনিস্টারের মেয়ের সাথেও শুচ্ছ। তাকে তো খারাপ বলছনা, খারাপ বলছো মিডিয়া মেয়েটিকে। একটা জিনিস চিন্তা কর, তোমার সাথে রাত্রিযাপনের টাকা নিয়ে এই মেয়েটা কি করবে, আর তুমি এখানে এসেছ কি উদ্দেশ্য নিয়ে।

তোমরাই আবার ছোট কাপড় পরা হিন্দি মেয়েদের দেখে পুরুষানুভুতি জাগিয়ে তুলবে, আর আমাদের মেয়েরা ঘোমটা না পরলে ফেসসবুকে তাদের ছবি ফ্লাশ করে দিয়ে লাইক ভিক্ষা করবে, কমেন্টে গালিগালাজ করবে। কাজেই ধুম করে শো বিজনেস কে খারাপ বলার কোন অধিকারি তেনাদের নাই। ভাল খারাপের হিসাব এত সোজা না। আর সব যায়গার মত মিডিয়াও ভালো খারাপ নিয়ে গঠিত। ডিপেন্ড করে যার যার মানসিকতার উপর।

মানসিকতা ঠিক থাকলে যে কোন সেক্টরেই আপনি ভালো। উপরে যা বললাম, তা সবাই কম বেশি জানে। কিন্ত আজ কেন যেন মনের সব ক্ষোভ বেরিয়ে এলো কি বোর্ড দিয়ে। যারা পুরা পোস্ট পড়েছেন, তারা এবার বুঝে দেখুন, মিডিয়া কি আপনার জন্য কিনা। মিডিয়া থেকে কিছু নেয়ার চেষ্টা না করে মিডিয়াকে কিছু দেয়ার জন্য আপনি প্রস্তুত কিনা।

কারন বাংলাদেশের মিডিয়ায় একটা র‍্যাপিড চেঞ্জ আসছে। আপনি সৃষ্টি করতে পারেন পরিবর্তনের ইতিহাস। আমি এডভার্টাইজিং মিডিয়ার উপর পড়াশোনা করেছি। জব ও করছি মিডিয়াতে এবং সবসময় থাকতে চাই মিডিয়ার পাশে। এটাই আমার জগৎ।

------------------------------------------ পোস্ট টি উৎসর্গ করলাম আমাদের সিনেমা পিপল গ্রুপ এবং তার ফাউন্ডার মেম্বার ব্লগার মাস্টার কে। তিনি ফিল্ম মেকিং এর প্রতি আগ্রহ জন্মানোর জন্য অনেক ডিভোশন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি সিনেমা পিপল থেকে অনেক ভালো মেকার বের হবে। এই গ্রুপের একজন এডমিন হতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। --------------------------------------- অনেক কমেন্ট পড়ে আমার মনে হচ্ছে, পোস্টের মূলসুর টা অনেকেই ধরতে পারেন নি।

প্রথমত, আমি একজন মিডিয়া কর্মী, এটা শুনেই আমাকে খারাপ ট্যাগ করেছে একজন। কাজেই রাগের মাথায় লেখাটা লেখা। দ্বিতীয়ত মিডিয়াতে খারাপ ধরনের কিছু কিছু ব্যাপার হয়। তবে সেটা সবসময়, সবার জন্য না। এটা যার যার ইচ্ছা।

কেউ চাইলে ভালোও থাকতে পারেন। কাজেই এটা ডিপেন্ড করে নিজের মানসিকতার উপরে। আর মিডিয়ার মেয়েদের নিয়ে যে সব কথা উঠে এসেছে, তা মুখ্য নয়। আমি বলতে চেয়েছি, কেন এসব হচ্ছে, অন্য একটা পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে বলার চেষ্টা করেছি। কম্পেয়ার করে দখিয়েছি, কর্পরেট কালচারে এর চেয়ে ঢের বেশি হয়।

সেই সাথে বলেছি, আমি কেন মিডিয়াতে থাকতে চাই। মিডিয়া খারাপ না ভালো, কে কত ভালো- এইব্যাপারগুলো এখানে মুখ্য না। মুখ্য হচ্ছে, নানাবিধ কারনে মিডিয়ার উপর যে খারাপের ট্যাগ দেয়া হয়, তা সবসময় সত্যি না।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।