আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিবাদ জানাই, কিন্তু এটাও যেন স্মরণ রাখি, সহনশীলতাই সভ্যতার মাপকাঠি

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনৈক বাসিল নামের ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে ব্যঙ্গ করে একটা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে। ওটা মূলত মুসলমানদের ক্ষেপানোর জন্যই তৈরি। তার উদ্দেশ্য সফল। সারা দুনিয়ায় মুসলমান দেশগুলোতে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভটা এত বেশি যে, মানুষের মৃত্যুও ঘটেছে।

সামহোয়ার ইন এ ব্যঙ্গ কার্টুন পোস্ট করার পর যেভাবে পর্নগ্রাফি ব্যবহার করে প্রতিবাদ করা হয়েছে সেটা কি ইসলামসম্মত ? ইসলাম কেন পৃথিবীর কোন ধর্ম বা আইনেই এটা সমর্থনযোগ্য নয়। সভ্যতার মাপকাঠিতে এটা একটা অসভ্য কাজ বলেই গণ্য হবে। ইসলামের সম্মান রক্ষার নামে যে অসভ্য কাজটি আমরা করছি, সেটা কি ইসলামের মহিমা প্রকাশ করল নাকি ক্ষতি করল ? প্রতিবাদের ভাষারও একটা শ্লীলতা থাকা দরকার। নইলে ব্যঙ্গ চিত্র নির্মাণকারী ও প্রতিবাদকারী একই গোত্রভুক্ত হয়ে যায়। তারা উভয়ই অসভ্য।

প্রতিবাদ হবে, কিন্তু সেই প্রতিবাদের ভাষা হতে হবে সভ্য ও ভদ্র। অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ প্রতিবাদ ইসলাম সমর্থন করে না। এই সহজ কথাটা বোঝার জন্য খুব বেশি জ্ঞানীও হওয়ার দরকার নাই। এবার আসা যাক, অন্য আরেকটা প্রসঙ্গে। একটা মানুষ কতটুকু সভ্য সেটা কিভাবে মাপা যাবে ? সে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কতটুকু সহনশীল সেটা দেখেই সে কতটুকু সভ্য সেটা মাপা যাবে।

এক জন শিক্ষিত ও ব-কলম মানুষের আচরণগত পার্থক্যের একটা বড় জায়গা দখল করে থাকে সহনশীলতা। উচ্চ শিক্ষিত মানুষ অবশ্যই বেশি সহনশীল। অবশ্যই অনেক ভদ্র। অনেক বেশি বিনয়ী। এখন আপনি যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছেন, সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেবল আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি করে না, আপনার আচরণগত উন্নতিতে অবদান রাখে।

শিক্ষার উদ্দেশ্য যেমন জ্ঞান অর্জন, তেমনি শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য আচরণগতভাবে সভ্য ও ভদ্র মানুষ তৈরি করা। সারা পৃথিবীর সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জ্ঞানের পাশাপাশি ভদ্রতাও শেখানো হয়। এটা শিক্ষার একটা অঙ্গ। সুতরাং যে যত বেশি শিক্ষিত, সে তত বিনয়ী, ভদ্র ও সহনশীল হওয়াটাই উচিত। বাস্তবে সেটা হয়ও।

যদি না হয়, তবে শিক্ষার একটা উদ্দেশ্যই কিন্তু পূরণ হবে না। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় হয়, একটা সমাজ কতটুকু সভ্য সেটা কিভাবে মাপা যাবে ? উত্তরটা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন। উত্তরটা হল, সেই সমাজের মানুষগুলো কতটুকু সহনশীল সেটা দেখেই বিবেচনা করা যাবে, সেই সমাজ কতটুকু সভ্য। আমরা যেই পরিবারে জন্মাই, সেখানে সবাই কিন্তু একমতের মানুষ না। যে আত্মীয় স্বজনের মধ্যে বসবাস করি, তারা সব সময় একমত হতে পারে না।

যে মহল্লায় বাস করি, সেখানেও সবাই একমত হতে পারে না। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণ করতে যাই, সেখানেও সবাই একমত হতে পারি না। যে কর্মস্থলে উপার্জনের জন্য যাই, সেখানেও সবাই একমত হতে পারি না। যে কোন একটা ইস্যুতে একমত না হওয়াটা বা সবাই একমত না হওয়াটাই স্বাভাবিক। এখন আপনি যদি ধরে নেন, আপনি যে মতামত দিয়েছেন, তার বাইরে কোন মত নাই, তার বাইরে কোন কথা নাই, থাকতে পারে না, তাহলে আপনি কী রকমের আচরণ করবেন ? আপনি সহনশীল হবেন না।

ফলে আপনার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আপনার ঝগড়া লেগেই থাকবে। আপনার আত্মীয় স্বজনের মুখ দেখা বন্ধ হবে। আপনার মহল্লায় একঘরে হয়ে যেতে পারেন। আপনার সহপাঠীরা আপনাকে নিয়ে মজা করবে। আপনার সহকর্মীরা আপনার কাছ থেকে দূরে থাকবে।

সুতরাং একজন সভ্য মানুষ হিসেবে নিজেকে পরিচিত করানোর জন্য আমাদের অবশ্যই সহনশীল হতে হবে । আমরা কতটুকু সহনশীল সেটার উপরই নির্ভর করে আমরা কতটুকু সভ্য। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.