আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আট বছর অপেক্ষার পর

—আয়েশার সঙ্গে কি একটু কথা বলা সম্ভব?
তামিম ইকবাল: কথা বলবেন? ঠিক আছে, আমি আপনার সঙ্গে ওর কনফারেন্স করিয়ে দিচ্ছি।
দুই মিনিটের মধ্যে আবার তামিমের ফোন। টেলিকনফারেন্সে পরিচয় পর্বের পর শুরু হয়ে গেল আয়েশার সঙ্গে কথোপকথন। ভালো কথা, আয়েশাকে বোধ হয় চিনতে পারছেন না। আয়েশা সিদ্দিকা, তামিম ইকবালের হবু স্ত্রী।

তাঁর একটা মিনি সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগেই তামিমের কাছ থেকে জানা হয়ে গেছে দুজনের দীর্ঘ সম্পর্কের ইতিহাস।
বিয়েবাড়ি হইচই: আট বছরের প্রেমের শুভ পরিণয় ঘটবে ২২ জুন। বিয়ের আয়োজন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত তামিমের এখন দিন-রাত বলে কিছু নেই। গায়েহলুদের অনুষ্ঠানের জন্য ভারতীয় দুই শিল্পী আনবেন। সঙ্গে কেনাকাটা আর অন্যান্য আয়োজনের ঝামেলাও আছে।

ক্রিকেটার তামিমের বিশ্বাসই হচ্ছে না, তাঁর পক্ষে এসবও করা সম্ভব, ‘কল্পনাও করিনি, জীবনে কোনো দিন এতটা ব্যস্ত সময় কাটবে। প্রতিদিনই নতুন কাজ বের হচ্ছে। বেশির ভাগ কাজ আম্মু, ভাইয়া আর চাচা-ফুফুরাই করছেন। তার পরও আমি ব্যস্ত। ’
চাচা আকরাম খান ব্যস্ত ঢাকায়।

২৭ জুনের বউভাত অনুষ্ঠান আয়োজন আর ঢাকার কার্ড বিতরণের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। তবে বিয়ের ধুমধামটা স্বাভাবিকভাবেই বেশি টের পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রামে। কাজীর দেউড়ির খান পরিবারের সবার বাড়িঘরের চেহারাও নাকি বদলে দিচ্ছে এই বিয়ে। ‘বিয়ে উপলক্ষে চাচা-ফুফুরা সবাই যার যার ঘরবাড়ি নতুন করে সাজাচ্ছে। অথচ সব দোষ যেন আমার! চাচিরা চাচাদের একেকটা নতুন খরচের কথা বলেন, আর চাচারা হতাশ গলায় বলেন, হায় রে তামিম...!’—কথাগুলো বলে এমনভাবে হাসছিলেন তামিম, যেন জীবনে এর চেয়ে কোনো মজার ঘটনা ঘটেইনি।


বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে গিয়ে অবশ্য শেষ দিকে একটু তাড়াহুড়াই হয়েছে। তামিমের ইচ্ছে ছিল বিয়েটা হোক ডিসেম্বরে। কিন্তু ক্রিকেটের পঞ্জিকায় এই সময়টা ফাঁকা আছে বলে মাস তিনেক আগে চূড়ান্ত করা হয় বিয়ের এই দিন। চট্টগ্রামে গায়েহলুদ ও বিয়ে। এর এক সপ্তাহ পর ঢাকায় বউভাত।

আর এই সবকিছুর আগে হবে পরিবারের প্রয়াত ব্যক্তিদের স্মরণে মেজবান।
যেভাবে তামিম+আয়েশা: চট্টগ্রামের সানসাইন গ্রামার স্কুলের ‘এ’ লেভেলের ছাত্র তামিম। আয়েশা স্ট্যান্ডার্ড এইটের। দূর থেকে দেখে-টেখে আয়েশাকে তামিমের দারুণ পছন্দ হয়ে গেল। কিন্তু নাটক-সিনেমার চেয়ে বাস্তব জীবন আর কতই বা অন্য রকম! আড্ডাবাজ তামিমের প্রেমের প্রস্তাব ছক্কা মেরে বাউন্ডারি পার করে দিল কিশোরী আয়েশা।

