আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

T 20 বিশ্বকাপঃ ছোট ম্যাচের বড় দীর্ঘশ্বাস

বাংলাদেশের টি ২০ বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছিল আয়ারল্যান্ড সফরে যাবার আগেই। আয়ারল্যান্ড সফরের ব্যপারে বোর্ড সভাপতির দোদুল্যমানতা, সদস্যদের সভাপতির সুরে কোরাস গাওয়া এবং অবশেষে ওডিয়াই টুর্নামেন্টকে টি ২০ টুর্নামেন্টে পরিণত করা সব কৃতিত্বই বিসিবি’র। টি টুয়েন্টির অভিজ্ঞতা বাড়ানোর নামে এই সফরটি ছিল মূলতঃ ক্রিকেটারদের ভয় তাড়ানিয়া অভিযান। সভাপতি মনের কথা বলেও ফেলেছিলেন একবার। সাগরপারের উপ-দেশটি যদি বাংলাদেশের বিপক্ষে একদিনের ম্যাচে জিতে যায় তাহলে টেস্টের ময়দানে একটি ছোট প্রতি পক্ষের পদধ্বনি শোনা যাবে।

আমাদের টেষ্ট ক্রিকেটের যে পারফরমেন্স তাতে দুর্বল দেশ গুলি নিয়ে আই সিসির বৈষম্যমূলক পরিকল্পনার শিকার হতে হবে বাংলাদেশকে। রেকর্ড বুক যাই বলুক আমরা নিজেরা তো জানি খর্ব শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজ কে হারানো, মূলতানে পাকিস্তানের সাথে জিততে জিততে হেরে যাওয়া আর ফতুল্লায় অস্ট্রেলিয়ার সাথে বীরোচিত লড়াই ছাড়া বড় দলের সাথে টেস্ট খেলার আর কোন সুখ স্মৃতি আমাদের নেই। তাই নিজেদের নাক কেটে আইরিশদের যাত্রা ভঙ্গের অভিপ্রায়ে আমাদের আয়ারল্যান্ড যাত্রা। এরপর আইসিসির সহযোগি সদস্য এই দলটির বিপক্ষে জয়ের উচ্ছাস থামতে না থামতেই স্কটল্যান্ডের কাছে পরাজয়, নেদারল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ ড্র করা এর কোন কিছুই আমদের ক্রিকেটার বা বিসিবিকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। সবশেষে ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোতে আফগানিস্তানের পেছনে থেকে টুরনামেন্ট শেষ করার পরও তাদের মনে হয়েছে টি ২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

খেলোয়াড়রা বলেছে এর চেয়ে ভাল প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশ কখনও কোন টুর্নামেন্টে যায়নি। তাদের সাথে এদেশের ক্রিকেট লেখক আর বিসিবির বিজ্ঞ পর্ষদের সমতানে দেশবাসি আশায় বুক বেঁধেছিল। টি২০ বিশ্বকাপের বিগত তিনটি আসরে একটি মাত্র জয়ের পিঠে সাতটি পরাজয়ের স্মৃতি ভুলে গিয়ে এদেশের ক্রিকেট পাগল মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখেছিল। ক্রিকেট বোর্ডের গালগল্পে আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম খেলাটি হয় ময়দানে। আর জিততে হয় খেলে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর ক্রিকেট বোর্ডের গত কয়েক মাসের কর্মকাণ্ডের অসারতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। টুয়েন্টি - টুয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে তাদের প্রস্তুতির প্রচারনাকে প্রতারণা মনে হচ্ছে। আইসিসির বৈসম্যের অজুহাত তুললেও সহযোগি দেশ গুলোর বিপক্ষে অর্জিত সাফল্য নিয়ে মাতামাতি করে নিজেরাই নিজেদেরকে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সহযোগি দেশগুলোর কাতারে। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দলের সাফল্যের কোন ধারাবাহিকতা নেই। এ যাবত খেলা টি টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের সাওফল্য ৩৩ শতাংশেরও কম আর বড় দল গুলির বিপক্ষে সাফল্য মাত্র ৬ শতাংশ।

ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের গ্রাফও পাতে দেয়ার মত নয়। ধারাবাহিকতার অভাবও সেখানে স্পষ্ট। আয়ারল্যন্ড কে হোয়াইট ওয়াশ করে আমদের ক্রিকেট দল হাওয়ায় ভাসতে শুরু করেছিল। স্কটল্যান্ড তাদের মাটিতে নামিয়ে ফেললেও আমাদের খেলোয়াড়রা সম্ভবত বুঝতে পারেনি। আর টি ২০ ক্রিকেটে কোন ফেবারিট নেই বলে ক্রিকেট লেখকরা তাদেরকে নিজেদের অবস্থান বুঝতে দেয়নি।

২০ ওভারের ক্রিকেটে সব দলই ফেবারিট বলে যারা পান্ডিত্য ফলান তাদের জন্যে একটি তথ্য দেয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। তাহলো এই ধুম ধাড়াক্কা ক্রিকেটেও টেষ্ট ও ওডিয়াইয়ে নাম করা দল গুলিই বরাবর সাফল্য পেয়েছে। এই কথা বলার অর্থ হচ্ছে ভালো খেলার পেছনে ফ্লুকের কোন বিষয় নেই। এবারের বিশ্বকাপেও কথাটি প্রমানিত হয়েছে। ছোট দল গুলির বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছ কাল রাতেই।

