আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাহাড়ি-বাঙালি দ্বন্দ্ব নয়, আসলে শাসক-শাসিতেরই দ্বন্দ্ব এবং পরিত্রানের পথ প্রসঙ্গে বিনীত নিবেদন এই যে...

"জল যে পথে যায় রক্ত সে পথে যায় না, কেননা রক্ত জলের চাইতে গাঢ় এবং ঘন। " [আহমদ ছফা] উৎসর্গ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার যাঁরে মনে মনে আমি গুরুজ্ঞানে ভক্তি করি আপাতদৃষ্টিতে বাঙালিদের জাতিগতভাবে শাসক ও পাহাড়িদেরজাতিগতভাবে শাসিত মনে হলেও একটু গভীরভাবে দেখলে দ্যাখা যাবে বাঙালিদের মধ্যে যেমন শাসক শ্রেণী ও শাসিত শ্রেণী আছে পাহাড়িদের মধ্যেও তেমনি শাসক শ্রেণী ও শাসিত শ্রেণী আছে। বাঙালি শাসক শ্রেণী ও পাহাড়ি শাসক শ্রেণী মুখে যতই বিরোধিতা করুক পরস্পরের স্বার্থের ক্ষেত্রে আবার এদের আছে গোপন আঁতাত। তাই, বাঙালি পাহাড়ি নির্বিশেষে সকল জনগণকে এক হতে হবে ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ এর ভেদাভেদ ভুলে এবং লড়তে হবে বাংলাদেশকে এমন একটি মানবতাবাদী রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে যেখানে কেউ কারো দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাবে না শুধুমাত্র চোখের গড়ণ বা চেহারার ধরণ আলাদা হওয়ার কারণে, যেখানে সবার সাথে সবার সম্পর্ক হবে মানবিক। এমন একটি দেশ গড়ে তোলা এমন কঠিন কিছু নয়, চাই জনগণের মাঝে ঐক্য ও সম্মিলিত প্রতিরোধ।

"মাতৃভূমির মুক্তি অথবা মৃত্যু, বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক"... সংযোজনঃ ১/ "জনগণের মাঝে ঐক্য" বলতে আমি শাসিত শ্রেণীর সব মানুষের [বাঙালি ও পাহাড়ি] ঐক্য বুঝিয়েছি, আমার কাছে শাসিতরাই জনগণ বর্তমান বৈষম্যভিত্তিক ব্যবস্থায়। আর "সম্মিলিত প্রতিরোধ" শব্দটার পরে "বাঙালি ও পাহাড়ি শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে" কথাটা উহ্য আছে। ২/ শাসক শ্রেণী = বাঙালিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ইত্যাদি বৈষম্যবাদী সব দলই। এদের কেউ বাঙালি জাতীয়তার নামে বৈষম্য তৈরি করে, কেউ বাংলাদেশি জাতীয়তার নামে, কেউ ইসলামের নামে, আর কেউ সামরিকায়নের মাধ্যমে। আবার পাহাড়িদের মধ্যেও যেই ভয়াবহ সামন্তবাদী ধরণের ব্যবস্থা সেটাও যুগ যুগ ধরে সাধারণ পাহাড়িদের করে রেখেছে শাসিত।

কতিপয় রাজা ও তাঁদের আশেপাশের মানুষদের হাতেই ঐতিহাসিকভাবে পুঞ্জিভূত হয়েছে সকল ক্ষমতা, এই ক্ষমতা আবার তারা গত চল্লিশ বছর ধরে জারি রেখেছে বাঙালি শাসকশ্রেণীর সাথে নানান যোগসাজশে। ফলে সংঘর্ষের সময় পাহাড়িদের বাড়িতে যেমন বাঙালি শাসকশ্রেণীর দালালেরা আগুন ধরায়, পাহাড়ি ভাইদের খুন করে, বোনদের ধর্ষণ করে, এসব যেমন সত্য; শান্তির সময়ে পাহাড়ি শাসকশ্রেণী আবার তথাকথিত "বৈধ" প্রক্রিয়ায় পাহাড়ি শাসিতদের পীড়িত করে এটাও সমানভাবেই সত্য। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের লুটেরা শাসকশ্রেণীর রাজনৈতিক হিংস্রতার মাত্রাগত ব্যাপকতার কারণে প্রথমটা যতটা চোখে পড়ে আমাদের, দ্বিতীয়টা ততোটা নয়। তো, আমি যেকোনো শাসিত বাঙালি বা পাহাড়ির মতই এদের সকলেরই বিরুদ্ধে। যত দিন যাচ্ছে ততোই বাঙালি পাহাড়ি নির্বিশেষে আমাদের মতো শাসিতদের জীবনযাপন কঠিন হয়ে উঠছে, সমতলে যেমন তেমন পাহাড়েও।

আমাদের রাগ বেড়ে চলেছে, আর সেই রাগকে প্রগতিশীলভাবে ধারণ করে সেটাকে শক্তিতে রুপান্তরিত করে জনগণের শক্তি হয়ে উঠতে পারবে যে রাজনৈতিক দল তারাই জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করবে। এই কথা আবহমানকাল ধরে অতীতে ইংরেজ বেনিয়া ও পাকিস্তানি সামন্ত আর বর্তমানে বাঙালি শাসক ও সবসময়ই মার্কিন-ভারত সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা নিপীড়িত বাঙালি শাসিত জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে যতটা সত্য; মুক্তিযুদ্ধ -পরবর্তী সময়ে কখনো আধিপত্যকামী বাঙালি শাসকশ্রেণী-সৃষ্ট পরিকল্পিত হিংস্র খুন-ধর্ষণ-লুন্ঠনের শিকার হওয়া ও সবসময়ই পাহাড়ি শাসকশ্রেণী কর্তৃক তথাকথিত "বৈধ" প্রক্রিয়ায় শাসিত হওয়া, অর্থাৎ ভেতরে বাহিরে প্রবল সর্বত্র পীড়নের শিকার হওয়া পাহাড়ি জনগণের ক্ষেত্রেও ঠিক ততটাই সত্য। অর্থাৎ বাঙালি পাহাড়ি নির্বিশেষে শাসিত জনগণকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে হবে নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধের মাধ্যমে। এবং সেই উদ্দেশ্যেই নিরন্তর কাজ করতে হবে। নইলে, "বিপ্লবী" আলোচনা পর্যালোচনা শেষ পর্যন্ত কোনো কাজে আসবে না।

রাষ্ট্রক্ষমতা দখল ভিন্ন আমাদের পরিত্রাণের আর কোনো পথ নাই। কোনো নিও লিবারেল এজেন্ডার ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন মার্কা সুশীল সমাজ নয়, কোনো হিজবুত তাহরির মার্কা জাতের নামে জালিয়াতি করা মৌলবাদীও নয়, সেনাবাহিনী তো নয়ই; জনগণের শক্তি হয়ে ওঠা প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলই পারবে আমাদের মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে। জনগণের সেই ঐতিহাসিকভাবে অনিবার্য এবং যৌথসক্রিয়তার দ্বারা বাস্তবীকৃত বিপ্লবী জাগরণের প্রত্যাশায়...  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।