নাছোড়বান্দা তামিম হাল ছাড়ে না। বন্ধুদের দিয়ে সুপারিশ করিয়েও যখন কাজ হলো না, নিজেই আয়েশাকে দিল বন্ধুত্বের প্রস্তাব। আয়েশার কাছে প্রেমটেমের চেয়ে এটাকেই অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হলো। কিন্তু সে কি জানত, বন্ধুত্বের ফাঁদেই আটকা পড়বে বাকি জীবনের গল্প!
প্রেমেই সৌভাগ্য: বন্ধুত্ব থেকে প্রেম, আর প্রেম মানেই বিরহ। তামিম-আয়েশার প্রেমে সেই বিরহের আগমন বাংলাদেশের একটি অলিখিত ‘আইনের’ কারণে।

প্রেমে বাধা দেওয়াটা যে এই দেশের প্রায় সব পরিবারেরই নিয়ম! তামিমের সামনে সেই বাধার দেয়ালটাকে সীমাহীন উঁচু করে দিয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ গমন করলেন আয়েশা। উঠতি ক্রিকেটার তামিমের পক্ষে তো আর প্রতিদিন মালয়েশিয়ায় যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সৌভাগ্য থাকে সাহসীদের সঙ্গে, আরও বেশি থাকে সম্ভবত সাহসী প্রেমিকদের সঙ্গে। আয়েশা ঠিক যখন মালয়েশিয়ার বিমানে উঠে বসলেন, ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের টেন্টে বসে তামিম পেলেন জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার সুখবর।
নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর ভৌগোলিক দূরত্বও আর কোনো ব্যাপার থাকল না।

তা ছাড়া আয়েশা দেশে থাকলে দেখাসাক্ষাৎ করতে হতো তাঁর পরিবার আর দারোয়ান জামালের শ্যেন দৃষ্টি এড়িয়ে। এর চেয়ে মালয়েশিয়াই ভালো।
কে এই আয়েশা?: প্রশ্নটা জাগা স্বাভাবিক। অনেক বড় বোলারকেও যে মাঝেমধ্যে হিমশিম খেতে হয়, সেই ‘তামিম-বধের’ কাজ এত সহজে করে ফেলা এ কোন আয়েশা? আগ্রাবাদের সম্ভ্রান্ত মুসলিম ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে আয়েশা কুয়ালালামপুরের সানওয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতক। দেশে ফিরে ব্র্যাক ব্যাংকে ইন্টার্নি করার পর আপাতত স্বেচ্ছা-বেকার জীবন যাপন করছেন।

‘স্বেচ্ছা’য় বলাটা ভুল হলো, আসলে তামিমের ইচ্ছাতেই বিয়ের পর অন্তত এক বছর চাকরি করবেন না মিসেস তামিম, ‘আমি বলেছিলাম দুই বছর। ও তর্কাতর্কি করে এটাকে এক বছর করল। আমি মেনে নিয়েছি। এত কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। করুক চাকরি...।


আয়েশা সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ক্রিকেট তাঁর পছন্দ ছিল না কিছুদিন আগেও। তামিমকে ভালোবাসেন বলে এখন ক্রিকেটও ভালোবাসতে শুরু করেছেন। যদিও মাঠে বসে এখনো দেখেননি তামিমের খেলা। এশিয়া কাপের দুটি ম্যাচ দেখেছেন, তা-ও টেলিভিশনে। তামিমের কথা অনুযায়ীও দুজনের সম্পর্কে সবচেয়ে উপেক্ষিত বিষয় ক্রিকেটই, ‘খেলাটেলা নিয়ে ওর কোনো আগ্রহ নেই।

আট বছরে মনে হয় না আটবারও ওর সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে কথা হয়েছে। তার সব আগ্রহ জুতা আর কাপড় নিয়ে। ’
বাবাকে মনে পড়ে: তামিম ইকবালের সব গল্পেই একজনের উপস্থিতি ধ্রুব—প্রয়াত বাবা ইকবাল খান। এখনো বলছেন, ‘আব্বা থাকলে আমার জন্য সবকিছু আরও সহজ হয়ে যেত। ’ যেদিন প্রথম জাতীয় দলে খেললেন, যেদিন প্রথম সেঞ্চুরি করলেন কিংবা লর্ডস যেদিন কাঁপালেন—বাঁধভাঙা আনন্দের মধ্যেও বাবার স্মৃতিটা ভেসে উঠেছে ছলছল চোখে।

তামিমের জন্য সে রকমই আরেকটি দিন সমাগত। জীবনের সবচেয়ে বড় দিনে তামিম হাসবেন, কাঁদবেনও। যে কান্না দেখে দূর থেকে কেউ আশীর্বাদ করবেন, ‘সুখে থাক বাবা...। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।