একমাত্র জিম্বাবুই ছাড়া অন্যদের বিদায় সম্মানজনকই বলা যায়। আফগানিস্তান জিততে না পারলেও ধোনীর দলকে তাদের আগমনী শুনিয়েছে। বলা যায় অভিজ্ঞতার জোরেই উৎরে গেছে ভারত। যুদ্ধবিদ্ধস্ত আফগানিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যে বীরত্ব দেখিয়েছে, দুধে ভাতে থাকা বাংলাদেশ দল নিউজিলয়ন্ডের বিরুদ্ধে তার অর্ধেক প্রতিরোধও গড়ে তুলতে পারেনি। আয়ারল্যন্ডের বিদায়টিও অগৌরবের নয়।

বৃষ্টির পক্ষপাতিত্বে তারা একটি পয়েন্টও ছিনিয়ে নিয়েছে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের মত দলের কাছ থেকে। শুরুতে একটি উইকেট হারানো ছাড়া বৃষ্টির আগ পর্যন্ত তাদের কে অবহেলা করার বিলাসিতা দেখাতে পারেনি ওয়েষ্ট ইন্ডিজ। পেশাদার ক্রিকেটারদের দল না হয়েও যে পেশাদারিত্ব তারা দেখিয়েছে তা থেকেও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের অনেক কিছু শেখার আছে। দুর্জনেরা বলে থকেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা পারফর্ম করে দলে জায়গা পাবার জন্যে। জায়গাটা ধরে রাখার ব্যপারে তাদের তেমন কোন প্রচেষ্টা চোখে পড়ে না।

তারা দলে টিকে থাকেন নির্বাচকদের নমনীয়তা, বোর্ডের আনুকুল্য আর অন্যদের ব্যর্থতার তুল্য বিচারে। যে দেশের বোর্ড সভাপতি খেলার মানোন্নয়নের চেয়ে নিজের রাজনৈতিক উত্থানের জন্যে বেশি উতলা থাকেন সে দেশের ক্রিকেট নিঊজিল্যন্ডের মত দলের সামনে নুয়ে পড়তেই পারে। বিসিবি আর খেলোয়াড়রা হয়তো বিষয়টিকে স্পোর্টিংলি নিয়েছেন কিন্তু আমরা যারা ক্রিকেট কম বুঝেও খেলাটাকে ভালোবাসি তারা এই পরাজয়ে যতটা না হতদ্যম হয়েছি খেলার ধরণ দেখে তার চেয়ে বেশি হয়েছি মর্মাহত। টস জয়ের পর ফিল্ডিং নেবার সিদ্ধান্ত থেকে খেলার শেষ বল পর্যন্ত একবারও মনে হয়নি বাংলাদেশ জয়ের জন্যে খেলছে। সবকিছুকেই মনে হয়েছে সেই আয়ারল্যন্ড সফরের মানসিকতা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গের কথা।

টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচেই বাংলাদেশ কে পড়তে হয়েছে কঠিন হিসাব নিকাশের প্যাঁচে। সুপার এইটে ঊঠতে গেলে অন্তঃত ৩৭ রানে হারেতে হবে পাকিস্তানকে। আর পাকিস্তান যদি আগে ব্যাট করে তাহলে বাংলাদেশকে কী করতে হবে তা নির্ধারিত হবে খেলার মাঠে। এরকম চাপের মধ্যে থেকে সেরা খেলাটা বের করে আনা শুধু দুরুহ নয় প্রায় অসাধ্য। বিসিবি বলতে পারে খেলোয়াড়রা মাঠে পারফর্ম না করতে পারলে তাদের কি করার আছে? কথাটা এক অর্থে সত্যি।

তবে নিজেদের জন্যে পদের জন্যে না ছুটে বিসিবি যদি শক্তিশালি দলের সাথে অনুশীলনের সুযোগ খূঁজতো তাহলে হয়তো এই ঝামেলায় পড়তে হত না । জনগণ ক্রিকেট খেলেনা, তবে খেলোয়াড়দের জয়ের জন্যে প্রার্থনা করে। বাংলাদেশের পতাকা উঁচু দেখার জন্যে রোজা পর্যন্ত রাখে। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা পারফরমেন্স গত এশিয়া কাপে। এর পর থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেট যেন খেই হারিয়ে খেলেছে।

জানি একটি খেলার ফলাফল নিয়ে এত কথা বলা উচিত নয়। তারপরও বলতে হচ্ছে কারণ এর পর টি ২০তে সাঊথ আফ্রিকাকে হারানো ছাড়া বাংলাদেশের উল্লেখ করার মত কোন সাফল্য নেই। অনেকেই বলতে পারেন বাংলাদেশ কঠিন গ্রুপে পড়েছে। অনেকে আবার আর একটু এগিয়ে বলেন ডেথ গ্রুপ। তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই ২০০৭ সালে বাংলাদেশ যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ছিল তখনও গ্রুপটি সোহজ ছিলনা।

তবে খেলোয়াড়দের কিছু করে দেখানোর ইচ্ছাটা ছিল। তবুও আশায় বুক বেঁধে বসে আছি। বাংলাদেশের দীর্ঘশ্বাস যেন বড় না হয়। জিম্বাবুইতে দক্ষিন আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঘুরে দঁড়ানোর স্মৃতিটাই হোক প্রেরণা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।